
লেখকরা নির্জন পরিবেশ চায়। গ্রামীণ পরিবেশ কিন্তু নাগরিক সব সুবিধা পাওয়া যাবে। আসিফ সাহেব খুঁজে এমন একটা বাড়িই পেলেন। অবিরাম গাড়ির হর্ণ, কালো ধোঁয়া মুক্ত। পানি নাই, গ্যাস নাই এমন এইসব হাহাকার থেকেও মুক্ত। কিছুদূরের স্টেশন থেকে ট্রেনের শব্দটা একটা ঘোর তৈরি করে। আর কাক ; মাঝে মাঝে চড়ুই এর কিচিরমিচির অথবা দূরের পানে যাওয়ার সময় বকের ডাক —– একটা নিবিড় সংযোগ।
অনেকদিন পর অবকাশ পেলেন লেখক। ভরপেট খেয়ে একটা ভাত ঘুম দিলেন। তার চোখের পর্দায় কার যে মুখ ভাসছে ! কি সুন্দর হাসি ! ভাবনার আকাশের আড়ালে সে হাসছে।
ডোর বেলটা বাজলো। দিলো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে। বিরক্তি নিয়ে আসিফ সাহেব গেলেন দরজা খুলতে।
: কে ?
: আমি।
: আমি কে ?
: লেখক, আসিফ সাহেব আছেন ?
” আমাকেই তো খুঁজছে। কি মুশকিল !” দরজা না খুলে বললেন, ” আমি ওনার ভাই। উনি তো নাই। ”
কি বলেন ভাইয়া? আমি যা শুনছি, তা কি ঠিক ?
কি শুনছেন?
লেখক আসিফ সাহেব তো মারা গেছেন।
এই মেয়ের কথা শুনে আসিফ সাহেবের চোখ কপালে উঠলো। দরজা খুলে গালে একটা ঠাস করে চড় বসায় দিতে ইচ্ছা করছে।
“এই মেয়ে কী বলো? ”
সত্যি বলছি। আপনি বের হন। বাইরে দেখেন কতো মানুষ ! সবাই কাঁদছে।
মেয়েটার কথা শুনে আসিফ সাহেব দৌড়ে জানালায় যায়। দূরে চোখ মেলে দেখেন। ” “আশ্চর্য, আজ একা লাগছে কেনো? ঐগুলো কী হাঁটে ? ” ইস ! কী বিদঘুটে কালো রঙের বিড়াল। ”
জানালার খিল লাগিয়ে এসে দরজা খোলেন, লেখক। ওমা, ফাগুন রাঙা মেয়ে। চুল এক পাশে বেণী করা। চোখ চিকচিক করছে হাসির বারতায়।
: ” এখানে বসো। ”
: জি ধন্যবাদ। আচ্ছা, আপনি কী জানেন না, আপনার ভাই মারা গেছেন?
: ” না, এইমাত্র শুনলাম। ”
মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বললো ; গতরাতে ” প্রাণে বাজিলো সুর ” বইটা পড়ে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়েছিলাম। উনি গল্পের নায়িকাকে কখনোই ছোট করেন না। অনেক ছোট ছোট কথামালা দিয়ে ভাব প্রকাশ করেন। তার বই শেষ না করে ওঠা যায় না। আর আমার তো প্রতিদিন তার বই পড়া চাই — ই। মনস্তাত্ত্বিক অনেক কিছু শিখে ফেলি। বাস্ববেও প্রয়োগ করি। এক কথায় তিনি নারীদের অপরাজিতা করে রাখেন। এখন, কী করে সময় কাটবে বলেন ?
“কিন্তু মেয়ে, আমিই সেই লেখক।” আসিফ সাহেব বললেন।
মেয়েটা আকাশ থেকে পড়ে। কীভাবে সম্ভব ? সব পত্রিকার হেডলাইন, ” লেখক আসিফ গতকাল রাতে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর আপনি, ভাই হয়ে এতো মস্করা ক্যামনে করেন ?
