
সকাল সকাল কলেজে ঢুকলেই মেয়েদের হোস্টেলের পাশেই উচ্ছিষ্ট খাবারে ভাগ বসানো কাকেদের কা কা শোনা যেত। এখন আগের সেই পাখিদের মুখরিত কলকাকলী না থাকায় কাকের কা কা তেই তবুও “দুধের স্বাধ ঘোলে মেটানো”র মতো অবস্থা ছিলো।
আজ কাকেদের তেমন কা কা শোনা গেলো না কারন দীর্ঘ ছুটিতে ক্যা ক্যা করা মেয়েরা যে নেই! তারা খাবারের অর্ডার করে আগা মাথা ছেঁটে খেয়ে বাকিটা কাকের জন্য বরাদ্দ হিসেবে ফেলে দিতো। তা দিয়েই দিব্যি তাদের চলে যেত। এখন খাবারের অভাবে কাকেরা তাদের আশ্রয় বদলাতে বাধ্য হয়েছে। কিংবা মারাও যেতে পারে। এভাবে না জানি কতো পশু- পাখি না খেয়ে মরে গেছে ভেবে খারাপ লাগলো।
প্রায় দুবছর পর আবার শুরু হলো মাষ্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা। গতবছর শুরু হয়ে কয়েকটা পরীক্ষা বাকি থাকতেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। সেই পুরোনো পরীক্ষাই আবার, এরপর রেজাল্ট বেড়োতে আরও মাস ছয়েক তারপর শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি। শিক্ষার্থীদের বয়সের বারোটা বেজে গেলো। দুটো বছর জীবনের অনেকখানি সময়। অন্য বছর গুলিতে তাদের পরীক্ষার যেমন আমেজ, আনন্দ থাকতো আজ তেমন ছিলো না। যেন গলার কাটা ফেলতে কোনরকম এসেছে। দুএকজন ছাড়া সবার ইস্ত্রী ছাড়া পোশাক। পালিশ করা জুতার বাহারও নেই। যারা চাকুরীতে ঢুকে পড়েছে তারা বেশ ফিটফাট তবে সংখ্যায় নগন্য। বাকি শিক্ষার্থীদের কেমন “ ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” অবস্থা।
ফোর্থ ইয়ারের পর মেয়েরা কমতে শুরু করে। কারন বিয়ে হয়ে যায়। তাই যারা বেঁচে বর্তে আছে, তারা বেশ ভালো আছে বোঝা গেল। ছেলেদের মতো ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তায় নেই, কারও ঘাড়ে চাপলেই হাডি ঠেলে বাকি জীবন পার। অথচ সরকার এদের পেছনে অনেক টাকা ভর্তুকি দিয়ে পড়াশুনা করায়। দেশের জন্য কিছু করার জন্য নয় বরং ভালো হাজবেন্ড পেলেই মেয়ে, পরিবার সবাই হ্যাপি হয়।
একজন বেশ ঝকমকে শাড়ি গয়নায় এসেছে। নতুন বিয়ে হয়েছে বোধহয়। এসব দেখতে দেখতে বরাবরই বেরসিক আমি আজ মায়ায়, প্রিয় সান্নিধ্যে একটু বেশিই সহজ হয়ে পড়েছিলাম। নকল- টকল পেলেও তেমন কঠিন কিছু করিনি। যাক পার হয়ে, আর কতো!
সিগনেচার করতে গিয়ে ইকোনোমিক্সের ছাত্রের কাছে আটকে গেলাম। মাথার অর্ধেক টাক, বাকি চুল প্রায় পাঁকা, আর মুখের লম্বা দাডিতে তাকে ছাত্র ভাবাই দায়। সন্দেহ হওয়ায় তার সব কাগজ পত্র ভালোমত চেক করে মজাচ্ছলে বলেই ফেললাম- আপনার এ অবস্থা কেন?
পাশের বন্ধু মুচকি হেসে আস্তে আস্তে বললো – ম্যাম গার্লফ্রেন্ড ভাগছে। আর কতোদিন অপেক্ষা করবে বলেন?
