‘পর্দা’র বিষয়ে লিখিতে বসিয়া বড়ই টেনশন ফিল করিতেছি। না জানি, কাহার গাত্রে আবার দাউদাউ করিয়া আগুন জ্বলিয়া উঠিলো? কেহ আমার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধারেও উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়া গেলেন কিনা, তাহা ভাবিয়া সত্যই আশংকাবোধ করিতেছি! কেহ চটিয়া থাকিলে বিনীত করজোড়ে বলিতেছি, চটিবেন না। কারণ আমার কথাতো এখনো শুরুই হয় নাই কিংবা সমাপ্তও করি নাই; পুরাপুরি না শুনিয়া অযথা চটিবার কী আছে? অবশ্য অনেকের আবার এমন বাতিক আছে কিনা, কাহারো জবানে অপ্রিয় সত্যকথা শুনিলেই ব্যস, আর যায় কোথায়! আগাগোড়া শোনা দূরের কথা, তাহাদের অযোক্তিক লম্ফ-ঝম্ফই শুরু হইয়া যায়।
তেমনি ’পর্দা’ বলিতেই যাহারা অজ্ঞান, তাহাদেরও আনন্দিত হইবার কোনো কারণ নাই। আমি পর্দা’র ওয়াজ কিংবা উহার গুণগান করিতেও কলম ধরি নাই! বরং আমার মনের পর্দায় ঢাকা কতক দুঃখ-বেদনার গুঁমোট কাহিনী শুনাইতেই এতো কথার প্রলাপ বকিতে হইতেছে, আরকি? আমি অনলবর্ষী কিংবা নামকরা সুবক্তাও নই, তাই ভুল-ত্রুটি হইলে এই কমবক্তার উপর দোহাই কেহ ক্রুদ্ধ হইবেন না। আমার ঠিক ’হাইপার টেনশনব্যামো’ আছে কিনা-তাই হঠাৎ অক্কা পাইবার সমূহসম্ভাবনা রহিয়াছে। অতএব দয়া করিয়া ক্রুদ্ধ হইবেন না। নতুবা এই অধম অক্কা পাইলে পর্দা টাংগাইয়া স্নান করাইতে কিংবা কাফন পরাইয়া কবরস্থ করিবার মতো ধকল নির্ঘাত আপনাদেরই সামলাইতে হইবে।
যাহাই হউক, আজকাল পর্দা’র বহুত রকমফের বাহির হইয়াছে বলিয়া শুনিতেছি, আপনারাও নিশ্চয় শুনিয়া থাকিবেন? মনের পর্দা, চোখের পর্দা, কানের পর্দা, ঘরের পর্দা, দরজার পর্দা, জানালার পর্দা , আরো কত কী? তওবা, তওবা- আরেক পর্দার কথাতো বেমালুম ভুলিয়াই গিয়াছিলাম। ভুলিয়াই বা যাইবোনা কেনো- সেকেলে সাম্প্রদায়িক হইবার আশংকাতো আমারও থাকিবার কথা। কাজেই মাঝেমাঝে না ভুলিলে চলিবেই বা কেমন করিয়া? ইদানিং পত্রিকার পাতা খুলিলেই শরীর কাহার না শিহরিয়া ওঠে! এতোসব সুরক্ষিত পর্দাভেদ করিয়া ঘরের বাহিরের যতোসব বেপর্দাকান্ডের খবর শুনিয়া শুনিয়াতো আমার কানের পর্দাটাই টুটিয়া যাইবার উপক্রম হইয়া পড়িয়াছে? নারীধর্ষণ, শিশুধর্ষণ, ছাত্রী-শিক্ষিকাধর্ষণ, গণধর্ষণ, সহপাঠিনীধর্ষণ, বুয়াধর্ষণ, শ্যালিকাধর্ষণ, ঘরে ধর্ষণ, বাইরে ধর্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরীপালন, ধর্ষণের ভিডিওনির্মাণ, কলগার্ল, সেক্সগার্ল, মক্ষীরাণী, পতিতাসর্দারনী, ইয়াবাসমাচার, ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীর পতিতাবৃত্তি, নারীশিশুপাচার, জ্বেনা-ব্যাভিচার, পরকিয়া, অসমপ্রেম, এসিডনিক্ষেপ, ইভটিজিং ইত্যাদি অহরহ ঘটিতেছে দেখিয়া ব্যাকডেটেড আলেম সাহেবানদের মুখে আমি প্রায়ই শুনিতে পাই–”আহা, নর-নারীর জন্য আল্লাহনির্ধারিত পর্দাপ্রথা এবং শালীনতার চর্চা থাকিলে কি আর এতোসব আকাম-কুকাম ঘটিতে পারিতো! আগুনের সাথে মোমের বসবাসের পরিণতি এমনই তো হওয়া স্বাভাবিক? নর-নারীদের আলাদা আলাদা কর্মক্ষেত্র থাকিলে কি এমন পশ্বাচার আর নারীদুর্গতি দিনের পর দিন বাড়িতেই থাকিতো!! বৈষয়িক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীদের দুর্গতি বাড়িয়া যাওয়াটাও তবে কি আধুনিক উন্নতির লক্ষণ নাকি? কই, আগের দিনেতো এতো বেশী নারীনির্যাতন আর নারীদের দুর্গতি দেখি নাই আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি?
