
বশির সাহেব আজকের পত্রিকাটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসলেন । দুবছর হয় চাকরীতে অবসরে গেছেন । অলস সময় টা প্রতিদিনের অভ্যসে পরিণত হয়েছে, বেলকনিতে বসে পত্রিকা পড়ার ।
পত্রিকার ভাঁজ খুলতে খুলতেই উচ্চ স্বরে স্ত্রী কে ডাক দিলেন, ” রাবেয়া এক কাপ চা দিয়ে যাও তো । ”
তারপর মনোনিবেশ দিলেন পত্রিকার পাতায় । হঠাৎ চোখে ছানা ভরে উঠলো ছোট্ট একটা খবরের শিরোণাম দেখে , ” নগরে ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে, ডিভোর্সের ৮৫% নারীরাই ফরম পূরণ করছে ” ।
আচমকা বুকের উপর ভারী অনুভব করলেন বশির সাহেব । নিঃশ্বাস অনেক গভীর হয়ে এসেছে । মনে পড়ে গেলো সেই দিন গুলোর কথা। পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে রাবেয়াকে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করেছেন,। কতোই বা তখন তার বয়স ? সবে মাত্র গ্রামের স্কুল শেষ করেছে। পনের বা ষোল বছর বয়স হবে । সংসার জীবনের জ্ঞানই হয়নি তখন রাবেয়ার । কতো কটুকথা ই না শুনতে হয়েছে রাবেয়াকে । মুখ বুঝে সহ্য করে দিনের পর দিন দায় নিয়েছে সংসারের। কতো পাওয়া, না পাওয়ার টান পোড়নেও কোন দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেনি অদ্যাবদি। পঁয়ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে মান অভিমান হয়নি এমনটি অস্বীকার করা যাবে না, কিন্তু পৃথক থাকার মনোভাব জাগেনি পঁয়ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য ও । তিন বছর ছোট্ট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করে । রুণু প্রতি মাসেই একবার বাসায় আসে, সারা দিন রাত মায়ের সাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলে ৷ বশির সাহেব কে বুঝতে দেয় না রাবেয়া বেগম। বশির সাহেব বুঝতে পারছে, ছোট্ট মেয়ের মানষিক টানপোড়ন যাচ্ছে, । মা, মেয়ে কেউ ই ক্লিয়ার করছে না । রাবেয়া বেগম ই মেয়ের জামাইর সাথে কথা বলে মিটমাট করে দিচ্ছেন ।
পত্রিকাটা ভাজ করে রাখলেন বশির সাহেব । চোখের জ্যোতি কিছুটা ঝাপসা হয়ে এসেছে । বুকের বাঁ পাশটা একটু চিন চিন করে ব্যথা অনুভব হচ্ছে । মাথায় একটি ভাবনা ঘোরপাক খাচ্ছে । রাবেয়ার মতো গ্রামের স্কুল পাশ আনারী একটি মেয়েকে নিয়ে পঁয়ত্রিশ বছর দাম্পত্য জীবন অনায়েশে সুখে কাটিয়ে দিয়েছেন । অথচ আজকালের মেয়েরা আধুনিক, শিক্ষিতা, সচেতন হওয়া সত্ত্বেও দাম্পত্য বিচ্ছেদের সংখ্যা কেন গাণিতিক হারে বেড়েই চলেছে ।
তাহলে দাম্পত্য জীবনের অন্তরায় কি নারীর আধুনিকতা, নারীর শিক্ষা, নারীর সচেতনতা ?
চায়ের কাপ হাতে বেলকনিতে আসছেন রাবেয়া বেগম । চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতেই বশির সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন ” সারা জীবন তুমি আমার সাথে থাকবে তো ??
রাবেয়া বেগম ক্ষীণ স্বরে উত্তর দিলেন, কি বলছেন পাগলের মতো ??
