ডোমপাড়ার কৃষ্ণবর্ণের পেশল আদিম মানুষগুলো হাতের কাছে যে যায় পায়, লাঠি-শোঠা, বল্লম, ভোজালি, চাপাটি হাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলে হরি আর রামদাসের পিছু পিছু। ডোমপাড়ার মানুষদের এই কাফেলা গিয়ে পৌঁছায় নিখিলচন্দ্র স্কুল মাঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কালো পেশল পেলব মানুষেরা। হেডমাস্টার বদিউজ্জামানের পিয়ন কেদারনাথ জানালার ফাঁক দিয়ে ডোমপাড়ার মানুষদের মারমুখী ভঙ্গি দেখে ভড়কে যায়। কেদারনাথ নিজেকে সামলে নেয়।

কেদারনাথ: কিরে, কি হয়েছে তোদের? অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এখানে এসেছিস কেনো? যা যা এখান থাইক্যা চলে যা হেডমাস্টার সাহেব খুব বদরাগি লোক। আমার চাকরি খাবি নাকি তোরা? যা যা বিরক্ত করিস না।
হরি: কেদারনাথ হেডমাস্টার কই? আইজ তগো রক্তে গোসল করুম আমরা।
কেদারনাথ: কি আমাদের মতো সম্মানিত লোককে তুইতোকারী করছিস। ছোটজাতের বাচ্চা এত্তবড় সাহস তোদের। আবার আমাদের রক্তে গোসল করতে চাস?
কানু: কেদার সাবধানে কথা বল। খুনখারাপি হইয়া যাইবো কিন্তু।
কেদারনাথ: আরে থাম থাম বেশি লাফাসনে। খুলে বল কি হয়েছে?
রামদাস: আমার পোলা পার্থরে ইংরেজি স্যারের পোলা সতীশের পেচ্ছাব পরিষ্কার করতে কইছিলো হেডস্যার। রাজি হয় নাই দেইখ্যা পোলারে আমার স্কুল থাইক্যা বাইর কইরা দিছে। ডোম হইছি বইলা কি আমাগো মান সম্মান নাই?
কেদারনাথ: পেচ্ছাব পষ্কিার করতে বলছে তো কি হইছে? এটা তোদের চৌদ্দ পুরুষের পেশা। তুই যা করিস তোর ছেলেও বড় হয়ে তাই করবে। এতে অপমানের কি আছে?
হরি: মুখ সামলাইয়া কথা বল কেদারনাথ। চাপাতির এক চোট দিয়া ঘাড় থাইক্যা তর মাথা নামাইয়া দিমু।
কেদারনাথ: তাই নাকি। এতো তেল বাড়ছে তোদের।
হরি: তর হেডমাস্টার একটা পিশাচ। মাস্টারের কাছে হগ্গল ছাত্রই সমান। আর হেডস্যার একচোখে নুন আর আরেক চোখে কলা বেচে।
রামদাস: ডাক তোর হেডস্যারকে। আমার পোলারে স্কুলে ফেরত লইতেই হইবো। নাইলে স্কুলে আগুন দিমু, পুড়াইয়া সব ছারখার কইরা দিমু।
রাজালাল: ডাক তর হেডস্যাররে দেখি শালার বুকের পাটা কতো বড়। চাপাটি দিয়া পাজড়ের হাড় গুড়া কইরা ফালামু। ডাক শালারে।
কেদারনাথ: আহ্হা থাম তোরা, ঠাণ্ডা হ! আমি হেডস্যারকে ডাইকা আনতেছি।

কেদারনাথ সাপের গর্তে লুকানোর মতো সট্ করে চলে যায়। কিছুক্ষু পর হেডমাস্টার স্কুলের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। পেছনে ন্যাওটা বিড়ালের মতো কেদারনাথ।

হেডস্যার: কিরে তোরা হঠাৎ এতো ক্ষেপে উঠলি ক্যান বলদিকিনি?
হরি: পার্থরে স্কুল থাইকা বাইর কইরা দিছেন ক্যান? ওরে স্কুলে ফেরৎ নিতে হইবো।
হেডস্যার: কেন স্কুলটা কি তোর বাপের? এই হারামজাদার দল লাঠিশোঠা নিয়ে আসছিস ক্যান? পাখা গজাইছে না?
বিকাশ: মুখ সামলায়া কথা কন স্যার।
হেডস্যার: ক্যান মারবি নাকি? মার। আমার গায়ে হাত তুলতে আসছিস। ছোটলোকের বাচ্চারা তোদের এতোবড় সাহস। এটেম্পট টু মার্ডারের কেইসে তোদের সব শালাদের চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবো।
হরি: এতো কথা বুঝি না। পার্থরে ফেরৎ নিবেন কিনা কন?
হেডস্যার: হরি তুই পালের গোদা হইছোস? নেমক হারাম। যার নেমক খাস তার সাথে বেঈমানী?
হরি: কাম কইরা ভাত খাই। ভিক্ষা কইরা না।
হেডস্যার: বাহ্ তুই দেখতাছি জ্ঞানীর মতো কথা বলা শিখছোস। আজ এই মুহূর্তে তোকে আমার স্কুলের চাকরি থাইকা বরখাস্ত করলাম। ঘরে যখন চুলা জ্বলবে না, যখন দিনের পর দিন বৌ-বাচ্চা নিয়া উপোস থাকবি তখন টের পাবি পালের গোদা হবার পরিণাম।
রামদাস:  চাকরি খাওয়া এতো সহজ না। সমাজ আছে না, বিচার আছে না?
হেডস্যার: কোনো পেটে ভাত না থাকলে এই গলা দিয়া আর চিৎকার বাইর হবে না। মুরগীর বাচ্চার মতোন খালি চিউ চিউ করবি। ক্ষুধার জ্বালায় কণ্ঠ বন্ধ হইয়া যাবে। হরি আমি এক কথার মানুষ পার্থরে আমি স্কুলে ফেরৎ নিবো না। আর তর চাকরি নাই। ভাগ শুয়োরের বাচ্চারা।

(………………………………….চলবে)

আগের পর্বের লিংকগুলো:

১. http://sonelablog.com/archives/12440

২. http://sonelablog.com/archives/12475

৩. http://sonelablog.com/archives/12531

৪. http://sonelablog.com/archives/12788

৫. http://sonelablog.com/archives/12859

৬. http://sonelablog.com/archives/12944

৭. http://sonelablog.com/archives/13003

৫২৭জন ৫২৭জন
0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