আপনাকে কেউ কোনদিন বলেছে ‘ একটা গান লিখো আমার জন্য ‘! কেউ বলেনি? আচ্ছা, এ বয়সের কাউকে কেউ কি এসব বলতে চায়? আর কোনদিন বলবে তার সম্ভাবনাও নেই। কারণ বয়স আপনার চালসে মানে চল্লিশ। এখন ছোট ছেলেরা আপনাকে ডরায়।
তাছাড়া মেয়েলী যতোসব কিউটনেস থাকা দরকার আপনার হয়তো তার ছিটেফোঁটাও নেই। সেজন্য সময়মতো বিয়েটা করতে পারেননি। কিংবা ভুল কাউকে ভালোবেসে সে ছেড়ে গেলে ভেবেছেন বাকি জীবন একাই পার করে দেবেন!
আসলে কি তাই? মোটেও না। কারন ভালোবাসা অদ্ভূত এক সুর। যার তাল, লয় বড্ড অচেনা। সে প্রত্যাশা ছাড়াই যখন তখন ঘাড়ে চেপে বসে। তাইতো কোথাও কেউ একজন হয়তো ওত পেতে থাকে, আপনার মতো জৌলুসহীন কারও কাছে নিজেকে সপে দেবার আশায়।
চল্লিশ এক অদ্ভুত বয়স। আবার ফিরে এসে ১৮ তে পা দিয়ে থমকে দাঁড়ায়। মন যেন সেই কিশোরী হয়ে ওঠে। অল্পেই অভিমানী, আবেগী হয়, অল্পেই হাসে, অল্পেই কাঁদে। দমকা বাতাস হঠাত গায়ে লাগলে শিহরন জাগে ঠিক যেন আঠারোর মতো। তবে আঠারোতে যে চুরমার করা সাহসটা থাকতো শুধু সেটা হারিয়ে যায়।
আর তাই তখন গ্রহনে বিব্রতবোধ মারাত্মক হয়। লোকে বলবে কি? লোককে জবাব দেব কি?
অথচ আপনার একাকিত্বতা দিনের পর দিন বলেছিল, আপনার পেছন পিঠে শক্ত একটা আশ্রয় দরকার ছিল। শেষরাতে ওয়াশরুম থেকে ফিরে চল্লিশের যে কাঁপুনী আসে শরীরে। তখন কারো বুকে মুখ লুকিয়ে ওম নিতে নিতে বলতে ইচ্ছে হয় – একটু বুকে চেপে নাও আমার বড্ড শীত করছে।
সেটা কি লোকে দ্যাখে বা বোঝে? তখন সোফার পিঠে নিজেকে লুকিয়ে ওম নিতে হয়। কোন এক বিষন্ন সন্ধ্যায় আপনি যখন বুড়িয়ে যাওয়া মোমবাতির মতো একটু একটু করে শেষ হতে থাকেন, তখন কি কেউ আপনাকে দ্যাখে। দ্যাখেনা আর বলাও হয়না কাউকে এতোসবের কোনকিছু।
নাটোর বিখ্যাত বনলতা সেনের কাব্যিক উপাখ্যান ভুমিতে মামুন হোসেন ( কলেজ ছাত্র) ও খাইরুন নাহার ( সহকারী অধ্যাপক) দুজনে বিয়ে করেছেন। ফেসবুকে পরিচয়, প্রেম অতঃপর বিয়ে। দুজনের ১৮ বছরের বয়সের তফাৎ এ নিয়ে নানা ঝড় উঠেছে। এর আগেও আমরা সুবর্না মুস্তফার মতো মানুষকে কমবয়সী কাউকে বিয়ে করতে দেখেছি।
কারন একা একজন মহিলা থাকে বা আছে এটা জানার পর সুহৃদ শুভাকাঙ্ক্ষী মহল নিয়মিত তাকে নানাভাবে ত্যক্ত- বিরক্ত করতে থাকে। তা তিনি যতোই সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী হন না কেন। এসব দেখার জন্যও কেউ আসে না। যে কোন বিপদে তারই দোষ হয়, কারন তিনি নারী। এখানেও যেমন বলা হচ্ছে একজন মহিলা কলেজ শিক্ষক কি করে ছাত্রকে বিয়ে করতে পারে! কেন এর আগে কি কোন পুরুষ শিক্ষক তার ছাত্রীকে বিয়ে করেনি?
