হিমুর হাতে চারটি শব্দ

মুহম্মদ মাসুদ ২৪ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১২:২১:৫৪অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

 

ইদানীং ভাবনার কথা ভাবতে ভাবতে নিজের দেহটি বিষন্ন ভগ্নহৃদয়ে ভুগছে। জোড়াতালি দিয়ে কাপড়চোপড় কিংবা জুতা শিলাই করা গেলেও হৃদয়ের কোণে জমে থাকা একরাশ নিরুত্তর প্রশ্নগুলো ধসে ধসে মৃত্যুর কবলে পরে। আর শূন্য দশমিক পনের পরিমাণ সমভূমির হৃদয়ের হালচাল নিয়ে বেঁচে থাকাটা আরও বেশি কষ্টকর ও জরাজীর্ণ হয়ে ওঠে।
হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠলো। হিমু নিজেও আজ অসময়ে রুমে ঢুকলো। জিজ্ঞেস করলাম – কি রে আজ হঠাৎ অসময়ে চলে এলি। কিন্তু কোনরকম প্রতিত্তোর পেলাম না। কপালের ভাঁজে শুধু কিছু চিন্তার রেশ দেখা যাচ্ছিলো। ঠোঁটে-মুখের মিষ্টি হাসিখুশিগুলো বিলীন আর জেলখানার কারাগারে বন্দী।
হিমু বালিশে মাথা আর বাম হাত কপালে দিয়ে গভীর চিন্তায় মশগুল হয়ে দূরপাল্লার বাসের যাত্রী হয়েছে ততক্ষণে। আর এতো গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে দুঃখের দুয়ারে ঘেঁষতে দেখিনি কখনো। কখনো নিষ্পলক চোখে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকতেও দেখিনি হিমুকে। কিন্তু আজ সবকিছু যেন এলোমেলো এলোপাতাড়ি, অগোছালো জরাজীর্ণ জীর্ণশীর্ণ।
হুট করে টেবিল চেয়ারে হেলান দিয়ে ডায়েরি হাতে কলম কামড়াতে শুরু করলো। ভাবছে আর ভাবছে। কিন্তু মিনিট দশেক পার হলেও কোনকিছু লিখতে দেখলাম না হিমুকে। এই প্রথম হিমু কোনকিছু লিখতে…।
কি হয়েছে তোর? কোন কথা বলছিস না যে। শুধু কলম…।
হিমু – কি বলবো? কিছু হয়নি তো।
কিছু হয়নি মানে? তোকে তো কোনদিন এতো চিন্তা করতে দেখিনি?
হিমু – আরে! এমনিতেই। আসলে কোনকিছু ভালো লাগছে না। তাই…
তুই বলবি আর আমি তাই মেনে নেব। আসল কথা খুলে বল। কি হয়েছে?
হিমু – আসলে (আমতাআমতা করে) মানে…। চারটি শব্দের এমন একটি বাক্য বলতে হবে যার প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষর একই এবং বাক্যটি একটি প্রেমের কথা প্রকাশ করবে।
এমনিতেই চিন্তায় চিন্তায় কয়েকটি চুল পেকে গেছে। তারপর আবার গোয়েন্দা রহস্য। এবার বুঝি মাথার সবগুলো নিমেষেই পেকে যাবে কচিকাঁচা বয়সেই। আর ক্লাসের যুবতী মেয়েরা কাকু কাকু বলে ডেকে ডেকে হাসিঠাট্টা করবে।
হিমুও ভাবছে আমিও ভাবছি। কিন্তু কোন কূলকিনারা করতে পারছি না। মনে হচ্ছিল শুধুশুধু ট্রেনের চাকায় হাওয়া দিচ্ছি। আর যদি এমন বাক্য থেকেই থাকে তাহলে এতোক্ষণে নিশ্চয়ই পেয়েই যেতাম। কিন্তু পাচ্ছি না। আমি হাল ছেড়ে দিলেও হিমু হাল ছাড়তে নারাজ। তার একটিই কথা। যদি এমন কোন শব্দ কিংবা বাক্য যদি নাই থাকে তাহলে তো সে আমাকে জিজ্ঞেস করতোনা। আর এই কথার দ্বারা আমার প্রেমের পরীক্ষা নিতো না নিশ্চয়।
হঠাৎ হিমু হইচই করে লাফিয়ে ওঠে।
পেয়েছি, পেয়েছি, শব্দ আর বাক্যটি খুঁজে পেয়েছি।
সত্যি পেয়েছিস?
হিমু – হ্যাঁ, সত্যিই পেয়েছি। তবে, শালার এতো সহজ বাক্যটি মাথায় আসতে এতো নাকানিচুবানি খেতে হলো। এটাতো আমরা হরহামেশাই বলে থাকি।
কি বলে থাকি? ফাউ কথা না বলে আসল কথাটি বললেই তো হয়। তাইনা।
হিমু – প্রথম পলকেই প্রেমে পড়েছি।
তারপর থেকে…।

৬৮২জন ৬৮২জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