নোটিস বোর্ডের প্রথম নোটিসটা হলো,
“আপনার সন্তান এবং আপনার মালামালকে নিজ দায়িত্বে রাখবেন।”
সদ্য জন্ম নেওয়া এক আত্মীয়ের সন্তানকে দেখতে গিয়েছিলাম এক হসপিটালে। সদ্য পৃথিবীর আলো দেখা সন্তানটির মা তার সন্তানকে নিয়ে যেই বেডটিতে শুয়ে ছিলেন ঠিক তার পাশের দেয়ালটাতেই নোটিস বোর্ড টাঙ্গানো। নোটিস বোর্ডের প্রথম নোটিসটার মানে বুঝে না এমন কোনো মানুষই সম্ভবত এই পৃথিবীতে নেই। যারা পড়ালেখা জানেনা,যারা নোটিস বোর্ড থেকে নোটিস পড়ে না তারাও নিজের অজান্তেই নোটিস বোর্ডের প্রথম নোটিসটির মানে বুঝে।
সদ্য পৃথিবীতে আসা শিশুটির দিকে তাকিয়ে বেশ খারাপ লাগল। যেই শিশুটি এখনো চোখ মেলে তাকাতে পারে নি সেই শিশুটিরই কিনা কিছু লোভী মানুষের কারনে মায়ের বুক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়!!
এই সভ্য জগতের কিছু মারাত্মক অসভ্য কাজগুলোর মধ্যে একটি কাজ হচ্ছে অন্যের সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে টাকার লোভে পাচার করে দেওয়া মানে অর্থের বিনিময়ে তৃতীয় কোনো ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া। আর এই জঘন্য কাজটি করে থাকেন এমন কিছু মানুষ যারা নিজের সন্তানকে ঠিকই ভালোবাসেন কিন্তু অন্যের সন্তানকে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে মায়ের বুক থেকে বিচ্ছিন্ন করতে একটুও দ্বিধায় ভুগেন নাহ।
এই জঘন্য কাজটির পেছনে দুই শ্রেনীর লোক জড়িত থাকেন। প্রথম শ্রেনীর মানুষগুলো হসপিটালের তৃতীয় বা তার চেয়েও নিচু শ্রেনীর কর্মচারী,যারা দু পয়সার লোভে পড়ে হসপিটালের গেইটের তালা থেকে শুরু করে অন্যের কোলের সন্তান ও সরিয়ে ফেলতে পারেন… আর দ্বিতীয় শ্রেনীর মানুষগুলো হচ্ছেন কিছু সন্তানহীন দম্পত্তি।
এই দুই শ্রেনীর মানুষগুলোর মধ্যে ৯৯% দোষই হসপিটালের কর্মচারীদের। এই অসভ্য কাজটিতে সন্তানহীন দম্পত্তিদের তেমন দোষ না থাকার কারন হচ্ছে, সন্তানহীন দম্পত্তিরা হসপিটালের কর্মচারীদের বলে রাখেন যে, সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মা যদি মারা যায় এবং শিশুর পরিবার যদি রাজি থাকে তাহলে ঐ দম্পত্তিকে যেনো কর্মচারীটি শিশুটিকে ম্যানেজ করে দেন। সাথে এটাও বলে দেন যে, বিনিময়ে কর্মচারীটি যত টাকা দাবী করবে ঠিক তত টাকাই তাকে পরিশোধ করা হবে। আসলে পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে এই কথাটি সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে এই কথাটাই পুরো অপরাধটির গতি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এর জন্য দম্পত্তিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই কারন সন্তানের আশায় তারা এতটাই উত্তেজিত থাকেন যে, তাদের মুখের এই কথার প্রভাবে কী ঘটতে পারে সেটা তারা কখনো বিবেচনা করে দেখেন নাহ। সন্তানহীন দম্পত্তিরা কখনোই অন্যের সন্তানকে চুরি করে এনে দিতে বলেন না। টাকার লোভের বশবর্তী হয়ে স্বেচ্ছায় এই ঘৃন্য কাজটি করেন হসপিটালের কর্মচারীরা।
আমাদের গ্রামের এক দম্পত্তিকে উদাহরন হিসেবে দেখানো যেতে পারে। আমাদের গ্রামের দম্পত্তিটির বিয়ে হওয়ার ১৯ বছর পরও সন্তান হচ্ছিল না। আর তাই তারা বাধ্য হয়ে এক হসপিটালের কর্মচারীরকে যেকোনো মূল্যে একটি শিশুর ব্যাবস্থা করে দিতে বলেন। কর্মচারীকে বলার প্রায় দেড় মাস পর কর্মচারীটি একটি ছেলেশিশুর ব্যাবস্থা করে দেন তাদের। বিনিময়ে দম্পত্তিটির কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা নেয় কর্মচারীটি। বেশ ভালো ই চলছিল কয়েকমাস। কিন্তু ঝামেলা পাকিয়ে গেলো যখন শিশুটির আসল মা যখন এসে দম্পত্তিটির বাড়িতে এসে উপস্থিত হন। শেষে জল অনেক দূর গড়িয়েছিল। তাদের জেলে যেতে হয়েছিল এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল। এখানে লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে, দম্পত্তিটি কিন্তু কখনোই অন্যের বুক খালি করে তাদেরকে বাচ্চা এনে দিতে বলে নি উল্টো কর্মচারী নিজ থেকেই এই অসভ্য কাজটি করেছিল।
পৃথিবীতে যখন কোনো একটা ট্রেডিশন শুরু হয়ে যায় তখন আর তা বন্ধ করে দেওয়া যায় না। যেহেতু শিশু চুরির মতো মারাত্মক ঘৃন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে তাই তা আর বন্ধ করা যাবে নাহ। বড়জোর কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। তাই শিশু চুরির হার কমিয়ে আনার জন্য খুব সম্ভবত আমাদের চোখ কান খোলা রাখতে হবে, যা শিশু চুরির হারকে অনেকটাই হ্রাস করতে সক্ষম হবে।
১২টি মন্তব্য
জিএম শুভ
সাইন আপ করে একটা পুরানো লেখা দিলাম
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম -{@
জানলাম অনেক কিছু
আমার ধারনা ছিলনা এতটা
এই ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবেই
দত্তক নেয়া মা বাব অবশ্যই চাইবেন না , কোন মায়ের কোল খালি করে সন্তান নিতে।
সমাজ সচেতনতা মূলক লেখা ভালো লেগেছে ।
শুভ কামনা —
জিএম শুভ
🙂
ছাইরাছ হেলাল
ধন্যবাদ এখানে লিখছেন বলে ।
আপনার সচেতনামূলক লেখা পড়ে লোভের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানলাম ।
আরও লিখুন ।
জিএম শুভ
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ 🙂
নীহারিকা
এমন অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা দেখে ভালো লাগলো। সাথে খারাপ লাগে ওইসব বাবা মায়ের জন্য যারা কিছু লোভী পিশাচের খপ্পরে পরে নিজের সন্তানকে হারান।
জিএম শুভ
ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম 🙂
লীলাবতী
সমাজ সচেতনতা মুলক লেখা । ভালো লেগেছে ভাইয়া। নিয়মিত এই ধরনের লেখা দিন ।
জিএম শুভ
চেষ্টা করব 🙂
খসড়া
স্বাগতম। সচেতনতা মূলক পোস্ট , ধন্যবাদ।
আদিব আদ্নান
চুরি হওয়া সন্তানের মায়ের অনুভুতির কথা ভাবতে পারছি না ।
ধন্যবাদ এই লেখার জন্য ।
জিএম শুভ
ধন্যবাদ ভাইয়া