-মৌরী!
-মা শুনছি, বল।
-অর্ণবের বাবা কি করে?
-প্রেম করে মা।
-প্রেম? বেয়াদব মেয়ে কি বলে এসব!
-যা সত্যি তাই বলছি। কথায় কথায় বেয়াদব বলাটা তোমার স্বভাব হয়ে গেছে।
-সত্যি কথা? এটা তোর সত্যি কথা?
-হ্যাঁ সত্যি কথা। শোন, অর্ণবের বাবা রিটায়ার্ড করেছে চার মাস হল। এখন বাড়িতে বসে সারাদিন আন্টির সাথে প্রেম করে। আন্টিও সারাদিন আঙ্কেলকে এটা ওটা রান্না করে খাওয়ান। মাঝে মাঝে গান ও শোনান।
-কি? ওমা ছি!
-জ্বি! আন্টি তোমার মত ঝগড়াটে মহিলা না।
-কি আমি ঝগড়াটে?
-শুধু ঝগরাটে না তুমি একটা রোবট! আমার রোমান্টিক বাপটার জন্য কি করছো তুমি? অর্ণবের মাকে দেখ, সারাদিন আঙ্কেলের জন্য এটা ওটা করছে। এমনকি মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে বাইরে। আর তুমি? কোনদিন বাবাকে নিয়ে ঘুরতে গেছ? কোনদিন বাবার পছন্দের একটা কিছু রান্না করেছো? বাবার সামনে একটু সাজগোজ করেছো? হুহ!
রেহানা বেগমের মন খারাপ হয়েছে। মৌরীর বেয়াদবির জন্য নয় বরং মৌরীর বাবার জন্য কোনদিন আলাদাভাবে কিছু করা হয়নি বলে। সত্যিই রেহানা বেগম আমিরুল সাহেবের জন্য কিছু করেনি। প্রায় বছর খানেক হয়ে গেল রিটায়ার করেছেন আমিরুল সাহেব। তারপর থেকে তাকে প্রতিদিন বাজারে পাঠানো আর নিজের মেয়ের নামে নালিশ করা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কথা বলেনি রেহানা বেগম। মাঝে মাঝে ঝগড়া করেছেন মৌরীর বিয়ে নিয়ে। আজ নির্মম সত্যটা উপলব্ধি হচ্ছে রেহানা বেগমের।
-আচ্ছা অর্ণবের মা কি রান্না করে তোর আঙ্কেলের জন্য?
-পাস্তা। মাঝে মাঝে ফুলকপির পিঠা। এটা আঙ্কেলের জন্য সুপার স্পেশাল।
-আর?
-টমেটোর চাটনী ঝাল করে।
-আর?
-মা! তুমি কি এখন আন্টির রেসিপি শুনবা? নিজে নিজে কিছু করা শেখো। আন্টি আন্টির জামাইয়ের পছন্দ মত রান্না করে তুমি তোমার জামাইয়ের পছন্দ মত রান্না কর।
এবার বিশাল একটা ঝামেলায় পড়েছেন রেহানা বেগম। আমিরুল সাহেবের পছন্দের খাবার কি তা তিনি ভুলে গেছেন। ২২ বছরের সংসার জীবনে কখনোই জিজ্ঞেস করা হয়নি কি খেতে পছন্দ করে আমিরুল। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে রেহানা বেগমের। মৌরীর কথাই ঠিক, তিনি আসলে সংসারে একটা রোবট হয়ে গেছেন। নিজের স্বামী কি খেতে পছন্দ করেন তা তিনি ভুলে গেছেন।
-বিরানী।
-কি?
-বাবা বিরানী খেতে পছন্দ করেন। এটা তোমার জানা উচিত ছিল।
-ও হ্যাঁ! তোর বাবা তো বিরানী খেকো রাক্ষস!
-মা! তুমি বাবাকে রাক্ষস বলছো কেন?
-আমার স্বামী আমি বলেছি, তোর কি?
-উনি আমার বাবা!
-আগে সে আমার স্বামী, হুহ!
মৌরী চুপ হয়ে গেছে। রেহানা বেগম জয়লাভ করেছে। নিজের স্বামীকে ২২ বছর পর নিজের করে পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে তাঁর। মৌরী জানে এখন রেহানা বেগম বিরানী রান্না করবেন। তারপর আমিরুল সাহেব বাসায় আসার আগেই রেহানা বেগম সোনালী পাড়ের নীল শাড়ীটা পড়বেন। এটা রেহানা বেগমের প্রিয় শাড়ী। আমিরুল সাহেব বাসায় এসে প্রথমেই বলবেন, নীল শাড়ীতে তোমাকে সুচিত্রা সেনের মত লাগছে। তখন রেহানা বেগম এমন ভাব করবেন যেন আমিরুল সাহেবের এই কথাটা তার মনে ধরেনি। কিন্তু আসল ব্যাপারটা মৌরী জানে। মৌরী জানে তার মা শুধু মাত্র এই কথাটা শোনার জন্যই সারাদিন আমিরুল সাহেবের পথ চেয়ে বসে ছিল।
৯টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্ ,সহজে সুন্দর করে লেখার সহজাত ক্ষমতা আপনার আছে ,
তা এই এখানে প্রথম লেখাতেই সহজেই বুঝতে পারছি ।
লিখুন এখানে , অভিনন্দন আপনাকে ।
সোর্বিয়ের
শুভেচ্ছা জানবেন। -{@
শুন্য শুন্যালয়
এটা আপনার প্রথম লেখা… ? বাহ, মুগ্ধ হলাম… খুব সুন্দর…
ও হ্যাঁ, সোনেলায় আপনাকে স্বাগতম… এই নিন -{@
সোর্বিয়ের
না, এটা আমার প্রথম লেখা না। এটা মৌরীকে নিয়ে ‘পোয়েট্রি অফ লাভ’ সিরিজের প্রথম লেখা।
মন্তবের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
ভোরের শিশির নীতেশ
আপেল ভাইয়ের অনেকগুলো সিরিজের মাঝে এই মৌরী সিরিজ। অনেক পছন্দের একজন চরিত্র 😀
থ্যাঙ্কু আপ্পেল বাইইইইইইইইইইই…। সব সময় এখানে চাই… 😀 -{@ \|/
জিসান শা ইকরাম
ভালোবাসায় জড়ানো এমন কিছু মুহুর্তের জন্যই আমাদের বেচে থাকা ।
ভালো লেগেছে উপস্থাপনা ।
সোনেলায় সবাগতম <3
লীলাবতী
ফেইসবুকে আপনাকে দেখি । এখানে দেখে ভালো লাগছে খুব। সোনেলায় এমনি সুন্দর লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম ভাইয়া ।
রিমঝিম বর্ষা
ছোট ছোট ভালো লাগার গল্পগুলো পড়তে ভালো লাগে বেশ। 🙂
প্রজন্ম ৭১
খুব মিস্টি একটি গল্প । (y) -{@