আসামের রাজধানী গৌহাটি বা গুয়াহাটি থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে এগারটায়, আমাদের গন্তব্য ডিমাপুর হয়ে নাগাল্যান্ড। হাতে আছে আড়াই ঘন্টা সময়। আসাম এবং নাগাল্যান্ড ভ্রমণ শুরু করার পর থেকেই আমার মনে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল, যদি সুযোগ হয় কামরূপ কামাখ্যা দেখার। আমাদের ভ্রমণ লিডার মনা ভাইকে আগেই বলে রেখেছিলাম একটু সময় বের করে যেন আমাদেরকে কামরূপ কামাখ্যা থেকে ঘুরিয়ে আনে। ছয় জনের টিমের তিনজনই আড়াই ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে কামরূপ কামাখ্যায় দৌড়াতে রাজী হয়নি। কিন্তু আমি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলাম।
সেই ছোট বেলা থেকেই হাটে বাজারে ক্যানভাসারদের নানা রকম যাদু দেখে আসছি, কখনো মানুষের মাথা কাটে তো কখনো ছেড়া কাগজ দিয়ে চকচকে নতুন টাকা, বিস্কুট, চকলেট বানায়। আর এমন সব যাদুই ওনারা শিখে এসেছে রহস্যে ভরা ল্যাংটার দেশ কামরূপ কামাখ্যা থেকে। জাদু টোনার দেশ কামরূপ কামাখ্যা নারী শাসিত একটা দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। ওখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসতে পারেনা, নারী রাজ্যের নারীরা কাউকে জীবন সঙ্গী, আবার কাউকে পাথর বা ভেড়া বানিয়ে এখানেই রেখে দেয়। ভূত-পেত্নী আর ডাকিনী-যোগিনীর দেশ থেকে কিন্তু আমাদের তাবিজ বিক্রি করা ক্যানভাসাররা ঠিকই ফিরে এসে আমাদের চকলেট খাওয়াচ্ছেন।
উবারের ট্যাক্সি নিয়ে ছুটে চললাম গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত আমার সেই কাঙ্খিত মন্দিরে। কামরূপ মূলত গৌহাটির একটি জেলার নাম, আর কামাখ্যা হলো সেই জেলায় অবস্থিত একটা মন্দির মাত্র। গৌহাটি স্টেশন থেকে দুরত্ব কতোটা তা ঠিক বলতে পারবো না, তবে পাহাড়ের ঘোরানো পেচানো পথ পারি দিয়ে ২০/২৫ মিনিটেই পৌছে গেলাম মন্দিরের পাদদেশে। গাড়ির রাস্তা শেষ, বাকী পথটা হেটেই উঠতে হবে। উবারের গাড়ি যেখানে নামিয়ে দিলো সেখান থেকেই শুরু হলো নানা নামের মন্দির। এই মন্দির গুলিতে দশ মহাবিদ্যা অর্থাৎ কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা, বগলামুখী, মাতঙ্গী ও দেবী কমলা – এই দশ দেবীর মন্দিরও রয়েছে।
রাতে ক্যামেরায় ভালো ছবি না আসলেও ভালো ছবি তোলার চেষ্টার কমতি ছিলোনা আমার। কারণ এটা আমার স্বপ্ন গন্তব্য। ক্যামেরায় ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলেও কিছু ছবি ধারণ করেছিলাম। তখন কি আর জানতাম ক্যামেরায় তোলা আমার সব ছবি হারিয়ে মোবাইলে তোলা ছবিগুলোই স্থায়ী হবে। আমার পিসির হার্সডিস্ক ক্রাস করায় এবং বিগত তিন বছরে তোলা কোন ছবির ব্যাকআপ না রাখায় আজ সবেধন নীলমনি মোবাইলে তোলা ছবি নিয়েই আমার আজকের পোষ্ট। আসুন মোবাইলে তোলা কিছু ছবিতে দেখে নেই আমার সেই স্বপ্নের নারী রাজ্য কামরূপ কামাখ্যা।
(২) মূল কামাখ্যা মন্দিরের প্রবেশ পথ এটা।
(৩) মূল প্রবেশ পথের সিড়ির নিচেই অঙ্কিত রয়েছে মন্দিরের কিছু ইতিহাস।
(৪/৫) মন্দির চত্ত্বরের ভেতর দিকে গিয়ে দুই পাশ থেকে তোলা দুটি ছবি। মূলত এটাই কামাখ্যা মন্দিরের পুরো ছবি।
(৬) হাতির উপর বসে আছে একটি মানুষের প্রতিকৃতি, তাতে প্রচুর সিঁদুরে মাখামাখি। জানিনা এটা কার মুর্তি।
(৭) মন্দির থেকে কিছুটা পথ নেমে নীলাচল পর্বতের বাঁকে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তোলা রাতের গৌহাটি শহর।
(৮/৯) কামরূপ কামাখ্যা দেখে গৌহাটি স্টেশনে আমরা সময় মতোই ফিরতে পেরেছি, আমার ভ্রমণ সঙ্গী সহ আলোকিত স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা দুটি ছবি।
২৪টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
এতদিন কই ছিলেন ভাইজান।
এতো সুন্দর ভ্রমন কাহিনী আর ছবি থেকে
বঞ্চিত রেখে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আসলে কামাখ্যা মন্দিরটা সময়াভাবে আমরা ভালোভাবে দেখতে পারিনি। তাছাড়া রাতের বেলায় মন্দিরটা অতোটা জমজমাটও ছিলো না। তবু দুধের স্বাধ ঘোলে মেটানো আরকি। কেমন আছেন দাদা?
