
জামিলাবিবির খুব ক্ষুধা পেয়েছে।ক্ষুধার জ্বালায় তার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে।আগে অনেকটা সময় সে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারতো ইদানিং ক্ষুধা লাগলেই তার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসে।মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করে।আরো বেশি সময় গেলে কখনো কখনো গা হাত পা থরথরিয়ে কাঁপে। দিনে দিনে শরীরটা আরো বেশি ভেঙে পড়ছে সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এটাই হয়তো নিয়তি।
সেই কবে কবে স্বামীটা মারা গেল। রিকশা চালাতো লোকটা। একটা একসিডেন্টের পর এক রকম ভুগে ভুগে ই মারা গেলো।সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।দু একটা ওষুধ সেখান থেকেই দিয়েছে ঠিকই কিন্তু বাকী গুলো খুব একটা জোগাড় করতে পারেনি তারা। তো রোগ সারবে কি করে।
তখন থেকেই জামিলা বাসায় কাজ নিয়ে নিয়েছিলো।খাওয়াটা কোন রকম জুটতো, ওষুধ জোটেনি ঠিক মতো।সন্তান ছিলো না তাদের।লোকে বলতো হাটকুড়ে।স্বামীর মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে জামিলা বিবি ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।ডাক্তার দেখায়নি কোনদিন। সে সুযোগই হয়নি।
দিন গড়িয়ে এক সময় ঝুপড়ি ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নেয় সে বাধ্য হয়ে।কবে কবে যে এতো সব ঘটনা ঘটে গেলো জামিলা বিবি আর মনে করতে পারে না ইদানিং । আজকাল প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই মনে করতে পারে না।
বয়সের ভারে নুজ্য তার দেহ। আজকাল তার প্রায়ই মনে হয় মৃত্যু হলে বুঝি মুক্তি মিলবে।
সত্যি কি মুক্তি মিলবে?
কে জানে ?
গতকাল থেকে পথে লোকজন নেই বলতে গেলেই চলে।এই শহরে পিঁপড়ার চেয়ে লোক বেশি।কিন্তু অবাক কান্ড লোকজন হঠাৎ সব কোথায় গেলো? যুদ্ধ বাধলো নাকি ? লোকজন কি সব পালাইছে? সে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারলো না।কোথাও তো কোন গুলি পটকার আওয়াজ নাই।কে জানে কি হয়েছে।কেউ জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পায় না।যাকগে যাক তার অত দরকার নাই। একটু পেট ভরলে ভালো একটা ঘুম দিতো সে। গতরাতে ক্ষিদার জ্বালায় ঠিক মতো ঘুম আসেনি।
টুকটুক করে সে একটা গলির মধ্যে ঢুকলো,খাবারে সন্ধান করতে হবে। এত কষ্টের জীবন তবু তার আরো অনেক বছর বাঁচার শখ! বাঁচতে হলে খাদ্য চাই,এইটুকু জামিলাবিবি ভালো বোঝে। সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে মন চায় না কিছুতেই। এই সুন্দর পৃথিবীতে যে কত কিছু দেখার আছে!
বাড়িটা চারতলা। কলিংবেল গুলো সব নিচে গেটের কাছে সাজানো আছে।তবে একটু উঁচুতে,ঠেই নিতে একটু কষ্ট হলো তার।
জামিলাবিবি অনেকবারের চেষ্টায় কলিংবেলের বাটনে চাপ দিলো।একবার দুইবার তিনবার…..
দোতলার ব্যলকনি দিয়ে মহা বিরক্ত হয়ে কেউ একজন ঝাঁঝালো গলায় জানতে চাইলো, এই কে?
-আমি গো মা ?
-কি চাও ?
-মাগো খুব ক্ষিদা পাইছে?
ওপাশ থেকে আরেকটি মুখ দেখা গেলো, এই লোকটি মনেহয় এই বাড়ির কর্তা।জামিলা বিবি বড্ড কাতর হয়ে বলল,
-আম্মাগো, বাপজান কিছু যদি খাইতে দিতা। খুব ক্ষিদা পাইছে।
-তোমার বাড়ি ঘর নেই? লক ডাউন চলছে তুমি জানো না।
-লক ডাউন? সেইটা আবার কি?
-যাও এখন বাসায় যাও না হলে কিন্তু পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে।লোকটি বলল।
-বাসা থাকলে কি আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম গো বাবা।
মেয়েটি তার স্বামীর উপরে একটু রেগে উঠলো,
-এই তুমি ভেতরে যাও তো,খামাখা ভয় দেখাচ্ছো,গরীব মানুষ আহারে। বয়স্ক তো,কাজ করতে পারে না।
লোকটি বলল,
-খাবার তো দেয়া যাবে না।কিসে দেবে?
