শীতকালের কোন এক শীতল সন্ধ্যা। আমি বসে ছিলাম শহরের কোন এক কোনের কফিশপে। সেবার শীতটা বোধহয় একটু বেশিই পড়েছিল। ডান হাতে ধরে রাখা মগের গরম কফি। আর তার উষ্ণ ধোঁয়া আমার শীতল মুখের স্পর্শে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। ভাবছিলাম এই বেকার জীবনের জীবনযাত্রা। সে আমার সামনের টেবিলে বসলো। আমি ঠিক খেয়াল করিনি। আমার চিন্তায় মগ্ন। টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
: আপনি তো ভালোই অভিনয় করতে পারেন।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। আর ভাবতে লাগলাম, আমি কি কারো সাথে কিছু করলাম নাকি?? বড্ড ভয় পেয়েছিলাম। সেদিন ও লাল রঙ্গের একটা সোয়েটার পড়েছিল, মাথায় কোঁকড়ানো চুল কোমড় পর্যন্ত, সম্ভবত চোখে কাজল ছিল আর গলায় কাশফুলের মতো জড়ানো একটা ওড়না।
: আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বলতে চাচ্ছেন!
: আপনি খুব ভালো অভিনয় করেন। কদিন আগেই না আপনি থিয়েটারে একটা নাটক করলেন?
আমি থতমত খেয়ে গেলাম, লজ্জাও পেয়েছিলাম বটে।
: তা হয়তোবা!
সে আমার সামনের চেয়ারে বসলো। সে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করতে লাগলো। এভাবে অপরিচিত একজন আমার প্রশংসা করছে, আমি বেশ লজ্জায় পরে গেলাম। কথার মোড় ঘুরালাম। চললো আড্ডা, হলো কথা। সে আমার মোবাইল নম্বর টা লিখে নিল, পরের বার আমাকে দিয়ে একটা নাটক করাবে বলে।
ফোন এসেছিল, একবার না বেশ কয়েকবার। সেদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। পরে ফোন দিলাম। নতুন কাজ, আরেকটা অভিনয়। ওর অনুরোধ রেখেছিলাম। আর ও আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকক্ষণ আড্ডা হল, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা, তারপর রাত। পরে ওকে বাসায় পৌঁছে দিলাম। এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমাদের কথাবার্তা। সেদিন আমরা রেললাইন ধরে হাঁটছিলাম। কথাবার্তার মাঝে ও আমার চেহারার প্রশংসা করলো। আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটা মজা নিচ্ছে। পরে বুঝতে পারলাম ওটা মজা ছিল না।বাসায় এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। বিভিন্ন ভঙ্গি দিতে লাগলাম। নাহ, আমাকে তো খারাপ দেখায় না!!! সুন্দরই ত লাগে।সে তো খারাপ বলে নি।
তাকে আমি কাছে পেতে চাইতাম সবসময়। চেহারার প্রশংসা করায় চেহারার পরিচর্যা করা শুরু করলাম। ফেস ওয়াশ, ফেয়ারনেস ক্রিম, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার আরোও কতো কি ব্যাবহার করা শুরু করলাম। খুটিয়ে খুটিয়ে চেহারা দেখতে লাগলাম। গালে দাঁড়ির কোন চিহ্নই রাখতাম না। ফোম শেভ করতাম। চুলে জেল। নতুন হেয়ারস্টাইল। নতুন নতুন টিশার্ট., শার্ট কেনা শুরু করলাম। ঢিলেঢালা শার্ট ছেড়ে টাইট ফিট শার্ট পরা শুরু করলাম। বডিও তো ঠিক রাখা দরকার তাই না?? তাই নিয়মিত জিমে যাওয়া শুরু করলাম। সব মিলিয়ে ৪-৫ মাসের মধ্যেই আমার শরীর আর চলাফেরায় বিরাট পরিবর্তন আসলো। আয়নার সামনে দাঁড়াতাম, আর নিজেকেই শুধু দেখতাম। নিজেই নিজের প্রেমে পরে গেলাম। নাহ, আমি তো দেখতে খারাপ না। একদিন সে বললো, আমি নাকি দিন দিন আরোও সুন্দর হয়ে যাচ্ছি। আমি মনে মনে পিঠ চাপড়াই। আর বাসায় এসে আয়নার সামনে দাড়াই। একসময় আবিষ্কার করলাম পৃথিবীর যে কোন কিছুর চাইতে আমি আমার কষ্ট যত্নে গড়ে তোলা শরীরটা কে সবচাইতে বেশি ভালোবাসি।
কিছুদিন পর সে হঠাৎই রোড একসিডেন্ট করলো। প্রচুর ব্লিডিং হলো। ডাক্তার বললেন এক্ষুনি রক্তের ব্যাবস্থা করতে। আমার আর ওর রক্তের গ্রুপ একই ছিল। কিন্তু আমি ওকে রক্ত দিলাম না। ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত খোঁজা শুরু করলাম। কেননা ততদিনে আমি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে শিখেছি।
ভালোবাসার শরীর থেকে কেইই বা রক্ত ঝড়াতে চায় বলুন??
১৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
একজন কঠিন বাস্তববাদী মানূষকে দেখলাম লেখায়
সমাপ্তিটা এমন হবে ভাবিনি।
ভালো লেগেছে।
শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
সমাপ্তিটা দারুন … সচরাচর গল্পগুলোয় ঝাঁপিয়ে পরে রক্ত দিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম সমাপ্তিটা ভাল লেগেছে। শুভকামনা রইলো।
হিলিয়াম এইচ ই
ধন্যবাদ
হিলিয়াম এইচ ই
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
ভালোবাসার শরীর থেকে কেইই বা রক্ত ঝড়াতে চায় বলুন??
কেউ না আপু।
স্বাধীন নবাব
কেউ চাই না,শুধুমাত্র নিষ্ঠুর পাষন্ডরা ছাড়া!
হিলিয়াম এইচ ই
🙂
আজিম
বুঝলামনা কেন এমন ফিনিশিং।
সাহিত্যের মাঝে স্বার্থপরতা!
হতে পারে এটিও সাহিত্যেরই অংশ।
হিলিয়াম এইচ ই
তেমন কিছু না। শুধুমাত্র বাস্তবতা কে তুলে ধরলাম মাত্র 🙂
কৃন্তনিকা
গল্প হিসেবে ভালো লেগেছে একটা ব্যাপার। এখানে মানুষের মনের একটি ভয়কে পরোক্ষভাবে তুলে ধরা হয়েছে যদিও সেটি বিষয়বস্তু না। সেটি হল- লোকজন রক্ত দিতে অনেক ভয় পায়। দেখা যাবে- অনেক শক্তিশালী লোকও নিজের খুব কাছের কারো বিপদে রক্ত দিতে চায় না ভয়ে। দেহে শক্তি থাকলেই মনে থাকবে এমন কোন কথা নেই 😛
আরেকটা ব্যাপার হল- মানুষের লোহিত রক্তকণিকার আয়ু মাত্র ১২০দিন। অর্থাৎ প্রতি তিন মাসেই এমনিই শরীরের রক্ত মারা যায় এবং নতুন রক্ত উৎপত্তি হয়। তাহলে আপনার যে রক্ত এমনিই নষ্ট হয়ে যাবে, তা দিয়ে কারো উপকার করলে ক্ষতি কি?
মানুষের অজ্ঞতাকে তুলে ধরেছেন বলে ধন্যবাদ। 🙂
হিলিয়াম এইচ ই
ধন্যবাদ।।
খসড়া
বুঝলাম , শুরুতেই শেষ।
হিলিয়াম এইচ ই
হুম 🙂