সুপায়ন বড়ুয়া
ভাল আছি। আপনি কই ছিলেন ?
ছাইরাছ হেলাল
আবার আমাদের মাঝে ফিরছেন দেখে আনন্দিত হচ্ছি ,
এত অল্প সময়ে ও যে ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছে সেটাই আমাদের জন্য ও অনেক।
কামরুপের এই কামাক্ষা মন্দির আমাদের অধরা ই থেকে যেত।
কামাল উদ্দিন
ওটা এখনো আমার অধরাই রয়ে গেছে বলে আমি মনে করি ভাইজান। কোন এক সময় একটি দিন সময় নিয়ে ওটা ভ্রমণ পরিকল্পনা আমার আছে, তখন হয়তো নতুন করে আরো একটা পোষ্টব দিতে পারবো……….ধন্যবাদ, শুভ সকাল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন ছবি ভাই, ভ্রমণ ভাই। মোবাইলে তুললেও ছবিগুলো অনেক ভালো হয়েছে। যাক আপনার বর্ণনার পরিসীমা বেড়েছে। অনেক দিন পর পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ফটাফট মন্তব্য করেন পারলে ডাবল করেন মন্তব্য সুদে আসলে উসুল করতে। শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আপনারা আমাকে মনে রেখেছেন এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার, চেষ্টা করবো নিয়মিত পোষ্ট, মন্তব্য চালিয়ে যেতে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মনে রাখবো না মানে! আপনি সেই অসম্ভব কে সম্ভব করা একটা মাত্র ভাই। ভালো থাকবেন
নিতাই বাবু
আমার বড় দিদির বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ভুটান ঘেঁষা বীরপাড়া নামক স্থানে। বাড়ির পাশেই কোলকাতা-মিজোরাম ভায়া শিলিগুড়ি হাইওয়ে। বীরপাড়া হাইওয়ের পাশে আমার দুই ভাগিনার গ্যারেজ। দুই ভাগিনাই গ্যারেজ লাইনে থাকা বড় মিস্ত্রিদের মধ্যে ওঁরাও দুইজন। যাইহোক, বড় দিদির বাড়ি থেকে আসাম গৌহাটি প্রায় ৭/৮ ঘণ্টার রাস্তা। আর গৌহাটি থেকে কামরূপ জেলায় অবস্থিত কামাখ্যা দেবীর মন্দির ৩০ মিনিটের রাস্তা। শুনেছি ভাগিনাদের কাছে ও সেখানকার স্থানীয় লোকদের কাছে। তা শুনে, সেখান থেকে কামরূপ কামাখ্যাতীর্থস্থানে যাবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ। টাকার অভাবে এই পবিত্র তীর্থস্থানে আমার আর যাওয়া হয়নি। তবে সেখানকার অনেক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছিলাম। সেই তথ্যের ভিত্তিতে “কামরূপ কামাখ্যা কি সত্যি যাদুর দেশ?” শিরোনামে সোনেলা ব্লগে একটা পোস্ট করেছিলাম। সেটা এখানে ক্লিক করে দেখুন!
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আপনার সেই পোষ্ট খানা আমি দেখেছি…….শুভ কামনা সব সময়।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর সুন্দর ছবি হোক মোবাইলে। কাম্ররুখ্য কামাখ্যা সত্যি বান, যাদুটোটার কাহুনীর নির্ভরযোগ্য স্থান।
আপনার ভ্রমনে আপনি হাজির। কামাল ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মজিবুর ভাই, আশা করছি ভালোই আছেন।
মোঃ মজিবর রহমান
আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন ভাইজান। আপনিও ভাল থাকুন।
ফয়জুল মহী
স্বাগত আপনাকে । ভালো লাগলো ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, শুভ সকাল
আলমগীর সরকার লিটন
কামাল দা মানেই ত নতুন নতুন ছবি দেখা
অনেক শুভেচ্ছা রইল ————-
কামাল উদ্দিন
লিখতে না পারলে যা হয় আরকি, ছবি দিয়েই ব্লগিং সারা। ধন্যবাদ লিটন ভাই, শুভ কামনা জানবেন।
তৌহিদ
ভাই অনেকদিন পরে এলেন কিন্তু! আপনাকে মিস করছিলাম। কামরুম কামাখ্যা নিয়ে আমার খুব ইন্টারেস্ট আছে। এ ধরনের লেখা দেখলেই আমি গোগ্রাসে গিলি মানে পড়ি আর কি!
ভালো থাকুন ভাই।
কামাল উদ্দিন
ছবিগুলো নেই বলে পোষ্ট খানা ভালোভাবে সাজাতে পারলাম না ভাই, ভবিষ্যতে আবারো গেলে হয়তো ভালো ছবি পেয়ে যাবো, ধন্যবাদ।
তৌহিদ
ইনশাআল্লাহ ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দারুণ ভ্রমণ কাহিনীর অপূর্ব বর্ণনা এবং সুন্দর ছবি।
শুভ কামনা রইলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মনজুর ভাই, শুভ কামনা সব সময়।
আরজু মুক্তা
আমার নানাবাড়ি আসামের গৌহাটি। তাঁদের কাছ থেকে কামরূপ কামাখ্যার গল্প শোনা। আর জমাও আছে অনেক গল্প। একদিন লিখে ফেলবো স্মৃতিকথায়
কামাল উদ্দিন
হুমম, জমা গল্পগুলো লিখের সবাইকে জানিয়ে দেওয়াই ভালো আপু।