ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ।
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্রী রওশন আরা।সব সময় পড়তো পছন্দের সাদা রঙের শাড়ি,কিন্তু মেয়েটি ছিলো অসীম সাহসী।রাজনীতিক মিছিল,মিটিং আর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সব সময় ছিলেন ছেলেদের সমান-সমান মেয়ে বলে তাকে টেক্কা দেয়ার সাহস ও কোনদিন করতে পারেনি কোন ছেলে।
৭১ এ যুদ্ধ শুরুর কিছু দিন পরে গেরিলা অপারেশন এর অভিযোগে মেজর খানের নির্দেশে পাকি আর্মি অভিযান চালায় রওশন আরাদের হলে। পুরো হলকে ঘিরে ফেলা হল। মাইক হাতে মেজর সকল মেয়েদের সারেন্ডার করে ট্রাকে উঠার নির্দেশ দিতেই ছাদ থেকে ভেসে আসলো এক দৃপ্ত নারীকণ্ঠ
– “মেজর, অপেক্ষা করো -আসছি”
উপর থেকে নেমে বীরদর্পে মেজরের সামনে এগিয়ে গেলো সে। পরনে ছিল সাদা শাড়ি, কপালে লাল টিপ। লাল টিপটা যেন ধ্রুবতারার মতো জ্বল জ্বল করছিলো।
স্পষ্ট করে মেজরকে দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো- “Where is your tank?”
মেজর আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলো ট্যাংকটা। রওশন কাউকে কিছু না বলে আচমকা ঝাপিয়ে পরলেন ট্যাংকটার উপর।কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই বিকট শব্দে ধ্বংস হয়ে গেলো ট্যাংকটা।মেজর এবং ৫০০ সেনার সামনে রওশন মাটিতে মিলিয়ে দিল তাঁদের ট্যাংক। তাঁর কাপড়ের নিচে শরীরের সাথে বাঁধা মাইন দিয়ে। সেই সাথে নিজেও দেশের জন্য প্রাণ দিল বীরের বেশে। ট্যাংক ধ্বংসের শব্দ শুনে উপরে থাকা মেয়েরা গোলা বারুদ ছুড়তে থাকলো পাকিদের উপর। কিন্তু পাকিদের সরবরাহকৃত বারুদের তুলনায় তা ছিল খুবই অপ্রতুল।তাতে কি!
কিছুতেই হার মানেনি বাংলার মেয়েরা, ধরা দেয়নি হায়নাদের হাতে। যখন বারুদের মজুদ ফুরিয়ে এল ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লো তাঁরা। বীর মায়েদের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার মাটি।আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি আমাদের মা বোনেরা শুধু নির্যাতিত হয়েছিলো পাকি হায়নাগুলোর হাতে। কিন্তু বার বারই চেপে যাওয়া হয়েছে তাঁদের বীরত্বের কথা। এরকম একজন দুজন নয় হাজার হাজার রওশন আরার বীরত্বের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা।
কিন্তু ৪৩ বছর পরে একটা বিষয় দেখে অবাক হয়ে যাই, ৪৩ বছর আগে যে বাঙালি মেয়েরা বন্দুক কিংবা বারুদ হাতে কুকুরের মতো মেরেছিল পাকিদের,আজ ৪৩ বছর পরে সেই বাঙালি মেয়েরাই আবার পাকি বংশোদ্ভূত মারখোর প্রজাতিকে “ম্যারি মি আফ্রিদি” প্ল্যাকার্ড হাতে চুম্বন ছুড়ে দেয়।৪৩ বছর আগে যেই পাকিরা খামচে চিড়ে খুলে নিয়েছিলো সারে ৪ লাখ বাঙালি নারীর পোশাক, আজ ৪৩ বছর পরে সেই বাঙালি মেয়েদের আধুনিক পোশাক হয়ে উঠেছে পাকিস্তানি লন।
বড় অদ্ভুত প্রজন্ম আমরা।আধুনিক হবার বাসনায় শুকরের সাথে সহবাসের ফতোয়াকেও নির্বিঘ্নে মেনে নেই আমরা।সমস্যা কি!“৭১” সে- তো অনেক পুরনো ঘটনা।
বিঃদ্রঃ লেখাটি একটি পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে তার সাথে নিজ থেকে কিছু স্মপাধনা করেছি।
২৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
শহীদ রওশন আরা সহ সাহসী সে সব বীরদের জানাই শ্রদ্ধা।
এনারা আমাদের প্রেরনা যোগাবে যুগের পর যুগ।
আর বর্তমান, আফ্রিদি মেরি মি বা লন ওয়ালীদের ঘৃনাই জানাবে সবাই।
আরাফ কাশেমী
ঘৃণা জানাতে জানাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে উঠেছি জানি না তারা কবে থামবে ।
শুন্য শুন্যালয়
এরকম একটি ঘটনা এতদিন অজানা ছিলো, ভাবতেই লজ্জা বোধ হচ্ছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ারের জন্য। ৪৩ বছর পরের নারীদের ব্যাপারে কিছুই বলার নেই, গালিটা চেপে গেলাম।
আরাফ কাশেমী
আমি নিজেই জানতাম না আমি এই বিষয়ে জানতে পেরেছি একটা ফেজবুক পেজ থেকে
ফাতেমা জোহরা
যেদিন উনার কথা প্রথম পড়েছিলাম শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। কি অসম্ভব সাহসের অধিকারিণীই না ছিলেন তিনি। আমার মনে প্রায়ই একটা ইচ্ছে জাগে যদি রওশন আরা, নূরজাহান আম্মাদের মতো কিংবদন্তী নারীদের জীবনটাকে নিয়ে একটা মুভি বানাতে পারতাম। যদি সারা বিশ্বকে জানাতে পারতাম এইসব আইরন লেডির কথা !! ইশ্ !! এই ইচ্ছাটা মনেহয় মনের মাঝেই রয়ে যাবে 🙁
আরাফ কাশেমী
আমারো মনের মাঝে ইচ্ছা আছে মুভি বানানোর মনে মনে আমার স্টোডিং এর নাম ও ঠিক করে রেখেছি “স্টোডিং ক্রারক প্লাটুন” এই ব্যাপারে সামুতে একটা পোস্ট লিখছিলাম অনেক আগে
আরাফ কাশেমী
স্টোডিও*
কৃন্তনিকা
রওশন আরা সম্পর্কে জেনেছিলাম বেশ কিছুদিন আগেই ফাতেমা জোহরা আপুর কাছে থেকে।
তখন অবাক হয়েছি এসব আমরা কেন জানি না?
