ফুল ফুটেছে

মামুন ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪, সোমবার, ০৬:০৫:১৮অপরাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য

”মেঘের কোলে রোদ হেসেছে

বাদল গেছে টুটি…

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি”

কবিগুরুর এই কথাগুলো মাথার ভিতরের কোনো এক যায়গায় বারবার বেজে যাচ্ছিল।

কিন্তু ঠিক কোন যায়গাটিতে যে, সে বলতে পারেনা। তবে প্রায়ই এরকম হবার মুহুর্তগুলো শেষ হবার পর, নিজের কাছে জানতে ভীষণ ইচ্ছে করে- এই গান কিংবা কবিতার লাইনগুলো আসলেই কি মাথার সুক্ষ্ণ নালীগুলোতে অবস্থান করে? না কি হৃদয়ের শিরা-উপশিরায় সতত বহমান?

প্রচন্ড উপোষী দেহমন! এই ‘উপোষী’ শব্দটা দেহমন এর সাথে অ্যাড করাতে কি একটু শ্রুতিকটু হল? জানালার পাশে বসে বসে মিষ্টি ভাবছে। কেন যে ওর মা-বাবা ওর নামটা মিষ্টি রেখেছেন! আদতে সে তো একটুও মিষ্টি নয়। না চেহারায়- না কথাবার্তায়। নিজের যে মুখকে প্রতিদিন আয়নায় দেখে, সেখানে কোনো মিষ্টিমুখকে দেখতে পায়না। বরং ভয়ানক এক কুৎসিত মুখশ্রী ওকে মুখ ভ্যাংচায়।আর ওর কথাবার্তায় কখনো অপরপক্ষ খুশী হয় না। সে যদি সত্যিই মিষ্টি একটি মেয়ে হতো, রাসেল কি ওকে এভাবে উপেক্ষা করতে পারত?

একটানা শ্রাবণের ঝরঝর বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এর ভিতরেও মিষ্টি এক অতৃপ্তি নিয়ে- উপোষী শরীর নিয়ে অপেক্ষা করছে। তাই বলে এটা ওর শরীরের চাহিদা নয়। হৃদয়- সে তো দেহবিহীন নয়। তাই ওর হৃদয়সাগরে রুক্ষ এক মরুভুমির সৃষ্টি হয়েছে… একজন মানুষকে ঘিরে। যার জন্য এক আদিগন্ত ভালোবাসা বুকে নিয়ে সে কাটাচ্ছে প্রহরের পর প্রহর! ভী…ষ…ণ কষ্টকর সেই মুহূর্তগুলো! তোমরা কি কেউ এমন কিছু সময় কাটিয়েছ? যদি কাটাতে, তবে বুঝতে- কষ্ট কাকে বলে।

রাসেল ওকে ছেড়ে চলে গেছে। না কি সে-ই চলে যেতে বাধ্য করেছে? ওর চলে যাওয়াটা কি একেবারে চলে যাওয়া?। তবে যাবার আগে সে বলেছিল, ‘আমি তোমাকে সাথে নিয়ে একদিন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে চাই! বৃষ্টি তোমার সিক্ত বসনকে তোমাতে লেপ্টে দেবে, আমি তোমার চোখে চোখ রেখে তোমাতে অবগাহন করব। আমার হাত ধরে থাকবে তোমার হাত… আর’- এ পর্যন্ত বলেই থেমে গিয়েছিল রাসেল সেদিন।

মিষ্টির অনেক জানতে ইচ্ছে করছিল, ‘ আর কি?’ কিন্তু হৃদয়ের কথা হৃদয়েই আকুপাকু করে প্রচন্ড অস্থিরতার জন্ম দিতে পারলেও, কখনো ঠোঁটের বাহির হয় না। বিশেষ করে রাসেলের সামনে। কত কথা যে রাসেলকে বলার আছে মিষ্টির। কিন্তু সামনে এলে কোনো কথাই বের হয় না। নিজেকে শামুকের মতো কেমন গুটিয়ে রাখে সে। ওর ভিতর থেকে কিছু একটা ওকে এটা করতে বাধ্য করে।

