রাজনীতিতে দাবার চালে যে যতো পরিপক্ক, খেলা তার পক্ষেই যায়। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে পুরো ব্যাপারটা বিপরীতমুখী অবস্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে! রাজনৈতিক ক্যারিশমাটা এখানেই।
যদিও আপাত দৃষ্টিতে এই অবস্থানের নেগেটিভ দিকটাই আমরা চোখেচোখে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু পজিটিভ সুফলটা ভোগ করতে আমাদের বোধহয় আরও ১০/১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমি নিশ্চিত এই কটা লাইন পড়েই আপনারা আমার উপর ফুঁসে উঠেছেন।
অনেককেই বলতে শুনি, শেখ হাসিনা ভোটের রাজনীতি করতেই এই হেফাজত তোষণ নীতিতে হাটছেন। কথাটা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতারোহন যেখানে বাস্তবতা, সেখানে ভোটের রাজনীতি তো আসবেই। কিন্তু এটাও জেনে রাখুন, আপনি বা আমি কেনো? স্বয়ং শেখ হাসিনাও জানেন, কওমি ভাবধারায় বেড়ে উঠা ভোটার কেউ ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দেবে না। অথচ তারপরও তিনি তাদেরকে ফেবার করছেন। কেনো করছেন? কারণ, কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক বড় একটি গোষ্ঠীকে একপাশে হেলায় ফেলে রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। হয়তো সুদূরপ্রসারী এ চিন্তা থেকেই তাদেরকে ধীরেধীরে মূলধারার কাছাকাছি একীভূত করার চিন্তা থেকেই এ পথ হাটা তাঁর। চিন্তায় যারা দুর্বল, ভাবনায় যারা ধর্মান্ধ তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আগামী দিনে বৃহত এই অংশটিকে মূলধারার পথে টেনে আনতে কিছুটা কৌশলী তো হতেই হবে। ঠিক এই জায়গাটাতেই আমি আলোকপাত করতে চাই।
এছাড়া আরো একটি ব্যাপার আছে, বিশাল এই অংশটির ধর্মান্ধতার দুর্বলতাকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধ একটা গ্রুপ বরাবরই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তৎপর থাকে। নিয়ন্ত্রণে রেখে এ পথটিও বন্ধ রাখা যায়। এই ব্যাপারটা একটা রাজনৈতিক অর্জন বটে! ২০১৩ সাল আর ২০১৮ সালকে সামনে রাখলেই হিসাব মিলে যাবে।
এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে বলতে চাই, অনেক তো দিয়েছেন, এবার কিছু নিয়ে আসুন। শুকরানা মাহফিলে নাকি আবদার এসেছে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে ‘স্বাধীনতা’ পদক দেওয়ার। তা দাবীটির উৎসমূলে শফী হুজুরের আস্থা আছে তো? স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করেন তো তিনি? জাতীয় সঙ্গীতে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয় তো? ‘স্বাধীনতা’ পদক এর সাথে এ ব্যাপারগুলো কিন্তু জড়িয়ে আছে। এই কয়েকটি পয়েন্টে হেফাজতের অবস্থান স্পষ্ট না হলে ‘৭১ এর রক্তস্নাত স্মারক ‘স্বাধীনতা’ পদকটি অহঙ্কার হারাবে। গর্বের এ পদকটির মর্যাদা ক্ষুন্ন হোক, আমরা তা চাই না।
সময় এসেছে এখন হেফাজতকে বাস্তবতার মুখোমুখি করানো। দাবীর পাশাপাশি দায়টাও বর্তায়। দায়হীন দাবী মেটাতে থাকলে তা সুফল নয়, কুফলই বয়ে আনবে। দাবীর মাত্রা সীমা ছাড়াতে থাকবে। ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।
যাহোক, পরিবর্তনের বাংলাদেশে আপনার হাত ধরেই হেফাজতি মোকামে পরিবর্তনটা আসুক। বৃহত এই অংশটিতে পরিবর্তন আসলে ধর্মান্ধতার কানাগলি থেকে কিছুটা হলেও আলো আসবে।
শুভকামনা রইলো।
১২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এদেরকে মুল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। নইলে দেশ পিছিয়ে যাবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অবশ্যই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যা করেছেন তা সময়ের প্রয়োজনেই করেছেন এটাই তার বিজ্ঞ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।দেখা যাক ভবিষৎ কি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমিও তাই মনে করি। এবার ভবিষ্যতই জবাব দেবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে একজন বিজ্ঞ মানুষ।তিনি তার সময়ে প্রতিটি ধাপেই সফলতার সাথে জয়ী হয়েছেন।আগামিতেও তিনি এই সফলতার ধারা বজায় রাখবেন বলেই মনে করি।লেখা খুব ভালো হয়েছে আপু।শুভেচ্ছা রইলো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ আপু দেশের সকল মানুষকে ঠিক রাখতে তিনি যা কৈশল নিচ্ছেন তা একদম ঠিক। সবাই ভাল থাকুক। কামনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
তাই কামনা করি। তাঁর কর্মই জনমনে আস্থা যুগিয়েছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভবিষ্যতই বলে দেবে দেশের অবস্থা।
ভালো থেকো রুবা’পু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হুম।
তুমি কেমন আছো দিদি?
মায়াবতী
রাজনীতি কম বুঝি, কিন্ত আপনার কথা গুলো খুব সুস্পষ্টভাবে এসেছে তাই বুঝতে অসুবিধা হইনি।
ভাল লাগলো লেখা টা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ। চেষ্টা করি বুঝার মতো করে লিখতে।