আমাদের সমাজ বই গুলোতে কেন এসব উল্লেখ নেই?
আসলে যে দেশের পিতাকে মানুষ পিতা হিসেবে মানে না, সেই দেশে থেকে ভালো কি আশা করা যায়!!!
” ৪৩ বছর পরে একটা বিষয় দেখে অবাক হয়ে যাই, ৪৩ বছর আগে যে বাঙালি মেয়েরা বন্দুক কিংবা বারুদ হাতে কুকুরের মতো মেরেছিল পাকিদের,আজ ৪৩ বছর পরে সেই বাঙালি মেয়েরাই আবার পাকি বংশোদ্ভূত মারখোর প্রজাতিকে “ম্যারি মি আফ্রিদি” প্ল্যাকার্ড হাতে চুম্বন ছুড়ে দেয়।৪৩ বছর আগে যেই পাকিরা খামচে চিড়ে খুলে নিয়েছিলো সারে ৪ লাখ বাঙালি নারীর পোশাক, আজ ৪৩ বছর পরে সেই বাঙালি মেয়েদের আধুনিক পোশাক হয়ে উঠেছে পাকিস্তানি লন।” কথা গুলো অতি বাস্তব। (y)
ধন্যবাদ আপনাকে রওশন আরাকে নিয়ে লেখার জন্য। আরো লিখুন। আমরা আরো রওশন আরা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক…
আরাফ কাশেমী
আমাদের কাছ থেকে রওশন আরাদের কে কেঁড়ে নিয়েছিলো পাকিরা আর তাদের আত্নত্যাগ গুলো তিলে তিলে মুছে দিয়েছে এদেশের মীরজাফরেরা তাই খুঁজলেও তাদের সম্পর্কে জানা অনেক কষ্ট হয়ে উঠে তাই হয়ত কিবোর্ড চালাতে কষ্ট হয়
সঞ্জয় কুমার
এখনও যদি যুদ্ধ হয় । অনেক পাবেন হিন্দু রাজাকার । মুসলিম রাজাকার । যে ধর্মের ই হোক রাজাকার মানেই গোলাম । প্রভুর পা চাটা কুত্তা ।
আরাফ কাশেমী
ধর্ম তাদের ব্যবসার বস্তু বিশ্বাসের নয়
লীলাবতী
ভাবতে ভাললাগে যে রওশন আরার মত নারীরা এদেশে জন্ম নিয়েছিলেন।আমরা তাঁদের গর্বিত উত্তরাধীকার।আপনাকে ধন্যবাদ এমন পোষ্টের জন্য।
” ৪৩ বছর পরে একটা বিষয় দেখে অবাক হয়ে যাই, ৪৩ বছর আগে যে বাঙালি মেয়েরা বন্দুক কিংবা বারুদ হাতে কুকুরের মতো মেরেছিল পাকিদের,আজ ৪৩ বছর পরে সেই বাঙালি মেয়েরাই আবার পাকি বংশোদ্ভূত মারখোর প্রজাতিকে “ম্যারি মি আফ্রিদি” প্ল্যাকার্ড হাতে চুম্বন ছুড়ে দেয়।৪৩ বছর আগে যেই পাকিরা খামচে চিড়ে খুলে নিয়েছিলো সারে ৪ লাখ বাঙালি নারীর পোশাক, আজ ৪৩ বছর পরে সেই বাঙালি মেয়েদের আধুনিক পোশাক হয়ে উঠেছে পাকিস্তানি লন।” একদম সঠিক বিশ্লেষন
আরাফ কাশেমী
ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এমন বীরাঙ্গনাদের স্যালুট জানাই।
শুন্য শুন্যালয়
মা মাটি দেশ ভাই, উনি বীরাঙ্গনা নয়, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
শিশির কনা
শহীদ রওশন আরার কথা প্রথম জানলাম।এসবের প্রচার এত কম কেন ভাইয়া?দেশের জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবেছেন বলেই এমন করে জীবন দান করেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
আরাফ কাশেমী
ধন্যবাদ সাথেই থাকবেন করব খুঁড়ে ইতিহাস জানানোর দ্বায়িত নিয়েছে কিছু এ যুগের বিচ্ছু
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বিশ্বাস করি, এখনও শেষ হয়ে যায়নি প্রজন্মকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার সময় ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা আমাদের দায়িত্ব কতটুকু করেছি বা করছি?
