শেখ বোরহানউদ্দিন কোথা থেকে কিভাবে এই মধুমতীর তীরে এসে বসবাস করেছিলেন কেউই তা বলতে পারে না। আমাদের বাড়ির দালানগুলির বয়স দুইশত বৎসরেরও বেশি হবে। শেখ বোরহানউদ্দিনের পরে তিন চার পুরুষের কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না।তবে শেখ বোরহানউদ্দিনের ছেলের ছেলে অথবা দু এক পুরুষ পরে দুই ভাইয়ের ইতিহাস পাওয়া যায়। এদের সম্বন্ধে অনেক গল্প আজও শুনা যায়। এক ভাইয়ের নাম শেখ কুদরতউল্লাহ আর এক ভাইয়ের নাম শেখ একরামউল্লাহ। আমরা এখন যারা আছি তারা এই দুই ভাইয়ের বংশধর। এই দুই ভাইয়ের সময়েও শেখ বংশ যথেষ্ট অর্থ ও সম্পদের অধীকারী ছিল। জমিদারির সাথে সাথে তাদের বিরাট ব্যবসাও ছিল।
শেখ কুদরতউল্লাহ ছিলেন সংসারী ও ব্যবসায়ী; আর শেখ একরামউল্লাহ ছিলেন দেশের সরদার, আচার-বিচার তিনিই করতেন।
শেখ কুদরতউল্লাহ ছিলেন বড় ভাই। এই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশ দখল করে এবং কলকাতা বন্দর গড়ে তোলে। ইংরেজ কুঠিয়াল সাহেবরা এই দেশে এসে নীল চাষ শুরু করে। শেখ কুদরতউল্লাহ সম্বন্ধে একটা গল্প আজও অনেকে বলাবলি করে থাকে এবং গল্পটা সত্য। খুলনা জেলার আলাইপুরে মি. রাইন নামে একজন ইংরেজ কুঠিয়াল সাহেব নীল চাষ শুরু করে এবং একটা কুঠি তৈরি করে। আজও সে কুঠিটা আছে। শেখদের নৌকার বহর ছিল। সেইসব নৌকা মাল নিয়ে কলকাতায় যেত। মি. রাইন নৌকা আটক করে মাঝিদের দিয়ে কাজ করাত এবং অনেক দিন পর্যন্ত আটক রাখত। শুধু শেখদের নৌকাই নয় অনেকের নৌকাই আটক রাখত। কেউ বাধা দিলে অকথ্য অত্যাচার করত। তখনকার দিনের ইংরেজের অত্যাচারের কাহিনী প্রায় সকলেরই জানা আছে। শেখরা তখনও দুর্বল হয়ে পড়ে নাই। রাইনের লোকদের সাথে কয়েক দফা দাঙ্গহাঙ্গামা হল এবং কোর্টে মামলা দায়ের হল। মামলায় প্রমাণ হল রাইন অন্যায় করেছে। কোর্ট শেখ কুদরতউল্লাহকে বলল, যত টাকা ক্ষতি হয়েছে জরিমানা করুন, রাইন দিতে বাধ্য। ঐ যুগে এইভাবেই বিচার হত। শেখ কুদরতউল্লাহ রাইনকে অপমান করার জন্য ’আধা পয়সা’ জরিমানা করল। রাইন বলেছিল ”যত টাকা চান দিতে রাজি আছি, আমাকে অপমান করবেন না। তাহলে ইংরেজ সমাজ আমাকে গ্রহণ করবে না; কারণ ’কালা আদমি’ আধা পয়সা জরিমানা করেছে।” কুদরতউল্লাহ শেখ উত্তর করেছিল বলে কথিত আছে, “টাকা আমি গুনি না, মেপে রাখি। টাকার আমার দরকার নাই। তুমি আমার লোকের উপর অত্যাচার করেছ; আমি প্রতিশোধ নিলাম।” কুদরতউল্লাহ শেখকে লোকে কদু শেখ বলে ডাকত। আজও খুলনা ও ফরিদপুরের বৃদ্ধ মানুষ বলে থাকে এই গল্পটা মুখে মুখে। ’কুদরতউল্লাহ শেখের আধা পয়সা জরিমানার’ দু’একটা গানও আছে। আমি একবার মিটিং করতে যাই বাগেরহাটে, আমার সাথে জিল্লুর রহমান এডভোকেট ছিল। ট্রেনের মধ্যে আমার পরিচয় পেয়ে এক বৃদ্ধ এই গল্পটা আমাকে বলেছিলেন। খুলনা জেলায় গল্পটা বেশি পরিচিত।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান।(পৃষ্ঠা নং-০৩ ও ০৫)
২০টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