বশির সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রাবেয়া বেগমের দিকে ।।
রচনা কাল ঃ ১১/০৬/২০২২
ঢাকা
৮টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
একসময় নারী পুতুল ছিল। বলা যায় কাদামাটি। নারী বললে ভুল হবে কিশোরী। তাদের কে বলে দেয়া হতো লাল শাড়ি পরে যাচছ সাদা পরে বের হবে। শিক্ষা দিক্ষায় নারী এগিয়ে গেছে। এখন কাদামাটির পুতুল নয়। আমাদের সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন হয় নাই। আর তাই বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে।
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ , সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।
সমাজের মানষিকতা পরিবর্তন হয়নি, কথাটি যথার্থ ই বলেছেন ।
অনেক শুভ কামনা, আপনার জন্য ❤️❤️🌹🌹
বন্যা লিপি
গল্পের লেখক একজন পুরুষ। দৃষ্টিকোন যদি ধরি! তাহলে আমি বলব, পুরুষ চোখে নারী শিক্ষা এবং নারীর আধুনিকতার বিষয়টিকে বশির ( গল্পের প্রধান চরিত্র) সাহেবকে উপমায় রেখে বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে গ্রামের স্কুল থেকে বেরিয়েই ১৫/১৬ বছর বয়সেই যে মেয়েকে নিয়ে তিনি সংসার কাটিয়ে যাচ্ছেন ৩৫ বছর ধরে! তিনি একজন অতি সহনশীল, নিষ্ঠাবতী এবং আধুনিক বাংলিশ ভাষায় যদি বলি – ডেডিকেটেড একজন খুব অসাধারন গৃহিনী। অর্থাৎ,,, সর্বস্বংহা বলেই নিরবে গাঁটছড়া আগলে আছেন ৩৫ বছর। কোনো প্রতিবাদ নেই কোনো বিষয়ে, নেই মনের চাহিদা বা অন্য যে কোনো প্রাসঙ্গিক /অপ্রাসঙ্গিক দায়/দাবি। মোদ্দা কথায় নির্ভেজাল জীবন যাপনে বশির সাহেব এ পর্যন্ত কোনোই সমস্যার সম্মুখীন হননি।
পত্রিকার বিবাহ বিচ্ছেদের খবরে তার দিব্য দৃষ্টি খুলে গেলো— আমার বউ পুরান আমলের স্বল্পশিক্ষিত বলে নির্বিঘ্নে সংসার করে যাচ্ছে আমার সাথে। আমার নিজের ঔরষজাত মেয়ের সংসারে টানাপোড়েন ও আমার বউ রাবেয়া সামলাচ্ছে আমারই অগোচরে। আমার মেয়েটা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বলে আত্মসন্মান নিয়ে প্রশ্নে জর্জরিত,,, আমার তাতে কি এসে যায়! আমি বরং বুকের চিনচিনে ব্যাথার উওসর্গে ভীত হয়ে প্রশ্ন করি বউরে—- রাবেয়া! আমায় ছেড়ে যাবে নাতো!……
নারী বেশি কিছু না,,, সম অধিকারও বলব না আমি, শুধু আত্ম মর্যাদা আর আত্মস্বত্ত্বার পরিচয়টুকু স্বসন্মানে টিকিয়ে রাখতে চায় বলেই সবকিছুই সয়ে যেতে পারছে না আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত নারী। আবার যদি ধরি,,,, প্রকৃত ইসলামের কথা! পরিপূর্ণ ইসলাম অনুসারী হলেও বিয়ে বিচ্ছেদের চিন্তাটা আগে আসবে পুরুষের মাথায়, যে পুরুষ নিজেরাই পূর্ণ ইসলামের বিধান না জেনেই নারীর প্রতি স্বামিত্বের প্রভাব খাটিয়ে চলছেন। শেষমেশ দোষ সেই নারীর ঘাড় আর আধুনিক শিক্ষার উপরেই বর্তায়….
