
তখন আমি নাইন অথবা ট্রেনের স্টুডেন্ট। পড়ালেখায় খুব একটা খারাপ নই তবুও সারাক্ষণ আমি বই নিয়ে বসে থাকতাম। না মানে শুধু বসে থাকতাম না পড়তামও। আমার পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিলো না। যখন তখনই পড়তাম। আমি যে ঘরটায় থাকতাম ওটার দক্ষিণ পাশে একটা জানালা ছিল। আর জানালা থেকে একটু পিছনে একটা বিশাল নিমগাছ আর নিম গাছের সাথে লাগানো একটা টং/মাচা ছিলো। বিকেল চারটা সময় স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বই নিয়ে বসতাম টং এ। এই টংয়ের নিচে একটা পুকুর ছিলো। পুকুরের উপর প্রাইমারী স্কুলের মাঠ সাথে লাগানো বাজার। তাই টংয়ে বসে থেকে অনেক অনেক মানুষ দেখা যেতো। আমি একবার বই দেখতাম একবার দূরে তাকিয়ে থাকতাম। এভাবেই বিকেলে কেটে যেতো। রাতে নামাজ শেষ করে খেয়ে দেখে পড়তে বসতাম জানালার কাছে। বেশ রাত অব্দি পড়তাম। পড়া শেষ করে জানালা খোলা রেখেই শুয়ে পড়তাম।
সেদিন আকাশে ছিলো ভরা জ্যোৎস্না। মনে হলো যেনো নিম গাছের মগডালে বসে আছে পূর্ণ যৌবনবতী চাঁদ। আর চাঁদের উপচে পড়া আলো জানালার কার্নিশ বেয়ে এসে পড়ছে আমার চোখে মুখে। কী যে দারুণ উপভোগ্য ছিল সে মুহূর্ত বলে বোঝানো যাবে না! আমি শোওয়া থেকে উঠে বসে অবলোকন করছি চাঁদের আলো আর মনে মনে ভাবছি এই সময় যদি কেউ পাশে বসে গান শুনাতো। ঠিক তখনই কারো কন্ঠে ভেসে এলো সুমধুর সুর।
‘এই অবুঝ মনে কে যে ক্ষণে ক্ষণে
চুপিচুপি দোলা দেয়।
ও গো জোছনা তুমিই বলো না
কেনো যে উতলা এ হৃদয়।’
চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ রূপোলী আলো সাথে প্রিয় গান
মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে টংয়ে বসলাম। কে কে গাইছে এতো সুন্দর সুরে? আমার প্রিয় গান। হায় একবার যদি তারে দেখতে পেতাম! আমার প্রিয় গান যা রোজ শুনিয়ে মা আমাকে ঘুমিয়ে দেন। আমার মা দারুণ গান করেন। মাঠে বেশ কয়েক জন আছে বোঝা যাচ্ছে। গান শেষে সবাই হাত তালি দিয়ে অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো। আমার অবুঝ মনে কী যে হচ্ছিল তা বলি কী করে? পরদিন থেকে খোঁজ নিতে শুরু করলাম কে গাইছিলো অতো সুন্দর গান? আমাকে জানতেই হবে।
ক্লাসে গিয়ে গালে হাত বসে রইলাম। আমার বন্ধুরা বললো
What happened?
Why are you silent?
Anything wrong?
নিঃশব্দে আমি তাকিয়ে আছি দূরে। জুঁই আমার গা-য়ে ধাক্কা দিয়ে বললো
Are you okay?
Where are you baby!
আমি মৃদু শব্দে বললাম
I’m in love
সবাই চেঁচিয়ে উঠলো।
Really!! who is he?
I don’t know. who is he
তারপর সব বললাম। গতরাতে ঘটনা। একজন বললো তুমি মরমে মরেছো সখি! বলেই হে হে হে করে হেঁসে উঠল।
তারপর রোজ রাতে অপেক্ষা করেছি সেই গান শোনার জন্য। কিন্তু কেউ আসেনি আর গানও করেনি। পরে জানতে পেরেছিলাম কে গেয়েছিল গান? যখন জানতে পেরেছিলাম তখন সে চলে গিয়েছে আমার শহর থেকে।রাজশাহীর একটা ছেলে যে এনজিওতে জব করতো। প্রচণ্ড মনোকষ্ট নিয়ে বন্ধুদের বললাম পেয়েছি তাকে এবং হারিয়েও ফেলেছি। সবাই একযোগে বলে উঠলো আহা!
আমি আজও সেই মুহূর্ত টা মনে রেখেছি। জানি না ও কে ছিল, কেমন ছিল দেখতে। তবুও মনে রেখেছি আমার একতরফা অদেখা প্রেম ও প্রেমিককে।
২০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সবার সাথে আমিও বললাম আহা !
ছোট গল্প ভালো লেগেছে ছোটো আপু।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
আহা, এমন গল্প পড়লে মনটা ননস্টালজিক হয়ে পড়ে। খুবই ভালো লাগলো আপনার অদেখা প্রেম, শুভ রাত্রি।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সুন্দর হয়েছে ছোট গল্প। অদেখা প্রেমের আফসোস টা মনে হয় খুব বেশি হয় আর আমৃত্যু যণ্ত্রণা দেয়। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন । শুভ রাত্রি
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দিদিভাই
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ফয়জুল মহী
আমি নাইন টেন ক্লাসে থাকতে তাকিয়ে থাকতাম। মনে পড়লে হাসি পায়
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
দারুন গল্প,
হইয়াও হইলো না।
সুন্দর উপস্থাপন।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
মে মাসের মন্তব্যে এখন উত্তর দিচ্ছেন!!
আরজু মুক্তা
আ হা!
সে চলে গিয়ে পথে রেখে গেলো ছায়া
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নিতাই বাবু
গানটা এখানে শুনুন!
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
রেহানা বীথি
আহা! ভাগ্যিস অদেখা ছিল! দেখাদেখির পর ছেড়ে গেলে আরও বেদনাদায়ক।
ভালো লাগলো ছোট্ট গল্প।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
হালিম নজরুল
আহা রে! দেখা হয়েও চলে গেল।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা… না দেখার আগেই চলে গেছে তো
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়