
গ্রীষ্মকালে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান রোদে খা খা করে। এই উদ্যানের চৌহদ্দিতে পানির কোনো উৎস নেই। ফলে বনের পাখ-পাখালীগুলোর পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। পাখিদের এই সমস্যা মেটাতে একজন পাখিপ্রেমী বনের মাঝখানে ছোট একটি ডোবা কেটে দেন। ডোবাটিই এখন বনের পাখিদের পানির একমাত্র উৎস।
দুপুর দুইটায় আফজাল খানকে সঙ্গে নিয়ে সাতছড়ি বনের ভেতর সেই ডোবার ধারে অপেক্ষা করছি। দুপুর গড়িয়ে কখন যেন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। এ সময় ডোবায় হরেক প্রজাতির পাখি পানি খেতে আসে। তবে সেদিন খুব একটা পাখির আনোগোনা ছিলো না। এরই মধ্যে কয়েক প্রজাতির পাখির দেখা পাই। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট এই নীলগলা নীলচটক পাখিটি।
বেশ খানিকটা দূরে পানি খাওয়ার জন্য সে ডোবার ধারে আসে। সাদা গলা বুলবুলির তাড়া খেয়ে ভয়ে পাখিটি উড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আমাদের সামনে ডোবার উপর হেলানো একটি ডালে আবার এসে পাখিটি বসে। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় ছবি ভালো হবে না জেনেও কয়েকটি ছবি তুলি। এত কাছে পাখিটির দেখা পাবো কোনো দিন কল্পনা করিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাখিটি উড়ে চলে গেলে। পাখিটির ছবি তুলতে পেরে দুজনের কাছেই খুব ভালো লাগলো।
নীলগলা নীলচটক Muscicapidae গোত্রের ১৪ সেমি দৈর্ঘ্যের পোকাশিকারী পাখি। গলা কালচে নীল ও চোখ কালচে বাদামি। পুরুষ পাখিটির পিঠ ও গলা নীল, দেহের নিচের অংশ সাদা। কপাল ও ভ্রু উজ্জ্বল নীল। বুক লালচে। বগল ও পেট সাদা। লেজের ঢাকনি পীতাভ আমেজ। পুরুষ ও মেয়ে পাখির মধ্যে পার্থক্য আছে। মেয়েপাখির কোমর জলপাই-বাদামি রঙের। গলা হালকা কমলা। বুক কমলা ও পেট সাদা। মেয়ে ও পুরুষ পাখির উভয়ের চোখ কালচে বাদামি। ঠোঁট বাদামি-কালো। পা ও পায়ের পাতা ধুসর-বাদামি।
নীলগলা নীলচটক সাধারণত মুক্ত বনভূমি, বাঁশবন ও সবুজবনে বিচরণ করে। এরা সচরাচর একা থাকতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে জোড়ায় থাকে। ছোট গাছ ও গাছের নিচে গুল্মলতায় খাবার খুঁজে বেড়ায়। খাবার খোঁজার জন্য বারবার মাটিতে নামে। উড়ন্ত অবস্থায় শিকার ধরে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে প্রধানত উড়ন্ত পোকা ও পোকার ছানা। এদের গলার স্বর তেমন সুমধুর নয়। কর্কশ ডাক। এরা প্রজনন মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের তীব্র সুরে গায়। এরা অন্যান্য পাখিদের ডাক অনুকরণ করতে পারে। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস এদের প্রজনন সময়। প্রজননকালে শেওলা ঢাকা আলোর মাটির গর্তে, বা বাঁশের কোটরে শৈবাল ও মৃত পাতায় সরু মূল বিছিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় ৩-৫টি ডিম পাড়ে। নিজেরাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। ছেলে ও মেয়েপাখি মিলে বাচ্চার যত্ন করে।
নীলগলা নীলচটক বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের সব বনে দেখা যায়। এ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচরণ আছে।
বাংলা নাম: নীলগলা নীলচটক
ইংরেজি নাম: Blue-throated Blue Flycatcher.
বৈজ্ঞানিক নাম: Cyornis rubeculoides
ছবিগুলো সাতছড়ি বন থেকে তোলা।
২৬টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
অসাধারণ অভিজ্ঞতা
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইজান।
কামাল উদ্দিন
পাখির ছবি তোলার নেশাটা আমার আছে, তবে পাখিগলোর নাম জানাটা সতয়িই কঠিন হয়ে পড়ে। আপনার মাধ্যমে নীগলা চটক কে চিনে নিলাম, ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
সতয়িই = সত্যিই
শামীম চৌধুরী
ছবি তোলার নেশাটা ধরে রাখলে আজ আপনাকে আমার পার্টনার পেতাম। কতই না মজা হতো কামাল ভাই।
ফয়জুল মহী
অনবদ্য প্রকাশ। খুবই ভালো লাগলো।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ মহী ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
এবারে একটু খোলসা করে বলুন,
এই যে পাখি দেখা মাত্র নাম-ধাম সহ কুষ্ঠি মেলে ধরেন, কীভাবে?
অনেক রেয়ার পাখি থাকে, তাহলে কী বুঝে নেব সব পাখি চেনেন? জানেন?
তা বা কী করে?
গোমর ফাঁকা করুন ভাই!
শামীম চৌধুরী
হেলাল ভাই। দেশে দেখা ও পাওয়া যায় এমন ৭০৪টি পাখি আছে। তারমধ্যে পরিযায়ী বেশী। এরা বার বার প্রতিবছরই আসে আমাদের দেশে। দীর্ঘদিন ধরে এই পাখি নিয়ে কাজ ও লেখাপড়া করছি। সুতারাং পাখি দেখলে এখন ভাল করেই চিনতেই পারি। এখন দেখতে দেখতে এমন হয়েছে যে মাথার উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে গেলে বলতে পারি কোন পাখিটি উড়ে যাচ্ছে। নিন গোমর ফাঁক করে দিলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পাখিটা খুব সুন্দর। ছবিটা যে তুলতে পেরেছেন এটাই সাফল্য। ধন্যবাদ ভাইয়া। এমন আরো সুন্দর সুন্দর পাখি সম্পর্কে জানতে চাই। ভালো থাকুন। শুভ সকাল
শামীম চৌধুরী
দিদি সাথে থাকুন সব জানতে পারবেন। আমি জান পরণাই চেষ্টা করে যাবো।
নিতাই বাবু
পোস্টের মাঝে পাখি ধরা-সহ পাখি নিয়ে খেলা করার একটা ভিডিও দিলে ভালো হতো, দাদা। আমরা দেখতাম! আরও আনন্দ পেতাম!
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় পাখিপ্রেমি দাদা।
শামীম চৌধুরী
দাদা ভাই। যদিও ভিডিও আপলোড করা দেখিয়েছিলেন মিলনমেলায় কিন্তু আমার সেই সফটওয়ারটা নেই। আবার দেখা হলে এবার ভালো করে শিখে নিতে হবে।
ইসিয়াক
নীলগলা নীলচটক সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো।
নিরন্তর শুভকামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো অফুরন্ত ভালোবাাস।
মনির হোসেন মমি
পাখিটা দেখতে খুবই সুন্দর।বাহ্ একেবারে পাখিটির পুরুষ নারী সব বুঝিয়ে দিলেন। খুব ভাল লাগল।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ মমি ভাই। পাশে থাকবেন দোয়া করবেন।
ইঞ্জা
লেখাটি যদিওবা আগে পড়েছি, এইবার এলাম কমেন্ট করার জন্য।
খুব সুন্দর পাখিটি এবং তাএ জীবন আচরণ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো ভাই, এখন অপেক্ষায় আছি আপনার ভারত সফর নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য, কবে দেবেন ভাই?
শামীম চৌধুরী
শুরু করেছি। দুই তিন দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন ব্লগে।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম ভাই।
শামীম চৌধুরী
আপনার অনুপ্রেরনায় এই পর্যন্ত ৫ পর্ব প্রকাশ করতে পেরেছি। ভাল থাকুন।
ইঞ্জা
বাকি পর্ব কবে দেবেন ভাই?
সুপায়ন বড়ুয়া
পাখি ভাইয়ের প্রশংসা করতেই হয়
অন্যের ডাক নকল করে “নীলগলা নীলচটক “
সার্থক রুপায়নের জন্য।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ দাদা।
জিসান শা ইকরাম
নীলগলা নীলচটক পাখির নাম এই প্রথম শুনলাম,
জানলাম পাখিটি সম্পর্কে।
এমন পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শামীম চৌধুরী
আপনাকেও ধন্যবাদ জিসান ভাই আমাকে সুযোগ করে দেবার জন্য।