
আজ সুতপার মনে পড়ছে যারা তাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিল তাদের কথা। তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত, সুদর্শন , সুপুরুষ ছিল। কিন্তু রাজীবকে ভালোবাসতে গিয়ে তাদের সবাইকে হেয় করেছে বলা যায় রাজীবের প্রতি গভীর ভালোবাসা, অন্ধবিশ্বাস থেকে তার এই আচরণ। কিন্তু রাজীব কথা দিয়েও কথা রাখেনি। তার নাট্যগ্রুপের একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সুতপা কখনো ‘ভালোবাসা’ নামক বস্তুকে অদৃশ্য কারণে পছন্দ করতো না। সে সবসময় চাইতো তার বাবা-মায়ের মতে, সামাজিক বিয়ে করতে। কিন্তু বিধির কি বিধান! তা-কি কেউ পাল্টাতে পারে? সুতপা ও পারেনি তাই নিজের প্রথম ভালোলাগাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো নিষ্ঠুর ভাবে, শুধুমাত্র বাবা-মা চায়নি বলে।
ছেলেটি সুতপার চেয়ে প্রায় দশ বছরের বড় ছিলো; শিক্ষিত, সুদর্শন তপনকে সুতপার মনে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল স্কুল জীবনেই। প্রথমে ভেবেছিলো মা ছেলেটিকে পছন্দ করেছে, কারন মা-ই বলাবলি করছিলো জামাই বলে। তার উচ্ছাস দেখেই সে তপনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চিঠি লিখতো। ছেলেটি কয়েকবার বাসাতেও এসেছিল। মা তাকে যত্নআত্তি করতো ভালোই। একদিন তপনের লেখা একটি চিঠি ধরা পড়ে মায়ের কাছে। সে-কি রাগ মায়ের। সেই ঘটনা জানিয়ে তপনকে সে সব জানায়। বছরখানেক পরে সুতপার এস.এস.সি পরীক্ষা, খুব কড়াকড়ি শাসনে বন্দী হয়ে যায় সে। যাইহোক পরীক্ষা ভালোভাবে শেষ করলো, ভালো রেজাল্ট ও করলো। তপনের পাঠানো ঠিকানায় মিষ্টি নিয়ে গেল ওর এক বয়সে বড় কাজিনকে সাথে নিয়ে। সাথে একটি চিঠি ও লিখে রেখে আসলো রেজাল্ট এর কথা জানিয়ে। আর লিখলো বাবা-মায়ের অমতে সে তাকে বিয়ে করতে পারবেনা , তাই সে যেন আর কখনো তার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ না করে।
এর কিছুদিন পরেই রাজীবের প্রস্তাব, রাজীব তাদের আত্নীয় হতো। সে সরাসরি বলে দিলো তার বাবা-মাকে , রাজীবের বাবা-মাকে সে যদি রাজী করাতে পারে তার কোন আপত্তি নেই এ সম্পর্কে। রাজীব তখন মাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাই সে সুতপাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে বললো, ততোদিনে সে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে -তখন দু’ ফ্যামিলিকে রাজি করাতে সমস্যা হবেনা। সুতপা রাজি হলো এবং সে অপেক্ষা করবে বলে জানালো । সুতপা ভালোবাসার প্রেমে পড়ে গেল। তখন সে বুঝলো ‘ভালোবাসা হলো স্বর্গ’। ভালোবাসাতে-ই আসল সুখ। কিন্তু সম্পর্কের বছরখানেক পড়েই রাজীব অন্যরকম আচরণ করতে লাগলো। সুতপাকে এড়িয়ে যেতে লাগলো। সুতপা এই প্রথম বুঝলো ভালোবাসার আঘাত , অনুভব করতে পারলো ভালোবেসে কেন মানুষ নিজের জীবন তুচ্ছ মনে করে; চারপাশের সবকিছু অচেনা আর অসহ্য হয়ে উঠে! তখন সে তপনকে আঘাত দেয়ার কথা বুঝতে পারলো। সুতপা নিজেকে বুঝ দেয়- তার বয়স অল্প ছিলো, একটা মোহ কাজ করছিলো তপনের প্রতি। কিন্তু এখন সে-তো নিজেকে মানাতে পারছে না। তার একমাত্র ভালোবাসা সেটা হলো এই রাজীব। যার জন্য সে নিজের জীবন দিতে পারে। হ্যাঁ সুতপা তা-ই করতে গেল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো। সব জেনেও রাজীব বদলালো না। হিতে বিপরীত হয়ে গেল। সবার মাঝে ছড়িয়ে গেলো তাদের ভালোবাসার কথা। আত্নীয়তার মধ্যে মন-কষাকষি হলো। তবুও সুতপা রাজীবের অপেক্ষায় রইলো। তার বিশ্বাস ছিলো রাজীব স্বাবলম্বী হলেই তার কাছে ফিরে আসবে ; কারন এখনো ওর বেঁধে দেয়া সময় ফুরিয়ে যায়নি।
এরমধ্যে অনেকেই তাদের দুর্বলতার কথা জানিয়েছে বা আকার -ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছে ‘সুতপাকে’ তারা চায়। কিন্তু সুতপার ঐ এক কথা, এক গোয়ার্তুমি – সে রাজীবের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবে, সে তার ভালোবাসাকে মর্যাদা দিবেই। পাঁচ বছর পর- এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গেল সুতপা । কারন সেখানে রাজীব ও যাবে সেটা সে জানতে পেরেছিলো। ততোদিনে রাজীব ও ভালো জব করছে, পরিবারকেও সাহায্য করছে। একটা ক্ষীণ আশার আলো দেখতে পেলো – সুতপা। ভেবেছিলো রাজীবের সাথে সুযোগ বুঝে ওদের বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু ওর সব আশাকে ভুল প্রমাণ করে দিলো। ঐযে ওর সাথে সাথে একটা মেয়ে সবসময় জোঁকের মতো লেগে আছে ! সে-ই হলো ওর গ্রুপের সাথী। রাজীব সুতপাকে ডাকলো। সুতপা আর সে-ই মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। একদিন সুতপা রাজীবের অফিসে ফোন করেছিলো, টেলিফোন অপারেটর ভুল করে সেই মেয়েটির নাম বলেছিল। সেই সূত্রপাতে ওর নাম জেনে ফেলেছিলো সুতপা। সুতপা হাসিমুখে মেয়েটিকে ‘হাই’ বললো। মেয়েটিও ‘হ্যালো’ বলে করমর্দন করলো। সুতপা কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না। ওর ভিতরে যে মহাপ্রলয়ের তান্ডবলীলা চলছে। সুতপা কিছুতেই রাজীবকে একান্তে পাচ্ছিলো না। না-কি রাজীব ইচ্ছা করেই এমনটা করছে সুতপার সাথে? অ-নে-ক প্রশ্ন, কষ্ট ওর মনে বাড়ি খাচ্ছে। সুতপা বাড়ি ফিরে এলো, বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠানে আর যায়নি সে। ওর মা-কে পাঠালো। সুতপা অনার্স ফাইনাল দিলো।