ধর্ষিতা
তাহাদের আফসোসের কথা যুক্তিযুক্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত কিনা ভাবিয়া দেখি নাই। কিন্তু প্রগতিশীল ভদ্রমহিলাদের উন্নতির প্রচন্ড গতির কথা না ভাবিয়াও পারি নাই। ঠিকই তো, একবিংশ শতাব্দীর চরম অগ্রগতির যুগেও মধ্যযুগীয় কায়দায় মাতৃজাতিকে পর্দার অন্তরালে শুধু সন্তানজন্মদান আর প্রতিপালনের জন্যই কোনঠাসা করিয়া রাখিবার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ থাকিতে পারে কি? তাহাদের সেবাদান এবং রূপ-সৌন্দর্যকে পারিবারিক গন্ডিতে আবদ্ধ রাখিয়া একজনমাত্র পুরুষইবা কেনো উপভোগ করিবে? তাহার সুফল হইতে গোটাজাতিকে বঞ্চিত রাখা কি সত্যই বৈষম্যমূলক কাজ হইতেছে না! আর যাহারা বহুবিবাহের আদলে বহুস্বামীও রাখিতে চাহেন কিংবা একস্ত্রীর সঙ্গদাবীদার বহুস্বামীদের কর্তৃত্বের নিত্য লড়াইয়ের যাতাকলে পড়িয়া মরিতে চাহেন না এবং চরিত্রহীনতার মতো সামাজিক লজ্জার হাত হইতে বাঁচিতে পুরুষপতিতালয়ও বানাইতে চান; তাহা হইতে তাহাদের বঞ্চিতকরণের অধিকার কে দিয়াছে মোল্লাদের??
সেকেলে মা, খালা, ফুফু, চাচী, নানী, দাদীদের মতো একেলে নারীদের এতো বেকুব ভাবিয়া প্রকৃতপক্ষে পুরুষসমাজ দেশ-জাতির কতই না ক্ষতিসাধন করিয়া চলিয়াছে। ‘নদী কভূ পান নাহি করে নিজ জল, তরুগন নাহি খায় নিজ নিজ ফল।‘ অথবা ’’ফুল ফোটে অপরের তরে’ এইসব চিরসত্য কথার অনুসরণে নিত্যনতুন কসমেটিক্সের উগ্রগন্ধ মাখিয়া এবং বাহারী সাজে সজ্জিত হইয়া উলংগ- অর্ধ উলংগ পোশাকে এমনকি জাঙ্গিয়া-পেন্টি পর্যন্ত পরিধান করিয়া প্রজাপতির মতো কুস্তি লড়িতে বা সাঁতার কাটিয়া যদি বেড়ানোই না গেলো, তবে আদমকে গন্ধম খাওয়াইয়া নারীজীবনকে সার্থক করিবে কে!
সেদিন টিভিতে সেক্সিসাজে সজ্জিত কতিপয় উঠতি বালিকার ডিস্কোনৃত্য শুরু হইতেই আমার মুখ ফসকাইয়া হঠাৎ বাহির হইয়া গেলো–”ছিঃ ছিঃ, অবুঝ শিশুদের এখন হইতেই দেখি সেক্সি করিয়া তোলা হইতেছে, পুরুষের মাথা গরম হইবেনা কেনো আর নারীনির্যাতন বাড়িবেই বা না কেনো?” ভাবিলাম, কাহারো সমর্থনলাভ করিবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, সেই আশায় গুড়েবালি। রক্তচক্ষু পাকাইয়া এক ভদ্রলোক চেঁচাইয়া উঠিলেন,আরে মিয়া রাখেন ওইসব বাজে কথা; মনটাকে আগে উদার করেন।বলিলাম, কেমন উদার?
