বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যদি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হয় তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি “উন্নয়ন” শব্দটির নীচে চাপা পরে গেছে আমার আর্তনাদ। ব্যাটারির চার্জ শেষ, তাই মাইকিং করে এ উন্নয়নের বানী পৌঁছাতে পারছিনা আশেপাশের কোথাও।
আজকে মহাকাশে বাংলাদেশের নাম জ্বলজ্বল করছে আর স্থলভাগের উপরিতলের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমি অন্ধ না হয়েও অন্ধের মত ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে ঠিকানা খুঁজে মরছি উন্নয়নের।
অথচ লাল নীল এলইডি বাতির মোলায়েম আলোতে ফখা মখা চখারা ময়ূরের পালক লাগানো কাকের পুচ্ছ নৃত্য দেখে আর হাততালি দেয়।
অস্বীকার করিনা দেশের উন্নয়ন হয়নি, তবে উন্নয়ন যখন আমার চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় হাজার কোটি টাকা লোপাটের ডিএসএলআর ফটোগ্রাফী তখন ভাবনারা এলোমেলো হয় বৈকি।
যন্ত্রগুলি ডিজেল থেকে কয়লায় উন্নত হতে হতে পারমাণবিক চুল্লিতে রুপান্তরিত হয়। পল্লী বিদ্যুৎ স্যুট টাই বুট পরিহিত হয়ে নাম ধরে ইংরেজ সাহেবদের – পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ।
যেখানে নরম গদিতে বসে দরবেশ বাবা হাতের আঙুলে তসবি গুনে আর ওয়াজ করে উন্নয়নের।
শুধুমাত্র বিদ্যুতের আলোর অভাবে সেসব দৃশ্যমান হয়না তাদের; আর আমি খুঁজে মরি আমার দু’পায়ে দু রকমের জুতা! এও কি সম্ভব? অন্ধকারে নিদেনপক্ষে নিজের স্যান্ডেলজোড়াতো খুঁজে পাব? তাও পাইনা।
উন্নয়নের মহাসড়কে মোম জ্বালিয়ে হাঁটতে গিয়ে আমি কতবার যে উষ্ঠো খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে আহত হয়েছি তার হিসেব কষতে গেলেও এখন একটা টর্চের দরকার। দক্ষ জনবলের অভাবে আমাকে একটা এম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অপারগ সবাই।
আজ বলতেই হয় আমাদের স্বার্থক উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিদিন দুই ঘন্টা, সপ্তাহে একবার আট ঘন্টা করে মাসে চারবার মোট ছেচল্লিশ ঘন্টা বিদ্যুতবিহীন থাকার পর এখন হিসেব করছি আর কত ঘন্টা অন্ধকার আকাশের নীচে বসে থাকলে ঐ চাঁদের বুড়িমার চরকাকাটার ছবি চোখের সামনে দৃশ্যমান হবে?
দেশকে দেশের মানুষকে ভালোবাসি বলেই এত কষ্ট পাই সীমাহীন দুর্নীতি দেখলে। চাটুকার সমাজ তাই আমাকে অসভ্য উপাধির তকমা গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কি করে বোঝাই, চাটুকারিতা করতে গেলে যেই লেবেলের এনার্জি প্রয়োজন সেই পরিমান খাবার পেটে না পরলে এনার্জি আসবে কোথা থেকে? আমার ক্ষুধা মেটাবে কে?
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলতেই যে মানুষটির মাথায় একটি প্রশ্ন সবার আগে আসে- আজ অন্নের সন্ধানে কোথায় কোন ধূলিমাখা পথে ঝুলি নিয়ে হাঁটা দেব; তার কি চাটুকারিতা করার সময় আছে?
(লেখাটি বিদ্যুৎ বিহীন টানা আট ঘন্টা অন্ধকারে বসে থাকা জনৈক অসভ্যের লেখা)
২৮টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
প্রথম হাজিরা দিয়ে গেলাম।
তৌহিদ
কই গেলেন ভাই? এখন কি টিফিন পিরিয়ড নাকি? আচ্ছা দশমিনিট ব্রেক অক্কে??
