বালক পঞ্চলালের সাথে মৃত সূর্যাইয়ের শরীরধারী আত্মার শেষ বৈঠক ও অন্তর্ধান
সূর্যাইয়ের গল্প শুনতে শুনতে দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল হয়ে সন্ধ্যা ছুই ছুই। পঞ্চলাল হঠাৎ কথা বলে ওঠে…।
পঞ্চলাল: আচ্ছা সূর্যাই, তে কা বোলি সক্লে তর রাম্বা কিতনা সুন্দর হ?
সূর্যাই: বহুত সুন্দরী হ। দুল দুল ঘোড়া এইসন চলতরাহা।
পঞ্চলাল: দেকে রঙ কেসন রাহা?
সূর্যাই: নীলকোরিয়া। রাম্বাকে ঘামকে দে হামরেকে পাগল বানা দেত্।
পঞ্চলাল: মাথাকে চুল?
সূর্যাই: বহুত লম্বা। আকাশকে মেঘ যেনোসন ওইসন রাহা।
পঞ্চলাল: আঁখ?
সূর্যাই: উকের আঁখ গরুকে আঁখ যেনোসন বড়কা বড়কা রাহা।
পঞ্চলাল: তে তো বোলেবারে তে আন্ধা আদমি হোলে।
সূর্যাই: হ! হাম কুচ্ছু না দেখলি।
পঞ্চলাল: তে ঝুট বাত বোলোতোরে!
সূর্যাই: কা?
পঞ্চলাল: তুম বহুত লোভী আদমি হলো। তুহার আঁখ নেইখে তবুতু রাম্বাকে দেখল। আবার আঁখ মাঙ্গো তরো, এতনা লোভী আদমি হলো তু। ঝুট বলোতোরে তু আঁমে না দেখল। মাট্টিকে উপর ভগমান কোনোদিন আঁকে গাছ না দিল। কুনোদিন না দেহি, কুনোদিন না!
সূর্যাই: না হামার ভগমান কুনোদিন এতনা নিষ্ঠুর না হকে সকি। হামার আঁখকে গাছ কুনোদিন না হোই, হামার রাম্বা চিতাসে কুনোদিন উঠকে না আই, হামার রাম্বাকে হাম কুনোদিন নিজেকে আঁখমে দেখে না সকব। হায় ভগমান! ই দুনিয়ামে হামার কেউ নেইখে, হামার কুচ্ছু নেইকে। হামার প্রার্থনা মঞ্জুর করলো ভগমান। তু হামরেকে ফিরাকে মত দো, ফিরাকে মত দো!
এরই মধ্যে বালক পঞ্চলালের একটা মর্দা শুয়োর আরেকটা মাদি শুয়োরের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। পঞ্চলাল দৌড়ে গিয়ে মাদি শুয়োরটাকে পিটিয়ে হটিয়ে দেয়। বালক পঞ্চলাল ঘুরেই দেখে শুকনো বেলগাছটার নীচে অন্ধ মানুষটা নেই। পঞ্চলাল, সূর্যাই… সূর্যাই… বলে ডাকে। সে ডাকের প্রতিধ্বনি বহুদূর চরের বাতাসে মিলিয়ে যায়। হঠাৎ সে দেখতে পায় বালুচরের মাঝখান একটা ঘূর্ণি। সে বালুর ঘূর্ণি চরের মাঝখান থেকে বেলগাছের নীচে যেখানে অন্ধ লোকটি বসেছিলো সেখানে ঘুরতে থাকে। তারপর আবার বালুর ঘূর্ণিটি চরের মাঝখানে ঘুরতে ঘুরতে সাৎ করে দূরে হারিয়ে যায়। বালক রাখোয়াল পঞ্চলালের মনে ভয় এবং শঙ্কা জন্মে। সে তড়িঘড়ি করে শুয়োরের পাল নিয়ে চর থেকে বাড়ির দিকে ফেরার প্রস্তুতি নেয়। বালক পঞ্চলাল শুয়োর পালের পেছনে লাঠি নিয়ে ‘হৈ হট!’ বলে শাসন করতে করতে দেবডাঙ্গা গ্রামে তার বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়।
(…………………………………………………………………… সমাপ্ত)
আগের পর্বগুলোর লিংক:
১. http://sonelablog.com/archives/12440
২. http://sonelablog.com/archives/12475
৩. http://sonelablog.com/archives/12531
৪. http://sonelablog.com/archives/12788