ঃ আপনারা সবকিছুতেই শুধু ইসলাম আর সেক্স খোজেন কেনো, বলুনতো! নাচতো সুন্দর একটা শিল্পকর্ম, এই বালিকাদের নিজের মা-বোন বা মেয়ের মতো ভাবিলেই তো পারেন। আসলে, নিজের মনটা ঠিক থাকিলেই হইলো বুঝিলেন–চরম বিরক্তির সাথে বেচারা গড়গড় করিয়া এই গরম কথাগুলি বলিয়া ফেলিলেন! সেকেলে প্রমাণিত হইবার আতঙ্কে কথা না বাড়াইয়া আমিও চুপ মারিয়া গেলাম। তবে মনেমনে বলিলাম, সরকার আমাদের সবাইর মা, মেয়ে, বোন, বউদের বাধ্যতামূলকভাবে এই মহৎ শিল্পকর্মে নিয়োজিত করিলেই তো পারে, আয় রোজগারও হইবে আর লক্ষজনতাও মনকে ঠিক রাখিয়া নয়নকে সার্থক করিবে এবং এমন পবিত্র নৃত্য দেখিয়া জাগ্রত কামত্তেজনাকেও বীরপুরুষের মতো ঝাড়িয়া ফেলিয়া ধর্ষণবিরোধী এবং এহেন শিশুধর্ষণকারী মহাশিক্ষক পরিমলবিরোধী তীব্র গণআন্দোলন গড়িয়া তুলিবে।
হায়, যেইখানেই যাই সেইখানেই শুধু এই মন ঠিকরাখা আর ‘মনের পর্দা’র ব্যাপার-স্যাপার শুনিতে শুনিতে আমার কান ঝালাপালা হইয়া গেলো। কী আশ্চর্য ব্যাপার, যেই সকল একেলে নারীর উগ্র ঝাঁঝালো গন্ধে বিভ্রান্ত ভ্রমর নিত্য পিছু লয়, কিন্তু বাসে, ট্রেনে বা পথে অনিচ্ছায়ও কেহ তাহাদের গায়ে হোঁচট বা ধাক্কা খাইলে তাহারাই আবার চেঁচাইয়া ওঠেন, এইযে, চোখে দেখেন না–চোখের পর্দা নাই বুঝি? অথচ তাহারাই আবার পর্দা’র কথা শুনিলে অকপটেই বলিয়া ফেলেন, পর্দা-টর্দা কী, মনের পর্দাই আসল পর্দা? (চলবে)
১৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
মনের পর্দাই আসল পর্দা এটি আমার একান্ত বিশ্বাস ।
শিশুরা পর্দার কি বুঝে ?
শিশুরা যৌন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছেনা দেশে ?
পর্দা চাপিয়ে দেয়ার কোন বিষয় নয়
আমাদের দেশের মেয়েরা যথেষ্ঠ সংযত হয়েই চলাফেরা করেন
দু একটা ব্যাতিক্রম কোন উদাহারন নয় ।
শাহ আলম বাদশা
দ্বিমতকে স্বাগত জানাই। আপনার একটু ভুল হয়েছে ভাই–পর্দা বা শালীন পোশাক আর পৃথক কর্মক্ষেত্র শুধু পুরুষের নয় নারীরও সমানভাবে দরকার। এটাই আমার কথা। পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদেরই শালীনতা বেশি দরকার এবং পৃথক কর্মক্ষেত্রও। নতুবা লোলুপ পুরুষের হাত থেকে তাদের নিস্তার নেই
জিসান শা ইকরাম
মালয়েশিয়া একটি মুসলিম দেশ । সেখানের জাতীয় মসজিদ ‘ মসজিদ জামেক ‘ । সমস্ত ক্লীনার মহিলা । মুসুল্লিরা নামাজ পড়ছেন । একই সাথে ফ্লোর ক্লিন করছেন মহিলারা , তা আবার প্যান্ট সার্ট পরিধান করে ।
পাবলিক বাস চালাচ্ছেন একা একজন নারী । কোণ হেল্পার এর সাহয্য বাদেই ।
ওখানে কোন সমস্যা হয়না এসবে ।
এটি আমাদের দেশে কল্পনাই করা যায় না । যত সমস্যা সব আমাদের এই দেশে ।
” পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদেরই শালীনতা বেশি দরকার এবং পৃথক কর্মক্ষেত্রও। নতুবা লোলুপ পুরুষের হাত থেকে তাদের নিস্তার নেই । ” — এ কথা পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় , ধর্ষকের চেয়ে ধর্ষিতার দোষ বেশী ।
নারী হচ্ছে শুধু সেক্স এর জন্য — এই চিন্তা ভাবনা পরিত্যাগ করতে হবে সবার আগে ।
শাহ আলম বাদশা
মালয়েশিয়ায়ও অপরাধ ধর্ষণ নেই কে বললে ভাই–ভারতের মতো আমাদের দেশের মতো এতো ব্যাপক যেমন নয় তেমনই শাস্তিও হয় কঠোর; তাই প্রচার কম।
আর ধর্ষিতার দোষ ইসলামে নেই বরং ধর্ষকের সরাসরি ফাঁসিই হবার বিধাহ্নাছে-সে যে ধর্মের ভিক্টিমই হোক না কেনো?
