পরাণের ঘাস

হিমেল কবি(সাহিত্য সন্তান) ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সোমবার, ১০:২৫:০১অপরাহ্ন সাহিত্য ১২ মন্তব্য

পরাণের ঘাস-১

আমি কারে লয়া করুম এ ঘর!
সোনার সংসারখান বুঝি খাড়ায়া
আছে ভাঙা চালের ঠাঁটের উপর।
আমি কারে গিয়া জিগামু কও;
সে ক্যান পুণ্যিমায় চান্দের পানে
চাইয়্যা থাকে চাতকের মতোন।
ক্যান সে তাকায় না বৃক্ষের পানে-
কতকাল ঝিম ধরে আছে এ পরী
উঠানের নিমরঙা চালতার ডালে।

গেরামের বেবাক লোকে কয়;
তুমি রসিক আছিলা একদিন,
তয়,এমন নিরস হইয়্যা- আইজ
ক্যান মুছো চোখ,পরাণের ঘাসে!

তোমারে একলা ফালায়া আমি-
উনানের তাপ সয়,টেকে’না মন,
এই বুঝি আইন্ধার পাড়ি দিয়া তুমি
থুয়া যাইবা আমার নিছক স্বপন।
আমার কইতে শরম নাই আইজ;
ছোট এই দেহ-ঘরে নাই কোন ডর,
উড়াল দিয়া যাও এ সংসার থুয়া
যেই দ্যাশে নাই কোন বাড়ি-ঘর।

কি ছিলো দ্যাখনের,হরিণের তাজ!
সিংহের দু’পাটি চোয়ালের ভিড়ে;
সংযত বিঙ্গ ডাহুকের দাঁত,
মধ্যাহ্নবেলা অসাড় পা মেলে সেই-
তুমি গেয়েছিলে সুন্দরি গীত।
তোমার বুঝি তাও মনে নাই আজ!

পরনের হলুদ-শাড়িখান পরি’না আর;
উঠানের ঘাসে লেগে কচুপাতা রঙ,
আইজ তোমার চিবুক ছুঁয়া দ্যাখি;যেন
আমার সেই সংসার নাই বুঝি আর!
দ্বগ্ধ-ঘরের খুঁটি ধরে খাড়ায়া আছি-
তুমি নিথর ঘুমায়া আছো চিতার উপর!

তোমার আর নাই দিন-তারিখের পাঠ;
এক কোটি দিনে হয় হাজার বছর,
আইজ থিইক্যা তুমি এই পরাণেরি ঘাস
বাইন্ধ্যা রইলো এই শাড়ির আঁচল।
==========================
পরাণের ঘাস-২

তুমি তো সেই-ত্যাজি জঙ্গলার বাঘ,
একদিন আছিলা এই পরাণেরি ঘাস।
মুখের গড়ন পাল্টায়া আইজ ক্যান-
উঠানের ঘাসের লগে খাও চোক্কর?

রাইতের-বেলা ডাহুকের মতো ডাকো
শিষ দিয়া – এই বুঝি নতুন ছলনা!

আমার আর নাই কোন স্বাধ;দুরদেশি
ডাহুকের মতো দিকচিহ্নহীন পলায়বার,
আমার কনিষ্ট অঙ্গুলি কেঁটে ছক।
ধনেশের কথা আমার ছিলই অজানা।

আমার হিয়ার ভিতরে হিংসার ছাপ-
তোমারে দেইখ্যা মনে হয়;বহুত জামানা
বাদে আইছো মাটিত থিন উইঠ্যা,
তুমি আফ্রিকার-কালো তমাল তম সাপ।

তুমি লাল রঙা সেই বিষাদের বাঁশি,
ধনুকের ছিলার মতো-দিনেরবেলা;
জাগাও আমার এ কাঁচা হিয়ার কাঁপন।
তুমি বনে বনে ঘুইরা এহন ভিনদেশি!
আর মনে নাই তোমার মুখের গড়ন।

তুমি আছিলা সোনার স্বপনে;আইজো
দ্যাখি তোমায়,যখন আছিলা হাঁপন।
তোমার কি জানা নাই আর কোন পথ-
আমার যে ভালো লাগে ঘাসের কথন।
========================
পরাণের ঘাস-৩

আমারে নিশি রাইতে -জাগায়া তুমি
ক্যান ফাঁকা চান্দের মতো আছো চুপ,
শেঁয়ালের বিরাম গর্জন -শুনায়া বুঝি;
আমারে তুমি – করতে আছো বেহুশ।

আমার চোক্ষে নাই ঘুম।তুমি শুনছিলা;
সন্ধ্যাই-বাঁশঝাড়ে মরা সেঁজুতির ঝাঁঝ,
রাখালের বাঁশি কি-রাইতে শোনা যায়?
তুমি আমারে -মরা গাঙে নিবা আইজ।

আমার সোনার স্বপন-আমি আছি চুপ।
তুমার বুকে আছিলো কি-এতই সাহস;
খিড়কি দিয়া-আমার ঘরের করা নারো,
হ্যাজাক জ্বালায়া-কি করছিলা তালাশ!