মাহমুদ আল মেহেদী
জ্বি ভাই সত্যই টিফিনের ঘন্টা দিয়েছিলো।
তৌহিদ
যাক এখন বসেন, ক্লাসে স্যার এসেছেন☺
ছাইরাছ হেলাল
কিছু বিভ্রাট আমাদের উন্নয়নকে লাল চোখ দেখায়।
তৌহিদ
আসলেও তাই ভাই। দুর্নীতির কাছে সব উন্নয়নের আলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
মাহমুদ আল মেহেদী
উন্নয়ন এই একটা শব্দ থেকে কত কিছুই না বুঝিয়ে দিলেন সু নিপুন হাতে।
তৌহিদ
লেখাটি পড়েছেন জেনে ভালো লাগছে। ☺
শুন্য শুন্যালয়
খুব চমৎকার একটি লেখা। অন্ধ না হয়েও অন্ধের মতো ছড়ি ঘোরানো ছাড়া এই অন্ধকারে আর কী করার আছে!
অন্ধকারে স্যান্ডেল খুঁজে না পাওয়া কিংবা চাঁদের বুড়ির চরকাকাটা খোঁজা, খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন উন্নয়নের আলোর অভাব। ঝুলি নিয়ে বের হতে হয় বলেই এক দুইটা লেখা ছাড়া কিছু করার উপায় থাকেনা।
আবারো বলছি, চমৎকার!
তৌহিদ
ধন্যবাদ জানবেন আপু, বাসায় একজনের পরীক্ষা। আলোর অভাবে সে পড়তে পারছেনা আর আমি কম্পিউটার অন করতে পারছিনা বলে কত কাজ পেন্ডিং রাখতে হচ্ছে।
দুঃখে আমার কলম মোমের আলোয় এসব লিখছে।☺
শুন্য শুন্যালয়
তাহলে উন্নয়ন যে হয়নি তা কিন্তু বলা যাচ্ছেনা 🙂
হোস্টেলে থাকতে, চারদিকে ইট পেতে মাঝে মোম জ্বালিয়ে রান্না করেছি, এইসব ইনোভেটিভ আইডিয়া কে আপনি তো উন্নয়ন হিসাবে লেখায় এড করে দিতে পারেন! :p :p
তৌহিদ
উন্নয়ন অবশ্যই হয়েছে তবে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে সে সুবিধা সবাই ভোগ করতে পারছেনা আপু।
বাহ! রান্নার এমন অভিজ্ঞতা আপনার হয়েছে তাহলে?/
নিতাই বাবু
একদিকে গরম, অন্যদিকে বান-তুফানের দিন। বর্তমানে সমস্যাটা এখানেই। তবে এর বেশি সমস্যা হয় রাজধানী ঢাকার আশপাশে থাকা এলাকাজুড়ে। বর্তমানে আমাদের নারায়ণগঞ্জে তেমন একটা লোডশেডিং নেই। আমার মনে হয় বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের চাইতে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী অন্তত বিদ্যুতের ঝামেলা থেকে মুক্ত!
আপনার এলাকা কোনটা তা আমার জানা নেই! তবে আশা করি আমাদের দেশে অন্তত বিদ্যুতের সমস্যাটা একদিন চিরতরে লাগব হবে।
তৌহিদ
বিদ্যুৎ সমস্যা আগের থেকে এখন অনেক উন্নত হয়েছে দাদা। এখানে আগেতো প্রায় চার পাচ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকতোনা।
আর নারায়ণগঞ্জ কলকারখানার এরিয়া। সেখানে বিদ্যুৎ না থাকলে দেশের চরম অপচয় হবে অনেক কিছুর।
সাবিনা ইয়াসমিন
অসভ্যের কথাগুলো নির্মম সত্যি তাই ভালো লেগেছে। দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষ দের ভালোবেসে আর যাই হোক চাটুকারিতা গিলে খাওয়া সম্ভব না। সত্য তিক্ত হয়, সত্য হজম করতে করা চাটুকার দের কম্ম না।
অনেক ভালো লিখেছেন তৌহিদ ভাই। আপনার সময়োপযোগী লেখা সব সময়েই অনবদ্য হয়। ভালো থাকুন, অসভ্যতামি চালিয়ে যান। শুভকামনা রইলো 🌹🌹
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু, আসলে কিছু জিনিস মন থেকে মেনে নিতে পারিনা বলেই এসব কথা মনে চলে আসে। আমি আবার মনে কথা চেপে রাখতে পারিনা তাই বলে ফেলি।
শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
জিসান শা ইকরাম
যেভাবে লিখলেন তেমনকি আছে বর্তমানের বাংলদেশ?
