
প্রেমী কবুতর না কাক?
“বুদ্ধিমানরা প্রেমে পরে একবার, বোকারা প্রেমে পরে দুইবার আর চরিত্রহীনরা প্রেমে পরে বারবার”।
কবুতরের নাম প্রেমের কবুতর কেন? কিংবা আমরা কোন চমৎকার জুটি দেখলে কেন বলিজোড়া কবুতর। কারন তো অবশ্যই আছে। কবুতর প্রেমিক পাখি, একসময়ের প্রেমের চিঠিবাহকও ছিল ।
প্রেমের ব্যাপারে সে এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ। প্রেমের যত ছলাকলা সবই তার জানা এবং মানুষের প্রেমঘটিত বিষয়গুলি কবুতরের সাথে মিলে যায়। কবুতরদের প্রায়ই দেখা যায় গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকে। একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কি যেন বলাবলি করে। প্রেমের কথাই বলে হয়ত তোমাকে ছাড়া আমার একমুহুর্ত কাটেনা, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না এসব। জন্মদানেও বেশ পটু, অতিসেক্সুয়াল পাখি। বসবাসের পরিবেশ চাই প্রেমের মতই চমৎকার!
এবার আসি বাচ্চা লালন পালনে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার পর বাচ্চাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব দুজনের। বেশ দুজনেই একসাথে চলাফেরাও করে। খাবার সংগ্রহে বের হয় একসাথে শুধু স্থান আলাদা থাকে। কারন সব জায়গায় খাবার সমান নাও মিলতে পারে। যার যার মত নিয়ে এসে বাচ্চাদের খাওয়ায়। সমস্যা একটা সেটা হল মাকে বাচ্চাদের ওম দিতে হয়। ওম দেবার সময় ছেলে কবুতর ভীষন একা বোধ করে, মন খারাপ থাকে। সে তখন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। অন্য কবুতরের দলে যায় গল্প টল্প করে চলে আসে!
ডিম দেবার আগে মেয়ে কবুতর দেখতে খুব টুসটুসি হয়। কেমন গ্লেজি গ্লেজি শরীর, কামনা, আবেদনে ভরপুর। একা থাকা পুরুষ কবুতরের এ সময় আবার প্রেম হয়। ভালো লেগে যায় কাউকে। গুনগুনিয়ে গান গায়- ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি। খাবার খুঁজতে গিয়ে, কিংবা দিশেহারা ঘুরতে ঘুরতে হয়ে গেল কোন কবুতরের সাথে চোখে চোখ। পুরুষ কবুতর বেমালুম বউ বাচ্চার কথা ভুলে গিয়ে এই টুসটুসির পেছনে দেয় ছুট। প্রেমের পটু পুরুষ কবুতর টুসটুসির পেছনে তার সমস্ত ভান্ডার উজার করে দেয়। এ সময় লুচ্ছা টুসটুসিও পটে যায় নতুন স্বাধের আশায়, নতুন ওমের আশায়, নতুন ঠোঁটের আশায়। দুজনে এক হয়ে; হয়ে যায় একেবারে দেশান্তরী। কারন টুসটুসীর পুরুষ তখন দা/কুড়াল নিয়ে তাকে খুঁজছে, লাম্পট্যের শেষ দেখতে!
