পরাণের ঘাস-১
আমি কারে লয়া করুম এ ঘর!
সোনার সংসারখান বুঝি খাড়ায়া
আছে ভাঙা চালের ঠাঁটের উপর।
আমি কারে গিয়া জিগামু কও;
সে ক্যান পুণ্যিমায় চান্দের পানে
চাইয়্যা থাকে চাতকের মতোন।
ক্যান সে তাকায় না বৃক্ষের পানে-
কতকাল ঝিম ধরে আছে এ পরী
উঠানের নিমরঙা চালতার ডালে।
গেরামের বেবাক লোকে কয়;
তুমি রসিক আছিলা একদিন,
তয়,এমন নিরস হইয়্যা- আইজ
ক্যান মুছো চোখ,পরাণের ঘাসে!
তোমারে একলা ফালায়া আমি-
উনানের তাপ সয়,টেকে’না মন,
এই বুঝি আইন্ধার পাড়ি দিয়া তুমি
থুয়া যাইবা আমার নিছক স্বপন।
আমার কইতে শরম নাই আইজ;
ছোট এই দেহ-ঘরে নাই কোন ডর,
উড়াল দিয়া যাও এ সংসার থুয়া
যেই দ্যাশে নাই কোন বাড়ি-ঘর।
কি ছিলো দ্যাখনের,হরিণের তাজ!
সিংহের দু’পাটি চোয়ালের ভিড়ে;
সংযত বিঙ্গ ডাহুকের দাঁত,
মধ্যাহ্নবেলা অসাড় পা মেলে সেই-
তুমি গেয়েছিলে সুন্দরি গীত।
তোমার বুঝি তাও মনে নাই আজ!
পরনের হলুদ-শাড়িখান পরি’না আর;
উঠানের ঘাসে লেগে কচুপাতা রঙ,
আইজ তোমার চিবুক ছুঁয়া দ্যাখি;যেন
আমার সেই সংসার নাই বুঝি আর!
দ্বগ্ধ-ঘরের খুঁটি ধরে খাড়ায়া আছি-
তুমি নিথর ঘুমায়া আছো চিতার উপর!
তোমার আর নাই দিন-তারিখের পাঠ;
এক কোটি দিনে হয় হাজার বছর,
আইজ থিইক্যা তুমি এই পরাণেরি ঘাস
বাইন্ধ্যা রইলো এই শাড়ির আঁচল।
==========================
পরাণের ঘাস-২
তুমি তো সেই-ত্যাজি জঙ্গলার বাঘ,
একদিন আছিলা এই পরাণেরি ঘাস।
মুখের গড়ন পাল্টায়া আইজ ক্যান-
উঠানের ঘাসের লগে খাও চোক্কর?
রাইতের-বেলা ডাহুকের মতো ডাকো
শিষ দিয়া – এই বুঝি নতুন ছলনা!
আমার আর নাই কোন স্বাধ;দুরদেশি
ডাহুকের মতো দিকচিহ্নহীন পলায়বার,
আমার কনিষ্ট অঙ্গুলি কেঁটে ছক।
ধনেশের কথা আমার ছিলই অজানা।
আমার হিয়ার ভিতরে হিংসার ছাপ-
তোমারে দেইখ্যা মনে হয়;বহুত জামানা
বাদে আইছো মাটিত থিন উইঠ্যা,
তুমি আফ্রিকার-কালো তমাল তম সাপ।
তুমি লাল রঙা সেই বিষাদের বাঁশি,
ধনুকের ছিলার মতো-দিনেরবেলা;
জাগাও আমার এ কাঁচা হিয়ার কাঁপন।
তুমি বনে বনে ঘুইরা এহন ভিনদেশি!
আর মনে নাই তোমার মুখের গড়ন।
তুমি আছিলা সোনার স্বপনে;আইজো
দ্যাখি তোমায়,যখন আছিলা হাঁপন।
তোমার কি জানা নাই আর কোন পথ-
আমার যে ভালো লাগে ঘাসের কথন।
========================
পরাণের ঘাস-৩
আমারে নিশি রাইতে -জাগায়া তুমি
ক্যান ফাঁকা চান্দের মতো আছো চুপ,
শেঁয়ালের বিরাম গর্জন -শুনায়া বুঝি;
আমারে তুমি – করতে আছো বেহুশ।
আমার চোক্ষে নাই ঘুম।তুমি শুনছিলা;
সন্ধ্যাই-বাঁশঝাড়ে মরা সেঁজুতির ঝাঁঝ,
রাখালের বাঁশি কি-রাইতে শোনা যায়?
তুমি আমারে -মরা গাঙে নিবা আইজ।
আমার সোনার স্বপন-আমি আছি চুপ।
তুমার বুকে আছিলো কি-এতই সাহস;
খিড়কি দিয়া-আমার ঘরের করা নারো,
হ্যাজাক জ্বালায়া-কি করছিলা তালাশ!
বাড়ির বেবাক চোখে-আইজ মরার ঘুম।
উঠানের কুকুটারে -তুমি করছিলা ঘাস!
