পত্রমিতা//

বন্যা লিপি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ০১:১২:০১পূর্বাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

স্কুল থেকে ফেরার পথে গলির ভেতরর প্রায়ই সমক্লাশের পাপ্পু’কে একটা ঘরের সামনে বসে বাংলা সিনেমার অর্থবহ গান গাইতে দেখছে ইদানীং মিনু।মিনুর সঙ্গে কনক থাকে।

কনকের বাড়ি অনেকটা দূরে। অর্ধেকটা পথ একসাথে অন্তত যাওয়া যায়।অর্ধেক পথেই মিনুর বাসা।তারপরও কনক বাকি প্রায় দু’মাইলের মতো একাই হেঁটে যায়।নবম শ্রেনী’তে পড়ুয়া মিনু এরকম পাগলাটে ছেলে ছোকরা বহু দেখা হয়ে গ্যাছে ইতিমধ্যে।গায় মাখেনা কখনো। আজ বেশ বিব্রত লাগছে কনক সাথে আছে বলে।ভাবতে না ভাবতেই কনক উচ্চারন করে বসলো —মিনু, তোর জন্য গাইছে।—- মিনুঃ তোর জন্যও হতে পারে!! আমরা দুজনেই আছি একসাথে!!

কনকঃ আমার জন্য আজ পর্যন্ত কেউ এমন রাস্তার ধারে বইসা বা পেছন পেছন আইসা গান গায়নাই।মিনুঃ বাদ দেতো কনক। এগুলা ককনো লক্ষ করবিনা।তাইলেই এগুলা আরো বেশি মাতামাতি করবে।কনকঃ একদম ঠিক বলছিস্, সাহস কতো চিন্তা কর!!!

মিনু বাসায় পৌঁছেই আরেক কোপানলে পড়লো মা’য়ের সামনে।গোসলে যাবার আগেই মা একখানা হলুদ খাম এগিয়ে দিয়ে জানতে চাইলেন কাকে ঠিকানা দেয়া হয়েছে যে মিনুর নামে চিঠি আসবে ডাক যোগে? মফস্বল জেলা শহরর বসবাস রত মিনুর কাছে চিঠি আসে ডাকযোগে কেবল মাত্র আত্মীয় স্বজন যারা এ শহরের বাইরে থাকেন তাঁদের।অপরিচিত কারো চিঠি তাও আবার ঢাকা থেকে?  সেন্সরড তো হতেই হবে!!  খামটা খোলা দেখেই বোঝা বাকি নেই মিনু’র খুলে পড়ে দেখা হয়েছে। তবুও প্রশ্ন করে সত্যতা যাচাই। হাতে নিয়ে পড়ে দেখলো মিনু। দেখেই হেসে ফেললো। মা ধরলেন এখানেই। —-তুই হাসলি যে!! নিশ্চই তুই ঠিকানা দিয়ছিস্ কাউকে। মিনুঃ মা তুমিও না!!! তুমি পড়েছো তো এ চিঠি। বোঝোনি কথা গুলো কি লেখা?  এ নিশ্চই ছোট চাচ্চু’র কাজ।মাঃ মুহিতে’র কাজ মানে?  কি করছে সে? চাচ্চু কয়েক মাস আগে পাসপোর্ট সাইজ ছবি চেয়ে পাঠিয়েছিলো। দিয়েও ছিলো মিনু। চাচ্চু সিলেটে সরকারি চাকুরি করে। নানা রকম পরিক্রমা পাঠায়।মাঝে মাঝে কিশোর পত্রিকা পাঠায়। চাচ্চু’র কাছে চিঠি লেখার প্যাড,এনভেল্যাপ সব চাচ্চুই পাঠান ওখান থেকে। মিনু’র বুঝতে বাকি নেই নিশ্চই কোনো বিচিত্রায় নাম ছাপিয়ে দিয়েছে পত্রমিতালী বিভাগে। নামঃবয়সঃপেশাঃ শখঃ এসব ছাপা হয়ে বেরোলেই শুরু হয় মিতালী পর্বের চিঠি আসা যাওয়া। এটাই প্রথম সেই চিঠি বলেই মনে হচ্ছে। মা’কে পুরোটা বুঝিয়ে দেবার পরই মা ক্ষান্ত হলেন। প্রতিদিন এরপর ৫/৬ টা করে চিঠি আসতে শুরু হলো। শুধু মিনু’র একার নয়, সমবয়সী এবং মেজোফুপু চাচাতো বোন পিনু, মোট চারজনের নামেই আসতে শুরু হলো। সাথে সাথে ছোট চাচ্চু’র সাবধান বানী সম্বলিত চিঠিও এসে গেলো।” নির্মল বন্ধুত্ব করতে পারলে করবে। প্রেম পিরিতিতে জড়াইলে কিন্তু চিত্তথ্থন উইঠ্ঠা যাবি” আর কি? চিঠি গুলো পড়তে মজাই লাগে। সবাই একসাথে পড়ে আর মজা করে।দু/ তিনটা চিঠি’র জবাব দিয়েছিলো। একটারো জবাব আসেনি। একটা….. .শুধু একটা চিঠি’র জবাব এলো বেশ কিছুদিন পরে। মিনু অবাক হয়েছিলো কিশোরী মনে। হাতের লেখা খুবই সুন্দর। ঠিকানা দেখে মনে হয়েছিলো এটা দোকানের ঠিকানা। যাকগা তাতে কি?। ভালো লাগতো, নিয়মিত লিখতো না। মাসে ২/১টা।ছবি পাঠিয়েছিলো এইচ এস সি পরীক্ষার মার্কশীট্ সহ ফটোকপি। যেন বিশ্বাস্য হয়। মিনু’র সত্যতা ছিলো শুধুই লেখার ভাষা। আর কিছুই না।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য মিতা যখন নিজ শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো। কোনো কাটেনি মনের কোনে। দাগ থেকে গ্যাছে এটুকুই। আর কি কখনো কোনো ডাক পিয়ন মিতা’র খোঁজ দিতে পারবেনা? মিতা মফস্বল শহরে আসতে চেয়েছিলেন মিনু’কে স্বচোক্ষে দেখবেন বলে!!!মিনু আজ অনেক বুড়িয়ে গ্যাছে।  পত্রমিতালী’র যুগ দখলে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই বিশাল ভার্চ্যুয়াল জগত।আজো কি মিতা খোঁজে কোনো মফস্বলের মিনু’কে?? 