এখন অনেক টিন এজ মেয়েরা বাবার বয়সী, দাদার বয়সী কাউকে দুম করে বিয়ে করে সংসারী হচ্ছে।
তাদের খুশি ফেসবুকে শেয়ার করলেই এতে অনেকে মন্তব্য করছে একজন ষাটোর্ধ্ব বুড়ো মেয়েটার সাথে করে কি? কিংবা মহিলা আর কদিন পরই বুড়ি হবেন তখন ছেলেটার কিভাবে চলবে! জীবন যেন শুধু সেক্স বা যৌনতার কাছেই বন্দি। যৌনতা আসলেই একসাথে থাকার জন্য মুখ্য বিষয় নয়। চলতে গেলে একে অপরের ছায়া হওয়া জরুরী। যা বহুকাল একসাথে থেকেও দুজন মানুষের মাঝে হয় না।
শেষ বয়সেই একজন কাউকে অনেক দরকার হয়। বন্ধু – বান্ধব, স্বজনরা যখন নিজ নিজ জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আজকাল গল্প করার জন্য ভীষনভাবে কাউকেও পাওয়া যায় না তখন এমন সিদ্ধান্তে কোন সমালোচনা না করাই ভালো। থাকুক না তারা তাদের মতো করে। যেমন করে পারে ভালোবাসুক একে অপরকে।
দেখতে যেন কেমন লাগে- এটা বলতে থাকা আমাদের দেখার ভাষা বদলে ফেলতে হবে। কারন দিনে দিনে বিয়েটা মনতাত্বিক একটা ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। তবুও সেখানে আমরা পরে আছি কেন বা কেন নয় এগুলোতে। সকল কেন ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে মনের জানালায়। যেখানে বিশুদ্ধ বাতাস হু হু করে ঢুকে শরীরের সমস্ত একাকিত্বতা শুষে নিয়ে বলবে- বেঁচে থাকাটাই অদ্ভুত এক বিস্ময়। তো তাকে বেঁধে রেখে কেন করি ক্ষয়!!
ছবি- নবদম্পতি।
২৯টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
তুমি কি জানো? কি অসাধারণ একটি লেখা উপহার দিলে আমাদেরকে।
তোমার এই প্রথা তথা অপপ্রথা বিরোধী চেতনাকে স্যালুট।
সত্যি সময় এসেছে সকল জরাগ্ররস্থতা ঝেড়ে ফেলে একটি সুন্দর জীবন গড়ে তোলার।
এগিয়ে যাও কমরেড!
লাল সেলাম!
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাপরে! এতো বড় কমপ্লিমেন্ট।
তোমার মন্তব্যে বরাবর অনুপ্রেরণা পাই। না লিখতে চাইলেও লিখে ফেলি। সাথেই থাকো। কৃতজ্ঞতা 🥰
নবকুমার দাস
সহমত।
সময় বদলে যাচ্ছে। পরিবর্তনের সঙ্গেই চলতে হয়।
তবে এজন্য প্রচলিত প্রতিষ্ঠান একেবারে ভেঙে পড়বে তেমনটা বোধ হয় না।
হালিম নজরুল
চমৎকার লিখেছেন। আপনার এমন সুন্দর সুন্দর লেখায় ভেঙে যাক আমাদের অচলায়তন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই। এমন মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পাই।
হালিমা আক্তার
সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। আর যারা বলার তারা বলবেই। কিছু মানুষ থাকে। যারা নিজের ঘা তে মলম না দিয়ে, অন্যের চুলকানিতে প্রলেপ দিতে চায়। অসাধারণ একটি লেখা। নব দম্পতির জন্য শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিজের চুলকানীতে মলম লাগানো দরকার আসলেই। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ 🥰
রুপাই
ভালবাসা পবিত্র কিন্তু এখানে কেমন যেনো চাহিদা পূরণ মনে হয়েছে। আমরা নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। ধর্মিও মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছি। আমরা ভাল মন্দের পার্থক্য না করেই সাময়িক সুখ ভোগের নিমিত্তে মেতে উঠছি
রোকসানা খন্দকার রুকু
মুহাম্মদ সঃ আমাদের পথ প্রদর্শক, খাদিজা রাঃ সাথে ব্যবসায় একজন কর্মী ছিলেন। বয়স ৪০ আর ২৫ সবাই জানি।
তো এখানে চাহিদা, নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ কেন আসলো বুঝলাম না। তারা বিয়ে করেছে, লিভ ইন তো করছে না। একজন মধ্যবয়সী মানুষের বিয়েটা চাহিদা নয়, প্রয়োজন। একা থাকা অনেক কষ্টের।।
মোঃ মজিবর রহমান
তাদের পথ চলা স্বার্থক হোক, সুন্দর গোছালো জীবনে চলুক। আল্লাহ তাদের চলার পথা সহজ করে দিন। আমিন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমাদের তাদের জন্য দেয়া করা উচিত।
মোঃ মজিবর রহমান
এমন সুন্দর উপস্থাপনা আপনার কলমেই পাই, পাবো ইনশা আল্লাহ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পাশে থাকুন ভাই। শরীর ভালো যায় না। হাত ব্যথা লিখতে পারিনা।
রেজওয়ানা কবির
কালকেই ভাবছিলাম তুমি এই বিষয়ে লিখবে!সকালে উঠে তাই দেখলাম। আগে আমাদের সমাজব্যবস্থার কথা বলি, ঐ মেয়ের উতলায়, ঐ মেয়ের আগের স্বামী ছিল কি??ছেড়ে গেছে নিশ্চয়ই ভালো ছিলো না মেয়েটি! নিশ্চয়ই স্বামী নপংশুক ছিল!এত উতলায় যে শেষপর্যন্ত ছাত্র!!এই বয়সে!!!ধিক্কার ছি ছি আরও কত কি!!