আমাদের এলাকায় কেবলমাত্র ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়, এই মাসে ঝড় হচ্ছে খুব, এখন যায়। খুব স্বল্প সময়ে আবার চলে আসে বড় গাছ বিদ্যুতের তারের উপর হেলে গিয়ে তার ছিঁড়ে না গেলে। কোনো লোড শেডিং নেই। তাই আপনার ঘন্টা মাস বছরের বিদ্যুৎ হীনতার অভিজ্ঞতা নেই। আমার মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ নিয়ে আপনার লেখার এই অংশ টুকু কয়েক বছর আগের লেখা।
‘ আজ অন্নের সন্ধানে কোথায় কোন ধূলিমাখা পথে ঝুলি নিয়ে হাঁটা দেব ‘ এখানেও দ্বিমত আমার অভিজ্ঞতা থেকে। ভিক্ষা দেয়ার মত কোন ভিক্ষুককে খুঁজে পাইনা আজকাল। প্রতি বছর আব্বার মৃত্যু বার্ষিকীর দিন আগে ২৫- ৩০ জন ভিক্ষুককে খাওয়াতাম। গত দশ বছর ধরে এদের পাইনা। অবশেষে বাধ্য হয়ে এতিম খানায় খাবার দেই একবেলার। একজন কামলার প্রতিদিন বেতন ৪০০ টাকায়ও পাওয়া যায় না। ৫০০- ৫৫০ টাকায় ডেইলি কামলা খাটাই আমরা।
হ্যা অব্যবস্থা আছে সিস্টেমে, দরবেশ বাবারা লুটে পুটে খাচ্ছে,
তবে জনগনের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে ভাই।
আমার ব্রীক ফিল্ডের সবচেয়ে আলসে লেবারের বাড়িতেও কালার টিভি, ফ্রীজ আছে, এন্ড্রয়েড ফোন চালায়।
তার ফেইসবুক আইডিও আছে 🙂
শুভ কামনা।
তৌহিদ
ভাই আপনি যে কথাগুলো বললেন সেসবগুলোই যৌক্তিক।
তার সাথে আমি একটু যোগ করতে চাই- আগের মত এখন আর বিদ্যুৎ যায়না এটা ঠিক। আর ঝড়ের কবলে পড়লে যে বিভ্রাট হয় সেটাও কিন্তু আর আগের মত হয়না।
তবে বিদ্যুৎ বিপনন এখনো এলাকা ভিত্তিক ভিন্নতর হচ্ছে। আপনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার যে সুবিধা পাবেন নরমালি সে সুবিধা অন্য যায়গায় পাবেননা। আমি শহরে থেকে যে সুবিধা পাই আমার গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের সেই সুবিধাটা পায়না সেভাবে। এখন গরমের দিনে দু’ ঘন্টা লোডশেডিং হবেই এখানে। আর দু তিন বছর আগে সেটা ছিলো প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা। এই যে দু’ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছেনা তার জন্য কিন্তু কিছু অসাধু লোক দ্বায়ী। আমি গ্রামে এসেছি, গতকাল ভোর চারটায় বিদ্যুৎ গিয়েছে এখনো আসেনি কিন্তু!
এবার আসি জীবন যাপনের মানে। উত্তরবঙ্গ বরাবরই অবহেলিত জনপদ, এখানকার জীবিকার মান আর ঢাকা বরিশাল বিভাগের মান এক নয়। আপনি ভিক্ষুক খুঁঁজতে হয়রান আর আমি নিজেই সারাদিনে তিন চারবার ভিক্ষা দেই। তবে তাদের সংখ্যাটা কমে এসেছে অনেক ভাই।
জনগনের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বুঝলাম, ব্যয় কিন্তু তার থেকেও বেশী হয়েছে। আমি যখন বেতন পেতাম ১৫ হাজার টাকা তখন বাসা ভাড়া ৩ হাজার আর চালের কেজি ৩০ টাকা। এখন পাই ৩০ হাজার, বাসা ভাড়া ৭ হাজার, চালের কেজি ৫৫ টাকা। কি বুঝলেন!!
যারা দিন আনে দিন খায় তারাই জানে কি অবস্থায় যাচ্ছে দিন, লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংকব্যালেন্স থাকলে এই সমস্যা তার বোঝার কথা নয়।
আর এন্ড্রয়েড ফোন, ফেসবুক আইডি যাপিত জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন রিক্সাচালকও এন্ড্রয়েড ব্যবহার করে। মোবাইলের মুল্য হয়তো কম তারটার, কিন্তু ইমোতে তারাও ভিডিও কল দেয় ☺☺
ভালো থাকবেন ভাই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
ব্লগে লেখার সমালোচনা হবে, একটি লেখার যুক্তি, পালটা যুক্তি লেখারই একটি অংশ। আলোচনার মাধ্যমে সঠিক বক্তব্যটি বেড়িয়ে আসে।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আপনার মনের অবস্থাটি নিঃসংকোচে প্রকাশ করবেন। কে কি ভাবলো এসব গুরুত্ব দিবেন না।
ব্লগ হলো খেরো খাতা, দিনলিপি। আপনি ৮ ঘন্টা নয়, এক ঘন্টা আলোহীন অবস্থায় থেকে কি কি চিন্তায় ছিলেন, তা প্রকাশই ব্লগ।
আপনার লেখা কিন্তু অনেক উচু মানের হয়েছে।
শুভ কামনা৷
তৌহিদ
শুভেচ্ছা জানবেন ভাইয়া, পাশে থেকে উৎসাহ দেন সবসময়। এটাই পরম পাওয়া।
প্রহেলিকা
হা হা রসাইয়া রসাইয়া তেতো সত্য বলে গেলেন। স্যাটায়ার হিসাবে একটু বেশিই ভালো হইসে এ লেখাটা।
তৌহিদ
কি করবো ভাই, গরমের ঠ্যালায় অস্থির হয়ে এসব কথা বের হয়।☺
ইঞ্জা
ভাই বলিবো কেমনে দুঃখের কথা, যাইনি এখনো ★★র ব্যাথা, আমাদের এইখানে সারা দিন আট দশবার ইলেক্ট্রিসিটি আসা যাওয়ায় থাকে, গেলে অনেক সময় পাঁচ ছয় ঘন্টাও থাকেনা, চুলার গ্যাস আসে আর যায়, থাকেনা।
এরপরেও বলি দেশ এগুচ্ছে, এগিয়ে যাক জংলি এই রাষ্ট্র।
তৌহিদ
দাদা আমাদের শহরে খুব একটা লোডশেডিং হয়না, যেদিন হয় সেদিন মাটি হয়ে যায়।
আর গ্রামের কথা নাইবা বললাম।
দেশ এগুচ্ছে, তবে যাতাকলে পিষে পিষে এগুচ্ছে।
ইঞ্জা
দুঃখজনক
তৌহিদ
জ্বী দাদা, কিন্তু তবুও শান্তিতে আছি এখন আগের চেয়ে।
অপার্থিব
সস্তা চাইনিজ চার্জার আর মোবাইল টর্চের বদৌলতে বাংলাদেশের মোমবাতি শিল্প প্রায় ধবংস হয়ে গেছে তাই উন্নয়নের মহা সড়কে মোমবাতি নিয়ে হাটার বদলে বলা উচিত উন্নয়নের মহা সড়কে সস্তা চাইনিজ চার্জার নিয়ে হাঁটছি!!
তৌহিদ
জাপানি চার্জার লাইটেই চার্জ থাকছেনা ভাই, আর চাইনিজ চার্জার দিয়ে চার্জ দিবো ইলেক্ট্রিসিটি নেই।
তবে আপনার পরামর্শ গ্রহন করলাম। ধন্যবাদ জানবেন।