কামরুল ইসলাম
আপু, এখানে লেখকের লিঙ্গ বিভাজনের অবকাশ নাই । এটা একটা অণু গল্প, ছোট গল্প ও নয়। তাই চরিত্র ও পারিপার্শ্বিক উপস্থাপনে জায়গাটা সীমিত থাকে । এখানে দুটা প্রজন্মের উপস্থাপন ই করেছি মাত্র, স্বল্প পরিসরে । এখানে নারী আধুনিকতা, শিক্ষা, ও সচেতনতা কে ক্ষীণ করে দেখানো হয়নি,। আধুনিক, শিক্ষিতা ও সচেতনতা দাম্পত্যের অন্তরায় কি না, সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে । হয়ত এর মাঝেই অন্তর্নিহিত আছে সঠিক মূল্যবোধ ।
আপু, আপনার বিশ্লেষন ক্ষমতা অনেক ভাল, ও সুন্দর । খুব ভাল লেগেছে আপনার মন্তব্য ও দর্শন ।
অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য 🌹🌹❤️❤️
বন্যা লিপি
কামরুল ইসলাম@ অণুগল্পের সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্ত বোধ আমি সামান্য হলেও বুঝি ভাই। আমার করা মন্তব্যে আপনি আহত হলে আমি সত্যি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমার করা মন্তব্যে লেখককে লিঙ্গ প্রভেদ বোঝানো হয়ে থাকলে,,,, সেটা অনিচ্ছাকৃত ভুল আমার।
অণুগল্পে সাধারনত স্বল্প ভাষায় বিস্তর ভাববোধ রাখা হয়ে থাকে। যা বিচক্ষণ পাঠক ছাড়া সহজে বোঝা মুশকিল। এই গল্পে মূলত লেখক যে সব দিক উত্থাপন করার চেষ্টা করেছেন,,,, আমি সবটুকুই বুঝেছি। আমি কেবল মাত্র আধুনিক শিক্ষা, নারী আধুনিকায়নের বিষয়, সচেতনা, পারস্পরিক বোঝাপরা অথবা ধরে নিতেই পারেন একপক্ষীয় ( নারী+পুরুষ যেই হোক এ ক্ষেত্রে) বোঝাপরা, একে অন্যকে মানিয়ে চলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
মূল্যবোধ তো অবশ্যই অপরিহার্য।
৩২ বছর পার করে দেবার পর এখন এই সময়ে আমি রাবেয়ার মতই একজন মা, তো বুঝতেই পারছেন! প্রথম মন্তব্য করার সময়ে আমার টনটনা জ্ঞানটুকু ব্যাবহার করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
*** প্রতিটি লেখায় ( গল্প,কবিতা, বিবিধ, বা মেসেজমূলক পোষ্টগুলোতে এখন থেকে ব্লগিয় ধারায় মন্তব্য হলে কেমন হয়? আমি না হয় ছোট্ট করে শুরুটা করেই ফেললাম। এতে করে লেখকের লেখা নিয়ে লেখক নিজেই ভাবার অবকাশ এবং লেখা উন্নয়নে মনোনিবেশ করার সুযোগ পাবেন। আপনার কি মতামত?
লেখা ভালো লাগলো টাইপ মন্তব্য বর্জন করা আন্দোলন এখান থেকেই শুরু হোক……
কামরুল ইসলাম
আপু, আপনার সমালোচনা আমার খুব ভাল লেগেছে । প্রতিটি লেখার বা ঘটনার ইতিবাচিক এবং নেতিবাচক, দুটো দিক ই থাকবে । কেউ ইতিবাচক আলোচনা করবে, কেউ নেতিবাচক সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক । আর এতেই সুস্থ ধারা বহমান থাকবে ।
আমি এই গল্পের লেখক, আমি লিঙ্গতে আবদ্ধ নই ।, আমি নারী বিদ্বেষি নই । আমি যেহেতু লিখতে জানি, বশির সাহেব কে উহ্য রেখে রাবেয়া বেগমের মাথায় ও চিন্তায় এই প্রশ্ন গুলো জাগিয়ে তুলতে পারতাম । কিন্তু মৌলিক বিষয় এটা নয় ।
মৌলিক বিষয় হলো দিনের পর দিন আমাদের নারীরা যে ঝুঁকিতে যাচ্ছে ( আমার ভাষায়, অযাচিত মহামারী) তা রোধে, আধুনিক, শিক্ষিতা ও সচেতন নারীদের ভুমিকা কি ?
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সম্পর্কগুলো কেমন যেন ঢিলেঢালা হয়ে যাচ্ছে!
এ কি সভ্যতার দোষ
না-কি মনুষ্যত্বের পতন বুঝা মুশকিল।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
কামরুল ইসলাম
এটা সামাজিক অবক্ষয় ।
ধন্যবাদ ভাই ❤️❤️🌹🌹