হায়রে সমাজের শিক্ষিত মানুষ এই হল বেশিরভাগ মানুষের মন্তব্য। ভালোবাসা শুধু শরীর নির্ভর নয় এটা কয়জনে বোঝে!
ভালোবাসা একান্তই মনের ব্যাপার,চাপ দিয়ে, জোড় করে হয় না, এটা অজান্তেই কোন কারন ছাড়াই হয়ে যায়, যদি তাই হত তবে সব সম্পর্ক চিন্তা ভাবনা করে পারফেক্ট ম্যাচ হত!
ভালোবাসার মত পবিত্রতা আর নাই আমার ধারনা কারন এক ফিলিংস সবার জন্য আসে না, একটা বয়সে ৬০/৭০/৮০ যখন খুব একা লাগে তখন কিন্তু৷ শরীর লাগে না।
তাই কোনকিছু বাজে দৃষ্টিতে না দেখি, যার সিদ্ধান্ত একান্তই তার, কোন কিছু না করতে পারি অন্তত নিন্দা না করি,উল্টাপাল্টা না বলি।
যে যার মত ভালো থাকুক ভালোবাসুক এটা তার অধিকার।।।
খুব সুন্দরভাবে বাস্তবতা তুলে ধরেছো। সত্যি স্যালুট তোমায় আপু এই লেখার জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
স্যালুট গ্রহন করা হইলো। এতো বড় কমপ্লিমেন্ট এর জন্য আপনার জন্য ভালোবাসা🥰
সাবিনা ইয়াসমিন
“মন্তব্য দিয়ে গন্তব্যতে পৌছানো যায় না”
ছেলেটির এই কথাটি নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট মনে হয়েছে। তারা তাদের জীবনে সুখী হতে চেয়েছে, সুখী হওয়ার বৈধ পথ বেছে নিয়েছে। তাদের পরিবার পরিজনরাও মেনে নিয়েছে। এতে সমাজের অসুখী হওয়ার কোন কারণ দেখিনা।
তাদের জন্য শুভেচ্ছা রইলো।
শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভকামনা তাদের জন্য।
ছাইরাছ হেলাল
সুন্দর উপস্থাপন। মানব সমাজে এ প্রথা নূতন কিছু নয়।
অযথা হাঁসফাঁস সোস্যাল মিডিয়ায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মিডিয়ার কাজের বড্ড অভাব তাই অকাজ নিয়ে পরে থাকে।।
আলমগীর সরকার লিটন
ছবি গল্প সুন্দর আর ভাবনাকে স্যালুট জানাই আপু
ভাল থাকবেন——–
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।।
প্রদীপ চক্রবর্তী
দুজন দুজনকে যদি সত্যিকার্থে ভালোবাসে তা নিয়ে অন্যেরা কি বললো তাহাতে তাদের কিছু যায় আসে না।
ভালোবাসা পবিত্র এবং সবসময় সুন্দর।
যেখানে থাকতে হবে দুজনের বিশ্বাস, ভালোবাসা, সম্মান।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যথার্থ লিখেছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা প্রদীপ। ভালো থাকবেন।
নার্গিস রশিদ
খুব চমৎকার এবং সমাজকে একটা সত্য বানী পৌঁছে দেয়া লেখা। মানুষের ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে সমাজ খুব সমালোচনা করে। এটা যে সুখকর নয় তা এই লেখা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে । শুভকামনা এবং ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সমাজের ক্ষতি না করে কেউ নিজের মতো করে সূখী হতে চাইলে আপত্তি কেন বুঝি না। অশেষ কৃতজ্ঞতা 🥰🥰
মোঃ তোফাজ্জল হোসাইন
আপু নাইস হইছে 🤗🤗🤗
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা ভাই 🥰🥰
মো: মোয়াজ্জেম হোসেন অপু
আসলে ভালোবাসা কোনো নিদিষ্ট সুত্র মেনে চলে না, অনেকটা কোথা হতে কখন যে কি হয়ে যায় টাইপের।সুতরাং এর মধ্যে অন্যকারো হিসেব তো মিলবে না, শুধু শুধুই আমরা থার্টি পার্টি এসব ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে কচলাকচলি করি। সুন্দর লিখেছেন আপু। তাদের জন্য শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা ভাই, 🌹🌹