
প্রত্যেক মানুষের জন্যই নিশ্চিন্ত ঘুম জরুরী। অস্থির সময়, নানা কারনেই আমরা ঘুমোতে পারিনা। জাক্তারের কাছে গেলে তিনি ঘুমের ওষুধ লিখে শুধুই ঘুমোতে বলেন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে কিছুদিন মুখের লালা ঝরিয়ে খুব ঘুমিয়ে নিলেন। আবার ওষুধ বন্ধ হবার সাথে সাথেই ঘুম উধাও।
আমরা বলি, অতি ব্যস্ত মানুষরা নাকি ঘুমাতে পারেনা। আসলে তা নয় কাজ বরং মানুষকে ঘুমাতে সাহায্য করে। অনেক কাজ করার পর আপনি নিশ্চিন্তে গভীর ঘুম ঘুমিয়ে নিতে পারেন। গভীর ঘুম অল্পসময়েও অনেকক্ষনের সমান। তাহলে কেন ঘুম হয়না?
আসলে ব্রেইন যখন অতি উত্তেজিত থাকে তখনই আমাদের ঘুমের সমস্যা হয়। যেমন- দীর্ঘসময় মোবাইল/ ল্যাপটপের সামনে থাকা। পারিবারিক স্ট্রেস, চাকুরীজনিত সমস্যা, এলকোহল, অতি চা/ কফি ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগায় প্রিয়জনের অকারন গুতা। যা ঘুম না হবার অন্যতম কারন।
দেখা গেলো আপনি কিছুই করেননি অথচ অপরাধী হয়ে কিছু গরম শব্দের ছ্যাঁকা খেয়ে বসে আছেন। তাকে কিছু বলাও যাবেনা। কারন চুলার উপর বসা গরম প্যানে শুধু ভাজি- ভূজিই সম্ভব। ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত তাকে ব্যবহার করা যাবেনা। সো ওয়েট করতেই হবে।
ওয়েট করতে গিয়ে আপনার বারোটা। আপনার মেজাজ ভীষন খারাপ কিন্তু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন। আর তা করা হলো নিজের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করার সমান। প্রিয় গান শোনা, ঘুরতে যাওয়া এসব তখন বদহজম হয়ে তা অতি প্রিয় ঘুমে আঘাত হানবে আইলা হয়ে। তবুও ব্রেইন ঠান্ডা রাখতে ঘুমানো জরুরী। আমি খুব চেষ্টা করি স্বার্থপর ঘুম দেবার। যেমন- কালই একটা নিদারুন স্বার্থপর ঘুম দিলাম। দশটার দিকে উঠে ভাবলাম সবাইকে জানাই। তাহলে চলুন দেখা যাক কি কি করলে স্বার্থপর ঘুম দেয়া যায়,,,,
-নিজেকে ভালোবাসুন! নিজেকে ভালোবাসার বিকল্প নেই। নিজেকে ভালোবাসলে আপনি সুস্থ- সুন্দর থাকতে চাইবেন। আর সুস্থ- সুন্দর থাকার একটা অংশ যেহেতু ভালো ঘুম তখন সেটাও করতে চাইতেও আর সমস্যা থাকবে না।
-ঘুমের প্রেমে পড়তে হবে। প্রেমের অভিজ্ঞতায় যেমন হয় কারো কোন কিছুই মাথায় ঢোকে না, শুধু তাকে নিয়ে ভাবতেই মন চায়। আশেপাশের জগত সংসার চোখের সামনে থেকেও নেই বলে মনে হয়। কেউ ঝগড়া করতে চাইলেও আর মুড আসবে না। সেরকম একটা অনুভূতি নিজের মাঝে তৈরি করতে হবে।
-চাকুরীজীবি হলে অফিস থেকে ফিরতে আধাঘন্টা হাঁটাপথে ফিরুন। বাড়িতে থাকলে ম্যাটম্যাটে বিকেলটা শুয়ে-বসে না থেকে হেঁটে আসুন। আর অবশ্যই ফিরে গরম হলে গোসল সেরে নিতে হবে।
-আমরা ফোন বুকে নিয়ে ঘুমোতে যাই। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফোন অবশ্যই সাইলেন্ট মুডে রাখুন। চ্যাটিং বন্ধুদের সাথে দশটার মধ্যেই সব সেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
-সঠিক খাদ্যাভাস জীবনে অত্যন্ত জরুরী। অতিরিক্ত তেল, চর্বি, ফাস্ট ফুড বর্জন করতে হবে। রাতের খারার ৭.৩০-৮.০০ মধ্যে সেরে নিতে হবে। এলকোহল বা কফি/ চা নেয়া যাবে না।
