নয়নতারা
পর্ব:১
বাংলাদেশে যেসব পাহাড় রয়েছে, তার মাঝে গারো পাহাড় অন্যতম। ময়মনসিংহ জেলায় এই পাহাড়ের অবস্থান। গারো পাহাড়ের কোলঘেষে মেঘডুবি গ্রাম।
এই গ্রামের ঘরগুলো বেশ ফাঁকা ফাঁকা, একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়ি অনেক দূরে। এখানেই পাহাড়ের কোলে বেড়ে ওঠে নয়নতারা। প্রতিদিন ভোরে সূর্যের সাথে তার ঘুম ভাঙে,আবার সূর্যি ডোবার সাথে সাথেই ঘুমোতে যায়।
জমির আলি এবং সুখতারার একমাত্র কণ্যা নয়নতারা। অবশ্য কণ্যা বললে ভুল হবে। কারণ এই তের বছর বয়সে সে কবার মেয়েদের পোশাক পরেছে, তা হাতে গোনা যাবে। এইতো কিছুদিন আগে তার বন্ধু ফুল এর গায়ে হলুদে মায়ের জোড়াজুড়িতে একটা হলুদ শাড়ি পরেছিল। একটু পরেই বলে, “মা শাড়ি খুলে যাচ্ছে,আমি আর রাখতে পারলাম না। ” এরপর এগুলো ছেড়ে এসে সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। গ্রাম এলাকা, তাই তারার পোশাক পরিচ্ছদ, চলন বলন এসব নিয়ে অনেকেই কানাকানি করে, কিন্তু ওসবে কোন মনযোগ নেই তার। সে সর্বদাই ছুটছে,দৌড়াচ্ছে, কখনো তার ফুরায় না মনোরথ।
মেঘডুবি গ্রামের শ্যামল বরণ এই কণ্যার কথা সবাই জানে। গ্রামের সকলেই তাকে চেনে। স্কুলেও তার মেধা আর প্রতিভার জোড়ে কেড়ে নিয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকার মন। বন্ধুমহলে তার জুড়ি মেলা ভার। সবার প্রিয় এই নয়নতারা, সবাই আদর করে তারা বলেই ডাকে। তারার সাথীরা স্কুলে আসে লিপস্টিক লাগিয়ে, কেউ আসে কাজল মেখে।কেউবা চুলে করে খেঁজুর বিনুনি, কেউ করে খোঁপা। তারার অত সময় নেই। ছোট্ট ছোট্ট চুল, একটা চিরুনি দিয়ে কোনরকম আঁচড়ে চলে আসে। সাজগোজের অত অাগ্রহও নেই।
স্কুলে পৌঁছেই শুরু করে দস্যিপনা। কোনদিন গাছে উঠে কারো মাথায় পেয়ারার বিচি ফেলছে, তো কোন দিন ফেলছে বড়ই। বন্ধুদের নিয়ে প্ল্যান করে কখন কাকে নিয়ে মজা করা যায়, সেই তালে ছুটছে। কখনো বা অাড্ডায় হাহা হাসিতে মুখরিত করছে চারিদিক। কখনো পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকছে, এই পথে কাওকে যেতে দেবে না। যে যেতে চাইবে তাকে তারার সাথে লড়াই করে যেতে হবে! কখনো আবার রহস্য দেখলেই দলবল নিয়ে তার সমাধানে নেমে পরছে। একটা না একটা দুষ্টামী সর্বক্ষণ তার মাথায় ঘুরছে।
এত এত দুষ্টামীর পর ঘরে ফিরে সেই পড়তে বসা। একঘেয়ে সেই পড়াশুনো। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে, নয়নতারার চোখে নামে ঘুম। পাখিদের ছুটি দিয়ে, সূর্যের সাথী হয়ে ঘুমোতে যায় তারা।পরদিন সকালটা আবার শুরু হয় দস্যিপনা দিয়ে। শুধু যে দস্যিপনাই করে তা নয়। কখনো কারো প্রয়োজন হলে এই তারাকেই পাশে পায়। এজন্য তার দস্যিপনাকে মেনে নেয় গাঁয়ের লোক। তাছাড়াও যেখানে কোন কুকুর, বেড়াল অসহায় হয়ে পরেছে, কোন পাখির বাচ্চা তার মায়ের কোল থেকে পরে গেছে, সেখানেই তারা হাজির। তারা তার মায়ার বাঁধনে বেঁধে রাখে গাঁয়ের প্রতিটি প্রানিকে। তবে সবার মন তো এক নয়, তাই একজন মানুষের পক্ষে সবার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠাও সম্ভব নয়। মেঘডুবি গ্রামেও রয়েছে তেমন কিছু মানুষ, যারা তারাকে দুচোখে দেখতে পারে না। তাদের মধ্যে একজন হলো রাজু, তার সাথে রয়েছে একদল মানুষ রূপী জানোয়ার।
সেদিন গাঁয়ের পথে হেঁটে যাচ্ছিল নয়নতারা,সাথে কেউ নেই। পথের ধারে বসে তাস খেলছিল রাজু ও তার দল। তারা দেখতে পেল, মেয়েটি এ পথেই আসছে।……
চলবে….
৯টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
সব মিলিয়েই স্রিস্টী তাই সবইয় থাকে সর্বত্র। তাই সুবোধও আছে আবার কুবোধ আছে এ ধরায়।
নীরা সাদীয়া
হুম, ভালো বলেছেন। শুভকামা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গল্পতো জীবনবাস্তব।চলুক -{@
নীরা সাদীয়া
শুভকামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
প্রথম পর্ব পড়েই পরের পর্বের জন্য আগ্রহ জেগেছে খুব।
পরের পর্বের অপেক্ষায়………।।
নীরা সাদীয়া
সময়ের অভাবে পরের পর্ব দেয়া হয়নি। আগামী কাল পেয়ে যাবেন। ইনশাল্লাহ।
মৌনতা রিতু
পাহাড়ে এতো নিস্তব্ধতা তা কি বলব। কাউকে মেরে ফেললেও কেউ কিছুছু টের পাবে না। আমি গিয়েছিলাম গতমাসে শেরপুর। গল্প বেস ভাল চলছে, পরের পর্বের অপেক্ষা।
নীরা সাদীয়া
পাহাড়ের বর্ণনা কল্পনা থেকে লিখেছি।
ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা জানবেন।