অনেক প্রিয় ছবির সংগ্রহ, সঙ্গীত, পঙক্তিমালা মাঝেমাঝেই বড়ো কাব্যিক করে হৃদয়। হৃদয়জ পঙক্তিঘোর অকরুণ নৈরাজ্য ভেদ করেই যেন রঙিন পাল ওড়ায়, বাংলার রূপালী নদীর মাঝিমাল্লার সনে একাত্ম হয়ে। তখন নৈঃশব্দের সকল নীরবতা, সকল চুপ হওয়া একাকার জলের মতো কবিতাময় হয়। গানের ভাষায় বাঙ্ময় হয়। যেন বা যোজন জাগ্রত এক অপার আশ্চর্য প্রহর। সেই প্রহরে জীবনমরণ তুচ্ছ অগ্রাহ্য করা শব্দাকাশের জলতরঙ্গ বাজতে থাকে। বঙ্গজ সেই চিরন্তনের কাব্যধারা যেন বা গান। হ্যাঁ আমি তারে গানই বলি। লোকে যা বলুক না, আমার গান বলতে বিষম ভালোলাগে। তখন নিজেরও যাতনাভোলা প্রিয় ছবি ও কথাজালে ভুবনজয়ী সময় কাটে। তারই একখানা সবচে’ প্রিয়তম ছবিটি ফাইলে সংগৃহিত ছিলো, দেখতে গিয়ে যখন তাড়িত হোলাম বাংলার চিরন্তনের তুমুল সবুজ আর রূপালি জলের আহ্বানে, তখনই অনেক দিনের অনেক কথাজালে আবদ্ধ পঙক্তিঘোরও মনে পড়েই গেলো। এবঙ প্রিয় গানও এলো হৃদয় ছাপিয়ে যোজনকাব্যসম! অগত্যা সোনেলা ব্লগে বসেই সেই আপ্লুত জলতরঙ্গের দোলায় ভেসে অনেক আগের রচিত কিছু পঙক্তি শেয়ার করার কাঙ্ক্ষা জেগেছে। যেন পাতাল ছুঁয়ে যেতেযেতেও –
“মাঝি নাও ছাইড়া দে / ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে”
গানের দে-দোল দে-দোল দোলা! সেইসঙ্গে নিজের যতকিঞ্চিত ভাবের কথা! যদ্দুর মনে পড়ছে – “কাগজের ডানা” শিরোনামের গ্রন্থভুক্ত আমার কিছু শব্দাকাশের ওড়াউড়ি, আবার লিপিবদ্ধ করছি তারে –
নতুন তৃষ্ণায় ইদানিং আমি একাএকাই অন্তিম হাসি!
ভোরে জাগিতেই দেখি –
চিলতে আকাশমণি টগবগ করিতেছে –
তৃষ্ণায় ভাসিয়া যায়যায় আর কি!
দেখিয়া বিষম সুখ পাই!
পৃথিবীটা নষ্ট হইতেছে বলিয়া কি
দিনরাত্তির কাঁদিয়া বেড়াইবো নাকি!
অনেক কাঁদিয়া জানিয়াছি উহাতে কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি নাই!
যাহারা উন্মাদনৃত্যে বিষাইছে বায়ু নিভাইছে আলো –
কান্না তাহাদিগকে করে না স্পর্শ, অপরদুঃখদিনে তাহারা অদ্ভুত ঝলোমলো!
তো, বীতশ্রদ্ধ বলিয়া, যাহা আমারই তাহারই জন্য কথাজালে বাঁধি ভাই!
চিলতে আকাশফাটা রৌদ্রজলের কবিতা – ইহার অধিক সুখে কাজ নাই!
তাই ইদানিং একাএকাই আনন্দে থাকি ভাই!
একাএকাই নদী ও নৌকার দারুণ পাল উড়াইয়া ভাসিয়া যাওয়া দেখিয়াই –
অদেখায় আদি বাংলার চিরকালের কবিতা ও গানের গন্ধ পাই!
তখনই ত্ম্রসিদ্ধ তাবত ঋষিদিগকে চিতকার করিয়া বলিতে চাই –
আহারে সাধুর দল, দেখিয়াও দেখিতে পান না ভাই!
জীজিবিষাময় জীবনকাব্যের জন্য আদৌ কোনও সাধনার প্রয়োজন নাই!
মরিতে-মরিতে জীবন্ত আনন্দ কিনিয়া এই যে ফেরা, অধিক কি আর চাই!
