
মানব জনম সাধারনতঃ তার গড় আয়ু পান ষাট বছর। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের গড় আয়ুর ধারণায়।এই গড় আয়ুকে সামনে রেখেই আমাদের চিন্তা করতে হয় কি ভাবে আরো বেশীটা সময়টা পৃথিবীতে থাকা যায়।তা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় আবার অধিকাংশ মানুষকে এই গড় আয়ুর ভেতরই জীবনের সকল লীলা সাঙ্গ করে গত হতে হয়।
পৃথিবীতে বেচে থাকা এবং চলে যাওয়ার ভেতর জীবন সংগ্রাম মুখী মানুষের মাঝে শেষ বয়সে একটি বিশেষ মূহূর্ত আসে যে সময়টাকে আমরা কর্মহীন অসর সময় অথবা লাইফ পেনসনও বলতে পারি।এই লাইফ পেনসনের সময়টায় যদি ঘরে সূখ; থাকে তবে চিন্তার বিষয় নয় আর যদি তার বিপরীত থাকে তবে একজন নর কিংবা নারীর জন্য শেষ বয়সটা খুব কস্টের হয়।এমন ঘটনাও ঘটে মানুষের জীবনে যার জন্য কখনো সে প্রস্তুত ছিলো না।তেমনি একজন বলেই ফেলেন তার বন্ধুকে,
“জানিস আজকে যা হলো আমার লাইফে এই প্রথম। জীবনে কোন রোগের জন্য বেশী করে পেরাসিটামল খেয়েছিলাম কি না মনে নেই তবে এ পড়ন্ত বেলায় এসে নিজেকে বেশ ব্যর্থই মনে হলো।হঠাৎ পেটের ইঞ্জিলের মাথা খারাপ হইলো।তার এখন ডিউটি সে পাকস্থলীকে ডেজারিং করে বাহিরে ফেলবে ময়লা দুষিত জল।এটা যদি মাত্রার বাহিরে হয় তবে শরীর নিস্তেত হয় তার বেলাও তাই হলো।পকেটে হাত দিলো মাত্র ষাট টাকা। পকেট থেকে বের করে ভাবলেন কি করা যায়।ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ আনবেন।সে সময় আবারো পেট কামড় মারে।বাধ্য হয়ে প্রথমে বিশেষ ঘরে বিশেষ কাজ;টা শেষ করলেন।
পকেটের টাকার যে নাজুক অবস্থা তাতে হাতুড়ে ডাক্তার দেখানোও সম্ভব নয়।তবুও সে ঔষধের দোকানে গেলেন-ঔষধ নিলেন- দাম এলো পঞ্চাশ টাকা। ষাট টাকা থেকে থাকল আর দশ টাকা।আর এই দশ টাকাই এখন তার সারাজীবনের সঞ্চয়।এ যুগে দশ টাকার মূল্য কিবা আর আছে। তাও ক্ষয়ে যাওয়ার পথে।
লাইফ পেনসনের আর এক বন্ধু জানালো-বন্ধুরে আমার জীবনে সঞ্চয়কৃত সব টাকা পয়সা সম্পদ শেষ।জানামতে সে সৎ ভাবেই তার জীবনে অর্থকড়ি সম্পদ কামিয়েছে।সাংসারিক ভাবে জায়ঝামেলা ছাড়া মোটামুটি ভালই ছিলো সে।তা হলে কি ভাবে শেষ হলো তার কষ্টে অর্জিত সম্পদ?
সে বলল-বছরখানেক আগে বাবা মারা গেলো-মনে আফসোস থেকে যাবে বলে বাবাকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা করিয়ে দিয়েছিলাম।সঞ্চিত সম্পদের কিছুটা ক্ষয় হলেও লাস্ট লাইফ পেনসনে বাবা দেখে গিয়েছিলেন তার সন্তান তাকে পৃথিবীতে বাচিয়ে রাখতে চেস্টার কোন ত্রুটি করেনি।তার কিছু দিন পর মাও পরপারে চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে।তাকেও আমার অবশিষ্ট সম্পদ যা ছিলো সব বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়ে দিয়েছি।অনেকে বলেন-তুই তোর লাইফ পেনসনের সময়ের পরিস্থিতির কথা একটুও ভাবলিনা! তোর সংসার-সন্তাদির ভবিষৎতের কথা ভাবলিনা!সব শেষ করে দিলি মা বাবার চিকিৎসায়? তাদের উত্তরে আমার আর কি বলার ছিলো বল ? যাদের জন্য এই দুনিয়ার আলো দেখলাম তাদের কেমনে আমি অবহেলা করি বল ?
