মায়ের হাতের তালের পাখা

ছন্দা দাম ২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার, ০৯:১৬:২৯পূর্বাহ্ন কবিতা ১৯ মন্তব্য

 

মায়ের হাতের তালের পাখাটা……

মৃদু মৃদু হাওয়ার দোলায় এখনো…..

হাতছানি দিয়ে যেন ডাকে,

মনে পড়ে…..

পাখাটা কিনে আনার পরই মা….

নতুন কাপড়ের টুকরো দিয়ে ঝালরের মতো

মুড়িয়ে দিতেন পাখাটার চারদিক।

তখন ছিল না বৈদ্যুতিক পাখা,

থাকলেও খুব কম লোকের ঘরে থাকতে,

ঘাম ঝরা বৈশাখী দুপুরে মায়ের গা ঘেঁষে শুতাম,

মৃদু মৃদু বাতাস দিতেন,কি প্রশান্তির বাতাস!

তিন বোনে ঠেলাঠেলি লেগে যেত……

কে মায়ের কাছটায় শোবে,

যদিও ছোট্ট বোনটিই জিতে যেত,

মাঝেমাঝে মা পাখার ডাটিটা দিয়ে প্রহার করতেন,

আমাদের ঝগড়ায় অতিষ্ট হয়ে গিয়ে।

কি মধুর স্বর্গীয় হাওয়া… প্রাণ,মন,অন্তঃকরণ….

সব যেন শীতল হয়ে যেত এর মধু স্পর্শে।

কখনো ঘুমিয়ে পড়লে, হঠাৎ জেগে উঠে দেখতাম..

ঘুমন্ত মায়ের হাতের পাখাটা তখনো চলছে।

বলতাম…”মা কি করে বাতাস দাও গো ঘুমিয়ে?”

মা বলতেন…”তুই বুঝবি না,বহু দিনের অভ্যাস”।

এখন, মরুভূমির মতো তপ্ত প্রাণহীন দিনগুলোতে

ফ্যান আছে,আছে এয়ার কুলার ও,

তবু সেই স্বর্গীয় প্রশান্তি পাই না কেন!

রাতে লণ্ঠনের আলোয় আমার প্রথম শিক্ষাগুরু মা,

এই গরমে পাখার শীতল বাতাস চালিয়ে পড়াতেন,

অসীম ধৈর্য সহকারে।

 

ষষ্ঠী পূজার সময় মা তাঁর পাখাটার ভেজা বাতাস..

মাথায় দিতেন আর বলতেন…ষাট….ষাট,

সন্তানের শতবর্ষের আয়ুর কামনায়।

 

মা নেই আজ চলে গেছেন কোন এক না ফেরার দেশে,

তাঁর হাতের পাখাটা হয়তো আছে…..

ঘরের কোন এক কোনে,বা ষ্টোর রুমে বাতিল জিনিসের সাথে,

তাই অহরহ তপ্ত ,দগ্ধ হৃদয়কে প্রশান্তি দেবার পাখাটা……

এখন অকেজো,অবসর প্রাপ্ত কর্মচারীর মত,

সেই হাতটা যে কোথাও নেই!!

ছন্দা দাম,আসাম,ভারত।

 

১৩৯৬জন ১১৮৯জন
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