শহীদ সাহেব তো কোনোদিন দুই গ্রুপ চিন্তা করেন নাই, তাই নাজিমুদ্দিন সাহেবের সমর্থকদেরও নমিনেশন দিয়েছিলেন, মন্ত্রী করেছিলেন পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি, চিফ হুইপ, স্পিকার অনেক পদই দিয়েছিলেন। এরা সকলেই তলে তলে শহীদ সাহেবের বিরুদ্ধাচরণ করছিলেন। অন্যদিকে, পশ্চিম বাংলার মুসলিম লীগ এমএলএরা ভোট দিতে পারবেন না, কারণ তারা হিন্দুস্তানে পড়ে গিয়েছেন। তাঁর নিজের দল হাশিম সাহেবের নেতৃত্বে ঘরে বসে আছেন, শহীদ সাহেবকে সমর্থন করবেন না। হাশিম সাহেব কোন কর্মীকে নির্দেশ দিলেন না। অনেককেই নিষেধ করে দিলেন এবং তলে তলে বলে দিলেন, শহীদ সাহেবকে সমর্থন না করতে। শহীদ সাহেবের এদিকে ভ্রুক্ষেপ নাই। কোন চেষ্টাই করছেন না। কাউকেই অনুরোধ করছেন না ভোট দিতে। তাঁকে বললে, তিনি বলতেন, ইচ্ছা হয় দিবে, না হয় না দিবে, আমি কি করব?
শহীদ সাহেবের পক্ষে মোহাম্মদ আলী, জনাব তোফাজ্জল আলী, ডা. মালেক মিস্টার সবুর খান, আনোয়ারা খাতুন, ফরিদপুরের বাদশা মিয়া, রংপুরের খয়রাত হোসেন কাজ করছিলেন। শহীদ সাহেবের দলের চিফ হুইপ মফিজুদ্দিন আহমেদ সাহেব গোপনে গোপনে নাজিমুদ্দিন সাহেবের দলে কাজ করছিলেন। মন্ত্রী জনাব শামসুদ্দিন আহমেদ (কুষ্টিয়া) চেষ্টা করছিলেন শহীদ সাহেবের বিপক্ষে। একমাত্র ফজলুর রহমান সাহেব—তখন মন্ত্রী ছিলেন, শহীদ সাহেবকে বলেছিলেন, তার পক্ষে নাজিমুদ্দিন সাহেবকে ভোট দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমার কথাটা ভাল লেগেছিল। যা হোক, এর পরেও শহীদ সাহেবের পক্ষে ভোট বেশি ছিল। শেষ পর্যন্ত সিলেট জেলার সতেরজন, এমএলএ কলকাতা পৌঁছাল, তারাও ভোট দিবেন। ডা. মালেক সিলেট গিয়েছিলেন, শহীদ সাহেবের পক্ষে কাজ করতে। তাকে সিলেটের এমএলএরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন শহীদ সাহেবের প্রোগ্রাম কি?
ডা. মালেক বলেছিলেন, প্রথম কাজ হবে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করা। ফল হল উলটা, তিনজন এমএলএ ছাড়া আর সকলেই ছিলেন সিলেটের জমিদার। তাঁরা ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন। হোটেল বিল্টমোরে তাঁদের রাখা হয়েছিল। আমরা এদের শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ধরে এনেছিলাম। শহীদ সাহেবের কাছে সিলেটের এমএলএরা দাবি করলেন, তিনটি মন্ত্রিত্ব দিতে হবে সিলেটে। শহীদ সাহেব বললেন, “আমি কোন ওয়াদা করি না। তাঁদের যা প্রাপ্য তাই পাবেন।” অন্যদিকে নাজিমুদ্দিনের পক্ষে ওয়াদা দেয়া হয়েছিল। দু’একজন ছাড়া সিলেটের এমএলএরা নাজিমুদ্দিন সাহেবকে ভোট দিলেন, তাতে শহীদ সাহেব পরাজিত হলেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৭৬ ও ৭৭)
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৬৩)
৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস রে আপু পড়ে এসে পড়বো। বাইরে যেতে হচ্ছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
কি অবস্থা! আগে কথা দিতে হবে মন্ত্রী হবার। এখনও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। তা নইলে কি শহীদ সাহেব পরাজিত হতেন?
কেমন আছো রুবা’পু? আজকাল তোমাকে শনিবার ছাড়া তো পাওয়াই যায়না।
ভালো থেকো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শনিবারের দায়বদ্ধতা আমাকে টেনে নিয়ে আসে নীলাদি।
শুভেচ্ছা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
স্বারথের ঘা বেজায় অমলিন। মন্ত্রিত্ব দিতে হবে আগেই। কি আজব আবদার।
ভাল থাকুন রুবা আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সুন্দর উপলব্ধি “স্বার্থের ঘা বেজায় অমলিন।”
(y)
মোঃ মজিবর রহমান
(y)
নীহারিকা
রাজনীতি বড়ই কঠিন জিনিস। যুগে যুগে শুধু রূপ পালটায়।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
যুগে যুগে শুধু রূপ পালটায় কিন্তু ক্যাচালের ধরণ একই থেকে যায়।