মধ্যবিত্তদের মাঝে শেষ বয়সটায় যে পেনসন লাইফে থাকেন- তাদের অধিকাংশ অর্থ সম্পদহীন। তাই সে যদি হয় সরকারী চাকুরীজীবি তাহলেতো সে সরকারের নিয়মভুত পেনসনের টাকা পেয়ে যাবেন।সেটা তুলতে যে ঝামেলাই হোক পাওয়ার একটা নিশ্চিয়তা থাকে কিন্তু এদেশে যারা অসংখ্য বেসরকারী চাকুরীজিবী আছেন তাদের ভাগ্যে শেষ বয়সে চাকুরীর সুবাদে কি থাকে জানেন?
যদি সৎ হন তবে হাতের পাচ শুন্য আর অসৎদের কথা নাই বা বলি।
চাকুরীর জীবনে এই সৎ থাকা লোকটাকে সবায় ঠকায় যেমন লোকে ঠকায় তেমনি সৃস্টি কর্তাও ঠকায়।লাইফ পেনসনের সময়টায় এই নিরীহ লোকটি সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে খুব কস্ট হয়।সন্তানদের ছোট ছোট আবদারগুলো চোখের সামনে মরন হলেও তার চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।কখনো কখনো তার পকেটে দশ টাকাও থাকে না যে তা দিয়ে নিষ্পাপ অবুঝ সন্তাদের মুখে একটা চিপস তুলে দিবেন।ব্যাংক ব্যলেন্সতো কল্পনার বাহিরে।সৃস্টিকর্তা ঠকায় তাদের ওপর অতিরিক্ত রোগশোক বিপদাপদ দিয়ে।সমস্যা যেনো লাগিয়েই রাখেন।হতাশায় দুচোখের ঘুম যেন হারাম করে রাখেন।তখন সংসার ধর্ম সব কিছুই তার কাছে কেমন যেনো বেশ কঠিন আর ব্যর্থ মানুষ মনে হয়।
শিশুকাল পাচ সাত বছর,কৈশরকাল চৌদ্দ পনের বছর এবং যৌবন কাল ত্রিশ পয়ত্রিশ বছর।শিশুকাল হতে কৈশরকাল যদি ধরা হয় পনের বছর এবং যৌবনকাল যদি ধরা হয় সর্বোচ্চ পয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত তাহলে জীবনের গড় আয়ুর বয়স অবশিস্ট থাকে পচিশ-ত্রিশ বছর।এই পচিশ- ত্রিশ বছরের মধ্যে আপনাকে বাস্তবতার নিরীখে-এই কঠিন জীবনে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে নতুবা আপনি সবার পিছনে পড়ে যাবেন।লাইফ পেনসনের সময় আপনাকে বেশ তিক্ততা লাইফে চলতে হবে।
জীবনের বয়স যদি ধরি ষাট বছর তবে এর অর্ধের সময়টাতো চলে যায় ঘুমাইয়া আর হাইস্সা খেইল্লা। বাকী ত্রিশ বছর আপনাকে নিজের পায়ে দাড়িয়ে সংসারী হতে হয়।অনেকের নিজের পায়ে দাড়াতেও চলে যায় আরো বেশ ক’বছর।জীবন উপভোগের সময় তার আর বাকী থাকে কই? তবুও জীবন কখনো কারোর জন্য কোন কিছুর জন্যই থেমে থাকে না।চলমান জীবনের শেষ হয় মৃত্যু দিয়ে।
লাইফ পেনসনের সময়টাতে মন শুধু ভাবে আর ভাবে কেনো এমন জীবন হলো?এটা না করে ওটা করতে পারতাম।ওটা করলে মনে হয় জীবন আরো৴ লাইফ পেনসনের সময়টা আরো সুন্দর হতো।বুদ্ধিমান যারা তারা আফছোস করেনা বাস্তবতা আর চিরসত্যটাকে সহজে মেনে নেন কারন সে জানে মানুষের কি আর সাধ্য আছে জীবনের বাক ঘুরানোর!বিধাতার লিখন খন্ডাবে কে?
