এক মেয়ের মা হওয়া মানে তাঁর এক নতুন এক জীবনের দিগন্ত খুলে যাওয়া ,এক আলাদা স্বাদ , মাতৃত্বের আমোঘ আকর্ষণ !যা পরিণত বয়সেই প্রকৃত তৃপ্তি পাওয়া যায়! কিন্তু আমাদের মূর্খ মহিলা সমাজ ১৩-১৬ বছরের মেয়েকে প্রায় জোর করে গর্ভবতী করানো হয় । তাঁর সবুজ চলাফেরা মাথা উঁচু করা স্বাধীনতা ছিনিয়ে ,চটকানো কলার ছালের মতো ভবিষ্যত জীবন পায়ের তলায় পিষে শেষ করে দেয়¡ অল্প বিয়ে বিয়ে করা এক ব্যাপার আর মা হওয়া আর এক ব্যাপার?
মেয়েটির কৈশোর ও যৌবন একসংগে ছুরি দিয়ে খুন করা হয় । আমাদের সমাজব্যবস্থা ? শুধুমাত্র অসহায় গরিবদের উপর অত্যাচার করা ই এই সমাজের নিয়ম ?নীতি? সংস্কার ? কিসের সংস্কার কিসের ধর্ম কিসের মানবতা কিসের ভগবান –? একটা মেয়ে মাতৃহারা মেয়ে পোয়াতি হলে তাঁর উপর কিভাবে মেন্টাল টর্চার করা হয় বা এক মধ্যবিত্ত গরিব বাড়ির মেয়েদের কিভাবে অকথ্য টর্চারকে স্বীকার হতে হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না–পেটে বাচ্চা দিয়েই স্বামীদের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় ¡ যত কুৎসা , তাচ্ছিল্য, অবহেলা মেয়েটাকেই মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। শ্বশুড়বাড়ি ভালো খুব কম মেয়ের কপালে জোটে, তাও বাপের বাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জিনিসপত্র পেয়ে শাশুড়ির মন ভালো থাকলে– পোয়াতি অবস্থায় বাপের বাড়িতে থাকলে বেঁচে গেলো–নাহলে তাঁর জীবন আর নরক এক অবস্থা–মোট কথা বিবাহিত মেয়ের নিজের বাপ মা ছাড়া একমাত্র আপনার মানুষ বলে কেউ থাকে না –কিছু স্বামীরা ভালো হয় কিন্তু সেটা খুব কম । বেশীরভাগ ছেলেই বৌ কে দাবিয়ে রাখতে পারলে বা চড় থাপ্পড় মেরে পায়ের নীচে রাখাটাই পুরুষত্ব মনে করেন । মানে এটাই দৈববাণী যে বিবাহিত মহিলা হল কলুর বলদ –যত সহ্য করবে ততই সে মহান হবে –প্রতিবাদ করলে খারাপ বৌ—?
গর্ভবতী র দুরবস্থা— মেয়ে হয়ে জন্মালেই বিয়ে করতে হবে ই –? মেয়েদের কোন মন কোন ইচ্ছা কোন অস্তিত্ব ই সংসারে মানে নিজের বাবা মার সংসারে থাকবে না? বর্নপরিচয় শিখিয়ে ক্লাশ টেন পড়িয়েই কাজ শেষ –একটা অচেনা জায়গায় অচেনা লোকগুলোর সংগে থাকতে বাধ্য হবে —এমনকি অত্যাচার করলে মারধোর করলে সেটাকে খুব সামান্য জিনিস বলে এড়ানো হয় –আর তা করে কণ্যার মূর্খ আত্মীয়া র দল –? মা মাসী কাকীমা জ্যাঠিমা ছোটবেলার বান্ধবী এমনকি অনেকক্ষেত্রে দেখা নিজের বাবাও রাক্ষসের হাতে তুলে দিয়ে আসে ? এ কেমন সমাজব্যবস্থা!
সমাজের ভিত হল নারীজাতি । কারন একজন নারীর পেটেই একজন পুরুষের জন্ম। সেই নারী ই দুর্বল রোগাক্রান্ত রাকেটগ্রস্থ হয় —তাহলে আমাদের সমাজের অধিকাংশ জনগন এগোবে কি করে?
