মোমের আলোয় আলোকিত উন্নয়ন

তৌহিদুল ইসলাম ১১ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০২:১৭:১৮অপরাহ্ন অন্যান্য ২৮ মন্তব্য

বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যদি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হয় তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি “উন্নয়ন” শব্দটির নীচে চাপা পরে গেছে আমার আর্তনাদ। ব্যাটারির চার্জ শেষ, তাই মাইকিং করে এ উন্নয়নের বানী পৌঁছাতে পারছিনা আশেপাশের কোথাও।

আজকে মহাকাশে বাংলাদেশের নাম জ্বলজ্বল করছে আর স্থলভাগের উপরিতলের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমি অন্ধ না হয়েও অন্ধের মত ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে ঠিকানা খুঁজে মরছি উন্নয়নের।

অথচ লাল নীল এলইডি বাতির মোলায়েম আলোতে ফখা মখা চখারা ময়ূরের পালক লাগানো কাকের পুচ্ছ নৃত্য দেখে আর হাততালি দেয়।

অস্বীকার করিনা দেশের উন্নয়ন হয়নি, তবে উন্নয়ন যখন আমার চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় হাজার কোটি টাকা লোপাটের ডিএসএলআর ফটোগ্রাফী তখন ভাবনারা এলোমেলো হয় বৈকি।

যন্ত্রগুলি ডিজেল থেকে কয়লায় উন্নত হতে হতে পারমাণবিক চুল্লিতে রুপান্তরিত হয়। পল্লী বিদ্যুৎ স্যুট টাই বুট পরিহিত হয়ে নাম ধরে ইংরেজ সাহেবদের – পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ।

যেখানে নরম গদিতে বসে দরবেশ বাবা হাতের আঙুলে তসবি গুনে আর ওয়াজ করে উন্নয়নের।

শুধুমাত্র বিদ্যুতের আলোর অভাবে সেসব দৃশ্যমান হয়না তাদের; আর আমি খুঁজে মরি আমার দু’পায়ে দু রকমের জুতা! এও কি সম্ভব? অন্ধকারে নিদেনপক্ষে নিজের স্যান্ডেলজোড়াতো খুঁজে পাব? তাও পাইনা।

উন্নয়নের মহাসড়কে মোম জ্বালিয়ে হাঁটতে গিয়ে আমি কতবার যে উষ্ঠো খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে আহত হয়েছি তার হিসেব কষতে গেলেও এখন একটা টর্চের দরকার। দক্ষ জনবলের অভাবে আমাকে একটা এম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অপারগ সবাই।

আজ বলতেই হয় আমাদের স্বার্থক উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিদিন দুই ঘন্টা, সপ্তাহে একবার আট ঘন্টা করে মাসে চারবার মোট ছেচল্লিশ ঘন্টা বিদ্যুতবিহীন থাকার পর এখন হিসেব করছি আর কত ঘন্টা অন্ধকার আকাশের নীচে বসে থাকলে ঐ চাঁদের বুড়িমার চরকাকাটার ছবি চোখের সামনে দৃশ্যমান হবে?

দেশকে দেশের মানুষকে ভালোবাসি বলেই এত কষ্ট পাই সীমাহীন দুর্নীতি দেখলে। চাটুকার সমাজ তাই আমাকে অসভ্য উপাধির তকমা গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কি করে বোঝাই, চাটুকারিতা করতে গেলে যেই লেবেলের এনার্জি প্রয়োজন সেই পরিমান খাবার পেটে না পরলে এনার্জি আসবে কোথা থেকে? আমার ক্ষুধা মেটাবে কে?

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলতেই যে মানুষটির মাথায় একটি প্রশ্ন সবার আগে আসে- আজ অন্নের সন্ধানে কোথায় কোন ধূলিমাখা পথে ঝুলি নিয়ে হাঁটা দেব; তার কি চাটুকারিতা করার সময় আছে?

(লেখাটি বিদ্যুৎ বিহীন টানা আট ঘন্টা অন্ধকারে বসে থাকা জনৈক অসভ্যের লেখা)

১২৯৫জন ১০৯০জন
0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