
আমরা সচারাচর সে সমস্ত সেতুগুলি দেখিয়া থাকি তাহারা নট নড়ন-চড়ন হইয়া স্থির পরিয়া থাকে। কিন্তুক কিছু কিছু সেতু রহিয়াছে যাহারা নট নড়ন-চড়ন হইয়া পরিয়া থাকে না মোটেই, বরং বেশ নড়ন-চড়ন দিয়া থাকে। আজিকের এই লেখা সেই সমস্ত নড়ন-চড়ন সেতুদিগকে লইয়াই।
সেতু কোথায় দেয়া হয়?
ইহা একটি হাস্যকর প্রশ্ন। সকলেই জানে, সেতু সাধারণত নদী বা খাল অথবা জলের উপরেই দেয়া হইয়া থাকে। যাহাতে করিয়া জলের দুইধারের পথের মিলন সেতুবন্ধনে যান ও জন পারাপার হইতে পারে। অবশ্য আজকাল স্থলেও কিছু সেতু নির্মাণ করা হইতেছে যাহাদিগকে (ফ্লাইওভার) উড়ালসেতু নামে অবহিত করা হয়। এই সমস্ত সেতু দিয়া উড়াল দেয়া যায় কিনা তাহা আমার জানা নাই, তবে উড়ালসেতুর নিচের পথে যানজটকে টপকাইয়া সহজেই চলিয়া যাইবার জন্যই এর ব্যবহার। যদিও আমাদের দেশে এই সুযোগ খুব একটা পরিলক্ষিত হইতেছে না। যাহাহোক আমাদের আজিকের এই লেখার উদ্দেশ্য উড়ালসেতু নহে, অন্য আরেকদিন ইহার সম্পর্কে লেখা যাইবে। আজ বরং আমরা নড়ন-চড়ন সেতু সম্পর্কে কিছু জানিবার চেষ্ঠা নেই।
নড়ন-চড়ন সেতু
“সেই সমস্ত সেতুকেই আমরা নড়ন-চড়ন সেতু বলিবো যাহারা জলযানসমূহকে তাহার নিচ দিয়া চলিয়া যাইতে দিবার উদ্দেশ্যে নিজেরা নানান ভাবে নড়াচড়া করিয়া থাকে।”
নানান ধরনের নড়ন-চড়ন সেতু দেখিতে পাওয়া যায়। একে একে সকল প্রকার নড়ন-চড়ন সেতু লইয়াই লেখার ইচ্ছা রহিয়াছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে যেই ধরনের নড়ন-চড়ন সেতু লইয়া লিখিতেছি তাহাকে বলা হয় “টানা-সেতু” বা “Drawbridge” । (বিশেষ দ্রষ্টব্য: বাংলা নামের প্রতি খুব একটা শ্রদ্ধা না রাখিলেও চলিবে।) নড়ন-চড়ন সেতুগুলি কি ভাবে নড়াচড়া করিয়া থাকে তাহার উপর ভিত্তি করিয়াই তাহাদেরকে নামকরণ করা হয়।
“টানা-সেতু” বা “Drawbridge” একখান ছবি দেখেন
টানা-সেতুঃ যে সমস্ত সেতুকে একপাশ হইতে শক্ত কাছি বা দড়ির সাহায্যে টানিয়া অন্য মাথা তুলিয়া ফেলা হয় সেই সমস্ত সেতুকে “টানা-সেতু” বলিয়া থাকে।
টানা-টানির বিষয়টি মোটামুটি এই রকম
আদিকাল হইতেই এই সমস্ত টানা-সেতুর ব্যবহার পরিলক্ষিত হইয়া আসিতেছে। সেই সময়ে টানা সেতুগুলি ব্যবহার করা হইতো দূর্গগুলিতে।
দূর্গের চারিপাশে পরিখা খনন কররিয়া পরিখার নিচে চোখা চোখা লৌহদণ্ড অথবা কাষ্টদণ্ড পুতিয়া রাখা হইতো। কখনবা সেইখানে পানি দিয়া পরিপূর্ন করিয়া রাখা হইতো। আবার সেই পানিতে কুমীর বা বিষাক্ত সাপও ছেড়িয়া রাখিতো। সেই পরিখার উপর দিয়া দূর্গে প্রবেশের প্রবেশদ্বারে এই “টানা সেতু” স্থাপন করা হইতো। এগুলিকে “দূর্গ টানা-সেতু” বলিতে পারি আমরা। তাহাছাড়া বড়বড় প্রাসাদেও এই ধরনের “টানা সেতুর” ব্যবহার দেখা যাইতো।
আদিকালেই এই সমস্ত “টানা-সেতুর” ব্যবহার শেষ হইয়াছে ভাবিলে ভুল করিবেন। এই আজিকের সময়েও সেই আদিকালের “টানা-সেতুর” আধুনিক সংস্করণ দেখিতে পাওয়া যায়। তবে ইহারা দূর্গ বা প্রাসাদ ছাড়িয়া নদী বা খালের উপর স্থান করিয়া লইয়াছে। নিচে তাহাদের কিছু নমুনা পেশকরা হইলো।