৫. http://sonelablog.com/archives/12859
৬. http://sonelablog.com/archives/12944
৭. http://sonelablog.com/archives/13003
৮. http://sonelablog.com/archives/13126
৯. http://sonelablog.com/archives/13269
১০. http://sonelablog.com/archives/13617
১১. http://sonelablog.com/archives/14926
১২. http://sonelablog.com/archives/17125
১৩. http://sonelablog.com/archives/17164
১৪. http://sonelablog.com/archives/17210
১৫. http://sonelablog.com/archives/17308
১৬. http://sonelablog.com/archives/17837
১৭. http://sonelablog.com/archives/17968
১৮. http://sonelablog.com/archives/18263
১৯. http://sonelablog.com/archives/18396
২০. http://sonelablog.com/archives/18643
২১. http://sonelablog.com/archives/19993
২২. http://sonelablog.com/archives/20171
২৩. http://sonelablog.com/archives/20560
২৪. http://sonelablog.com/archives/20690
১৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সুন্দর একটি সিরিজের সমাপ্তি ভাল লাগা দিয়ে চলে গেল।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, মনির।
জিসান শা ইকরাম
দিয়ে দিলেন শেষ পর্ব ?
শুধু চোখ বুলিয়ে গেলাম।
ভালো করে মন্তব্য করা হবে 🙂
ভালো থাকুন।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, জিসান ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
ফিরে গেলো সূর্যাই। এবার তার প্রার্থনা মঞ্জুর হলো।
পঞ্চলালের শেষ কথাগুলো আমি বুঝতে পারিনি ভাইয়া। সে সূর্যাইকে লোভী কেনো বলল? চোখ না থাকতেও সে এভাবে রাম্বাকে দেখতে পায়, তারপরেও চোখ চাইছে এমন কি?
সাতকাহন
ধন্যবাদ শুন্য।
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
সমগ্র উপন্যাস পড়তে হবে ভাইয়া।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, মেঘকুমারী।
লীলাবতী
দীর্ঘ উপন্যাসের সমাপ্তি। প্রচুর ধৈর্য্য নিয়ে লিখলেন। সোনেলায় এটি প্রথম উপন্যাস সম্ভবত। ভাষা কিছু বুঝেছি কিছু বুঝিনি। সময় নিয়ে উপন্যাসটি অবশ্যই পড়বো ভাইয়া।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, লীলাবতী।
স্বপ্ন নীলা
দারুন, দারুন এবং দারুন ——-শেষ ভাল যার সব ভাল তার —– আমি দেখি লেখার সবটাই ভাল
সাতকাহন
স্বপ্ন নীলা ধন্যবাদ, এটা জীবন থেকে নেয়া।
খসড়া
শেষ হয়ে গেল উপাখ্যান কিন্তু রেশ রয়ে গেল। কিছুদিন থাকবে এর রেশ।অবশ্যই যতদিন একে অতিক্রম করবে না কোন লেখা ততদিন।
সাতকাহন
কি যে বলেন, এটা এমন কোনো লেখা না যে এটাকে মানদণ্ডে ফেলতে হবে। ধন্যবাদ খসড়া।
স্বপ্ন
সমাপ্ত হয়ে গেলো? এতদিন তেমন করে পড়া হয়নি পর্বগুলো। এখন পড়তেই হবে।
সাতকাহন
হয়ে গেলো শেষ, তবে যাচ্ছি না সোনেলা ছেড়ে।