– ঈশার নামাজ আযানের সাথে সাথে পড়তে হবে। কারন নামাজ মনকে শান্ত রাখে।
-ঘুমানোর জন্য সঠিক তাপমাত্রার অন্ধকার একটি ‘ ঘুমঘর’ খুবই জরুরী। বিছানা- বালিশ অবশ্যই পরিস্কার হতে হবে। বেশি শক্ত বা নরম বিছানা নয়, মিডিয়াম বিছানা ঘুমের জন্য উপযোগী।
-যাদের ঘুমের সমস্যা তাদের উচিত একটা সময়ের পর সন্তানদের কাছে না রাখা। তাদেরও একা, চুপচাপ ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত।
-পাশের প্রিয় মানুষটার কিছু খারাপ ঘুম অভ্যাসেও আপনার ঘুম না হতে পারে। তাই সে যতোই বলুক – জান, তোমাকে ছাড়া একদমই চলে না।’ তবুও হাল্কা হাসিতে তাকে দরজা থেকে বিদায় করুন। এমন ভান করুন আপনিও তার জন্য ব্যাকুল কিন্তু কি করবেন ডাক্তার ঘুমোতে বলেছে। কারন স্বার্থপর ঘুমের জন্য একটু স্বার্থপর হওয়া জরুরী।
-ঘুমানোর আগে যোগব্যাযাম যেগুলো ব্রেইন শান্ত রাখে তা করা যেতে পারে। যেমন- যোগাসনে বসে অন্তত কিছুক্ষন নি:শ্বাস নিয়ে ছেড়ে দেয়া।
-আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা। অতি টাইট পোশাক সমস্যা। আবার অতি ঢিলা পরলে বুঝতেই পারছেন কি হতে পারে?
-পছন্দের বই পড়া যেতে পারে। যেমন- রোমান্টিক প্রেমের বা হুমায়ুন আহমেদের হাসির। এরপর তন্দ্রাভাব এলেই শুয়ে পড়ুন।
সবাই ভালো থাকুন। আর আপনারাও আমার মতো চেষ্টা করুন এভাবে বেশি বেশি ঘুমানোর। আর ভালো ঘুম হলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।
ছবি- নেট থেকে
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আপ্নে দাক্তার তা আগে বল্বেন্না!! টিনের বাক্সে কত ফেলবো!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা টিনের বাক্স।টাকা চাই না সাব, আশির্বাদ চাই।ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
বই পড়লে তো শেষ। শেষ না করা পর্যন্ত ঘুম হবে না।
তবে, আমার এই ঝামেলা নাই। শুইছি ঘুমাবো।
তবে, এটা ঠিক টাইমিং। আপনি ১২ টায় ঘুমাবেন। ঐটা যেনো ঠিক থাকে।
ঘুম ভালো হোক সবার
রোকসানা খন্দকার রুকু
পৃথিবীর একমাত্র সুখী মানুষরাই বলতে পারে শুইছি ঘুমাবো। এমন হতে পারলে খুব ভালো হতো। ১০টায় ঘুমোতে যেতে হবে। কতো আয়োজন সে ঘুমের।।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
স্বার্থপর ঘুমের জন্য প্রিয়জনকে অন্য রুমে পাঠানো দারুন আইডিয়া তবে সেটা সবাই মেনে নিবে না। অবশ্যই ঘুমের জন্য পরিবেশ বড় বিষয়, ঘুম খাওয়া এসবের সময়টা ঠিক রাখাটা খুব জরুরি। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা আপনিই তো মানছেন না দেখছি। সবসময় না মাঝেমধ্যে পাঠানো যেতেই পারে। ঐযে স্বার্থপর হতে হবে।
আপনার জন্যও শুভসকাল।
রেজওয়ানা কবির
হায়রে! ঘুম,,,, এই না ঘুমানো ছোটবেলায় কেন যে শখের বসে শিখেছিলাম যেটা আজ আমার কাল হয়ে গেছে😭😭অকারনে না ঘুমাতে পারা অভ্যাসে পরিনত বলেইতো এখন ঘুমকে ডেকে আনা খুব কষ্টকর। তাই শত আয়োজন, আপনার উপর্যুক্ত টোটকা,ঘুমের ঔষধ, যোগব্যায়াম সব এক্সপেরিমেন্ট এ জীবনে৷ করা শেষ বড় আপা। তবুও তো পারি না ঘুমকে আনতে। তবে চেষ্টা করতেই থাকি,দেখি পারি কিনা…???