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই যে দুটো বছর গেলো এখন এই শিক্ষার্থীদের কি হবে? করোনায় কিছুসংখ্যক চাকুরীতে ঢুকলেও বাকিরা কিছুই করতে পারেনি। কারন এ সময়টাতে খুব একটা নিয়োগ হয়নি।
আরও একটা লক্ষনীয় বিষয় ছিলো, অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। বিগত পরীক্ষায়গুলো দেয়ার পরও এখন তারা আসেনি। এর অন্যতম কারন বসে থেকে থেকে চরম হতাশাবোধ, বিরক্তি এসে যাওয়ায় তারা পড়াশুনা শেষ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কিংবা গরীব পরিবার থেকে হওয়ায় সে কোন কাজে ঢুকে পরেছে।
মহামারীতে আমাদের কারও হাত নেই। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাত। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো, ঠিক সেভাবেই পিছিয়ে গেলো। গরীব শিক্ষার্থীরা আর কখনো পড়াশুনায় ফিরবে কিনা তাও সন্দেহ। আর অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী পাবে কিনা সন্দেহ। কারন পরীক্ষা ও অপেক্ষাতেই কারো কারো সরকারী চাকুরীর বয়স শেষ প্রায়।
এখানে আমার নিজস্ব মতামত, করোনার কারনে আটকে যাওয়া সেশনের সকল শিক্ষার্থীদের নষ্ট সময়টুকু সার্টিফিকেট বয়স থেকে কমিয়ে দেয়া হোক। তাদের সরকারী চাকুরীসহ অন্যান্য চাকুরীতে প্রযোজ্য বয়স ৩২ করা হলে ক্যারিয়ার গডতে কিছুটা সময় পাবে। তা না হলে অনেক গুলো প্রাণ সুবিধা বন্চিত হবে আজীবনের জন্য। আর তারা জাতির জন্য, দেশের জন্য একটা বোঝায় পরিনত হবে।
ছবি- নেটের
৯টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর লেখেছেন করোনাই সব শেষ করেছে রুকু আপু অনে ক শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ লিটন ভাই।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সুন্দর লেখা…
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপনাকে।
হালিমা আক্তার
করোনা আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। যে শিক্ষার্থী বয়সের জন্য সরকারি চাকরির সুযোগ হারালো। সারা জীবনে তার দুঃখ ঘুচবে কি। সুন্দর পোস্ট। শুভ কামনা অবিরাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার শিক্ষণীয় পোস্ট। সরকার তো একুশ মাস বর্ধিত করেছে প্রবেশের বয়সসীমা। সত্যিই অনেকেই হয়তো বেঁচে গেল গলায় ঝুলে কিন্তু বেশিরভাগ ই চরম বেকার সমস্যায় পরবে। সামনে আরো কঠিন বিপর্যয় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো। শুভ সন্ধ্যা
অনন্য অর্ণব
আপনার কথায় যুক্তি আছে। তবে আমি যতোদূর জানি সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স ৩২ করার একটা সুপারিশ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তবে এই বয়স ৩২ নির্ধারণ করার সুফল যেমন আছে, তেমনি এর কিছু বিপরীত প্রতিক্রিয়া ও আছে । পরবর্তী জেনারেশনের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ছেলে মেয়ে সাফারার হতে পারে।
সৌবর্ণ বাঁধন
বয়স বাড়ানো হয়তো যৌক্তিক সমাধান। একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এতোদিন নিয়মিত পড়ালেখার বাইরে থাকলে পরে ফিরলেও তাল মেলানো কঠিন। বিশেষ করে যারা অভাবী সংসারের ছেলে মেয়ে তাদের জন্য সুবিধাপ্রাপ্তদের সাথে প্রতিযোগিতায় টেকাটা এখন এক দুরূহ ব্যাপার।
ছাইরাছ হেলাল
করোনার একটি ছোবল আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন, জানি না আর কী কী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।