নারীই সভ্যতার ধারক ও বাহক

রিতু জাহান ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শনিবার, ১০:১৫:১২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৩ মন্তব্য

1462420265 [640x480]
আদিম যুগে মানুষ ছিল পশুর মতোই। বন্য পশু শিকার করে কাঁচা মাছ মাংস, বনের ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করত। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, আদিম যুগে মেয়েরাই প্রথম কৃষিকাজ উদ্ভাবন করে। এবং আগুন আবিষ্কারও তাদের হাতেই।

দলবদ্ধভাবে বসবাস করার সময় নারী পুরুষ উভয়ই খাদ্য সংগ্রহ করত। তবে তখন দলের প্রধান ছিল নারী। খাদ্য সংগ্রহের এক পর্যায়ে নারীরা লক্ষ্য করল, তাদের সংগ্রহ করা বার্লি দানা ও গম পড়ে তাদের থাকার জায়গার আশেপাশে গজিয়ে উঠছে চারাগাছ। এটি দেখে মেয়েদের মনে বীজ ছিটিয়ে শষ্য পাওয়ার ধারনা জন্ম নিল। মেয়েরাই বুদ্ধি করে পাথর ঘসে হাতিয়ার তৈরী করল, যা দিয়ে মাটি গর্ত করে চারাগাছ লাগানো যায়। পাথর ঘসার সময় তারা লক্ষ্য করল, পাথরের ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি বের হয়ে তাদের হাতে ফোসকা পড়ার মতো অবস্থা হয়। এতে তারা এই আগুন জ্বালিয়ে পশুর মাংস ঝলসিয়ে খাওয়া শিখল এবং গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে তা থেকে বন্য হিংস্র পশুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বুদ্ধি বের করল।

এই নারীদের কৃষি উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে তারা দলবদ্ধভাবে এক জায়গায় থাকার কথা চিন্তা করল। কারণ তারা খাদ্যের সন্ধানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াত। নারীই ছিল তখন সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। তাই সভ্যতার শুরুর আগে নারীর ক্ষমতাই ছিল প্রধান। কিন্তু তখন পুরুষকে বৈষম্যের চোখে দেখা হত কিনা এটা আমার জানা নেই। তবে দেখা হলে হয়ত পুরুষ এখনো সেই অবস্থাতেই থাকত। যাই হোক, সেই অসভ্য যুগে মানুষ যখন যাযাবরের মতো, পশুর মতো জীবন যাপন করত, তখন কোনো নারী পুরুষ ভেদাভেদ ছিল না। কিন্তু মানুষ যখন গুহা ছেড়ে সভ্য জগতে বাস করতে শুরু করল, তখন থেকেই শুরু হল নারী পুরুষ বৈষম্য।

নারীরা যখন কৃষি উদ্ভাবন, ও আগুন জ্বালিয়ে একটা সু-শৃঙ্খল দলবদ্ধ একটা সমাজে বাস করার চিন্তা করল তখনই পুরুষ তার পেশী শক্তি বলে নারীকে দাবিয়ে রাখতে শুরু করল। তার একটা প্রধান কারণ দেখা যায় নারীর গর্ভে সন্তান লালন ও পালন। পুরুষ অস্বীকার করতে শুরু করল নারীর কৃতিত্ব। আগুনের ব্যবহার ও কৃষির উদ্ভাবনে বিপ্লব সৃষ্টি কারী নারীকে সকল কঠোর পরিশ্রম থেকে তারা অব্যহতি দিল, পুরুষ তাদের বৈধ উত্তরাধিকার নির্ধারনের স্বার্থে। তারা নারীকে একগা্মিতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করল ঠিকই কিন্তু পুরুষ থেকেই গেল বহুগামিতায়। নারী তার মাতৃসুলভ আচরণে সন্তান লালন পালনে অনেকটা আবদ্ধ হল। আসলে পুরুষের ভাষায়, এবং নারীর এসব আচরণে নারী হল অবরোধবাসিনী।