উপরের সেতুটির নাম “Slauerhoffbrug” সেতু, যাহা Netherlands অবস্থিত।
শতর্কিকরণঃ সেতুর নাম উচ্চারণ করিবার কালে দুই-একটা পোঁকে খাওয়া দূর্বল দাঁত পরিয়া গেলে লেখক দায়ি হইবে না। নিজ দায়িত্বে উচ্চারণ করিবেন।
Gloucester dock-এর টানা-সেতু
এবার দেখেন কিছু টানা-সেতুন নমুনা যাহাদের মাঝখান হইতে দুই ভাগ হইয়া যায়।
Willamette নদীর উপরে টানা-সেতু
Amsterdam টানা- সেতু
ইহা Amsterdamএর Magere Brug টানা সেতু।
ইহা লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ টেমস নদীর উপর।
চলিবেক……
১৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
টানা সেতু জীবনে দুটি দেখেছি। তবে বর্ণনাটা দারুণ। পোকা খাওয়া দাঁত নাই, তাই নো চিন্তা। 😀 :D) \|/
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় নীলাপু। -{@
জিসান শা ইকরাম
জানতাম না এসবের কথা।
ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য/।
মরুভূমির জলদস্যু
স্বাগতম আপনাকে ইকরাম ভাই।
আবু খায়ের আনিছ
ইউটিউব নামক একটা টিভি আছে সেখানে দেখেছিলাম। বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য কোন কালেই হবে না বলেই মনে করি, প্রবাসে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই মোর জীবনে।
আরো জানার আগ্রহ রাখি।
মরুভূমির জলদস্যু
কার জীবনে কখন কিসের সুযোগ এসে হাজির হবে কেউ জানে না। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য আনিছ বাই।
আবু খায়ের আনিছ
ভাই আমি নিজেই ত দেশ থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি না।
মরুভূমির জলদস্যু
আমিও করি না। তবে বেড়াতে দুনিয়ার যে কোনো যাগায় যেতে আমি রাজি আছি।
আবু খায়ের আনিছ
সাধ আছে বেড়ানোর সাধ্য নাই, তাই ত দেশের ভিতরেই পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াই।
মরুভূমির জলদস্যু
আমারও সাধ্য কম, তাই অপেক্ষায় থাকি সময়+সুযোগ+অর্থের সমন্বয়ের।
অপার্থিব
দারুন একটা পোষ্ট। ভাল লাগলো। পরে সময় করে বিস্তারিত জানার আগ্রহ তৈরী হল।
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় অপার্থিব ভাই।
অরুনি মায়া
ধন্যবাদ দস্যু ভাই অনেক কিছু জানতে পারলাম |
এই ধরণের সেতু কি নেদারল্যান্ডস এ ই বেশি ?
মরুভূমির জলদস্যু
বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়েই এই ধরনে সেতুর অস্তিত্ব আছে। তবে নেদারল্যান্ডেই মনে হয় বেশী।
নীতেশ বড়ুয়া
মজার সাথে এই নড়ন-চড়ন সেতু নিয়ে দারুণ নড়ন-চড়ন করলেন ম.জ ভাইয়া। ছবির চাইতে বর্ণনা বেশী মজাদার ছিল 😀
মরুভূমির জলদস্যু
এই কারণেই এই লেখার বিভাগটা রম্য
নীতেশ বড়ুয়া
আহা… রম্যতেও আপনার ভ্রমণ নয় কিছুতেই মন্দ, আকাশে বাতাসে ভাসিছে সেই আনন্দ 😀
মরুভূমির জলদস্যু
এইবার কিন্তু কিঞ্চিত বেশী হইয়া হাইতেছে……