
নীলকর বা নীল চাষের জমি না থাকলেও তার স্মৃতি এখনো আছে মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের কিছুকাল পর তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরের অংশ হিসেবে মাদারীপুরে নীল চাষ শুরু হয়।
বিভিন্ন হিন্দু জমিদারের সহায়তায় ইংরেজ নীলকর ডানলপ সাহেবের কুঠিয়াল বাহিনী মাদারীপুরের আউলিয়াপুরে প্রায় ১২ একর জমির উপরে নীলকুঠি স্থাপন করেন। এলাকার কৃষকদের সেই সময়ে ধান, পাট, গম, সরিষাসহ অন্য ফসল চাষ বাদ দিতে হতো। শুধু নীল চাষে বাধ্য করা হতো।
যে জমিতে একবার নীল চাষ করা হতাে; সেখানে অন্য কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হতাে না। কৃষকদের আপত্তি সত্ত্বেও তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে নীল চাষে বাধ্য করা হতাে। নীল চাষে অনাগ্রহীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতাে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৪৫ সালে ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তুল্লাহ ও তার ছেলে পীর মহসিনউদ্দিন দুদু মিয়া নির্যাতিত কৃষকদের নিয়ে গড়ে তােলেন বিশাল এক লাঠিয়াল বাহিনী। পরবর্তীতে হাজী শরীয়তুল্লাহ মৃত্যুবরণ করার পর তার ছেলে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে নীলকুঠি থেকে ৩ কিলােমিটার দূরে ‘রণখােলা’ নামক স্থানে নীলকর ডানলপ বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় এবং পরাজিত হয়ে নীলকুঠির অধিকর্তা ডানলপ তার দলবলসহ নীলকুঠি ছেড়ে পালিয়ে যান। সেই থেকে ব্রিটিশদের অত্যাচারের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশদের নীল কারখানার ধ্বংসাবশেষ। যা এখন ‘নীলকুঠি’ নামে পরিচিত। স্মৃতি হিসেবে আজও রয়ে গেছে ১২ কক্ষ বিশিষ্ট কুঠির, ইটের দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ, মাঝামাঝি রয়েছে একটি চুল্লি ও পাশেই রয়েছে প্রায় ৪০ ফুট উঁচু চিমনি।
নীলকুঠিটি পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাহমুদপুর গ্রামঘেঁষে অবস্থিত। তাই মাদারীপুর জেলার পাশাপাশি শরীয়তপুরের মানুষও নীল চাষ করতে বাধ্য হতো। এখনো শরীয়তপুরের অনেকেই নীলকুঠিটি দেখতে আসেন।
দেশ-বিদেশের অনেকেই স্থানটি দেখতে আসেন। তবে অযত্ন-অবহেলায় ইটের দেয়াল, চুল্লি ও চিমনি নষ্ট হচ্ছে।
এটি সংরক্ষণে সবার সহযোগিতা দরকার। তাহলে আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবে।
২০টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
নীলচাষের অস্তিত্ব মাদারীপুরে জানতে পারলাম এবং নীল চাষের ইতিহাসও জানতে পারলাম। তবে বাকিটুকু সংরক্ষনের ব্যবস্থা হলে ভালো হবে। শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ কামনা
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সুন্দর ইতিহাস বর্ণন
এগুলো সংরক্ষণ খুবই জরুরী
কারণ পূরাতন বিনে চলমান সভ্যতার ক্রমবিকাশ হয় না।
সুন্দর তথ্য সম্বলিত পোষ্টের জন্য অশেষ শুভেচ্ছা রইল প্রিয় কবি।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।
আরজু মুক্তা
ভাই, ধন্যবাদ অশেষ
আলমগীর সরকার লিটন
ভাল একটি বিষয় তুলে ধরেছেন মুক্তা আপু
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
সুপর্ণা ফাল্গুনী
নীল চাষের ইতিহাস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো আপু। এর জন্য অনেক রক্ত ঝরেছে তাই ভবিষ্যত প্রজন্মদের এসব তথ্য জানানো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এসব ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ আমাদের দেশে অবহেলিত, গুরুত্বহীন । প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব এর মূল কারণ। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
আমি আসলে ইতিহাসের চেয়ে জায়গাটা চেনাতে চেয়েছি।
ঠিক বলছেন প্রসাশনের দূরদৃষ্টির অভাব।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
হালিমা আক্তার
নীল চাষের ইতিহাস পড়েছি। মাদারীপুরে এখনো নীলকুঠি আছে তা জানা ছিলোনা। আশা করছি সময় করে গ্রামের বাড়ি গেলে দেখে আসার চেষ্টা করব। তবে ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শুভ কামনা অবিরাম। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
আপনার বাড়ির কাছেই তাহলে।
আমার ভালো লাগলো জেনে যে পোস্টটা পড়ে আপনার আগ্রহ বেড়েছে।
শুভ কামনা আপা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
করুন ইতিহাস বাংলার মানুষের নীল চাষ করে। পেটে ভাত নেই তবুও ইংরেজদের অত্যাচারে নীল চাষ করতেই হবে। এটি আসলেই সংরক্ষন জরুরী তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে।
শুভ কামনা সবসময়।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
কামাল উদ্দিন
এই তো কয়েকদিন আগে মেহেরপুরের নীলকুঠি দেখে আসলাম। মাদারীপুরেও আসতে হবে দেখার জন্য……..শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
আরজু মুক্তা
ভ্রমণ পিয়াসু মানুষের জন্য এটা তেমন কঠিন না।
শুভ কামনা ভাই
কামাল উদ্দিন
কঠিন হলেও মনের টানে ছুটে যাই বা যেতে চেষ্টা করি আপু, শুভ রাত্রী।
আরজু মুক্তা
কঠিন বলিনি তো।
হালিম নজরুল
আমাদের গ্রামেও নীলকুঠি ছিল। আপনার লেখায় তা চোখের সামনে ভেসে উঠল।
আরজু মুক্তা
এই প্রথম জানলেন?
শুভ কামনা আপনার জন্য।
হালিম নজরুল
প্রশ্ন বুঝিনি আপা।
আরজু মুক্তা
মাদারীপুর যে নীলকুঠি আছে, তা কী প্রথম জানলেন?