শিক্ষিতের হার মেদিনীপুরে খুব বেশী না হলে যথেষ্ট । সেখানে দেখা গেছে একজন স্কুল টিচার তঁাকেও সমাজের টিকা টিপ্পনি শুনতে হয় –কালো বলে –কোন ছেলে বিয়ে করে না তাই?–ভাবুন –আমরা কোন সমাজে বাস করি যেখানে বিয়েটাই কেবল জীবনের আসল মূলমন্ত্র!
গ্রামের গরিব ঘরের মেয়ে –চাষী ভ্যানওয়ালা বা মুচি মেথরের —এদের সুন্দর ভাবে বড় করানো হয় শুধুমাত্র উপযুক্ত পাত্রে কণ্যাদান করার জন্য –ষোল পেরোলেই বাড়ীতে অনুঘটক লোকেদের যাতায়াত শুরু –প্রথমে তো ঘটা করে বিসর্জন দুঃখিত বিয়ে হয় –একবছর পর মেয়েটাকে দেখলে চিনতে পারবেন না যে এ সেই আগের ফুটফুটে মেয়েটা–হাড় বেরিয়ে অকালে বুড়ি– বাচ্চা বড় হচ্ছে, রোজগার দরকার ,খিটখিটে মেজাজ চাল নেই ডাল নেই ঘর বাবার বাবা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে, গ্যাস নেই –চাই শুধু টাকা মারামারি অশান্তি অহেতুক সন্দেহ লাথালাথি লেগেই থাকে— আর্থিক চাহিদা পূরনে অসমর্থ হলে হতাশায়–তারপর থেকেই শুরু হয় সংসার জীবনের ভালোবাসার বিয়ের রহস্য-?
গর্ভবতী রমণীর চাহিদা—/ প্রথমত একজন কুমারী মেয়ে বিয়ে হলে তাঁকে বাপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ঠেলে দেওয়া উচিত নয় । স্নেহ ভালোবাসা বাপের বাড়ি থেকে অনেকটা তাঁর প্রাপ্য । এমনকি গর্ভবতী হলে ,শ্বশুড়বাড়ি থেকে অনেকটা অসহায় বোধ করে, বাবা মা কে ছেড়ে নিজে মা হতে যাওয়ার ফিলিং স তাঁকে অনেকটাই চাপের মধ্যে রাখতে শুরু করে। তাই বাড়িতে যেকোনো গর্ভবতী রমণীর অতিরিক্ত যত্ন আদর ভালোবাসা খেয়াল রাখা সর্বাপেক্ষা করনীয় বলে মনে করি ।
অল্প বয়সে মা হলে তাঁকে শ্বশুড়বাড়ি আপন করে নিয়ে বিশেষ করে স্বামীর উচিত তাঁকে খুব ভালোবাসা কাছে থাকা সামনা সামনি আগলে রাখা মানসিকভাবে খুব হাসি খুশিতে রাখা । মন কে বোঝা । খাওয়া দাওয়া শরীরের যথেষ্ট যত্ন নেওয়া।
প্রকৃতপক্ষে একজন গর্ভবতী নারীর অনেক আশা থাকে তাঁর পরিবার,বাপের বাড়ির কাছ থেকে । তাঁর ছেলের ভবিষ্যত নির্ভর করে একমাত্র তাঁর নিজের পরিবারের মানসিক ও পারিপার্শিক পরিবেশের উপর।
অনাদর——/কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে যে বিয়েতে ছেলের বাবা মার মত নেই –সেক্ষেত্রে ছেলে বাবা মার রাগ মানসিক প্রতিহিংসা গিয়ে পড়ে অসহায় পেটে বাচ্চা নেওয়া মেয়েটির উপর। সেক্ষেত্রে মেয়েটির একমাত্র আপন তাঁর বাপের বাড়ি । কড়া অভিভাবক থাকলে মেয়েটি বেঁচে গেল বেঁচে গেলো তাঁর দুর্ভোগের দিন ! তা না হলে, মা না থাকলে বা নাম মাত্র বাপের বাড়ি থাকলে মেয়েটির নারকীয় যন্ত্রনার অন্ত থাকবে না।