শেখ কুদরতউল্লাহর গল্প পড়ে মজা পেলাম। ইংরেজকে এমন অপমানকর শাস্তি দিয়েছিলেন যিনি তাঁর নিশ্চয়ই উঁচুমানের ব্যক্তিত্ব ছিলো। বলাই বাহুল্য তাঁর যোগ্য ও যথার্থ উত্তরসূরি ছিলেন শেখ মুজিব। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, অল্প অল্প করে দিচ্ছি আপু উপলব্ধিতে ধারণ করার জন্য। পরে আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দেবো।
আমি পড়ে এতো বেশি আপ্লুত হয়েছি যে, কতো বেশি মানুষকে পড়ানো যায়, তাই ভেবেছি।
🙂
অনিকেত নন্দিনী
এইসব খুঁটিনাটি আগে জানা ছিলোনা। আপনার লেখা পড়েই জানতে পারছি।
ধন্যবাদ আপু। -{@
অপার্থিব
ভাল লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়…
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(9) অবশ্যই। ধন্যবাদ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
খুবই দুঃখের সাথে বলছি ভুল সিম্বল চলে গিয়েছে! এজন্য মডারেটরদে দৃষ্টি আকর্ণন করছি।
ধন্যবাদ আপনাকে। (y)
জিসান শা ইকরাম
অজানা কিছু ইতিহাস জানলাম এই পর্ব থেকে
শেখ কুদরতউল্লার জরিমানার ধরনটা পছন্দ হয়েছে
আধা পয়সা জরিমানা ইংরেজ রাইন এর উপর চপেটাঘাত এর চেয়েও বেশি।
আপনি ব্যাস্ত মানুষ, এত ব্যস্ততার মাঝেও বই দেখে লিখছেন এটি
ধন্যবাদ আপনাকে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, বিষয়টি জানার পর একজন বাঙালী হিসাবে গর্ববোধ করেছি।
লোকজন পড়লেই আমার কষ্ট করে অল্প অল্প করে প্যারা আকারে প্রকাশ সার্থক হবে।
শুন্য শুন্যালয়
এমন শাস্তি একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষের পক্ষেই দেয়া সম্ভব। মজা পেলাম। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে সময় করে বইটা দেবার জন্য। পড়বো নিয়মিত।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ অনেক।
ছাইরাছ হেলাল
কুদরতউল্লাহ সত্যি ই কুদরত দেখিয়েছেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সত্যিই, আধা পয়সা’র ব্যাপারটা একটা জব্বর জবাব ছিলো। তেমন লোকের বংশধরের এমন ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব না হয়ে পারে!
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল লাগলো আপু মনে পড়ছে নতুন করে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
-{@
তানজির খান
ধন্যবাদ আপনাকে। বারবার পড়ছি আর ভাবছি কতটা সহজ স্বাভাবিক জীবন ছিল জাতির পিতার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সাধারনেই অসাধারণ ছিলেন তিনি।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
;? (9)
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আপনিও কি অসাবধানতাবশত ক্লিক করে ২য় এই ভুল সিম্বলটি দিয়ে বসলেন?
ব্লগার সজীব
বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষের কথা জানলাম এই লেখায়।অপমানের রূপ দেখে অবাক হলাম। অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ। বুঝতে পারছি একটু একটু করে দেয়ায় সবাই বইটা শুধুই পড়ছে না, ধারণও করছে।