কিছুদিন আগে বসুন্ধরায় আমার এক চাচাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। ওদের বাসায় কাজ করেন যে খালা ওনার পায়ের যেকোন এক সমস্যার কারনে ওনাকে কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়, বয়স ৫০ এর মতো হবে। সম্ভবত ওনার পায়ের সমস্যার কারনেই উনি কারও সামনে তেমন একটা আসেননা। এর আগে আমরা যতবার গিয়েছি ততবারই উনি আমাদেরকে দেখে সেই যে রুমের ভেতরে ঢুকেছেন আমরা চলে আসার আগ পর্যন্ত আর দেখিনি। এবার একটু বেশি সময়ের জন্যই গিয়েছিলাম। আর আমরা যাবার পর পরই চাচাতো ভাই এবং ওর বৌ দুজনেই বিশেষ এক কাজে বাসার বাইরে গিয়েছে। যদিও ওরা যাবার আগে দুপুরের রান্না করে রেখে গিয়েছে তবুও বাকি কাজগুলো তো খালাকেই করতে হবে তাই খালা আজ আর রুমে ঢুকে বসে থাকার সুযোগ পেলেননা। যাইহোক, খালা নিজের কাজ করছেন আর আমি গিয়ে খালার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম, এটা সেটা জানতে শুরু করলাম, তবে ভুলেও কিন্তু খালার পায়ে কি হয়েছিল তা একবারও জানতে চাইনি, কারন আমি জানি আমার এই প্রশ্ন খালাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিবে, বরং আমি এমনভাবে কথা বলছিলাম যেন খালার পায়ের সমস্যার কথা আমি জানিইনাা। কথা বলতে বলতে খালা হয়তো ভরসা পেলেন আমার উপর এবং ভাবলেন আমার কাছে লজ্জা পাবার কিছু নেই তাই খালাও ওনার জীবনের অনেক গল্প আমার সাথে শেয়ার করলেন। কিভাবে ওনার স্বামী আগের স্ত্রীর কথা গোপন রেখে ওনাকে বিয়ে করেছেন, বিয়ের পর ওনার কি কি সমস্যা হয়েছে, ওনার বাবার বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়া সত্ত্বেও কেন উনি অন্যের বাসায় কাজ করেন এর সবই বলেছেন। গল্পে গল্পে দুপুরের খাবারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম খালা টেবিলে খাবার দিবে, কিন্তু না, খালা আমাকে চমকে দিয়ে বলে বসলেন, আমি যে প্লেটে খাবো সেটা ধুয়ে নিতে এবং বাটিতে করে ভাত বেড়ে টেবিলে নিয়ে আসতে। খালার কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম কারন, খালার কাছ থেকে এমনভাবে হুকুম শুনবো তা ভাবিনি, তার উপর আমরা তো ওখানকার মেহমান। কিন্তু আমার সাথে গল্প করতে করতে খালা এতোটাই স্বাভাবিক হয়ে গেলেন যে আমি যে ওই বাসার মেহমান খালা হয়তো সেটা ভুলেই গিয়েছিলেন। যাইহোক, খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে খালার হুকুম মতো কাজ করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এর কিছুক্ষণ পরই চাচাতো ভাইয়েরা বাসায় ফিরে এলো। আর খালা আবারও তার নিজের রুমে ঢুকে পড়লেন। তাই ফেরার সময় খালাকে বলে আসা হয়নি। এজন্য কিছুটা খারাপ লাগছিলো, তবে খালার হুকুমের কথা মনে করে মনে মনে বেশ হাসিও পাচ্ছিলো। ভালো থাকুন খালা 🙂
৬টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
ভালো থাকুন খালা।
আপা, আপনি বোধহয় পোস্টের নাম দিয়ে ভুলে গিয়েছেন। একটি সুন্দর নাম দিয়ে দিন 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর একটা পোষ্ট।
তবে নাম ছাড়া কেমন জানি দেখাচ্ছে। নিহারীকা আপার মতোই বলছি সুন্দর একটি নাম দিয়ে দিন।
অনিকেত নন্দিনী
একটানা অনেকক্ষণ গল্প করার কারণে হয়তো তিনি আপনাকে এতোটাই আপন মনে করেছেন যে খুব স্বাভাবিকতার সাথে নিজের হাতে খাবারের থালাবাটি নিয়ে খেতে বসতে বলেছেন। গল্প করে তার জড়তা না কাটালে তিনি হয়তো বরাবরের মতো আড়ষ্ট হয়েই থাকতেন।
ইঞ্জা
আমার জীবনে দেখা অনেক কাজের মানুষের বেশিরভাগ একটু ভালোবাসা দেখালেই বেঁকে যেতে দেখেছি আর ইনি তার একজন
আবু খায়ের আনিছ
ভালো থাকুক খালা।
শুন্য শুন্যালয়
এভাবে হুকুম করাতো ঠিক হয়নি, তবে আপনার সাথে বেশ স্বাছ্যন্দ ফিল করায় হয়তো বলেছে। ভালো থাকুক উনি।