সূর্যাই ডোম ও রাম্বা আখ্যান (শেষ পর্ব)

সাতকাহন ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, রবিবার, ০১:৫৬:৪২পূর্বাহ্ন সাহিত্য ১৬ মন্তব্য

বালক পঞ্চলালের সাথে মৃত সূর্যাইয়ের শরীরধারী আত্মার শেষ বৈঠক ও অন্তর্ধান 

সূর্যাইয়ের গল্প শুনতে শুনতে দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল হয়ে সন্ধ্যা ছুই ছুই। পঞ্চলাল হঠাৎ কথা বলে ওঠে…।

পঞ্চলাল: আচ্ছা সূর্যাই, তে কা বোলি সক্লে তর রাম্বা কিতনা সুন্দর হ?
সূর্যাই: বহুত সুন্দরী হ। দুল দুল ঘোড়া এইসন চলতরাহা।
পঞ্চলাল: দেকে রঙ কেসন রাহা?
সূর্যাই: নীলকোরিয়া। রাম্বাকে ঘামকে দে হামরেকে পাগল বানা দেত্।
পঞ্চলাল: মাথাকে চুল?
সূর্যাই: বহুত লম্বা। আকাশকে মেঘ যেনোসন ওইসন রাহা।
পঞ্চলাল: আঁখ?
সূর্যাই: উকের আঁখ গরুকে আঁখ যেনোসন বড়কা বড়কা রাহা।
পঞ্চলাল: তে তো বোলেবারে তে আন্ধা আদমি হোলে।
সূর্যাই: হ! হাম কুচ্ছু না দেখলি।
পঞ্চলাল: তে ঝুট বাত বোলোতোরে!
সূর্যাই: কা?
পঞ্চলাল: তুম বহুত লোভী আদমি হলো। তুহার আঁখ নেইখে তবুতু রাম্বাকে দেখল। আবার আঁখ মাঙ্গো তরো, এতনা লোভী আদমি হলো তু। ঝুট বলোতোরে তু আঁমে না দেখল। মাট্টিকে উপর ভগমান কোনোদিন আঁকে গাছ না দিল। কুনোদিন না দেহি, কুনোদিন না!
সূর্যাই: না হামার ভগমান কুনোদিন এতনা নিষ্ঠুর না হকে সকি। হামার আঁখকে গাছ কুনোদিন না হোই, হামার রাম্বা চিতাসে কুনোদিন উঠকে না আই, হামার রাম্বাকে হাম কুনোদিন নিজেকে আঁখমে দেখে না সকব। হায় ভগমান! ই দুনিয়ামে হামার কেউ নেইখে, হামার কুচ্ছু নেইকে। হামার প্রার্থনা মঞ্জুর করলো ভগমান। তু হামরেকে ফিরাকে মত দো, ফিরাকে মত দো!

এরই মধ্যে বালক পঞ্চলালের একটা মর্দা শুয়োর আরেকটা মাদি শুয়োরের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। পঞ্চলাল দৌড়ে গিয়ে মাদি শুয়োরটাকে পিটিয়ে হটিয়ে দেয়। বালক পঞ্চলাল ঘুরেই দেখে শুকনো বেলগাছটার নীচে অন্ধ মানুষটা নেই। পঞ্চলাল, সূর্যাই… সূর্যাই… বলে ডাকে। সে ডাকের প্রতিধ্বনি বহুদূর চরের বাতাসে মিলিয়ে যায়। হঠাৎ সে দেখতে পায় বালুচরের মাঝখান একটা ঘূর্ণি। সে বালুর ঘূর্ণি চরের মাঝখান থেকে বেলগাছের নীচে যেখানে অন্ধ লোকটি বসেছিলো সেখানে ঘুরতে থাকে। তারপর আবার বালুর ঘূর্ণিটি চরের মাঝখানে ঘুরতে ঘুরতে সাৎ করে দূরে হারিয়ে যায়। বালক রাখোয়াল পঞ্চলালের মনে ভয় এবং শঙ্কা জন্মে। সে তড়িঘড়ি করে শুয়োরের পাল নিয়ে চর থেকে বাড়ির দিকে ফেরার প্রস্তুতি নেয়। বালক পঞ্চলাল শুয়োর পালের পেছনে লাঠি নিয়ে ‘হৈ হট!’ বলে শাসন করতে করতে দেবডাঙ্গা গ্রামে তার বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়।

(…………………………………………………………………… সমাপ্ত)

আগের পর্বগুলোর লিংক:

১. http://sonelablog.com/archives/12440

২. http://sonelablog.com/archives/12475

৩. http://sonelablog.com/archives/12531

৪. http://sonelablog.com/archives/12788

৫. http://sonelablog.com/archives/12859

৬. http://sonelablog.com/archives/12944

৭. http://sonelablog.com/archives/13003

৮. http://sonelablog.com/archives/13126

৯. http://sonelablog.com/archives/13269

১০. http://sonelablog.com/archives/13617

১১. http://sonelablog.com/archives/14926

১২. http://sonelablog.com/archives/17125

১৩. http://sonelablog.com/archives/17164

১৪. http://sonelablog.com/archives/17210

১৫. http://sonelablog.com/archives/17308

১৬. http://sonelablog.com/archives/17837

১৭. http://sonelablog.com/archives/17968

১৮. http://sonelablog.com/archives/18263

১৯. http://sonelablog.com/archives/18396

২০. http://sonelablog.com/archives/18643

২১. http://sonelablog.com/archives/19993  

২২. http://sonelablog.com/archives/20171

২৩. http://sonelablog.com/archives/20560

২৪. http://sonelablog.com/archives/20690

৬০৯জন ৬০৯জন

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