রাতে আব্বাকে দেখলাম পাটের বস্তা দিয়ে এলো ওর সামনে, যেন ও ওখানেই ঘুমাতে পারে।
রাতে সব ভাই বোন মিলে মিটিংয়ে বসলাম, কি নাম রাখবো ওর?
সেইসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ইংরেজি ছবি ছিলো স্পেস 1999, সাইন্স ফিকশন ছবিটির সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীর নাম ছিলো মাতা, যে তার পাওয়ারের মাধ্যমে যেকোন কিছুর রূপ নিতে পারতো, সাপ, তেলাপোকা, ভিনগ্রহের প্রাণী, সে যা চাই সেই রূপ নিতে পারে।
সেই মায়ার নামই আমরা আমাদের কুকুর শাবকের নাম মায়া রাখবো বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হলো।
তখন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো, কারণ স্কুল আমাদের শুরু হতো সকাল আটটায়, সকাল ছয়টার সময় উঠে ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে রওনা হতে হতে সকাল সাতটা।
আমরা ফ্রেস হয়েই নাস্তার টেবিলে বসলাম, আম্মা যা নাস্তা দিয়েছে তার অর্ধেক খেয়ে বাকিটা মায়াকে দিলাম, মায়া দেখলাম পেটপুরে চেঁটেপুটে খেলো, ওর খাওয়া শেষে আম্মা দিয়ে গেলো দুধ আর বিস্কুট, সেটাও দেখি চুকচুক করে খেয়ে নিলো।
আমরা ওকে বিদায় জানিয়ে স্কুলে গেলাম।
স্কুল থেকে ফিরেই ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলাম ভাই বোন সবাই কাড়াকাড়ি করে, এই দেখে আম্মা দিলো পিটে কিল সাথে বললেন, যাও এখন গোসল সেরে আসো সবাই, এরপরে ওকে আর কোলে নেওয়া চলবেনা।
আমরা গোসল সেরে ভাত খেলাম, আম্মা কাজের লোককে দিয়ে ডাল ভাত দিলো মায়াকে।
ওকে দেখে রাখা আমাদের নিত্য কর্ম হয়ে উঠলো, বিকেলে আমার সাঙ্গপাঙ্গরা এলে মায়ার লেজে কখনো নারিকেল পাতা, কখনো কাগজ বেঁধে ছেড়ে দিতাম, ও ও গুলো লেজে নিয়ে আমাদের পিছে পিছে দৌঁড়াতো, কখনো আমরাই ওকে ধাওয়া দিতাম, এই হয়ে গেলো আমাদের প্রতিদিনকার রুটিন।
একদিন বিকেলে আব্বা অফিস থেকে এলেন কোন এক কাজে, এসেই দেখেন ওর পিছনে নারিকেল গাছের পাতা বাঁধা, দিলেন কঠিন বকা, এতেই এরপর থেকে ওর পিছনে ওসব লাগানো বন্ধ হয়ে গেলো।
এরপর থেকে আমরা ছেলেরা খেলার সময় মায়াও আমাদের সাথে খেলা করা শুরু করলো, বলের পিছনে দৌঁড়ানো বা আমাদের সাথে সাথে দৌঁড়ানো ওর ভীষণ প্রিয় খেলা হয়ে দাঁড়ালো।
……. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৩২টি মন্তব্য
তৌহিদ
মায়া নামটি অনেক সুন্দর, কেমন যেন মায়া মায়া!। আসলে এসব প্রাণী একসময় নিজেদের পরিবারের সদস্য হয়ে যায়। আমাদের খেলার সাথী হয়। মায়াকে নিয়ে লেখা ভালো লাগছে ভাই।
বাবার জন্য অনেক দোয়া রইলো।
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাই, এরাই বেস্ট ফ্রেন্ড সত্যিকার অর্থে, এরা মানুষের চাইতেও বেশি প্রভুভক্ত হয়।
আমীন।
জিসান শা ইকরাম
মায়ার মায়ায় পরে যাচ্ছি তো ইঞ্জা ভাই,
খুব সুন্দর উপস্থাপনা।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
এ এমন এক মায়া যা মনুষ্যের সহজাত প্রবৃদ্ধি, ধন্যবাদ ভাইজান, দ্রুতই পাবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
মায়াকে দেখছি সবার আগে আপনার আব্বাই পছন্দ করছিলেন! এমনই হয় আসলে। যাকে নিয়ে বেশি ভয়, সেই আনন্দিত করে আমাদের।
মায়ার মায়াভরা স্মৃতি আরো পড়ার অপেক্ষায় 🙂
ইঞ্জা
