চায়ের দোকানে বৈষম্য, হরির প্রতি বঞ্চনা
গ্রামের সদর রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে বসে হারিস মন্ডল সমাজের গণ্যমান্য কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চা খাচ্ছে, আড্ডা মারছে। কেটলিতে গরম দুধ। দাউ দাউ করে জ্বলছে লাকরি, গোবর ঘুটে আর তুষের আগুন। হরি চুপচাপ চুলার পাশে দোকানদার গোপালের কাছে গুঁটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। গোপাল হরিকে দেখেও না দেখার ভান করে কাজ করতে থাকে।
হরি: গোপাল দাদা। গোপাল দা!
গোপাল: কারে ভায়? কিরে, কি হইছে? প্যান প্যান করতাছোস ক্যান?
হরি: একটু চা খাইতাম।
গোপাল: মগ আনছোস?
হরি: মগ আনতে ভুইল্যা গেছি।
গোপাল: তাইলে চা নিবি কিসে? কেটলির নল দিয়া তর মুখে ঢাইলা দিমু!
হরি: এতো চেততাছো ক্যান, আমি কি ট্যাকা দিমুনা?
গোপাল: ট্যাকা হইলেই সব হয় না। তুই কি চাস সবাই যে গেলাসে চা খায় সেই গেলাসে কইরা তরে চা দিমু?
হরি: ক্যান দিলে কি হইবো?
গোপাল: কি হইবো, পরের দিনই আমার দোকান উইঠ্যা যাইবো। কেউ আর এই দোকানে চা খাইতে আসবোনা, বুঝছোস।
হরি: ক্যান, আসবো না ক্যান! আমার মুখে কি হইছে। আমার মুখে কি কুষ্ঠ হইছে। কারো গায়ে কি জাতের নাম লেখা আছে!
গোপাল: যা যা ভ্যাজাল করিস না। চা হইবো না।
হরি: তা হইবো ক্যান। সিদ্ধি খাওনের সময়তো ঠিকই আমাগো সারিতে বইসা, একই কল্কি টানো, তখন জাতের কথা হুশ থাকে না?
গোপাল: আরে যা তো যা ভ্যাজাল করিস না। পরে আসিস। এখন চা হইবো না।
হারিস: কিরে গোপাল ঐখানে এতো গোলমাল কিসের?
গোপাল: কাকা হরি চা খাইতে আসছে সাথে মগ আনে নাই। কয় দোকানের গেলাসে চা দিতে।
হারিস: আচ্ছা ঠিক আছে অরে একটা চায়ের গেলাস দিয়া দে। ট্যাকা আমি দিমুনে। হরি…।
হরি: জ্বী বাবু!
হারিস: গেলাসসহ তুই চা লইয়া যা। গেলাস আর চায়ের দাম আমি দিমুনে। যা চা লইয়া যা, ঝামেলা করিসনা।
হরি অপমান, লজ্জা, ক্ষোভে ঝিম মেরে যায়। কান দিয়ে গরম ভাপ বের হয়। বুক ভেঙ্গে কান্না আসে। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর হরি ক্ষীণস্বরে কথা বলে উঠে। সে কথা বড্ড শীতল, বড্ড ভারী।
হরি: না লাগি বাবু!
হরি দ্রুত চলে যায়। চলে যাবার সময় হরি পেছন থেকে শুনতে পায় সবাই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে।
হারিস: শালা ছোড জাতের দেমাগ দেখছো!
উপস্থিত সাঙ্গপাঙ্গ (স্বমস্বরে): গুয়ায় নাই চাম হরিগুষ্ঠি নাম…হা…হা…হা…।
(……………………………………চলবে)
আগের পর্বগুলোর লিংক :
১. http://sonelablog.com/archives/12440
২. http://sonelablog.com/archives/12475
৩. http://sonelablog.com/archives/12531
৪. http://sonelablog.com/archives/12788
৫. http://sonelablog.com/archives/12859
১২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
মেথরদের এক সময় দোকানের পিছনে গিয়ে চা খেতে দেখছি ।
এখন এক টেবিলে বসি ।
পড়ছি নিয়মিত ।
সাতকাহন
ছাইরাছ হেলাল, ভালো বলছেন।
শুন্য শুন্যালয়
চলুক লেখা, পড়ছি নিয়মিত … -{@
সাতকাহন
ধন্যবাদ শুন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন অসন্মান কি এখনো আছে ? ভালো লাগছে আপনার লেখা ।
সাতকাহন
নীলাঞ্জনা, ক্ষেত্রবিশেষে এখনো আছে।
লীলাবতী
মানুষের সৃষ্ট বিভাজন আমরা আর বাদ দিতে পারলাম না।
সাতকাহন
লীলাবতী, একটি মানবিক বিপ্লব দরকার অচিরেই।
ব্লগার সজীব
এই বঞ্চনা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে । পরিবর্তন হয়নি একটুও । ভালো ভাবেই উপস্থাপন করেছেন ভাই।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, সজীব।
প্রজন্ম ৭১
বৈষম্যের এই পর্বটি যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন ।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, প্রজন্ম ৭১।