
কি অদ্ভুত আমাদের মানসিকতা। আমরা নিজের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অন্যের চলার পথ কঠিন করে তুলি। কেউ সিঙ্গেল মাদার হলে, আমরা তৃতীয় চক্ষু মেলে রাখি। তিনি ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছেনতো? কিন্তু কখনো একবেলা বাচ্চাদের দায়িত্ব নিতে পারিনা। আমরা ভুলে যাই ঐ মা’র ও বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার অধিকার আছে। একা একা কিছুক্ষণ খোলা মাঠে আকাশ দেখার প্রয়োজন আছে। যদি বাচ্চা দশটা সাধারণ বাচ্চার মত না হয়ে কিছুটা সেনসেটিভ হয় তাহলে সে মায়ের উপর কি বিঁধে তা শুধু তিনি জানেন কারণ বাকিরা তখন কানা। যেখানে বাবা মা উভয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মধ্যে সন্তান বড় করা কষ্ট সাধ্য সেখানে একজন একা মায়ের লড়াই অনুমান করার জন্য বিবেক লাগে, এর চেয়ে বেশি কিছুনা। একজন মাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার আগে সাইক্লোজি নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন আছে। আছে ঐ মানুষটার আদ্যোপান্ত অনুধাবন করার প্রয়োজন। একজন মেয়েশিশুর কিশোরী হওয়ার সময় থেকে ধাপেধাপে যতগুলো নিউরোলজিকাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা সম্পর্কে ও যথেষ্ট সচেতনতার প্রয়োজন আছে। যেমন শিশু থেকে কিশোরী, কিশোরী থেকে তরুণী, তরুণী থেকে রমনী, পৌঢ়া, বৃদ্ধা।বাড়ির আহ্লাদি খামখেয়ালি মেয়েটির শত বিধিনিষেধের সাথে খাপ খাইয়ে প্রতিটি সম্পর্ককে যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ও শিখতে এবং পালন করতে হয়। মাতৃত্বের জটিল সময়টা চরম ব্যস্ততার সাথে কাটানোর পরই বেশির ভাগ মহিলার প্রি মেনোপজ পিরিয়ড শুরু হয়। তেনারা কিন্তু বয়সন্ধির চেয়ে ও খতরনাক হয়। যারা এই এপিসোডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন শুধু তারা জানেন কত নাম না জানা অদ্ভুত পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হয়। সবচেয়ে কঠিন অনুভূতিটির নাম খিটখিটে লাগা। ধৈর্য্য ঠেকে তলানিতে। সাথে যুক্ত হয় অল্প স্বল্প নিত্য নতুন রোগের গল্প। মুড সুয়িং নামের আরেকটি শত্রু ও বাসা বাঁধে করোটিতে। এতগুলো গুপ্তঘাতকের সাথে এ দেশের মহিলাদের একা লড়তে হয়। শুধুমাত্র একটু সচেতন সহানুভূতির অভাবে। আমাদের দৃষ্টিতে মহিলাটি শুধু একজন মা। সন্তানের জন্য উৎসর্গীকৃত হওয়াই উনার কাজ। অবশ্যই সন্তানের ভালোর জন্যই ঐ মায়ের মানসিক, শারীরিক সুস্থতা ও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের মতাদর্শকে এমনভাবে অন্যের উপর চাপিয়ে দিবোনা যাতে কারো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সবশেষে @Badol Sayad স্যারের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে, ” আসুন মায়া ছড়াই “।
সকল মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
৫টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
চমৎকার বিষয় উপস্থাপন। সাইকোলজিক্যাল বিষয়টি আমাদের সমাজে খুবই অবহেলিত। এর মূল কারণ হয়তো অসচেতনতা। সচেতনতার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। অনেক দিন পর ব্লগে। শুভ কামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
সুন্দর লেখা।আসলেই এ পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশী বৈচিত্রময় নারীদের জীবন।
নার্গিস রশিদ
অতি মূল্যবান লেখা। অনেক মেয়েদের আর একটা সমস্যা হয় , সেটা হল “পোস্ট নেটাল ডিপ্রেসান” । এটি খুব অবহেলিত একটি বিষয় যা অনেক মানুষ জানেনা। সুন্দর লেখা ।
খাদিজাতুল কুবরা
আপু বিষয়টি নিয়ে লেখার অনুরোধ করছি। আপনার তথ্য সমৃদ্ধ লেখা আমার খুব ভালো লাগে।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি
সাবিনা ইয়াসমিন
মেয়েদের অনেক পরিচয় থাকে, কন্যা, ভগ্নী, স্ত্রী, খালা ফুফু মামি চাচী দাদী নানী বান্ধবী আরো কত কি! কিন্তু মায়ের পরিচয় একটাই, সে হলো মা। মায়েদের কাছেও সে মা_ই হয়। মায়ের দায়িত্ব কর্তব্যে এবং ধর্তব্যের প্রশ্নে মায়েরা অন্য মায়েদেরকেও ছাড় দিতে জানেন না। এ এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা। এখানে মায়েদের মনো-স্বাস্থ্য প্রায়শই উপেক্ষিত।
শুভ কামনা 🌹🌹