বাগানত থিন আইসে ফুলের সুরভি।
তোমারে পাইয়্যা এই মাতোয়াল রাইতে,
তামাম দুনিয়া ভি আমার খোয়াব লাগে-
আইজ রাইতেই এই জামানা থুয়া-
তোমারে নিয়া যামু-আরেক জামানায়।
ঐ জামানাত খালি ঘাস,নক্ষত্রের মতো;
বিশালঅক্ষি জুড়ে ধইন্চার চাষ।
যেই খুশবু ভি নাকে আইবো;কাঁপন জাগায়া
কইলজার ভিতরে উইঠ্যা আইবো;
দুনিয়ার মাটিত থিন তিন-খান প্রেম-ঘাস।
===========================
পরাণের ঘাস-৪
বাজান,তুই বাজাইস না-আর এই বাঁশি।
বাঁশিতে দ্যাখি জুড়া আছে মেলা কান্দন।
সংসারি বেবাক কাজ-কাম থুয়া;আইজ
রইদে তাকায়া থাকিস’না যেন, -আইজ
রঙকইরা পিন্ধিতে ইচ্ছা করে -একখান
বেলুচি সাদা শাড়ি,যারে তুমি কও কাফন!
তুই করিস’না যেন -বেশি দেড়ি,আমার
চোক্ষে যে মেলা ঘুম,দ্যাখি বেবাক স্বপন।
নদীর দুই ঘাসে আইজ -বিশাল ঢেউ
দিঘীর কালো শ্যাওলায়’পরে মানিক-রতন!
আমার আইজ কেউ নাই,একলা থুয়া;
বেড়াইতে গেছো যানি কোন মরণের ঘাটে,
অচেনা একজন আমারে যাইতে কয়-
বাজান,আমার যে একলা একলা ডর লাগে!
==========================
পরাণের ঘাস-৫
তুমি কারে কও কবিতার ঘাস!
কবিতা লিখনের লাইগা আমি-
গেরামের গাব’গাছে উইঠ্যা;
মাতলামি করছিলাম আঁট মাস।
আমার আর নাই শরমের ঢেঁকি,
বেবাক ঘর জুড়ে ছন্দের বই।
আমি এহন নিজেই মাতোয়াল-
বেগাইন্যা রাইতের লগে কথা কই।
আমার উঠানের বাস ঝাড়ে চাঁদ!
চম্পাবতী,চন্দননগর, -স্বরচিত;
মেলা রুপ কথা -আর ঢের প্রণয়
বিটপি লতার তমাল – বিষাদ।
আমারে আর কয়ো না -কবিবর,
কইতে যদি জাগে হিয়ার কাঁপন।
ফুলেল বিছানা থুয়া তুমি আইজ;
চাইন্দের লগে বাইন্ধ্যা ফেল ঘর।
‘তোমার অবহেলা পাইয়্যা আইজ
আমার ঘর নাই, -বিরান কান্দর’!
======================
পরাণের ঘাস-৬
বস্তির বেবাক লোকে -খাড়ায়া আছে-
কারোর চোখত থিন ঝড়ে নোনাজল।
সবাই কি আমার আছিলো আপন,
যার লগে দোস্তি আমার -তারি নাই স্মরণ!
আমি ভি নাই এহন জিন্দা, -আমি লাশ,
মৃদু হাওয়ায় দোলা লাগে, -শীর্ণ কাপাশ।
আমি নগদে আইছিলাম সদ্য জামানায়;
করছিলাম ভ্রমণ জেরুজালেমের -তীর্থে।
কোন ব্যাটায় কয়, -খেলছিলাম তাস!
আমার উঠানের ঘাস -দ্যাখলেই কইবা,
একখান পরীর সঙ্গে -আছিলো সংসার।
=======================
১২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো। চমৎকার লিখেন। যদিও দীর্ঘ তবুও পড়েছি পুরোটাই। শুভ কামনা রইলো
হিমেল কবি(সাহিত্য সন্তান)
শুভ কামনা৷
সুপায়ন বড়ুয়া
পরানের ঘাস নিয়ে
দীর্ঘ আলাপন।
ভালোই লাগলো
করেছি আপন।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
পরাণের ঘাস নিয়ে
হিমেল কবি(সাহিত্য সন্তান)
নিছক পরাণের কথা৷
কামাল উদ্দিন
একটা একটা করে পোষ্ট দিলে ভালো হয় ভাই, বড় পোষ্ট দেখলে আমার মতো অনেকেই পালাতে চায়……..কবিতায় ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।
মোঃ মজিবর রহমান
বিশাল কবিতা, পরাণের ঘাস। গাঁও গ্রামের ধুলা কাদা অপরিছন্ন ঘাসে মেলে ধরে দারুন প্রানবন্ত । শুভেচ্ছা রইল।
মনির হোসেন মমি
আপনি ভাইয়া এখনো প্রোফাইল পিকটা দেননি মনে হচ্ছে সোনেলায় অতিথী পাখির ন্যায় উড়ে বেড়াচ্ছেন।সোনেলার বয়স আট বছর চলছে আশা করছি আপনাদের পদচারণায় চলবে অনন্তকাল তাই মন্তব্য আদান প্রদানে এবং একটা করে কবিতা লেখা দিয়ে সোনেলা পরিবারের সাথে একাত্মা হউন এটাই কাম্য।
শুভ ব্লগিং।
দালান জাহান
আমি নতুনত্বেে বিশ্বাসী
হিমেল কবি(সাহিত্য সন্তান)
নিছক রস সৃষ্টি!
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার লিখেছেন সব গুলো কবিতা, ভালো লাগলো খুব।
হালিম নজরুল
ভাষার আঞ্চলিকতা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে।