R
২৫ মার্চ,১৯৭১ এর কালরাত্রিতে যেসব অকুতোভয় বাঙালি বুকের কয়েকটি পাঁজর আর একটি করে লাল টুকটুকে হৃদপিন্ড নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসের নিকৃষ্টতম পশুদের বিরুদ্ধে,তাদের সেই ছেলেমানুষি দুঃসাহসকে উৎসর্গ করছি এই সিরিজটি

১৯৭১,বর্ষাকালের কোন একদিন।বরিশালের আগৈলঝড়া থানার রাজিহার গ্রামের সত্তর বছরের বৃদ্ধ শরৎ বাবু বাড়ির উঠানে বসে খই খাচ্ছিলেন,তাঁর গায়ে ছিল জ্বর।পাকিস্তানি মিলিটারি আসতে দেখে ভয়ে দৌড় দেন তিনি।আরও দুইজন তরুণের সাথে এই বৃদ্ধকেও ধরে এনে তারই উঠানের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।এর পর নিথর দেহ নিয়ে শরৎ বাবু হা করে তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে,তার মুখের মধ্যে তখনও সাদা খই।১৯৭১ এ শরৎ বাবুর মত মৃত্যু সম্ভবত সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ছিল একজন বাঙালির জন্য।তবে এমন ভাগ্য সব বাঙালির হয়নি,হয়নি অধিকাংশেরই।কাউকে হত্যা করা হয়েছে জবাই করে,কাউকে তিরিশ কেজি ওজনের শাবলের ঘায়ে মাথা গুড়িয়ে দিয়ে।হত্যা করা হয়েছে পৌনঃপুনিক ধর্ষণের মাধ্যমে,হত্যা করা হয়েছে শরীরের মাংস এবং চামড়া আলাদা করে,হত্যা করা হয়েছে তিলে তিলে – আঙ্গুল কেটে,চোখ তুলে ফেলে,চামড়া চিরে লবন লাগিয়ে দিয়ে এবং সবশেষে গুলি করে।হত্যা করা হয়েছে টুকরো টুকরো করে কেটে।হত্যা-নির্যাতন-নৃশংসতাকে আক্ষরিক অর্থেই একটি শিল্পের পর্যায়ে তুলে আনা হয়েছিল ১৯৭১ সালে।হত্যা এবং নির্যাতনই শুধু নয়,ভিটে থেকে উচ্ছেদ,সম্পদ লুন্ঠন এবং ধ্বংস সাধনের মাধ্যমে একটি জাতিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সব ধরণের আয়োজন সম্পন্ন করে পাকিস্তান রাষ্ট্র,তার অনুগত সেনাবাহিনী এবং তাদের অক্সিলিয়ারি ফোর্স।এই ধরণের কর্মকান্ডকে গণহত্যা,যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধের অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।এসব অপরাধের বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা যায় রোম সংবিধি থেকে,জানা যায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এক্ট ১৯৭৩ থেকে,জানা যায় বিভিন্ন দেশের গণহত্যার বিচারের জন্য প্রণীত আইনগুলো থেকে।এই অপরাধগুলোর যেসব শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে,যেসব কাজকে উপরের অপরাধগুলোর আওতাধীন ধরা হয় তার প্রায় সবকটিই সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশ ভূখন্ডে – ১৯৭১ সালে।সব মিলিয়ে মোট ৩৩ ধরণের অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী অন্যান্য বাহিনী।এই অপরাধ গুলো হল গণহত্যা## হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে গণহত্যা সাধন## গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে গণহত্যা## সুপরিকল্পিত ভাবে শারীরিক ধ্বংস ও জীবননাশের মাধ্যমে গণহত্যা পরিকল্পনা এবং সংঘটন যা পরিনামে মানবজীবনকে নিশ্চিহ্ন করে## এমন কর্ম করে গণহত্যা সাধন যাতে অন্যের জন্ম চক্র থেমে যায়মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## হত্যার মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## ব্যাপক নিধনযজ্ঞের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## ধর্ষণের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## যৌনদাসীতে পরিণতকরণের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## যৌন নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## জোর পূর্বক গর্ভধারণে বাধ্য করার মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## দাসত্বে আবদ্ধকরণের সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## জোর পূর্বক নির্বাসন ,দেশান্তর এবং জনগণকে ভিটা থেকে উৎখাতের সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## আইন বহির্ভূতভাবে কারাগারে নিক্ষেপ,বন্দীকরণ এবং স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ## অত্যাচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ## মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধযুদ্ধাপরাধ## উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যার মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের উপর আক্রমণের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## শত্রু দেহ খন্ড বিখন্ড ও বিকৃত করণের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## ধর্ষণের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## যৌনদাসীতে পরিণত করার মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## যৌন নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## খুনের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## সাধারণ জনগণের উপর আক্রমণের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## অমানবিক আচরণের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## বৈরী পরিবেশে শত্রুপক্ষের লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক শ্রম আদায়ের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## অন্তহীন কষ্ট ও দুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## বেসামরিক ব্যক্তি ও স্থাপনার উপর আঘাতের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## লক্ষ্যবস্তুর বাইরে ব্যক্তি ও বস্তুর উপর সীমাহীন আঘাতের মাধ্যমে ধ্বংস,মৃত্যু ও শারীরিক ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## প্রতিরক্ষাহীন স্থান ও স্থাপনার উপর আঘাতের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## শত্রুসম্পত্তি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিসাধণের মাধ্যমে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ## ব্যক্তিমর্যাদার উপর গুরুতর আঘাতজনিত যুদ্ধাপরাধ

*প্রিতমের লেখা থেকে সংগ্রহীত

৫৬১জন ৫৫৮জন
0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