সত্যি তাই আপু, এমনিতে আমরা আব্বাকে প্রচন্ড ভয় পেতাম, যখন উনি শুরুতেই মায়াকে পছন্দ করলেন আমরা তো অবাকই হয়েছিলাম। 😀
নিতাই বাবু
এটি আমার এক ভালোবাসার গপ্ল। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলা দাদা। আর লিংকের ছবিটা দেখে নিবেন আশা করি।
ইঞ্জা
অবশ্যই দেখবো দাদা, ধন্যবাদ।
আহমেদ ফাহাদ রাকা
নামটাই মায়া
যেখানে আছে সেটা ছিলো আমাদের প্রিয় মানুষের ছায়া
চলতে থাকুক ভাই
আমরা পরের পর্ব চাই
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, দোয়া রাখবেন। 😊
আকবর হোসেন রবিন
ভাই, পর্ব গুলো আরো লম্বা করে লিখেন….. আরও বেশি বেশি পড়তে মন চাচ্ছে। এটা আপনার গল্প। একটা পরিবারের গল্প। পড়ে আরাম পাচ্ছি।…চলুক
ইঞ্জা
ভাই সময়ের অভাবে ছোট করেই লিখতে বাধ্য হচ্ছি, ফ্রি হলে বড় করেই লিখবো।
নাজমুল হুদা
মায়া এখন বাবার আদর কেড়ে নিলো। যাকে ভয় ছিলো তিনিই মায়ার ভক্ত হয়ে কেয়ার করছেন।
চলুক শেষ পর্যন্ত
ইঞ্জা
সত্যিকার ভাবে আমার আব্বা ছিলেন পশুপ্রেমি মানুষ ভাই।
রেজওয়ান
🐕কুকুরের মত এডরেবল ও বিশ্বস্ত প্রাণী হয়তো দ্বিতীয়টি নেই এই পৃথিবীতে💓 🐶
ইঞ্জা
সত্যি তাই রেজওয়ান, প্রভু ভক্তির ওদের উদাহরণ সবার উপরে।
সুরাইয়া পারভিন
আহ মায়া,,,,, মানুষের চেয়ে বেশি বিশ্বস্ত কুকুর
সে কখনো তার মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
ইঞ্জা
সত্যি তাই আপু, এরা মানুষের চাইতে শত গুণ ভালো।
মনির হোসেন মমি
মায়া আসলে সুন্দর নাম। খুব সুন্দর উপস্থাপনা। চলুক ভাইজান। স্পেস ছবিটির সব পর্ব দেখতে পারিনি তখন টিভি ছিলো না মোগো পরের বাড়ীতে গিয়ে মাঝে মাঝে দেখতাম।
ইঞ্জা
স্পেস 1999, খুবই আলোচিত ছবি ছিলো, এখনো গুগল খুঁজলে পাবেন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
পড়তে পড়তে-ই মায়া এসে যাচ্ছে।
সব আব্বারা এমন হয় না ক্যারে!
ইঞ্জা
স্বাভাবিক, এ যে মায়ার বন্ধন ছিলো ভাইজান, আমার আব্বা অনেক উঁচু মাপের মানুষ ছিলেন যা উনার ইন্তেকালের পর আরও বেশি জেনেছি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মায়াতে ডুবে গিয়েছি দাদা।
মাঝেমধ্যে মায়াকে নিয়ে ভয় জাগে!
বেশ লিখলেন দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা, ভয় লাগে কেন?
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এসব মজার স্মৃতিরা মনের মাঝে কাটার মতো বিঁধে।
সাবলিল বর্ণনায় স্মৃতিচারণ ভালো লাগছে।
ইঞ্জা
সত্যি তাই, এইসব স্মৃতি কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়।
আরজু মুক্তা
মায়া,,,,আমারও এমন একটি কুকুর ছিলো। অন্যদিন থাকবে এ বিষয়ে লিখা।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম আপু।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
লিখাটা পরে অনেক ভালো লাগলো।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম আপু, অনুরোধ করবো গ্রুপে আমার লেখা ব্লগারদের কেমন আচরণ করা উচিত তা একবার পড়বেন প্লিজ, এতে ব্লগ এবং ব্লগার সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতে পারবেন।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
আপনার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ওনার ব্যক্তিত্ব খুব সুন্দর এঁকেছেন।
যাচ্ছি পরের পর্বে।
ইঞ্জা
বাবা আমার খুব অল্প বয়সেই চলে যান না ফেরার দেশে, উনার জন্য দোয়া করবেন।