
ভগবতী র ষোড়শ যাত্রা র মধ্যে অন্যতম হলো আম্বুবাচি যাত্রা।
অম্বুবাচী কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ” অম্ব” ও “বাচি” থেকে। “অম্ব” শব্দের অর্থ হলো জল এবং “বাচি” শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি। অতএব গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর যখন বর্ষার আগমনে ধরিত্রী সিক্ত হয় এবং নবরূপে বীজধারণের যোগ্য হয়ে ওঠে সেই সময়কেই বলা হয় অম্বুবাচী।
আম্বুবাচির স্থিতিকাল কতক্ষন ?
উত্তরে , রঘুনন্দন ভট্টাচার্য তাঁর ” অষ্টবিংশতি তত্ত্ব ” নামক গ্রন্থে তিথিতত্ব ও কৃত্যতত্বে অম্বুবাচি ও তার স্থিতিকাল নিয়ে লিখেছেন : – সূর্য আষাঢ় মাসে যে দিন যে সময়ে মিথুন রাশিতে আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে গমন করে সেই সময়কাল থেকে মাতৃস্বরূপা পৃথিবী এবং আদ্যাশক্তি মহামায়া ঋতুমতী বা রজ্বসলা হয় ইহাই অম্বুবাচির কাল শুরু হয় । সূর্যের মিথুন রাশি গমনের কাল থেকে শুরু করে বিংশতিদন্ডাধিক্ তিনদিন বা তিনদিন কুড়িদন্ড কাল সময় অম্বুবাচির স্থিতি ।
আম্বুবাচি কালে কী কী কর্তব্য ?
উত্তর পাওয়া যাবে বামকেশ্বর তন্ত্রের ৫৫ তম পটলে, যথা :-
” আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং ।
সংগোপন গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্ত্র বেষ্টনে ।।
রাত্রৌ মহানিশা যোগে পঞ্চাচারেণ দেশিকঃ।
পূজয়িত্বা বলিং দত্বা হোময়িত্বা বিহারয়েৎ।। ”
অর্থাৎ : – আষাঢ়ের প্রথমে অম্বুবাচী দিবসত্রয়ে দেবীকে গুপ্তভাবে বস্ত্রাদি দ্বারা বেষ্টন করিয়া ( বেষ্টন অর্থে চোখমুখ ঢেকে কাপড় চাপা দিয়ে রাখতে বলা হয় নি ) রাখিবে । অম্বুবাচী নিবৃত্তি হইলে সাধক মহানিশাতে পঞ্চতত্ত্ব দ্বারা দেবীর পূজা করিয়া , বলিদানাদি , হোমাদি সম্পন্ন করিবে ।
২২ জুন (৭ আষাঢ়) সকাল ২টা ৩৮ মিনিটে অম্বুবাচী আরম্ভ।
২৫ জুন (১০ আষাঢ়) রাত ২টা ৫৮ মিনিটে অম্বুবাচী সমাপ্ত।
প্রথমত জেনে নেওয়া যাক অম্বুবাচী কী?