আজ প্রায় দু’বছর , আর কোনো যোগাযোগ করেনি রাজীবের সাথে। হঠাৎ ওর ছোট মামা একটা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলো। ওর মা সুতপাকে ডাকলো, সুতপা ‘আসছি’ বলে কিছুক্ষণ পরে এলো। বলো মা , কি বলবে? মা বললো, একজন দেখতে আসবে তোমাকে । তুমি একটু সাজো। সুতপা বললো, তুমি কি বলছো? আমি বিয়ে করবো না। মা জানতে চাইল, কেন? সে বললো, আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়, তুমি মানা করে দাও। মা বললো , তুমি শুধু সামনে যাবে, তারপর চলে আসবে। আর কিছু তোমাকে করতে হবেনা। ওদের কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না। সুতপা চুপ মেরে গেলো। তখনি ওর রুমে চলে আসলো। সুতপা কিছুতেই রাজীবকে ছাড়া অন্যকারো ঘর করার কথা ভাবতে পারছিলো না। কি করবে , এখন সে? মা বুঝতে পারলো ওর অবস্থা । সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, বললো আর কখনো তাকে বিয়ের কথা বলবে না। এইবারের মত তুমি সামনে যাও। আচ্ছা মা, সুতপা বললো। অনার্সের রেজাল্ট দিলো। রেজাল্ট মোটামুটি পাশ এসেছে। সুতপার সমস্ত আশা দূরাশা হয়ে গেল। একটা ভালো রেজাল্ট হলে রাজীবকে সে চ্যালেঞ্জ দিতে পারতো। সে এখনো রাজীবের উপর বিশ্বাস রেখেছে। কিন্তু রাজীব আজো অধরা-ই রয়ে গেলো।
১৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
সাদামাটা প্রেমের গল্প,
অধরা প্রেমের গল্প যেহেতু বিয়োগাত্মক, তাই একটি আবেদন থেকেই যায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রথম মন্তব্য কারীর জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
হায়রে দিদি ব্যর্থ প্রেমের ইতিকথা
আর কত লাগে ভালো।
সুতপাকে বলে দাও নিজের পায়ে দাঁড়াও
কত প্রেমিক আসবে যাবে হুমরী খেয়ে পরবে
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তা ঠিক এমন ব্যর্থতা কাঁহাতক ভালো লাগে কিন্তু কি করব দাদা কিভাবে যেন হয়ে যায় । আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ দাদা। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
ইঞ্জা
সুতপারা ভুল করে ভুল মানুষের জন্য অপেক্ষায় থাকে, অথচ রাজীবদের মতো পুরুষরা সুযীগে এড়িয়ে যায়।
গল্পটা বেশ ভালো লাগলো আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন, সাবধানে থাকুন।
ইঞ্জা
আপনিও ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভকামনা আপু।
সুরাইয়া পারভীন
রাজিবের প্রতি সুতপার প্রেম ছিলো নির্ভেজাল। তাই সে আর কারো সাথে ঘর করার কথা ভাবতে পারেনি। অন্ধ রাজিব হারিয়েছে তার প্রকৃত প্রেম।
হায় রে অধরা প্রেম
তোমার জন্য আর
হৃদয় পুড়বে রোজ রোজ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর করে বললেন । আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। অফুরন্ত শুভ কামনা রইলো
ফয়জুল মহী
সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন । ভালো থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
প্রদীপ চক্রবর্তী
গল্পটা বেশ ভালো আঙ্গিকে তুলে ধরলেন দিদি।
দুর্ভাগ্য রাজীব সুতপার প্রকৃত ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারলো না।
তাই সে আজও অধরা রয়ে গেলো!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই দাদা। মন্তব্য ভালো লাগলো। নিরন্তর শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
কিছু সময় প্রেম অধরা থেকেই পূর্ণতা পায়। বিরহে স্বর্গবাস আর কি! মধুর মিলন হতেই হবে এমনটা নাও হতে পারে।
ভালো থাকুন দিদিভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার সুন্দর মন্তব্যে ভালো লাগা রইলো ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
জিসান শা ইকরাম
রাজিব খুবই দুর্ভাগা,
বুঝলো না সুতপার আন্তরিক প্রেমকে।
রাজিব আর ফিরবে না, এমন রাজিবের জন্য অপেক্ষা না করাই ভালো।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ দাদা ভাই। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। সাবধানে থাকবেন