আপনিও চেষ্টা করবেন আপামনি।
এবার সিরিয়াসলি বলি,,, এই লেখার বিষয়গুলো ভালোভাবে মানতে পারলে অনেক উপকারে আসবে।
দেখা গেলো আপনি কিছুই করেননি অথচ অপরাধী হয়ে কিছু গরম শব্দের ছ্যাঁকা খেয়ে বসে আছেন। তাকে কিছু বলাও যাবেনা। কারন চুলার উপর বসা গরম প্যানে শুধু ভাজি- ভূজিই সম্ভব। ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত তাকে ব্যবহার করা যাবেনা। সো ওয়েট করতেই হবে।
চমৎকার লেগেছে।।।।
শুভকামনা।
রেজওয়ানা কবির
না ঘুমাতে পারা সব আব্বুর দোষ। দাঁড়াও লেখাটি আব্বুকে পাঠাই যদি তেনার উপকারে আসে!!!!
সবচাইতে বড় কথা নিজেকে ভালোবাসি। চলো শুরু করি আজ থেকে,,,,,
রোকসানা খন্দকার রুকু
শারীরিক অসুস্থতা বা কাজে না ঘুমানো অন্য কথা। তবে আমরা অকারন যেটা করি তা একসময় অভ্যাসে পরিনত হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে। চেষ্টা করছি দেখি হবে নিশ্চয়ই।।।
হালিমা আক্তার
রুটিন মাফিক চললে ঘুমের তেমন সমস্যা হয়না। তবে রাত জাগা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। ইদানিং ঘুমের যন্ত্রনায় আছি। প্রচন্ড ঘুম ঘোরে থাকি। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম ঠিক সারাদিন ঘুম ঘুম নিয়ে থাকা সত্যিই কষ্টের। তবুও চেষ্টা করুন। শুভ সকাল।
রিতু জাহান
হা হা,, এটা দারুন ছিলো
পাশের প্রিয় মানুষটার কিছু খারাপ ঘুম অভ্যাসেও আপনার ঘুম না হতে পারে। তাই সে যতোই বলুক – জান, তোমাকে ছাড়া একদমই চলে না।’ তবুও হাল্কা হাসিতে তাকে দরজা থেকে বিদায় করুন। এমন ভান করুন আপনিও তার জন্য ব্যাকুল কিন্তু কি করবেন ডাক্তার ঘুমোতে বলেছে। কারন স্বার্থপর ঘুমের জন্য একটু স্বার্থপর হওয়া জরুরী।’
আমি খুব ঘুম কাতুরে একজন মানুষ। আমার অভ্যাস একা ঘুমানো।
ঘড়ির টিকটিক শব্দে পর্যন্ত আমার ঘুম হয় না। এমনকি আমার কারো কম্বলের নীচেও ঘুম হয় না মানে এক কম্বলের নীচে আমি একা ছাড়া ঘুম হয় না।
বর নাক ডাকে না তেমন। এখন ধুমচে ডাকে,,, তাই আমি রুম না শহরই আলাদা করেছি🙈
মানে সে অন্য শহরে (চাকরির কারনে)
বেঁচেই গেছি😁
আমি দিনের যে কোনো সময় ঘুমতে পারি।
দারুন টিপস্ দিলেন। শুভকামনা রইলো আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমরা যেটার জন্য বেশি কাতর হই সেটাই পাওয়া মুশকিল। আমিও ভীষন ঘুমুতে চাই কিন্তু হয়ে ওঠে না। যখন একেবারেই নিতে পারি না তখন স্বার্থপর হতেই হয়।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
বাহ ঘুম নিয়ে সুন্দর বলেছেন রুকু আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সুন্দর এবং প্রয়োজনীয় লেখা — নিজেকে ভালোবাসুন! নিজেকে ভালোবাসার বিকল্প নেই। নিজেকে ভালোবাসলে আপনি সুস্থ- সুন্দর থাকতে চাইবেন। আর সুস্থ- সুন্দর থাকার একটা অংশ যেহেতু ভালো ঘুম তখন সেটাও করতে চাইতেও আর সমস্যা থাকবে না।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যা সেটাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা আপনাকেও ধন্যবাদ। সুস্থ আর ভালো থাকবেন সবসময়।