প্রবাসে এসে প্রতি ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বইমেলার সময়টা ভীষণ রকম অতৃপ্তি কাজ করতো নিজের ভেতরে। আহা, ছেলে হলে কতোই না ভাল হতো, সংসারের দায়িত্ব স্ত্রী’র হাতে দিয়ে উড়াল দিতে পারতাম। কিন্তু আমি যে নারী, আমি যে মা। ছোট দু’টি সন্তান রেখে এমন নিশ্চিন্তে স্বাধীনভাবে উড়াল দেয়া কি যায় ! মায়েরা এমন করে কোথাও গিয়ে কি নিজের ভেতরে শান্তি পায় ? নিজের ভেতরের সব আনন্দ বিসর্জন দিয়ে, সকল চাওয়া পাওয়াকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরিবারের সকলকে আগলে রাখাটাই যেন তাঁদের স্বভাব। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁদের এমন করেই তৈরি করেছেন।
প্রতি মে তে নিউইয়র্কে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব আমার মত অনেকেরই সেই অতৃপ্তি মেটায়। গতকালই শেষ হলো নিউইয়র্কে আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা। মুক্তধারা ফাউণ্ডেশন আয়োজিত মেলার দুই যুগ পূর্তি ছিল এবার। জ্যাকসন হাইট্স এর পিএস ১৬৯ ছিল গত তিনদিন (মে ২২,২৩,২৪ ) বাংলাদেশীদের মিলনমেলা। মেমরিয়াল ডে এর হলিডে হওয়াতে বাড়তি সুবিধা হল যেন বাইরের স্টেট এর বাংলাদেশীদের জন্য। শুক্রবার থেকেই বিভিন্ন স্টেট থেকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নিউইয়র্ক এসে উপস্থিত হয়। এর আগেই বাংলাদেশ থেকে লেখক, প্রকাশকরা আসেন প্রতিবারের মতন। পিএস ১৬৯ এর একতলায় ক্যাফেটেরিয়া জুড়ে বইয়ের স্টল। দোতলায় অডিটোরিয়ামে দেশ ও প্রবাসের লেখকদের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি, সন্মাননা দেয়া, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরও বেশ কিছু আয়োজন ছিল। কানায় কানায় পরিপূর্ণ অডিটোরিয়ামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে অন্য অনেকের মতোই শুনছিলাম অধ্যক্ষ আবু সায়ীদ চৌধুরীর বক্তব্য। এতো মানুষ, অথচ পিনপতন নীরবতার মাঝে মনোযোগী শ্রোতা, দর্শক সবাই। দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। সে এক অন্যরকম পরিবেশ।
রাত সাড়ে এগারটায় শেষ হয় তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানটি। রাত একটায় আমি যখন একরাশ ভালোলাগা নিয়ে ফিরছিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে তখনো বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা, গল্প যেন শেষ হচ্ছিলো না। ভেঙে যেতে চাচ্ছিলো না এই মিলন মেলা। তবু যেতে হয়। বিদায় দিতে হয়। শেষ হতে হয়। এমন কিছু উৎসব প্রবাসে আমাদের সকলকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। হৃদয়ে ধারন করতে শেখায় দেশীয় সংস্কৃতি। বুঝতে শেখায় একটি ভাষার জন্যে আত্নত্যগ বৃথা যায়নি। বিশ্বের রাজধানীখ্যাত এই শহরে বাংলা ভাষাভাষী সকলের পদচারনা, মিলনমেলা এমন করেই এগিয়ে নিয়ে যাক বিশ্বের বুকে একটি দেশ ও জাতির ইতিহাস তৈরি করা ভাষাকে, বাংলাকে।
২৪টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা তৃষ্ণার্ত থাকি।
রিমি রুম্মান
এমন অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা বন্ধুরা দল বেঁধে যাই। পাল্লা দিয়ে বই কিনি। আড্ডা হয় মধ্যরাত অবধি। দেখা হয় দেশ প্রবাসের অনেকের সাথে, যারা বিশ্বের এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।
স্বপ্ন নীলা
ছবি আর বর্ণনা পড়ে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল — বার বার ফিরে আসুক এই মেলা — দেশের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক দেশ হতে দেশান্তরে —- প্রবাসের সকল ছোট শিশুরা জানুক তাদের আসল সংস্কৃতি
রিমি রুম্মান
প্রবাসে দেশের স্বাদ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার । ভাল থাকুন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
দেশে বসে এসব দেখে ভালোই লাগে।বাংলাকে ধারন করার কত চেষ্টা প্রবাসীদের।ভালো থাকুন প্রবাসে-একজন খাঁটি বাঙ্গালী হয়ে।
রিমি রুম্মান