এই লেখাটি কি প্রজন্মের মনে দোলা দেবে না? নিশ্চয় দেবে।
আমাদের দায়িত্ব প্রজন্মকে ওই পর্যন্ত টেনে আনা। তাদের কাছে জন্মইতিহাস তুলে ধরা। দোষ আমাদের; অবশ্যই আমাদের। আমরা প্রজন্মের সুপ্ত মস্তিষ্কে সংগ্রামের ইতিহাস কতটুকু তুলে ধরেছি? শিক্ষিত করে তুলতে চেয়েছি, কিন্তু সুশিক্ষা কতটুকু দিয়েছি? নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস কতটুকু জানিয়েছি? বড় হয়ে ইংরেজী জানা হয়ে নাম কামাবে বলে তাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়েছি।
ঘর হতে মানবশিশুর শিক্ষার শুরু-সে ঘরেই শিশুটি দেশের জন্মইতিহাসের কিছুই জানতে পারেনা। আর বিদ্যালয়ের পাঠ? ইংলিশ মিডিয়াম? তার দায় কতটুকু?
এরপর আসে প্রশাসনের দায় কতটুকু ছিলো? ৭৫ পরবর্তী প্রশাসনতো দীর্ঘকাল স্বাধীনতা বিরোধীদের দখলেই ছিলো। আর এই সুযোগে ৭১ এর পাকপ্রেমীরা ধর্মের লেবাস লাগিয়ে কচ্ছপ গতিতে ধর্মের নামে পানি পড়া খাইয়ে আজকের প্রজন্মের মগজ ধোলাই করেছে।
আর আজ! স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ঘুমন্ত বাঙালী জেগে দেখে তাঁর রক্ত দিয়ে কেনা অহংকার ‘বাঙালীত্ব’ আজ প্রায় নিলামে উঠেছে।
এখন আর বাঙালীরা ভাবে না—
“মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই,
দীন-দুঃখিনি মা যে আমার এর বেশি তার সাধ্য নাই।”
আরাফ কাশেমী
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ঘুমন্ত বাঙালী জেগে দেখে তাঁর রক্ত দিয়ে কেনা অহংকার ‘বাঙালীত্ব’ আজ প্রায় নিলামে উঠেছে।
খেয়ালী মেয়ে
রওশন আরা মতো বীর নারীদের গল্প খুব একটা প্রকাশ পায় না, তাদের সাহসী বীরগাঁথা আমাদের কাছে যেমন অজানা রয়ে গেছে তেমনি রয়ে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে—অনেক ধন্যবাদ এমন একটা পোস্টের জন্য–সেই সাথে রওশন আরাসহ সকল বীর নারীদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা…
আরাফ কাশেমী
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
মামুন
কিছুতেই হার মানেনি বাংলার মেয়েরা, ধরা দেয়নি হায়নাদের হাতে। যখন বারুদের মজুদ ফুরিয়ে এল ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লো তাঁরা। বীর মায়েদের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার মাটি।আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি আমাদের মা বোনেরা শুধু নির্যাতিত হয়েছিলো পাকি হায়নাগুলোর হাতে। কিন্তু বার বারই চেপে যাওয়া হয়েছে তাঁদের বীরত্বের কথা। এরকম একজন দুজন নয় হাজার হাজার রওশন আরার বীরত্বের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা।- বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো…
নুসরাত মৌরিন
স্যালুট রওশন আরাদের।
স্যালুট বাংলা মায়ের বীর কন্যাদের।
সত্যি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই যখন দেখি আমারই প্রজন্মের কেউ কেউ পাকিদের প্রেমে বিভোর হয়।
ধিক্কার সেইসব পাকিপ্রেমীদের।
নিজেদের অপরাধী লাগে।
জানি না, শহীদদের রক্তেরঋণ কতটুকু আমরা উত্তর প্রজন্ম শোধ করতে পারবো?
বন্দনা কবীর
সোনেলায় এসে মন শান্তিতে পুর্ন হয়ে গেল।এমন সব নতুন লেখক/ব্লগার এখানে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি হিসেবে লিখছেন,এটি ভাবাই যায়না।লেখাটি ভুলে যাওয়া ৭১ কে সামনে নিয়ে আসবে।লজ্জা হয় বর্তমান প্রজন্মের কিছু নারীদের দেখলে,যারা ভুলে গিয়েছে ৭১ এর অপমানকে।