মুসলিম দেশ ছাড়া পশ্চিমা দেশেই নারী সেক্সযন্ত্র হিসেবে পরিচিত ও ব্যবহৃত হয়–তাদের সেক্স সাইট এবং বাস্তবতা দেখলেই প্রমাণিত হয়। ধন্যবাদ
সঞ্জয় কুমার
পর্দা বিষয়ক এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন sonelablog.com/archives/17199
শাহ আলম বাদশা
পড়ে দেখবো ভাই
ছাইরাছ হেলাল
অপেক্ষ করব আপনার বলার শেষ পর্যন্ত । সমস্যা সমাধানের ভাবনা শুনতে চাই ।
শাহ আলম বাদশা
অপেষার জন্য অনেক ধন্যবাদ -{@ -{@ -{@
ছাইরাছ হেলাল
আপোষ বা ঝগড়ায় আমার আগ্রহ নেই , আমি আলোচনায় আগ্রহী নিজের জানার জন্য ।
যদিও সব সময় আমার সে সুযোগ থাকে না । আমি অবশ্যই আপনার কথা শুনব,জানব আপনার
ভাবনা ও সমাধান ।
আগুন রঙের শিমুল
লাল পর্দা বাদগেছে 😀
এইসব পদ্দার কেচাকেচি দেখিয়া ভাবনা হয় , উহারা কি তবে নিজের মাতৃদেবীকেও বেপদ্দা দেখিলে উহাদের কাম জাগ্রত হয় ?
শাহ আলম বাদশা
আপনি আধুনিক জগত সম্পর্কে এতোই কাঁচা যে, পাশ্চাত্যে মায়ের সাথে সন্তানের, বোনের সাথে বাইয়ের, মেয়ের সাথ পিতার যৌনমিলন এবং ধর্ষণ স্বাভাবিক বিষয়, তাকি জানা নেই? কেনো এমন হয় সেখানে, রক্তের বন্ধনকেও তারা ছিঁড়ে ফেলেছে কেনো–কারণ একটাই পর্দা না থাকাই নয়কি?
যে ব্লুফিল্ম বাপ-মা-সন্তান মিলে দেখা যাবে–সে পরিবারেও এমন ঘটনা না ঘটাই অস্বাভাবিক। আমাদের দেশেও পিতা কর্তৃক নিজ কন্যাকে ধর্ষণের ঘটনা কি ঘটেনি?
জেনেও এমন
আগুন রঙের শিমুল
আইবাপ এক্কেরে খাটি মুমিন দেকচি 😀
তা ইদানিং ইনসেস্ট সাইটে ঘুরাঘুরি বেশী হচ্ছে জনাবের বোঝা যাচ্ছে, পর্ণ দেখা খারাপ কিছুনা সেইটাতে এডিক্টেড হইয়া যাওয়াটা এবং চিন্তা চেতনায় পর্ণ এবং বাস্তবতা গুলাইয়া ফেলাটা খ্রাপ ,গেট ওয়েল সুন 🙂
শাহ আলম বাদশা
ধান ভানতে শিবের গীত–ওসব সাইট দেখে যারা পশু, আমরা পত্রিকায় পড়েই ঘৃণায় বাচিনে। অযথা কথা বলেন কেনো, শিক্ষিত মানুষের পথে আসেন–যুক্তিতে আসেন
আগুন রঙের শিমুল
//সেদিন টিভিতে সেক্সিসাজে সজ্জিত কতিপয় উঠতি বালিকার ডিস্কোনৃত্য শুরু হইতেই আমার মুখ ফসকাইয়া হঠাৎ বাহির হইয়া গেলো–”ছিঃ ছিঃ, অবুঝ শিশুদের এখন হইতেই দেখি সেক্সি করিয়া তোলা হইতেছে, পুরুষের মাথা গরম হইবেনা কেনো আর নারীনির্যাতন বাড়িবেই বা না কেনো?”//
শিশুদের দেখলেও যার সেক্সি মনেহয় সে পশুর চেয়েও খারাপ , শিশুকামি, পোডোফাইল