হারিস মন্ডলের গরু মারা এবং রামদাসের কারাদণ্ড
পরের দিন সকালে হারিস মন্ডলের স্ত্রী ফাতেমা গোয়াল ঘরে গরুকে খড় দিতে এসে মৃত গরুটিকে দেখে। ফাতেমা আর্তনাদ করে ওঠে। দৌড়ে গোয়াল থেকে বের হয়ে যায়।
ফাতেমা: হায় আল্লাহ! আমার এতো বড় সর্বনাশ কেডা করলো? হায় আল্লাহ!
ফাতেমার চিৎকার শুনে হারিস মন্ডল ঘর থেকে বের হয়ে আসে। লোকজন আশেপাশে ভিড় জমায়।
হারিস: ফাতেমা কি হইছে, কি হইছে ফাতেমা? কথা বলো!
ফাতেমা কাঁদে অঝোরে।
ফাতেমা: ওগো আমাগো গরুডারে ক্যারা য্যান বিষ খাওয়াইয়া মাইরা ফালাইছে।
হারিস: হায়, হায় কও কি! কার এতো বড় বুকের পাটা?
রামু ও কৃষ্ণা দৌড়ে আসে।
রামু: কি হইছে বাবু?
হারিস: সর হারামজাদা, ছোট লোকের বাচ্চা। তরাই আমার গরুরে মারছোস।
কৃষ্ণা: বাবু আমাগো জাতের কারো কি আপনার গরু মারার সাহস আছে? আমাগো সবার ঘাড়ে মাথাতো একটা।
হারিস: তগো সব শালারে আমি চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়ামু।
রামু: বাবু আপনি মান্যি লোক। আমগো জাতের কেউ এই কাম করলে আমরাই তারে জাত থাইকা বাইর কইরা দিমু। কথা দিলাম।
হারিস: শালা এমন পাষণ্ড চোর। আমার কুত্তাডারে পর্যন্ত বিষ খাওয়াইয়া মারছে।
কৃষ্ণা: কি জঘন্য কাম। গরুর চামড়া বেচলে ট্যাকা পাওয়া যায় কিন্তু কুত্তার চামড়ার কি দাম আছে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ… কি জঘন্য কাম।
রামু: বাবু যা হবার তা তো হইছেই। কিন্তু তাড়াতাড়ি ভাগাড়ে না ফালাইলে তো গরু পঁইচা গন্ধ বাইর হইবো।
রামদাস: তোরা নিয়া যা, ভাগাড়ে ফালাইয়া দে। তরা তো এইডাই চাইছিলি। শুয়োরের বাচ্চারা।
কৃষ্ণা: রামু চল তাড়াতাড়ি নিয়া যাই নাইলে পঁইচা গন্ধ বাইর হইবো। চল, চল…।
রামু ও কৃষ্ণা বাঁশ দিয়ে চ্যাঙদোলা করে গরুটিকে বাঁধে। তারপর কাঁধে করে ভাগারে নিয়ে যেতে থাকে। পথিমধ্যে দারোগা বিশ্বজিতের সাথে রামু এবং কৃষ্ণার সাক্ষাৎ হয়। দারোগো বিশ্বজিতের পেছনে দু’জন মোটাসোটা কন্সটেবল। হাতে লাঠি, মোটা পাকানো দড়ি।
বিশ্ব: এই দাঁড়া।
রামু ও কৃষ্ণা ভয়ে গুঁটিঁশুটি মেরে কাঁধে ঝুলন্ত মরা গরু নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে যায় মৃতের মতো। ওদের চুলের ডগা থেকে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির শেষপ্রান্ত অবধি হিম হয়ে যায়।
রামু: গোর লাগতি বাবু।
বিশ্ব: রামদাসের বাড়িটা কোনো দিকে?
কৃষ্ণা ও রামু একে-অপরের মুখের দিকে তাকায়।
কৃষ্ণা: বাবু এখান দিয়ে সোজা চলে গেলে ডোমপাড়া। ডোমপাড়ায় ঢুকতেই ডাইনে উঁচা ছাতিম গাছ ওয়ালা একটা বাড়ি আছে। ওইডাই রামদাসের বাড়ি।
বিশ্ব: সত্যি বলছিস, নাকি কোনো চালাকী করছিস? চালাকী করলে সব শালাকে বেঁধে নিয়ে যাবো।
রামু: কি যে বলেন বাবু! আমাগো জানে কি এতো সাহস আছে যে মিথ্যা কমু? একদম সত্য কইছি বাবু।
বিশ্ব: এই তোদের নাম কি?
রামু: আমার নাম রামু, অর নাম কৃষ্ণা।
বিশ্ব: কন্সটেবল, ওদের দুইজনের নাম মনে রেখো।
কন্সটেবল: স্যার!
বিশ্ব: মুভ!
কন্সটেবল: স্যার!
বিশ্বজিৎ এবং কন্সটেবল দুইজন রামদাসের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রামু ও কৃষ্ণা তাড়াতাড়ি ভাগাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
(……………………………..চলবে)
আগের পর্বগুলোর লিংক:
১. http://sonelablog.com/archives/12440
২. http://sonelablog.com/archives/12475
৩. http://sonelablog.com/archives/12531
৪. http://sonelablog.com/archives/12788
৫. http://sonelablog.com/archives/12859
৬. http://sonelablog.com/archives/12944
৭. http://sonelablog.com/archives/13003
৮. http://sonelablog.com/archives/13126
৯. http://sonelablog.com/archives/13269
১০. http://sonelablog.com/archives/13617
১১. http://sonelablog.com/archives/14926
১২. http://sonelablog.com/archives/17125
১১টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
অনেক দিন পর পড়লাম , কিছু কিছু মনে আছে।
সাতকাহন
ধন্যবাদ আদনান।
বনলতা সেন
কিছুই মনে নেই , এতদিন পর আবার পড়াও কঠিন ।
অংশটুকু পড়লাম ।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, বনলতা। আসলে পিএইচডি থিসিস নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। আশা করি এখন রেগুলার হবো।
ছাইরাছ হেলাল
এতদিন কী করে মনে রাখি ?
সাতকাহন
ড-এর সাথে ডট লাগানোর দৌড়ে আছি ভাই, আশা করি এখন রেগুলার হবো।
ছাইরাছ হেলাল
এ খবর তো আমদের জন্য আনন্দ সংবাদ , তা চেপে যাওয়া ঠিক না ।
সব পড়ে নেব মন দিয়ে । কোন ব্যাপার না ।
তা কী বিষয়ে কাজ করতে হয়েছে ?
সাতকাহন
থিসিসের বিষয় হচ্ছে, “বাঙলা সাহিত্যে নিম্নবর্গ”।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার লেখার সাথে ভাল ভাবেই যাচ্ছে ।
জিসান শা ইকরাম
ছোট খাটো বিষয়ও লেখকের নজরে থাকে এটা বেশ ভালো লাগে ।
কাহিনী যেন বাস্তবের , এমন মনে হয় ।
আগাম অভিনন্দন দেবো নাকি ?
সাতকাহন
জিসান ভাই, আর লজ্জ্বা দিবেন না।