জামিলা বিবি সব শুনে বলল,
-আমি খাওন শেষে গেলাস পেলেট সব মাইজা দিমু মা।
-না না অতটা রিস্ক নেয়া যাবেনা ,তুমি টাকা নাও।খাবার কিনে খাও।এমনিতে করোনা ভাইরাসের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি।
এবার মেয়েটি বলল ,এক কাজ করি,জরির মা তো আসবে না আজকে,গতকালের খাবার গুলো শুধু নষ্ট হবে,ফ্রিজে তো আর জায়গা নেই যে ঢুকাবো, পলিথিনে করে ওকে কিছু খাবার দিয়ে দেই। জরির মা তো কোন কোন সময় এভাবেই খাবার নিয়ে যায়।
মেয়েটি অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু খাবার নামিয়ে দিলো দড়ির মাধ্যমে , ঝুলন্ত প্যাকেটের ভিতরে।জামিলা বিবি আস্তে আস্তে খাবারটা বের করে নিলো। তারপর অনেক অনেক শুকরিয়া জানালো ,মন ভরে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করলো্ কিন্তু পরক্ষনে কিছু কথায় তার মনটা বেশ ভারী হয়ে গেলো।এই দুনিয়ার মানুষগুলো খুব একটা ভালো না।যাক সে যাক তার পেট ভরলেই হলো।কে কি বলে অত কি দরকার।
লোকটি মনে হয় বেশি সতর্ক সে বলল,
– এবার কি করবে প্যাকেটে তো হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে। যদি ওর শরীরে করোনা ভাইরাস থেকে থাকে। মানা করে দিলেই তো হতো ।তুমি না সব সময় বেশিবেশি। এই সব কি আমাদের দায়িত্ব? দেশে সরকার আছে তারা দেখুক,আমাদের এতো কি?
তারপর কিছু একটা দিয়ে লোকটা দড়িটা কেটে দিলো প্যাকেট সহ ,যেনো ওটা এখন করোনা ভাইরাসে পরিপূর্ন।
জামিলা বিবি ওখানে বসেই দু পা ছড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো। তার না আছে ভয় না আছে ডর। আসলে সে তো জানেই না করোনা ভাইরাস কি?
১৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এদের তো কেউ নেই তার উপর এরা এতো কিছু বোঝার সুযোগ পায়না। করোনা, পারমাণবিক বোমা, ভাইরাস এরা এসবের কিছুই বোঝে না। শুধু বুঝে পেট ভরা তো সব ঠান্ডা। খুব ভালো লাগলো। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
ইসিয়াক
আপনার প্রতি ও স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইল দিদিভাই।
শুভকামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
অসাধারণ। এটাই আজখের বাস্তবতা।
কথা দিতে পারি
গরীব লোক দেখলে
ভয় পাবে করোনা।
শুভ কামনা।
ইসিয়াক
শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
ভালো থাকুন সবসময়।
সুরাইয়া নার্গিস
পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া।
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল।
ইসিয়াক
আপনার জন্য ও স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল আপু।
ভালো থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
ক্ষুধার কাছে সব কিছুই তুচ্ছ।
ইসিয়াক
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, সামনে কঠিন সময়।
কি যে হবে শুধু আল্লাই জানে ।
ভালো থাকুন।সুস্থ থাকুন। সতর্ক থাকুন আপনজন নিয়ে।
সাবিনা ইয়াসমিন
বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই পেটের আগুন জ্বালিয়ে রাখে। আগুনে সব পুড়ে যায়, ভাইরাসের ভয়টাও। এক অনিশ্চিত যুদ্ধে জড়িয়ে গেছি আমরা। যারা আগে নানারকম যুদ্ধ চাক্ষুষ করেছেন, তাদের অনেকের কাছেই এই যুদ্ধের খবর অজানা। যারা নিত্তনৈমিত্তিক চাহিদা নিয়ে জীবন যুদ্ধ করে যান তারা এসব যুদ্ধকে ভয় পাচ্ছেন না। মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। গল্পটা এমন অনেক জামিলা / রহিমাদের বর্তমান বাস্তব।
ভালো থাকুন ইসিয়াক ভাই,
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইলো 🌹🌹
এস.জেড বাবু
১৪৪ ধারা জারি করলেও ক্ষুদার জ্বালা সে বাঁধা মানবে না। যত মিনিট বেঁচে থাকা- তত মিনিট পেটের ক্ষুধা।
আল্লাহ এই মুসীবতের কালে অসহায় মানুষের আশার আলো দেখাবেন, রক্ষা করবেন।
স্বাধীনতার শুভেচ্ছা
জিসান শা ইকরাম
বেঁচে থাকার আগ্রহের কাছে সব কিছু ম্লান।
এরা জানে না, লকডাউন কি? করোনা ভাইরাস কি?
অনেক ভালো লেগেছে গল্প ভাই।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
গল্পে করোনাক্রান্ত সময়ের চমৎকার চিত্র তুলে ধরেছেন।
তৌহিদ
বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। পেটের ক্ষুধা মনে করিয়ে দেয় জীবনযাপনের কঠিন বাস্তবতা।
দারুন লিখেছেন ভাই।