বাড়ির বেবাক চোখে-আইজ মরার ঘুম।
উঠানের কুকুটারে -তুমি করছিলা ঘাস!

বাগানত থিন আইসে ফুলের সুরভি।
তোমারে পাইয়্যা এই মাতোয়াল রাইতে,
তামাম দুনিয়া ভি আমার খোয়াব লাগে-
আইজ রাইতেই এই জামানা থুয়া-

তোমারে নিয়া যামু-আরেক জামানায়।

ঐ জামানাত খালি ঘাস,নক্ষত্রের মতো;
বিশালঅক্ষি জুড়ে ধইন্চার চাষ।

যেই খুশবু ভি নাকে আইবো;কাঁপন জাগায়া
কইলজার ভিতরে উইঠ্যা আইবো;

দুনিয়ার মাটিত থিন তিন-খান প্রেম-ঘাস।
===========================
পরাণের ঘাস-৪

বাজান,তুই বাজাইস না-আর এই বাঁশি।
বাঁশিতে দ্যাখি জুড়া আছে মেলা কান্দন।

সংসারি বেবাক কাজ-কাম থুয়া;আইজ
রইদে তাকায়া থাকিস’না যেন, -আইজ

রঙকইরা পিন্ধিতে ইচ্ছা করে -একখান
বেলুচি সাদা শাড়ি,যারে তুমি কও কাফন!

তুই করিস’না যেন -বেশি দেড়ি,আমার
চোক্ষে যে মেলা ঘুম,দ্যাখি বেবাক স্বপন।

নদীর দুই ঘাসে আইজ -বিশাল ঢেউ
দিঘীর কালো শ্যাওলায়’পরে মানিক-রতন!

আমার আইজ কেউ নাই,একলা থুয়া;
বেড়াইতে গেছো যানি কোন মরণের ঘাটে,

অচেনা একজন আমারে যাইতে কয়-
বাজান,আমার যে একলা একলা ডর লাগে!
==========================
পরাণের ঘাস-৫

তুমি কারে কও কবিতার ঘাস!
কবিতা লিখনের লাইগা আমি-
গেরামের গাব’গাছে উইঠ্যা;
মাতলামি করছিলাম আঁট মাস।

আমার আর নাই শরমের ঢেঁকি,
বেবাক ঘর জুড়ে ছন্দের বই।

আমি এহন নিজেই মাতোয়াল-
বেগাইন্যা রাইতের লগে কথা কই।

আমার উঠানের বাস ঝাড়ে চাঁদ!

চম্পাবতী,চন্দননগর, -স্বরচিত;
মেলা রুপ কথা -আর ঢের প্রণয়
বিটপি লতার তমাল – বিষাদ।

আমারে আর কয়ো না -কবিবর,
কইতে যদি জাগে হিয়ার কাঁপন।

ফুলেল বিছানা থুয়া তুমি আইজ;
চাইন্দের লগে বাইন্ধ্যা ফেল ঘর।

‘তোমার অবহেলা পাইয়্যা আইজ
আমার ঘর নাই, -বিরান কান্দর’!
======================
পরাণের ঘাস-৬

বস্তির বেবাক লোকে -খাড়ায়া আছে-
কারোর চোখত থিন ঝড়ে নোনাজল।
সবাই কি আমার আছিলো আপন,
যার লগে দোস্তি আমার -তারি নাই স্মরণ!

আমি ভি নাই এহন জিন্দা, -আমি লাশ,
মৃদু হাওয়ায় দোলা লাগে, -শীর্ণ কাপাশ।
আমি নগদে আইছিলাম সদ্য জামানায়;

করছিলাম ভ্রমণ জেরুজালেমের -তীর্থে।

কোন ব্যাটায় কয়, -খেলছিলাম তাস!

আমার উঠানের ঘাস -দ্যাখলেই কইবা,
একখান পরীর সঙ্গে -আছিলো সংসার।
=======================

১৫৪৭জন ১৪৫৪জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