অম্বুবাচী হিন্দুধর্মের বাৎসরিক উৎসব। অম্বুবাচীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতীও বলে। হিন্দুদের শাস্ত্রে পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে। বেদেও একই রকম ভাবে তাঁকে মা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আষাঢ মাসে রবি মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথমপাদে অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ স্থিথিকালে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হন। সেই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়। অর্থাৎ এই প্রচলিত আচারের পিছনে রয়েছে পৃথিবী আমাদের মা, এই বিশ্বাস৷
পৃথিবীতেই তো মানুষের জন্ম। শুধু মানুষ নয়, ফুল, পাখি, প্রকৃতি এক কথায় সবাই তো পৃথিবীর সন্তান। মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সে দিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয়। পাশাপাশি আমরা জানি, মেয়েরা ঋতুকাল বা রজঃস্বলা হন এবং এক জন নারী তার পরই সন্তান ধারণে সক্ষম হন। ঠিক তেমনই প্রতি বছর অম্বুবাচীর এই তিন দিনকে পৃথিবীর ঋতুকাল হিসেবে ধরা হয়।
ধর্মীয় আচার হলেও এর সঙ্গে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে থাকায় এটির একটি সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। ফলে অম্বুবাচী একটি কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানও। এর অর্থ ধরিত্রীর উর্বরাকাল। এই তিন দিন জমিতে কোনও রকম চাষ করা হয় না। উর্বরতাকেন্দ্রিক কৃষিধারায় নারী এবং ধরিত্রী সমার্থক বলে গণ্য করা হয়। সেই ধ্যানধারণা থেকেই আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা মাতা বসুমতী যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন তখন তাঁকে ঋতুমতী নারী রূপে গণ্য করা হয়৷
তখন শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি। ঠিক তিন দিন পরে যেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্বুবাচী নিবৃত্তি। প্রাচীন কাল থেকেই এই নিবৃত্তির পরই ফের জমিতে চাষাবাদ করতেন কৃষকেরা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। একই ভাবে পৃথিবীও এই অম্বুবাচী বা অমাবতির তিন দিন অশুচি থাকেন বলে ধরে নিয়ে চাষিরা আর মাঠে যান না। এখনও বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ম মেনে চলা হয়।
দেখে নেওয়া যাক অম্বুবাচী কারা পালন করেন:
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই অম্বুবাচী রজঃউৎসব নামেও পালিত হয়। আবার এ সময় যাঁরা ব্রহ্মচর্য পালন করেন, যেমন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলা— কেউই ‘অশুচি’ পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করা কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটান।
এই কারণে এখনও পরিবারে বয়স্ক বিধবা মহিলাদের তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে ব্রত পালন করতে দেখা যায়৷
বিধিনিষেধ :
অম্বুবাচীর তিন দিন পর্যন্ত কোন ধরনের মাংগলিক কার্য করা যায়না। চতুর্থ দিন থেকে মঙ্গলিক কাজে কোনো বাধা থাকেনা। অম্বুবাচীর সময় হাল ধরা, গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ থাকে ও এই সময়ে মঠ-মন্দিরের প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকে।যেহেতু এই সময় শুভ কাজ করতে নেই। তাই জমি বাড়ি ক্রয় বা বিক্রয় করাও নিষেধ রয়েছে।বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া যাত্রাও নিষেধ।
এই চার দিন গ্রাম-বাংলার মহিলারা এই অনুষ্ঠান পালন করেন। চাষ বাসের কাজ এই সময় বন্ধ থাকে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে পিঠা-পায়েস বানাবার রীতি আছে। এই অনুষ্ঠানে বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখে। অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তারা তিন দিন ধরে খান। ঐ তিন দিন তারা কোন গরম খাবার খান না।
..
কিছু তথ্য সংরক্ষিত ও পরিমার্জিত।
ছবিঃ সংগৃহীত।
১২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে বিস্তারিত জানানোর জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম। শুভ সকাল
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, দিদি।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক কিছু জানলাম কবি দা অনেক শুভেচ্ছা রইল
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন।
সঞ্জয় কুমার
দেখুন কারবার আমি সনাতন ধর্মালম্বী হয়েও এগুলো এতোদিন জানতাম না !!!
প্রদীপ চক্রবর্তী
জানা উচিত।
আরজু মুক্তা
এই প্রথম জানলাম।
শুভ কামনা
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অজানা ছিলো জানা হলো। আপনাদের তো অনেক পূজা পার্বণ।
তিনদিন ফলমূল খেয়ে থাকাটা আমার কাছে ভালোই লাগে। কাল তাহলে শেষ হয়েছে!
শুভ কামনা সবসময়
প্রদীপ চক্রবর্তী
বেশ!
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
“ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই অম্বুবাচী রজঃউৎসব নামেও পালিত হয়”
আমিও শুধু এতটুকুই জানতাম, এবং এই উৎসব ঘিরে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া কিছু রীতিনীতি জেনে অবাক হতাম। এখন সম্পুর্ন জানা হলো।
ধন্যবাদ প্রদীপ।
* কমেন্ট গুলোর রিপ্লাই দিচ্ছো না কেন?
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,দিদি।
একেক জায়গায় একেক নাম বিদ্যমান রয়েছে।
সাধুবাদ আপনাকে।