একসময় নারী এই ধারাবাহিকতায় একেবারেই পিষে মরতে থাকে। কিন্তু দিন বদলের সাথে সমাজের মানুষ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবার কারণে অনেকটা দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেও, পাল্টায়নি সেই আবদ্ধের সীমারেখা। একজন নারী, তার অনেক রূপ। গর্ভই তার সব থেকে বড় পরিচয়। সেই অর্থে সে পুরুষের গর্ভধারিনী। অথচ কতোটা নীচে এখনো নারী জাতি। একজন নারী অনেক রূপের পালাবদলে শিশু থেকে কিশোরী, কিশোরী থেকে বধু হয়। ছোটবেলা থেকে পরিবার থেকে শিখানো হয়, নারী মানে সহনশীল, নারী মানে কর্মঠ, নারী মানে ত্যাগের মূর্তি। সেই কর্মঠ নারী, বিয়ে হয়ে নতুন সংসারে, নতুন মানুষের হাত ধরে স্বপ্ন বোনে সোনার সংসার গড়ার। নারীর মনে তার স্বামী পুরুষটিই একমাত্র ভরসার পুরুষ। তার সংসারটাই তার নিজেরই মনে হয়। স্বামী যদি হয় কর্তা স্ত্রী নারীটি তার কর্তি। মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে এমন কোনো নারী নেই যে তাকে সংসারের শুরুতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় না। একসময় পরিশ্রমের ফল স্বরূপ সংসারটি যখন মোটামুটি দাঁড়িয়ে যায়, অনেকক্ষেত্রে তখন স্বামী পুরুষটি বহুগামিতায় গা ভাসায়। নারীর সব স্বপ্ন হয় চুরমার। রয়ে যায় প্রেমহীন, আশাহীন এক প্রণহীণ রক্ত মাংসের মানুষ, যদি বেঁচে থাকে।

কবে যেন কিছু শব্দ লিখেছিলাম, কোনো লেখাতেই তা মানাসই হয় কিনা জানি না।

“রাত গভীর, ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর এলিয়ে বিছানায় কৃষাণী। মৃদু পায়ে, শয়ন পাশে উঠে আসিল স্বামী পুরুষটি তার। মৃদু পায়ে আসতে দেখে, কৃষাণী একটু যেন আড়মোড়া দিল, মিথ্যা ঘুমের বাহানায়। স্বামীর হাতের একটু আদর, একটু ছোঁয়ার আশায়। এ ক্লান্ত জরাজীর্ণ শরীর তার আজও কেঁপে ওঠে, একটুখানি শৃঙ্গারের আশায়। মনে মনে ভাবে সে, কতো বাসনা তার স্বামী পুরুষটির বাহুতে কিন্তু, হায়! একি গো, যে হাতে আলত করে ধরত কৃষাণীর মুখখানি, আজ সে হাতখানি তার শক্ত বড় দম বন্ধ হবে কি কৃষাণীর এবার ! যে চোখে তার প্রেম ছিল এতো, তাতে কেন আগুন এতো !

সেই প্রথম যখন এসেছিল কৃষাণী এ ঘরে তার, কতো বিজয় আনন্দ ছিল ও চোখে তার। কৃষাণী জেনেছিল এ ঘরখানি তার, এই স্বামী পুরুষটি শুধুই তার।

একটুখানি ভিটা তার স্বর্গ হইল। সেই সূর্য কিরণ দেবার আগে ওঠে এই কৃষাণী। তারা দুজনে গড়বে এ সোনার সংসার। দিন যায় বেলা যায়, গতরখানি খেটে, বদনখানি রোদে পুড়ে, গড়ল আজ এ সংসার। এক ভিটা থেকে হল তিনখানা ভিটা, ধানি জমি, গরু তাও হল কিছু। স্বামীর ঔরসজাত সন্তানকে করতে হবে মানুষ। এসব করতে করতে, স্বামী পুরুষটিকে প্রেমে ভাসানোর সময়টা গেল হারিয়ে। তবুও অঙ্গে তার প্রেম ছিল, ছিল পরিনত বয়সের সুখ স্বপ্ন। কিন্তু সখা স্বামীটি তার বড়ই অধৈর্য্য , অন্য প্রেমে ভেসে গেলো। কৃষাণী চিৎকার করে বলিল,” মেরো না মেরো না, এখন যে বড় সুখের সময় আমার”।

৮৭জন ৯৪০জন

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