‘বাজান, বাজানগো, আইসো তুমি? ও বাজান।’
ঘরের দরজা খুলে ধূসর অপেক্ষমান চোখ খুঁজে
বেড়ায় ফজর আলীর, ফিরে এসেছে কি তার কলিজার
টুকরো ছেলেটি? নাহ্, কাউকে খুঁজে পায় না।
বিষন্ন বদনে ঘরে ঢুকে আবার খিল আটকে দেয়।
আজ কুড়িটা বছর ধরে খুঁজে ফেরে তার চোখ,
এইতো বুঝি চলে এল তার ছেলেটা,বলবে
‘বাজান, আমার লাইগা একটা লাড্ডুম আইনো।’
স্মৃতির পাতাগুলো কখনো শুকিয়ে যায়নি ফজর আলীর।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার রাঙা রাজপুত্র
সলাজ ভাব নিয়ে জড়িয়ে ধরে আবদার করতো কোন না কোন।
আর সে মাথায় রাখতো তার নির্ভরতার হাত।
আজ ছেলের মাথায় আর সেই হাতখানা দিতে পারে না সে।
দালাল ধরলো, জমি বিক্রি করলো, বিদেশ যেতে চায় ছেলে।
বুকের ভেতরটা কস্টে ফেটে গেলেও বায়না মেটালো বাবা।
যাক না, অনেকেই তো যায়।
কটা দিন প্রবাসী ছেলের সাথে যোগাযোগ ছিল,
তারপর হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে গেল।
আজও ফজর আলী সেটার কোন কারণ খুঁজে পেল না।
একমাত্র সম্বলটাকে অদৃশ্যভাবেই কেউ কেড়ে নিল যেন!
ফজর আলীর চোখ এখন অশ্রুশূণ্য।
চাইলেও কাঁদতে পারে না, কিন্তু বুকের ভেতরের
হাহাকারটা এখনও আছে তার, আছে ছেলেকে
কাছে পাবার আকুতি।
বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশের চাঁদটার দিকে
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফজর আলী।
কী সুন্দর চাঁদ! ‘ওইতো দেখা যায়, হ, ওইতো,
আমার বাজানের মুখখানা। বাজান, বাজানগো,
আয় বাজান, আয় না!’
নিথর পড়ে আছে ফজর আলীর দেহ।
একটু পড়েই জানাজানি হবে, গ্রামের মানুষ আসবে।
দাফন হবে, আসবে না শুধু তার কলিজার টুকরো ছেলেটা।
দেহত্যাগের সাথে মৃত্যু হলো তার অপেক্ষারও।
১৬টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা। খুবই ভালো লাগলো।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এরকম পিতা মাতা অনেক আছে , যারা তাদের শেষ সম্বল বিক্রি করে কলিজার টুকরা কে বাইরে পাঠায়। সবার কপালে সুখ সয়না তাইতো সোনার হরিণ সবাই ধরতে পারে না । খুব ভালো লেগেছে, মনে হয় ছেলেটি দালালের খপ্পরে পড়ে জীবনটাই শেষ করে দিলো। ধন্যবাদ ভাইয়া
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। এরকম ফজর আলী খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রবাসী সন্তানের প্রতি একজন পিতার আকুল আর্তনাদ মনকে স্পর্শ করে গেলো। সন্তানের দূরত্বটাই যেখানে মনকে ভারাক্রান্ত করে রাখে, সেখানে প্রিয় সন্তানের যোগাযোগ হীন সময়ে পিতার প্রতিমূহুর্তে মৃত্যু যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে হয়। মরে যাওয়ার পরে তার আত্মা অতৃপ্ত রয়ে যায়।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
সন্তানকে ভাল রাখার জন্য এমন বলীদানের উদাহারণ অনেক পাওয়া যাবে।ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনিও ভালো থাকুন সোয়েব ভাই।
শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
বাজান, বাজানগো, আইসো তুমি? ও বাজান।’
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
কস্টকে ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
শুভ কামনা।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
একজন অসহায় বৃদ্ধ পিতার তার একমাত্র কলিজার টুকরো সন্তান কে কাছে না পাবার করুণ পরিণতি উল্লেখ করেছেন। সন্তানকে হারিয়ে মরার আগেই মৃত্যু যন্ত্রণায় একটু একটু করে মরছে। কোনো পিতা-মাতা যেনো এমন সন্তান হারা না হয়। পড়ে চোখ ভিজে গেলো।
চমৎকার লিখেছেন
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সবসময়।
কামাল উদ্দিন
সন্তান দূরে থাকলে আপনজনদের সত্যিই কষ্ট হয়, তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তো ভাবনা হয় যে, নিশ্চয়ই ছেলে বিপদে আছে। ক’জন পিতা মাতা এমনটি সহ্য করতে পারে।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
এভাবেই অনেক বাবা মার জীবন থেকে হারিয়ে যায় সন্তান।
হালিম নজরুল
বাহ