একটা সময় চলে আসবে সেই কাঙ্খিত দিন যে দিনটি প্রত্যেক সৃস্টির মাঝেই আসে।মৃত্যু হলো আমাদের লাস্ট লাইফ পেনসন।চিরস্থায়ী জিন্দিগীর কাছে চলে যাওয়া।সেখানে পেনসন বলে কিছুই নেই।অবিরত ভালো মন্দের জীবন যাপন।শুনেছি দুনিয়ায় ভাল কাজ করে গেলে পেনসন হিসাবে বেহস্থ পাওয়া যাবে আর খারাপ লোকদের জন্য কোন পেনসন নেই আছে যথাযথ; পানিসম্যান্ট।
সেই সময়টা আজ তার খুব কাছে এসে গেছে-বিদায়ে সায়েহ্নে তাকে দেখতে প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তেই কেউ না কেউ আসছেন।নির্বাক দৃস্টিতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে পর পর চোখ খুলে শুধু দেখছেন-মুখে কিছু বলতে পারছেন না।মাঝে মাঝে হাই তুলে উঠেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তখন মনে হয় বিদায়ের ডাক এলো।
যে কোন কারনে হোক মনোমালিন্যে যাদের কখনো আসার কথা ছিলো না তারাও আজ এসেছেন।ঘরভর্তি আত্মীয় স্বজন।মেয়ে মেয়ের জামাই নাতি নাতনি তারাতো আছেনই৴ সাথে গ্রামদেশ হতে ভাই বোনেরাও এসেছেন।এতো লোক থাকতেও একটি ছোট্র রুমে পড়ে থাকা তার দেহটাকে দেখবালের তেমন কেউ তার পাশে নেই ৴ছিলোনা।ছেলের বউয়েরা একবার খোজঁ নিলেও আরেকবার ডেকেও পাওয়া যেতো না।লাস্ট লাইফ পেনসনের শেষ মূহূর্তটায় নিজের অজান্তে কত ঘন্টা যে বহিঃগত পয়জনের সাথেই ল্যাপ্টে শুয়ে থাকতেন তা নিজেই জানেন না।
বোধ শক্তিহীন লাস্ট লাইফ পেনসনে তাকে দেখতে আসা আগত অনেকের অনেক কিছু চাহিদা ভাগবাটোয়ারার চিন্তা মাথায় থাকলেও তার মাথায় কেবল কত দ্রুত পৃথিবীকে ত্যাগ করা যায়।নিষ্ঠুর এই পৃথিবীকে,পৃথিবীর স্বার্থবাদী মানুষগুলোকে লাস্ট লাইফ পেনসনে চিনতে আর ভুল হলো না তাঁর।বুঝতে বাকীও রইলো না যে যাদের জন্য তাঁর জীবন যৌবন সব শেষ করলেন তারা তাকে প্রথম তিনদিনের মাথায়,এরপর চল্লিশদিন,এরপর বাৎসরিক এবং একটা সময়ে তাকে ভুলে যাবে পুরোপুরি ভাবে।
ততক্ষণে সে বাই বাই জানান পৃথিবীকে।
—————-ধন্যবাদ———-
৭টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
পড়তে পড়তে হাফাইয়া উঠছি…
শিরোনামটা যদি ধরি…. লাস্ট লাইফ পেনসন…এই তিনটে শব্দতেই আসলে পুরো কাহিনী চোখে ভেসে ওঠে…।
মোঃ মজিবর রহমান
সব পড়িনি। তবে জিবনের অবস্থা আচ করতে পারলাম আপনার লিখনিতে। এটাই হইতো জিবনের যাত্রা শেষ কবরে।
রেজওয়ানা কবির
বাস্তবতার পুরো ছোঁয়া তুলে ধরেছেন। আসলেই ভয় হচ্ছে সামনের দিনের কথা ভেবে।।।।
শুভকামনা ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
মুসলমান হিসেবে কাজ নামাজ আদায় আর সর্বদা সকলের মঙ্গল কামনা ও সবর্দা মানুষকে সাহায্য করার ভিতর থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করি বাদ বাকী আল্লাহ পাক জানেন। আশা করি ইনশা আল্লাহ আল্লাহপাক নাজাত দিবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব গভীরে থেকে তুলে এনেছেন যতসব ভাবনা কবি মমি দা ভাল থাকবেন–
আসলে জীবনের লাইফ পেনসনের ঘটবেই
হালিমা আক্তার
বাস্তবতার নিরিখে অসাধারণ বিশ্লেষণ মূলক পোস্ট। এসময় টা সত্যি কষ্ট কর। খুব ভয় হয়। না জানি আল্লাহ সামনে কি রেখেছেন। সবার জীবনে সুন্দর কাটুক। শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
লাস্ট লাইফ নিয়েই একটু-আধটু চিন্তায় ছিলাম, দাদা। এখন আপনার লেখা পড়ে আরও বেশি চিন্তায় পড়লাম। লাইফের এখন শেষ সময়। লাস্ট পর্যন্ত কী হয় জানি না। তবে আপনার লেখা লাস্ট লাইফ টাইম পর্যন্ত স্মরণে থাকবে। ভেবেচিন্তে চলতে হবে।