সেই পরিবারে প্রথম প্রথম দেখানো হবে যে তাঁরা খুব খুশি বাড়িতে বাচ্চা আসবে তাই –তারপর ফোন করে চাপ দেওয়া হবে কিছু অর্থের যোগানের জন্য –দিতে পারলে ভালো নয় তো শাশুড়ির টিপ্পনী উঠতে বসতে হরির নামের মতো কানে বাজতে থাকবে। রান্না পোয়াতির নাম করে হবে কিন্তু পোয়াতির তিন বেলার ভাতে পড়বে মাছের কাঁটা , অনেক গরিব পরিবারে আবার ভালো করে খেতেই দেওয়া হয় না । তাঁর মানে বিবাহিত মহিলা মানেই সংসারের গোলাম । খাওয়ার থাকলে খেলো না থাকলে জল খেয়ে শুয়ে পড়ল । অনেক পরিবারে তো আবার বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় বড় বড় ধানের বস্তা বইতে হয় । কাঠের বোঝা জমিতে কাপড় কোমর বেঁধে চাষ করতে হয় ¡ সারাদিন পরিশ্রম করার পর রাত্রে রুটি তরকারি আলুসিদ্ধ ভাত তাও তেল নেই নুন নেই শাশুড়ির মুখ ঝামটা –¡
আপনারা আরো শুনবেন মেদিনীপুরের মতো একটা শিক্ষিত জেলা তে বধু নির্যাতনের চরম দৃশ্য দেখা যায় । ওখানে একটা এম এ পাশ মেয়ে বাড়ির জমি থাকলে বাড়ির বৌ বলে মাঠে নেমে কাপড় তুলে কাদায় নেমে কাজ করতে হয় । ভাবা যায় একই বয়সী বাড়ির মেয়ে শহরে আইন পড়ছে আর বাড়ির বৌ বাড়ির বাড়তি চাকর খেতে পরতে দিচ্ছে দয়া করে তাই খেটে গতরে পুষিয়ে দিতে হয় –?
……………
অরুনিমা মন্ডল দাস
কলকাতা, বাংলা, ভারত।
৬টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
এসময়ে বিশেষ যত্ন দরকার মেয়েদের। কিন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েরা এ সময় মানসিক অশান্তিতে থাকেন। কারণ শশুড়ালয়ের সবাই মনে করেন বউ মানেই সর্বংসহা। বিয়ে করেছো মানে তোমাকে সব সহ্য করতেই হবে।
সুন্দর, সচেতনতামুলক পোস্ট।
ভালো লেগেছে।
রিফাত নওরিন
ভালো লেগেছে পোস্টটি পড়ে..!!
মোঃ মজিবর রহমান
আমি কি বলছি নিজেও জানিনা আমার মনে হয় এই ধরনীটাই এই অবস্থা যে জেভাবে পারে করে যাচ্ছে।
দুরবলের কেউ নায়।।
মৌনতা রিতু
হুম, অনেক পরিবারেই এমন দৃশ্য দেখা যায়। এই জন্য আমি সব সময়ই বলি, স্রষ্টি এই প্রসবেরও একটা যন্ত্রনা আছে। তা শুধু নারীকেই সহ্য করতে হয়।
আমি ভারতের কিছু এমন খবর পড়েছি। যা সত্যিই খুব অসহনীয়। দাসপ্রথার মতো।
অবশ্যই অবশ্যই ভাল একটা পোষ্ট। অভিনন্দন আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
আপনি সব সময়ই স্পষ্ট কথা বলেন,
নীলাঞ্জনা নীলা
নারীদের জন্য পৃথিবীতেই স্থান নেই। আর গর্ভবতী নারীদের কথা কি আর বলবো!
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীকে আলাদা করে যত্ন করা কয়টি পরিবারে হয়?
তবে যদি পুত্রসন্তান হবে সে কথা জেনে যায়, তখন আবার পরিবারের যত্ন পায়।