এইতো আমার আদিগন্ত পাতাল অবধি ঠাঁই!
এই না চাহিতে পাওয়া প্রাণান্ত ডানা!
হউক সে কাগজের, হউক না কিঞ্চিত রক্তাক্ত-দুমড়ানো, তথাপি সে ডানা!
(*স্মৃতির খেরোখাতার পঙক্তিমালা নতুন করে লিখতে গিয়ে খানিক সংযোজিত নতুন শব্দাবলি এসেই গেলো, পুরনো যারা আমার “কাগজের ডানা”-র পাঠক, আশাকরি অপরাধ নেবেন না, যেহেতু আমারই লিখিত*)
আশ্বিন ১৪২০ বঙ্গাব্দ।।
১৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ভালই হল , আমরা নূতন সংযোজন পেলাম ।
নদী ও নৌকায় ই আমরা শাশ্বত বাংলার রূপ দেখতে পাই ।
অনেক ধন্যবাদ আপনার সচলতার জন্য।
নুরুন্ননাহার শিরীন
ভাই হেলাল, ধন্য হোলাম অভিন্নতার আনন্দে … সততঃ শুভেচ্ছা … 🙂
জিসান শা ইকরাম
অসাধারণ লেখা আপা ।
” পৃথিবীটা নষ্ট হইতেছে বলিয়া কি
দিনরাত্তির কাঁদিয়া বেড়াইবো নাকি!
অনেক কাঁদিয়া জানিয়াছি উহাতে কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি নাই! ” — পৃথিবী থাকুক তার নিজের কক্ষপথে , আমাদের আনন্দের শোভাযাত্রা চলতে থাকুক —
লেখায় ফিরেছেন দেখে ভালো লাগছে খুব ।
নুরুন্ননাহার শিরীন
জিসান, তোমার যে অসাধারণ লেগেছে এরচে’ বড় পাওয়া একদমই চাইনা। আর আমার আপাততঃ লেখালিখিই একমাত্র আনন্দঠাঁই। অনেক শুভেচ্ছা … 🙂
নীলকন্ঠ জয়
আপুনি সোনেলা আজই রেজিষ্ট্রেশন করলাম। প্রবেশ করেই আপনার লেখা দেখে যারপরনাই খুশি হয়েছি। নতুন সংযোজন অসাধরণ মাত্রা এনেছে। শুভকামনা।
নুরুন্ননাহার শিরীন
বাহ!! বিষম ভালো লাগছে … বিডি পরিবারের অনুজকে পেলাম এইখানে আবার!! শুভাশিষ তোমার জন্য। 🙂
নীলকন্ঠ জয়
অনেক অপেক্ষা করেছি আপুনি। কতকাল আর না লিখে বসে থাকব বলুন।
আপুনিকে পেয়ে খুবই আনন্দিত।
শুভ কামনা।
আদিব আদ্নান
প্রাণান্ত ডানার খোঁজ যে পেয়েছে সে তো মানবী ।
হোক না সে ডানা যেমন-তেমন ।
বেঁচে থাকুন অনন্ত কাল আমাদের মাঝে ।
নুরুন্ননাহার শিরীন
তোমাদের এখানে তোমাদেরই সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়েই আমরণ লিখতে চাই আদিব, অনেক শুভেচ্ছা … 🙂
বনলতা সেন
আপনার লেখায় জীবনের যে স্পর্শ পাই তা অনবদ্য তাকেও ছাড়িয়ে যায় ।
যা অনেক অনুপ্রেরণার ও বিষয় ।
সাথে থাকুন সাথেও রাখুন ।
নুরুন্ননাহার শিরীন
বনলতা, তোমাদেরই মাঝে থাকতে, লিখতে এসেছি যখন তখন সাথে থাকার, রাখার কথাটি আমারও মনের কথা। শুভেচ্ছা … 🙂
লীলাবতী
এমনি সুন্দর গান থাকুক সারাক্ষন আপনার মাঝে ।
অনেক ভালো লেগেছে আপু আপনার লেখা ।
খসড়া
ভাল থাক শিরিন। কত গান কত স্মৃতি কত ছবি। একজীবনে সব কি দেখা যায়?সব কি পাওয়া যায়? এরই মাঝে যা পাই তাই তো মানিক রতন।সেই রত্ন সযত্নে থাকে মনের গভীরে।লুকিয়ে রাখি বুকের মাঝে মুক্তার মত।