ফটোগ্রাফীর শুরুটা ছিলো নেহায়েৎ শখের। ক্যামেরা কেনার পিছনে মূল কারনটা ছিলো পারিবারিক ছবি ও ফুলের ছবি তোলার জন্য। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। হঠাৎ মন কেড়ে নিলো পাখির ছবির প্রতি। শুরুটাও হলো বার্ড ফটfগ্রাফী দিয়ে। জীবনের প্রথম যেদিন শালিকের ছবি তুলি সেদিন মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তারপর থেকে পাখির ছবি তোলার জন্য নেশা ধরে যায়। বর্তমানে যারাই বার্ড ফটোগ্রাফী করছেন তাদের অধিকাংশই আমার সন্তান সমতুল্য ও বয়সে ছোট। বয়সের দিকে না তাকিয়ে ভালো ফটোগ্রাফারের পিছনে সময় দিতে চেষ্টা করেছি। তাদের সাথে বন্ধুত্বসূলভ মনোভাব নিয়ে ছবি তোলার জন্য পিছু পিছু ছুঁটেছি। অনেকেই সেই সময় সহযোগীতা করেছেন। আবার অনেকেই এড়িয়ে গেছেন। কেউ কেউ ভুল শিক্ষা দিয়েছেন। সবকিছু মেনে নিয়ে বার্ড ফটোগ্রাফীর পিছনে লেগে ছিলাম। মনে একটা সাহস সবসময় কাজ করতো যে, আমি বার্ডফটোগ্রাফী পারবো। এই ক্যাটাগরীর ছবিয়ালদের অনেকেই ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার বলেন। আসলে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফী খুব কঠিন একটি কাজ। পাখির ছবি বা দু’চারটি বন্য প্রাণীর ছবি তুললেই ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না বলে আমার বিশ্বাস। আর আমি কখনই নিজেকে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি পেতে চাই না। ব্যাপক লেখা পড়া ও বন্যপ্রাণীর হেবিটেট সম্পর্কে জ্ঞান না থাকিলে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হওয়া খুবই হাস্যকর বলে আমি মনে করি।
প্রতিটি মানুষ প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয়। ছোট বেলা থেকে পারিবারিক সাহায্য সহযোগিতা না পেলে তার প্রতিভা বিকশিত হয় না। এটাই বাস্তবতা। পাশাপাশি মানুষ বেঁচে থাকে স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্ন দেখে বলেই মানুষের বাঁচার আগ্রহ থাকে সেই স্বপ্ন পূরনের জন্যে। আর এই স্বপ্ন পূরনের জন্য থাকতে হবে আগ্রহ, কর্মদক্ষতা,অধ্যবসায়, উৎস্বর্গীয় মনোভাব ও সততা। এমনই একটি আগ্রহ নিয়ে স্বপ্ন পূরনের জন্য সতীর্থদের সাথে ছুঁটে যাই ভারতের রাজস্থানের রনথামবোর ফরেষ্টে। স্বপ্নটি ছিলো বাঘের ছবি তোলার। রনথামবোর বনে যখন জিপসী জীপে ছুটে যাচ্ছি তখন মনে মনে ভাবছি দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরন হবে তো? এমন ভাবনার কারন সুন্দরবনে কয়েকবার যেয়েও বাঘের দেখা না পাওয়া। এমনটি মনে হবার মূল কারন হলো সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল বনের ভিতর হলেও পানিতে পরিপূর্ন থাকে। তাই জোয়ার ভাটার একটা খেলা সবসময় থেকে যায়। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার দরুন বাঘ সম্ভবত গভীর বনের ভিতর চলে যায় নিরাপদ কোন উঁচু জায়গায়। ভাটার সময় বাঘ তাহার আহার খোঁজায় ব্যাস্ত থাকে। শিকার করার পর বাঘের পানি খাবার প্রবনতা বেড়ে যায়। তখন নদীর ধারে চলে আসে পানি পান করার জন্য। ভাগ্য ভালো হলে সেই সময়টাতে বাঘ নজরে পড়ে। তাই সুন্দরবনে আমাদের মতন ফটোগ্রাফারদের বাঘ পাওয়াটা একটা ভাগ্যই বটে। বনে বাঘ তুলার স্বপ্নটা ছিলো বহুদিনের। অবশেষে রাজস্থানের রনথামবোর বনে সেই স্বপ্নটি পূরন হলো।
১৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ফটোগ্রাফি ধৈর্য্যের ও সময়ের ব্যাপার। ওয়াইল্ড ফটোগ্রাফি আরো কঠিন। ঠিক ই বলেছেন। আপনার সবুরে মেওয়া ফলেছে। বাঘের দর্শন পেলেন। শুভ কামনা ও অমর একুশে শুভ হোক
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
কারো স্বপ্ন পূরণ হতে দেখলে ভালই লাগে,
বাঘ দেখতে সুন্দর গিয়ে ফিরে এসেছি না দেখে, তবে আমার সঙ্গীরা বাঘের সামনে পড়েছিল,
ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আল্লাহ তাদের রক্ষায় রেখেছে। এখানে আপনাকে দেখে ভালো লাগল।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ হেলাল ভাই। বহুবার সুন্দরবনে যেয়েও বাঘের দর্শন মিলেনি।
কামাল উদ্দিন
দুইবার সুন্দরবনে গিয়েছি, একটা বাঘের পায়ের ছাপও দেখতে পারিনি। শুনেছিলাম খুব ভোরে নাকি বাঘেরা নদীতে পানি পান করতে আসে। এই জন্য এই শীতেও কেবিন ছেড়ে বাহিরে অনেক সময় অবস্থান করেছিলাম, কিন্তু শিকে ছেড়েনি।
শামীম চৌধুরী
সুন্দরবনে বাঘ দেখা সম্ভব নয়। ভাগ্যক্রমে যদি নদী পার হবার সময় বা পানি পান করার সময় চোখে পড়ে সেটা ভিন্ন।
কামাল উদ্দিন
হুমম, সেই দুঃখ নিয়াই ফেরৎ আসতে হয়েছে ভাই।
ফয়জুল মহী
চমৎকার।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুপায়ন বড়ুয়া
বাঘের ছবিটা মনটা ভরে গেল।
ফটোগ্রাফির জন্য বাঘ পাওয়াটা ভাগ্যের।
একুশের শুভেচ্ছা।
শামীম চৌধুরী
ঠিক বলেচেন ভাই।
হালিম নজরুল
শামীম ভাই, আপনার লেখা ও ছবি আমাকে মুগ্ধ করে।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ হালিম ভাই। আমিতো আপনার লেখার পুরাই দিওয়ানা।
তৌহিদ
ভাই আপনি সোনেলার গর্ব। আপনার তথ্যসমৃদ্ধ পোস্টগুলি সোনেলার মানকে বৃদ্ধি করছে নিশ্চিত। অবশেষে বাঘের ছবি দেখতে পেলাম!!
ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
শামীম চৌধুরী
আজ সোনেলার মিলনমেলায় তোমাকে খুব মিস করেছি। বারবার মমি ভাইকে বলছিলাম তোমার কথা। ভালো থেকো ভাই।