এদিকে মা কবুতরের দুইবাচ্চাকে খাওয়ানো অসম্ভব হয়ে পরে। এ বয়সী বাচ্চাদের প্রচুর মায়ের ওম দরকার হয়। মা কবুতর না পারে পেট ভরে খাওয়াতে না পারে বাচ্চাদের ওম দিতে। পরিনতি হয় খুবই খারাপ বাচ্চারা মারা যায়। বাচ্চাদের শোকে কান্নাকাটি করে মা কবুতর অসুস্থ হয়ে যায়। আর বেঁচে থাকলে আবার নামে সঙ্গী খুঁজতে। কারন কবুতররা একা থাকতে পারে না।
এবার আসি কালো কাকের কথায়-
কোকিলা কালো বলে গান শোনে না কে? সবাই গান শোনে কিন্তু ভালোবাসে কজন। কাক/কোকিল এসব কুৎসিত পাখি। কাক তো রুচিহীন যাচ্ছেতাই অবস্থা। যত পঁচা ময়লা ঘেঁটে ঘুটে খায়। শহরের আবর্জনা পরিষ্কার হয় তাতে কি? প্রশ্ন হল রুচির। কবুতর যেমন তেমন খাবার খায়না। ময়লার তো ধারে কাছেও যায় না। কাক সারাদিন কা কা করে। বড় কোন খাবার পেলে কা কা করে কান ঝালাপালা করে অন্যদের ডাকে তারপর মিলেমিশে খায়। থাকার সঠিক জায়গা তো নেই। কারেন্টের তার, মরা গাছ এসবে থাকে। ঝড়, তুফান, শীতে টুপ করে মরেও যায়। দুজনে একসাথে মরতে না পারলেও শেষ সময়ে একসাথেই থাকে। সঙ্গীকে কবর দেবার গল্পও আমরা জানি। পুরুষ কিংবা মেয়ে যে কেউ একজন মরে গেলে শোকে অনেকদিন খাবার খায়না। একা একা বসে থাকে এবং বাকি জীবন সঙ্গী হীন একা কাটিয়ে দেয়।
এটি ভালোবাসার রুপক গল্প। ভালোবাসা অনেক মূল্যবান একটি জিনিস। নিবেদন, সমর্পণ যেটাই হোক বাহ্যিক চাটুকারীতা, সৌন্দর্য দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না। ভুল হলে কষ্টই পেতে হয়। জীবনে সঠিক মানুষটা আসা খুব জরুরি, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নিজেকে বিচক্ষণ হতে হবে। জীবনে ভুল মানুষ,ভুল সিদ্ধান্ত,ভুল বিশ্বাস, ভুল সম্পর্ক পৃথিবীর সবকিছুর উপর থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়। বেঁচে থাকার সমস্ত উপাদান বিষময় করে তোলে।
আমরা অহেতুক অন্যের বিশ্বাস নিয়ে খেলবো না। আজ যেটা মজা, যেটা খেলা বা পরিস্থিতির সামাল দেয়া। কারও হয়ত সেটা সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা , জমানো ভালোবাসা। আপনার কাছ থেকে পাওয়া আঘাত, অবজ্ঞা, মজা কারও বিশ্বাস ভাঙ্গার কারন যেন না হয়! হয়ত বিশ্বাস ভাঙা মানুষটা কষ্ট পেয়ে গুমরে গুমরে মরবে। এছাড়া আর কিছুই করতে পারবেনা। কিন্তু সারাজীবনের জন্য আপনি হয়ে থাকবেন এক মন নষ্টকারী হায়েনা!
সবাই ভালো থাকুন। প্রেমময় হোক সবার জীবন।🌹🌹
২১টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
খুব সুন্দর লেখা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ মহী ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।🌹🌹
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
পড়ে মুগ্ধ হলাম প্রিয়
শুভকামনা রইল সদা
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার মুগ্ধতায় প্রীত হলাম।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা অহেতুক অন্যের বিশ্বাস নিয়ে খেলবো না। আজ যেটা মজা, যেটা খেলা বা পরিস্থিতির সামাল দেয়া। কারও হয়ত সেটা সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা , জমানো ভালোবাসা। আপনার কাছ থেকে পাওয়া আঘাত, অবজ্ঞা, মজা কারও বিশ্বাস ভাঙ্গার কারন যেন না হয়! হয়ত বিশ্বাস ভাঙা মানুষটা কষ্ট পেয়ে গুমরে গুমরে মরবে। এছাড়া আর কিছুই করতে পারবেনা। কিন্তু সারাজীবনের জন্য আপনি হয়ে থাকবেন এক মন নষ্টকারী হায়েনা!
যথার্থ উপস্থাপন।
অন্যের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে নেই।
কিছু স্বপ্ন, প্রেম, ভালোবাসা মানুষের তিলেতিলে গড়া।
যা প্রকৃত ও শাশ্বত।
খুবি শিক্ষণীয় উপস্থাপন,দিদি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অন্যের বিশ্বাস নিয়ে আসলেই খেলতে নেই।
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।🌹🌹
কামাল উদ্দিন
কবুতরদের নিয়ে আপনার বিস্তর গবেষণা আছে মনে হয়। এমনটি হলে তো বলা যায় প্রায় মানুষদের সাথে এদের চরিত্র মিলেই যায়। কিন্তু কাকদের ব্যাপারে যেটা বললেন সঙ্গী মারা গেলে খায় না সারাটা জীবন নিঃসঙ্গ থাকে এটা কি সত্যি!!
সব শেষের কথাটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আমরা কেউ যেন মন নষ্টকারী হায়েনা না হই……..ভালো থাকবেন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কাকই সত্যিকারের প্রেমী। কথা সত্যই। আমরা কারও সাথে খেলব না। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
প্রেমের মরা জলে ডোবে না,
এ কথাটি এখন আর সত্য না, অবশ্য জলে যা আকাল তা তে আর কে কখন ডোবে!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
প্রেমে তো এখন আর মরেই না। জলে ভাসবে ক্যামনে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
এটা ছোট গল্প না হয়ে একান্ত অনুভূতি হলে ভালো হতো।
বিস্তর গবেষণা করেছেন প্রেম নিয়ে। আসলেই সবার কাছ থেকে শেখার আছে। ছোট পিঁপড়ে তাও কতো শিক্ষা দেয়।
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সবার কাছেই শেখার আছে।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
রুপক গল্পের মাধ্যমে সঠিক প্রেমকে চিনিয়ে দিলেন।
কবুতরের প্রেমের এই অবস্থা জানতাম না। কবুতরকে তাহলে সুযোগ সন্ধানী প্রেমিক/প্রেমিকা বলা যায়।
কাকের প্রেম তো দেখছি অত্যন্ত কঠিন। সঙ্গিনীর মৃত্যুর পরে একা জীবন কাটিয়ে দেয়!
প্রেমে বিশ্বাস বিষয়টি সবচেয়ে জরুরী। বিশ্বাস এবং আস্থা না থাকলে প্রেমিক/প্রেমিকার দুজনের জীবনই আগুনে পুড়ে কয়লা হতে থাকে।
পোষ্ট ভালো লেগেছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সব মানুষরুপী কবুতররাই এমন করে ঠকায়। বিশ্বাস নিয়ে খেলে।
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
প্রথমেই আসি মানুষ বার বার প্রেমে পরলে হয় চরিত্রহীন, এইটার সাথে আমি একমত না আপি, কারণ মানুষ অনেকের প্রেমে অনেকসময়, অনেক ভাবে পরতে পারে, যেমন আমি রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে শাহরুখ, এমনকি রাস্তায় কাউকে দেখে ভালো লাগলেই তাৎক্ষনিক প্রেমে পরে যাই। আর মানুষের মনের উপর কি কোন হাত আছে বইন?হ্যা তবে বার বার ভালোবাসার ছলে খেলা করলে হয় চরিত্রহীন।
এবার আসি কবুতর, আচ্ছা আমার বাড়িতে এত লাক্ষা,গিরিবাজ আর বিদেশি অনেক কবুতর অথছ আমি লেখার বিষয়ই খুঁজে পাই না, আর তুমি এত সুন্দর করে কাক কবুতর নিয়ে লিখলে দারুন পারো আপু।
যখন আমার বাসায় এক কবুতর আরেক কবুতরকে আদর করে তখন আজাদ আমাকে বলে এটা বিট করা, মানে সেক্স করে, এদের প্রেম প্রতিদিন আমি দেখি ভালোই লাগে।
শেষের কথাগুলো অসাধারন।
কাউকে ভালোবাসতে নাই পারি তাই বলে তার ভালোবাসাকে অসম্মান করতে পারি না। একটা ভুল ভালোবাসা, ভুল সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন ওলটপালট করে দেয়। মন নষ্টকারী হায়েনাদের জন্য আফসোস হয়,,,এরা নিজেরাই নিজেকে বোঝে না। ভালো থাক, শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তুমি যে প্রেমের কথা বলেছ সেটা আর আমি যেটা লিখেছি এক নয়। নারী পুরুষের প্রেম বারবার আসার কথা বলেছি। মূল্যবান জিনিস একবার/ দুবার আসে। বারবার নয়।
শুভ কামনা রইলো।😍😍😍
রেজওয়ানা কবির
ও আচ্ছা এবার বুঝলাম🤪🤪🤪
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রেমের , ছলনার উদাহরণ দিতে গিয়ে কবুতর আর কাক নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে বুঝলাম। শেষাংশ টুকু অসাধারণ। এটা সবারই মানা উচিত কিন্তু কেউ মানে না। মন ভাঙ্গা আর মসজিদ/মন্দির ভাঙ্গা এক কথা তবুও সবাই এটাকে নিয়েই বেশি খেলে , বিশ্বাস নষ্ট করে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
রোকসানা খন্দকার রুকু
দারুন বলেছেন দিদিভাই।
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।😍😍😍
তৌহিদ
আপনি যে প্রেমের কথা বলছেন সেই প্রেম জীবনে একবার দুইবার আসতে পারে কিন্তু বার বার নয়। রূপকল্প বস্তুনিষ্ঠভাবে উদাহরণ দিয়ে প্রেমের সম্পর্ককে চমৎকারভাবে লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষ কিংবা প্রাণী প্রেম ছাড়া আমরা অসহায়। এই প্রেম জাগতিক প্রেম নয়, এই প্রেম মনস্তাত্ত্বিক ।
ভালো থাকুন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী ভাইয়া সেটাই বলেছি। শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।