৯৫৬জন ৯৩৯জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    সাপ্তাহিক বিচিত্রা , পত্রমিতালি বিভাগ নিয়ে গেলো আমায় সোনালী অতীতে। কিশোরী বেলায় অনেক কাজের মাঝে আমার একটি কাজ ছিলো দুপুর বেলায় মা, খালা, মামিদের পেপার পড়ে শোনাবার। তারা কেউ কাঁথা সেলাই করতো কেউ চাঁদরে নকঁশা আকঁতো, আর পড়ে যেতাম পাতার পাতা। মন উশখুশ করতো বান্ধবীদের সাথে খেলতে যেতে, কিন্তু মা হাতে পেপার- বিচিত্রা দিয়ে বসিয়ে রাখতেন। বলতেন জোরে জোরে পড়তে থাকলে আমার রিডিং পড়া সুন্দর হবে আর উচ্চারন ঠিক হবে। সব পড়তে দিলেও এই পত্র মিতালী বিভাগটি পড়তে দিতেন না তখন।

    পত্রমিতা ভালো হয়েছে বন্যা, শক্ত কবিতার ফাঁকে এমন লেখা দেয়াটাও চালু রাখবেন।

    ভালোবাসা নিরন্তর থাকবে, শুভ কামনা ❤❤❤❤

    • বন্যা লিপি

      বিকেলটা আটকে দিতেন আব্বা প্রায়ই, হয় কপাল টিপে দিতে নয় হাত পা টিপে দিতে।আম্মা সেলাই করতেন।মাঝে মাঝে ইত্তেফাক ধরিয়ে দিতেন।শিরোনাম পড়ে শোনাতাম।শিরোনাম শুনে শুনে কোন খবরটা পড়ে শোনাব বলেতেন।নির্দিষ্ট খবর গুলো পড়ে শোনাতাম আব্বাকে।রিডিং পড়তে গেলেও হতোনা,বাচন ভঙ্গি লক্ষ করতেন। সেই দিনগুলো বড্ড মন পোড়ায়।এরপরে নিয়ে আসবো ডাকপিয়ন।শক্ত কবিতার ভান্ডার বড় সিমীত হয়ে গ্যাছে আজকাল। আপনার মনোকস্ট বুঝে ফেলেছে মনে হয় মগজ আমার। 😊চিন্তা নেই এরপর রোমান্টিক কিছু আসে কিনা মগজে ট্রাই মারতে হবে।😀ভালোবাসা 💟