বাড়ির সামনে জটলা বাড়ছে। ফিসফিসানিও চলছে। লাশ কই ? এখনও লাশ আসেনি ? নানা কথা বার্তা।
আসিফ সাহেব, দরজা লাগিয়ে ভিতরের রুমে যান। দেখেন, কতোগুলো ছায়া শুধু যাওয়া আসা করছে। অশরীরি। আর গাছ থেকে হলুদ পাতাগুলো নিঃশব্দে ঝরছে। গরম বাতাস , ভারী বাতাস। বিবর্ণ সবকিছু।
২৪টি মন্তব্য
পপি তালুকদার
বিবর্ণতার গল্প ছুয়ে গেল মন! রেশটা মনের মধ্যে থেকে গেল……
আরজু মুক্তা
রেশ তবে থাকুক।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
শুভ কামনা
তৌহিদ
রাতবিরেতে এই গল্প পড়েতো ভয়ই পেয়েছিলাম। গল্পের শুরু থেকে শেষ বিরতিহীন পড়লাম। আপনার লেখার স্বার্থকতা এখানেই। চেতন অবচেতন মনের খেলা নিয়ে লেখা গল্প বরাবরি সুখপাঠ্য।
শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
হা হা! কমেন্টের প্রথম লাইন পড়ে মজা পেলাম।
লেখালেখি কঠিন কাজ। আপনাদের মতো পারি না। তবুও চেষ্টা করলাম।
ভালো থাকবেন সবসময়।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সুন্দর অনুগল্পের রূপায়ণ
পড়ে করলাম শেষ
তবুও রয়ে গেল মনে অনন্ত আকাঙ্খার রেশ।
শুরু থেকে শেষ
এককথায় অতিশয় ভালো বেশ।
মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম অশেষ।
আরজু মুক্তা
ছোটগল্প পড়লে এমনি রেশ থাকে।
শুভকামনা ভাই
রোকসানা খন্দকার রুকু
এ বাবা কি অসাধারণ!
চিন্তায় ফেলে দিলেন সত্যিই কি মরে গেছে। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তার ভক্তদের কাছে তিনি অমর। ভক্ত কল্পনাতেও তার প্রিয় লেখককে ভেবে নিচ্ছে। হ্যালুসিনেশান টাইপ।
লেখাটি প্রিয়তে নিলাম। শুভ কামনা এ ভালোবাসা রইল।
আরজু মুক্তা
প্রিয়তে দেয়ার জন্য ভালোবাসা একরাশ। হ্যাঁ হ্যালুসিনেশন।
আপনাকে ধন্যবাদ অনেক।
শামীনুল হক হীরা
খুব সুন্দর একটা গল্প উপাস্থপনা করলেন।।ভীষণ ভাল লাগল।শুভেচ্ছা জানবেন সতত।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই। শুভ কামনা
হালিমা আক্তার
শেষ হয়ে ও হইলোনা শেষ , খুব ভালো লাগলো | শুভ কামনা অবিরাম |
আরজু মুক্তা
ছোট গল্প এমনি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আর এমন কমেন্ট পেলে ভালোই লাগে।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
এ দেখছি অনু-ভুতের গল্প, তবে এমন পাঠক পেয়ে আসিফ সাহেব ধন্য।
যার বই না পড়লে জীবন বৃথা।
গল্প কিন্তু ভাল হইছে। এত্ত দিন পরে পরে পড়লে তো হয় না, পাঠক তো রোজ এমন গল্প পড়তে চাইতেই পারে।
আরজু মুক্তা
গল্প পড়তে চাইলে একটু ধের্য তো ধরতেই হয়। এরপর আসিতেছে আর একটি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শরীর নশ্বর, আত্না অবিনশ্বর। লেখকের আত্না পাঠকের ভালোবাসায় ধন্য হয় তাইতো প্রিয় পাঠক, ভক্তের অবচেতন মনে ধরা দেয় ভালোবেসে। লেখকরা বেঁচে থাকে ভক্তের মাঝে। চমৎকার ভূত ভূত গল্প!! ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
আরজু মুক্তা
জি লেখকরা তার লেখা এবং ভক্তের মাঝেই বেঁচে থাকে।
শুভ কামনা দিদি। ভালোবাসা সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
ভয় পেয়েছি!
নিরিবিলি নির্জন পরিবেশ অনেকের কাম্য হলেও সব সময় তা উপভোগ্য নয়। ভরপেট খেয়ে ভাতঘুমে যাওয়া আসিফ সাহেবের ঠিক হয়নি।
অণুগল্প দারুণ হয়েছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
ঠিক বলেছেন ভর পেটে নির্জনে ভাত ঘুম। এরকম হওয়াই সঠিক। উপভোগের বারোটা বেজেছে। আমিও বলি, কোন দরকার ছিলো লেখকের?
হা হা।
শুব কামনা আপনার জন্য।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব ভাল লেখেছেন মুক্তা আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
আরজু মুক্তা
ভাই, ধন্যবাদ।
শুভ কামনা
ছাইরাছ হেলাল
আসিফ সাহেব জীবিত বা মৃত এটি গল্পে যে ভাবে তুলে এনে ভৌতিক/ধোঁয়াশা সৃষ্টি
করতে পেরেছেন গল্পটির এখানেই সার্থকতা। লেখাটি পড়ে চমকে গেছি, সত্যি ই অনবদ্য, বাড়িয়ে বলছি না কিন্তু।
আরজু মুক্তা
হায় হায়!!!
এই কমেন্ট নিশ্চয় বাড়তি পাওনা যোগাবে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর ভালোবাসা সবসময়।
হৃদয়ের কথা
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম অনুগল্প। রহস্যময়তায় পূর্ণ গল্পটি অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
শুভ কামনা সবসময়