এক অদ্ভুদ ভালোবাসা রাসেলকে ঘিরে সবসময় পাক খেতে থাকে। রাসেল ওকে ওর ভিতর থেকে বের করে আনার বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু একটা নির্লিপ্ততা সব সময় রাসেলের সেই প্রচেস্টাকে এক দেয়াল হয়ে রুখে দিয়েছে। আজ প্রায় এক বছর ধরে চলা ওদের ‘অ্যাফেয়ার’। কিন্তু এর ভিতরে কতবার মিষ্টি রাসেলের কত নির্দোষ চাওয়ার মৃত্যু ঘটিয়েছে… রোমান্টিকতার কত আবহের ওপরে পানি ঢেলে দিয়েছে! তবে এগুলো সে ইচ্ছে করে করেনি। ভালোবাসার মানুষের সামনে সে যে এক ‘রিজিড বডি’তে পরিণত হয়- ঐ সময়টাতে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু সব কিছু শেষ হয়ে গেলে- মুহুর্তগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে সে অদম্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নিজের ভিতরের এই দ্বৈত সত্ত্বা কে মিষ্টি যে কেবলি উপলদ্ধি করে তাই না, এ থেকে বের হয়ে আসার জন্য সে হাজারো চেষ্টা করে। কিন্তু কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না। যার সাথে শেয়ার করতে পারতো, তাকেই তো প্রচন্ড ভাবে অপমান করে নিজেই তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধুমাত্র একটা কথা বলেছিল বলে!

মিষ্টির এই নির্লিপ্ততা থেকে বের করে আনতে, রাসেল ওকে একজন ‘সাইক্রিয়াটিস্ট’ এর কাছে নিয়ে যেতে চাইলো। এই একটি শব্দ শুনেই মিষ্টির মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিল। সে চীৎকার করে বলেছিল, ‘ আমাকে তোমার পাগল মনে হয়?’ কিন্তু এটা বলার সময়ও সেই মুহুর্তগুলোতে ওর অবচেতন মন হাহাকার করছিল, ‘ এ আমি কি বলছি ওকে!’ মন যা বলছিল রাসেল তা শুনতে পেলো না। কিন্তু মুখ যা বলেছিল, সেটা শুনেই রাসেল সেদিন চলে গেলো। আর যাবার সময় ঐ কথাগুলো বলে গেলো। ও হ্যা, এই মুহুর্তে মনে পড়লো মিষ্টির, রাসেল সেদিন আরো বলেছিল, তোমার আঙিনায় আমার লাগানো ঐ ফুল ফুটলে আমার কথা মনে করো। আমাকে ডেকো… আমি ফিরে আসবো।’

নিজের জানালা ভেদ করে সে দেখে, প্রচন্ড বৃষ্টির ভিতর দিয়ে অবিরল নব ধারা জলে ভিজে চলে রাসেলের হাতে লাগানো ফুল গাছের ফুলেরা । পুষ্পকলিদের বৃষ্টির জলে সিক্ত হবার এই দৃশ্য দেখে মিষ্টির হৃদয়ের গোপন দরোজাটা খুলে যায়। ওর ভিতরের দ্বৈত সত্ত্বা এক হয়ে যায়। নিজের নির্লীপ্ততার দেয়াল ভেঙ্গে চুরে নিজের ভিতরে সে ফিরে আসে। একটা অনুভূতি হাজার বছরের পথ চলায় ক্লান্ত হয়ে শেষমেশ পথের দিশা পেয়েছে যেন! সেই অনুভূতিতে বিলীন হয় মিষ্টি। ওর সকল চাওয়া পাওয়ার বাগানে ফুল ফুটে! মোবাইল হাতে নিয়ে সে রাসেলের নাম্বারে ফোন করে। একজন মিষ্টি সত্যিকারের মিষ্ট ভাষায় বলে, ‘এই! তোমার গাছে ফুল ফুটেছে… আর আজ বৃষ্টিও হচ্ছে! আমার সাথে ভিজবে?’

এক যুবতী প্রচন্ড এক বৃষ্টির দিনে হাজার বছরের খরায় উত্তপ্ত তনুমন নিয়ে অপেক্ষা করে!

অপেক্ষা করে একজনের জন্য! যে ওর কাছে ফিরে আসবে!

যে ওকে সাথে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে… হাতে হাত রেখে, চোখের ভিতরে অবগাহন করবে… আর…

এ টুকু ভেবেই ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র সকল লাল এসে জমা হয় মিষ্টি নামের এক মিষ্টি মেয়ের গালে!

এই মুহুর্তে কীভাবে যেন সে সত্যিকারের এক অপরুপা মিষ্টি মেয়েতে পরিণত হয়েছে।।

৫২৮জন ৫২৮জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