“যৌতুক ছাড়া বিয়ে করার জন্য বর্তমানে হাজারো ছেলে পাওয়া য়ায়।
কিন্তু ৫ হাজার টাকা কাবিনে রাজি হওয়া মেয়ের সংখ্যা নিতান্তই কম!”
কদিন যাবত এরকম একটা লেখা ভাইরাল হয়েছে। ফলে বুঝে হোক, না বুঝে হোক, আমজনতা তা মনের সুখে কপি পেস্ট করছে। কারণ এদেশে নারীবিদ্বেষী কন্টেন্ট পাবলিক খায় বেশি।
আরে ভাই, কিসের সাথে কিসের তুলনা? দেন মোহর তথা কাবিন হলো ইসলামী শরিয়তের বিধান, যা দিয়ে স্ত্রীকে সম্মানিত করা হয়। অপরদিকে যৌতুক বেআইনি, জুলুম এবং ইসলাম ধর্মেও এর কোন জায়গা নেই। আপনি পানি আর গো মূত্রকে একসাথে গুলিয়ে ফেললে তো চলবে না।
কাবিন ধরতে হবে ছেলের সামর্থ্য অনুযায়ী। আপনার যোগ্যতা কি সত্যিই পাঁচ হাজারে সীমাবদ্ধ? যদি তা নাই হবে, তাহলে বিয়ের প্রথমদিন থেকেই যোগ্যতার চেয়ে কম দেনমোহর দিয়ে স্ত্রীকে ঠকানোর চিন্তা আপনাদের কেমন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়? এটা স্ত্রীর হক। আবার এটাও সত্যি যে ছেলের যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশি দেনমোহর ধার্য করা উচিত নয়। আমি আবারও বলছি, ছেলের যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশি দেনমোহর ধার্য করা অন্যায়।
আপনার কেমন সামর্থ্য? যেমন সামর্থ্য তেমন মেয়েকেই বিয়ে করুন। শিক্ষিত, বড়লোক বাবার একমাত্র সুন্দরী কণ্যা, যার রং চুনের মত সাদা, উচ্চতা তালগাছের মত এতসব চাই, কিন্তু আপনার সামর্থ্য কত? কাবিন ৫০০০! আপনিই বলুন, এটা হলো? আপনার সামর্থ্য ৫০০০, খুব ভালো কথা, অনেক গরীব বাবা আছেন, মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। তাঁর মেয়েকে বিয়ে করুন। তার চাহিদা কম, আপনার সামর্থ্যও কম।
রইল বাকি যৌতুক। এটা কি আপনার অধিকার? এর বিনিময়ে আপনি মেয়ের বাড়ির কেনা হয়ে যান কিনা, ভেবে দেখেছেন? আপনি কি ভিখিরি? মেয়ের বাড়ি থেকে খাট, সোফা না দিলে আপনার শোয়ার বসার জায়গা নেই? আপনি যদি একজন কর্মঠ পুরুষ হন, আপনার যদি আত্মসম্মানবোধ বলে কিছু থাকে, আপনি কেন যৌতুক চান? কেনই বা যৌতুকের মত ইসলাম বিরোধী, বেআইনি বিষয়কে দেনমোহরের মত হালাল জিনিসের সাথে তুলনা করেন? কোন যুক্তিতে তুলনা করেন তারা?
ছবি: ব্লগ থেকে নেওয়া
১০টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
খুব সুন্দর পোস্ট। এ বিষয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে। যৌতুক শুধু বিয়ের সময় শুধু সীমাবদ্ধ নয় বিয়ের পরেও যৌতুকের চাহিদা থাকে। বিভিন্ন উৎসবে মেয়ের বাড়ি থেকে কি দিল সেটাও তো যৌতুকের মধ্যেই পড়ে।
নীরা সাদীয়া
আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা সবাই যেন এ বিষয়ে সচেতন থাকি, এটাই কাম্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বিষয়টি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাইতো যৌতুক অন্যায়, খারাপ । কিন্তু যেহেতু মেয়ের হক জড়িয়ে আছে কাবিননামায় সেহেতু সামর্থ্য অনুযায়ী কাবিন করা উচিত। আসলে আমাদের দেশের মানুষেরা নিয়ম মানার ক্ষেত্রে অনিয়মটাই বেশি করে। যেখানে যেটা করতে বলা হয় সেখানে সেটা করেনা। অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার বিষয় নিয়ে লেখার জন্য। আশা করি কুশলেই আছেন। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ আপু।
জ্বী, কুশলেই আছি। আপনি কেমন আছেন?
মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ফেসবুক একটা রম্য। মাঝে মাঝে দেখা যায়- রিজিকের মালিক যদি আল্লাহ হয় তাহলে বেকারের হাতে মেয়ে দেন না কেন?
রমরমা খায় পাবলিক। কিন্তু বেকারের তো বিয়ে করার অধিকারই নেই এটা বুঝে না।
যৌতুক হলো হারাম এবং সন্তানও জারজ আর দেনমোহর না দিয়ে স্ত্রী হারাম সন্তান জারজ। বুঝান বাঙ্গালীরে! বুঝবেনা। যৌতুক খাবে দেনমোহর দিবে না। তো জারজ হও।
নীরা সাদীয়া
একদম সঠিক কথা বলেছেন। এরা পারেও বটে ঘাওড়ামি করতে। ভালো কথা বুঝবে না, আওলা ঝাওলা যুক্তি, তুলনা দিবে।
শুভকামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
যৌতুক অন্যের টাকা তাই মজা। কিন্তু দেনমোহর আপদকালিন একজন মেয়ের সম্পদ। ছেলেদের মানসিকতা বদল না হলে, কোন কিছুই সম্ভব নয়। শুধু ভাইরাল হবে
জিসান শা ইকরাম
যৌতুক আর দেনমোহর এক করে গুলিয়ে ফেলার আহাম্মকি করে অনেকেই। মুসলিম বিয়েতে দেন মোহর অবশ্যই নির্ধারণ ও পরিশোধ করতে হবে। এটি স্ত্রীর হক। যৌতুক হচ্ছে জুলুমবাজি। কন্যা পক্ষের উপর চাদাবাজি।
পুরুষের সামর্থ অনুযায়ী দেন মোহর পরিশোধ করতে হবে।
পোস্টের বক্তব্যের সাথে সম্পুর্ন একমত।
খুবই ভালো পোস্ট।
শুভ কামনা।
মোঃ খুরশীদ আলম
বিয়ের মতো একটা পবিত্র ব্যাপারে দেনমোহর নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি একটা পবিত্র সম্পর্কের সূচনাতেই নেতিবাচক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে। দেনমোহর কতো হবে, কিভাবে তা পরিশোধ করতে হবে এসব বিষয়ে পাত্রপক্ষের চেয়ে পাত্রীপক্ষকেই বেশী জানতে হবে।
আসলে আমাদের গোড়াতেই সমস্যা। আমাদের উচিত আমাদের শিক্ষায় দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা ও সমাধানগুলো শরিয়তের আলোকে জানার চেষ্টার রত থাকা।
নার্গিস রশিদ
সময় উপযোগী একটা বলিষ্ঠ বক্তব্য। আশা করব এরকম লেখা দিয়ে সমাযে সচেতনা বৃদ্ধি করবেন ।