  • মোঃ মজিবর রহমান

    ঐ সময়টা খুব ভালা ছিলো। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকা লাগত। অপেক্ষার সময় কি চাওয়া, আকাশ পানে খোজা, ঐ বুঝি পিয়ন আসছে, আসবে!!!!!!!!!!। স্বরনীয় বানী স্বরন করাইলেন। অতীত বুঝি বুকের পাজর ভেঙ্গেএ টান মারে এই আমার পানে আয়…………………।।
    শুভেচ্ছা অবিরত।

  • নিতাই বাবু

    আমরা আগেকার সময়ে সবকিছুই হারাতে বসেছি। হারানোর মধ্যে বিশেষ করে ডাকবাক্স হলো অন্যতম। বর্তমানে রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনার মধ্যে থাকা ডাকবাক্স দেখলে আর ভালো লাগে না। আপনার লেখা পড়ে আগের স্মৃতিতে কিছুক্ষণ ডুবে গিয়েছিলাম। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।

    • বন্যা লিপি

      হারানো দিনের কাছে বন্দী যত সোনালী অতীত।সেখানেই আছে যত মনে পরা যত মন কেমন করা স্মৃতী’র ভান্ডার।কেবল ফিরবেনা বলে পন নিয়েছে অমোঘ প্রতিজ্ঞায়। শব্দরাশি’র সাজানো কথামালায় মনে করা কেবল বর্তমানে।কতকিছু এসে গিলে খেলো সোনালী দিন গুলো। বারবার কেবলই মনে করায়… আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম “………নিরন্তর শুভ কামনা।

  • জিসান শা ইকরাম

    পত্রমতালীর একটা সময় গিয়েছে আগে, এত জনপ্রিয় ছিল এটি যে প্রায় সমস্ত পত্রিকায় পত্র মিতালী নামে একটি বিভাগই ছিলো।
    আমি প্রথম চিঠি পাই মনিরা আহমেদ মনির কাছ থেকে, ফরিদপুরের, তখন আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র। মনিরা ইন্টারের ছাত্রী ছিলেন। কই গেলো আমার প্রথম পত্র মিতা?
    লেখা পড়ে পুরাতন অনেক কথা মনে জাগলো।

    ভালো হয়েছে লেখা।

  • রিতু জাহান

    একসময় মনোরমা পত্রিকাতে বড় আপাদের গ্রুপটা পত্রমিতালী করতো। প্রচুর চিঠি আসতো। বড় আপা কবিতা লিখতো ছোটো ছোটো।
    বড় আপা রেডিওতে অনুরোধের আসর শুনতো। মা জানতো না বিষয়টা। একবার জানতে পেরে আগে ওর সে রেডিও ভেঙ্গেছিলো তারপর পত্রমিতালীর কথা শুনে বড় আপা খুব বকা খাইছিলো মায়ের কাছে। আমি বড় আপার সাড়ে নয় বছরের ছোটো। তখন অতো কিছু বুঝতাম না।
    শুধু ওর বকা খাওয়া শুনতাম।
    সত্যিই!! হয়তো চিঠির শব্দের মতো এতো নির্মলতা এখন এ ভার্চুয়াল জগতে নেই।
    ভালো লিখেছেন।

    • বন্যা লিপি

      কথায় বলে “যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ”হারানো দিনের প্রতিটি স্মৃতীতে শাশন,বারন, যত্ন,স্নেহ,প্রিতীর যে গভীরতা বা প্রেমের ইতিকথা অমলীন হয়ে আছে। আজো হয়তো পুরোনো মানুষগুলোর মধ্যে আছে ঠিকই। তবু তাঁরাও আজকের সময়ের বিবর্তনের মুখে পরে নিজেদেরকেই পরিবর্তন করে নিয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান যত দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে তারো বেশি।
      সবচেয়ে বেশি নিয়েছে মানুষের মনুষত্ব।
      আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।সামান্য স্মৃতী রোমন্থনে যোগ দিয়েছেন।অশেষ শুবেচ্ছ।

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