বাংলাদেশী সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা এমন করে এগিয়ে যাবে। ছড়িয়ে পরবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত। ভাল থাকুন। নিরাপদ থাকুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বিদেশের মাটিতে থাকলে বুঝা যায়, দেশপ্রীতি কাকে বলে। জীবনের প্রয়োজনে বিদেশে বসবাসকারী যাদের দেশের প্রতি টান বেশি তারা অমন দু-একটি দেশীয় প্রোগ্রাম পেলে নিজের এক টুকরো দেশকেই যেনো কাছে পান।
রিমি রুম্মান
ঠিক তাই। এমন করেই আমরা বাংলাদেশকে খুঁজি, খুঁজে বেড়াই। ভাল থাকুন।
ব্লগার সজীব
বাংলা উ¢সব নিয়ে একটি লেখা পড়েছিলাম।বিশাল আয়োজন হয়। আমাদের সোনেলা পরিবারের একজন হয়ে এই অনুশঠানের কথা শেয়ার দিলেন আপনি। বাংলা মোদের জীবন মরন 🙂
রিমি রুম্মান
প্রতি বছর বাংলা উৎসবটি ঘিরে দেশ থেকে কবি লেখকরা আসেন। আমেরিকার অন্যান্য স্টেট থেকেও আসেন অনেক লেখক পরিবার নিয়ে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিন পৃথিবীর সর্বত্র।ভান দেশে এমন একটি অনুষ্টান আয়োজনে আমরা কৃতজ্ঞ।
রিমি রুম্মান
যেখানে বাঙালি, সেখানে বাংলা সংস্কৃতি __ এমন করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সারা বিশ্বে।
স্বদেশী যোদ্ধা
বাঙালি সংস্কৃতি এগিয়ে যাক , বাঙালি সংস্কৃতি একদিন সকল সংস্কৃতির উচ্চে স্থান পাক ।
রিমি রুম্মান
আমরা সেই দিনের অপেক্ষায়। আমরা আশা নিয়ে চেয়ে আছি।
খেয়ালী মেয়ে
প্রবাসে এমন অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই প্রবাসীরা তাদের হৃদয়ে যে ভালোবাসার সাথে এক টুকরো বাংলাদেশকে লালন করছে ,সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়…..দেশের বাইরে থেকেও তার বাংলাকে দিয়ে যাচ্ছে এক আকাশ সম্মান/ভালোবাসা…
রিমি রুম্মান
দেশ থেকে দূরে থাকলেই ভাল করে উপলব্দি করা যায় দেশকে। আমার যে একটি নিজস্ব দেশ আছে, ভাষা আছে___ এটি মনে হলে ভীষণ গর্বিত মনে হয়। এটি আমার পূর্বপুরুষেরা আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছে। এটি ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাই নয় কি ?
খেয়ালী মেয়ে
হুমমম নিজের দেশ, ভাষা, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই…
সীমান্ত উন্মাদ
আমার ধারনা দেশে যারা থাকেন তাদের থেকে বাংলা এবং বাংলাদেশকে বেশি ধারন করেন প্রবাসীরা।আমরা যেমন মার কাছ থেকে একটু দূরে গেলে ছটফট করি আর মা মা করে আমদের অন্তর ঠিক তেমনি প্রবাসিরা দূরে থাকে বলেই তাদের অন্তর পুড়ে দেশে জন্য। এইটা আমার কাছে মনে হয়।
রিমি রুম্মান
মা’র কাছ হতে আমাদের দূরে যেতে হয় একটা সময়, জীবন ও জীবিকার তাগিদে। কিন্তু মা থাকে প্রতি মুহূর্তে অন্তরে। ব্যাপারটা ঠিক তেমন। আপনি ঠিক মনের কথাটিই সহজ করে বলে দিলেন। ভাল থাকুন। নিরাপদ থাকুন।
লীলাবতী
পোষ্ট পড়ে ভালো লাগছে খুব আপু।বাংলার জন্য কত মমতা প্রবাসীদের।এক ষ্টেট হতে অন্য ষ্টেটে চলে আসেন কত বাংলা প্রিয় মানুষ।বাংলাকে এমনি করে ধারন করতে দেখলে ভালো লাগে।গর্ব হয়।
রিমি রুম্মান
প্রবাসে থাকলে দেশের জন্য টানটাও বেশি থাকে সবার। এমন উপলক্ষ পেলে কেউ একসাথে হবার, বাংলাকে ধারন করবার সুযোগ হারাতে চায় না। ভাল থাকবেন।
অনিকেত নন্দিনী
দেশে থাকতে যারা দেশীয় সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক ব্যাপারগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে প্রবাসে তাদের অনেকেই উন্মুখ হয়ে থাকে এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এমনি করেই ছড়িয়ে যাক বিশ্বজুড়ে।
অনিকেত নন্দিনী
আমার মন্তব্যে কষ্ট পেয়ে থাকলে দুঃখিত।
আসলে খুব কাছের কয়েকজনকে এমন দেখেছি বলে তাদের কথা বলেছিলাম। হয়তো আমি ঠিক করে বোঝাতে পারিনি।
রিমি রুম্মান
আমরা যখন মায়ের কাছাকাছি থাকি, মনে হয় আছিই তো। কিন্তু যখন জীবন ও জীবিকার তাগিদে মাকে ছেড়ে অন্য শহরে যেতে হয়, আলাদা থাকতে হয়, তখন প্রতি রাতে সকলের অগোচরে চোখের জলে বালিশ ভেজাই মাকে ভেবে, তাই না ? ব্যাপারটা ঠিক এরকম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন।