জীবন, বাচ্চা নিয়ে রনি কোন ঝামেলা করলে, নদী চিন্তিত স্বরে বললো।
তার মানে আপনি বাচ্চা রাখবেন, বড় একটা নিশ্বাস ফেলে জীবন বললো।
আমি এখনো ভাবছি।
ভাববেন কেন, আপনার গর্ভে একটা জ্বলজ্যান্ত একটা বাচ্চা আছে, আপনি অন্য কিছু ভাবতে পারেননা নদী, জীবন উদ্বিগ্ন হয়ে বললো।
কিন্তু এখন আমি কি করবো।
এইটা আল্লাহ্র দান, আপনার চিন্তা করার কি আছে, এতো আর অবৈদ নয়, আপনি এইসব চিন্তা বাদ দিন, এই দেশে বাচ্চা সন্তানের জন্য সরকারই খরচাপাতি দেয়, প্লিজ নদী আর ভাববেন না, চলুন ডিনারের সময় হয়েছে, আমরা খেয়ে নিই।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও নদী উঠে পড়লো খাওয়ার জন্য।
জীবন নাবিলাকে বললো ফ্রেস হয়ে আসতে, নদী ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে গরম করতে লাগলো, জীবন রেডিমেইড টরটিলা (এক ধরণের রুটি) বের করে গরম করে ভাজতে লাগলো।
নদী টেবিলে প্লেট সাজিয়ে গরম করা খাবার গুলো বাটিতে নিয়ে টেবিলে দিলো, নাবিলা এলে সবাই মিলে খেতে বসলো।
নদী আপনি খাচ্ছেন না কেন, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
নদী এতক্ষণ খাওয়া শুধু নেড়েই যাচ্ছিলো অন্যমনস্ক হয়ে, জীবনের ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে বললো, না না খাচ্ছি তো, বলেই টরটিলা একটু ছিড়ে নিয়ে ভেজিটেবেল দিয়ে মুখে পুরে চাবাতে লাগলো।
নদী, সব কিছুর সমাধান আছে, আমরা দুজনে মিলে এর সমাধান বের করবো, প্লিজ টেনশন না করে খাবারটা খেয়ে নিন।
জি খাচ্ছি।
নদী তেমন খেতে পারলোনা, টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে, ড্রয়িং রুমে নদীর ফোন বাজতে দেখে নদী উঠে গেল ক্ষমা চেয়ে, হাত ধুয়ে নিয়ে হাত মুছে নিলো আর ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলো।
নদী পোঁছানোর আগেই ফোন রিং বন্ধ হয়ে গেল, নদী ফোন তুলে নিয়ে স্ক্রিনে তাকালো, ডায়ালে দেখলো মা ইমোতে কল দিয়েছিলো, নদী আবার রিডায়াল করলো, অপর প্রান্তে এক রিং বাজতেই নদীর মার গলা শুনা গেল।
হ্যালো নদী, আমি এইসব কি শুনছি?
যা শুনেছো তার সব সত্যি শুনেছো।
তুই এই কাজ করলি কিভাবে, এইটা কার বাচ্চা?
কার মানে, তুমি জানোনা কার বাচ্চা?
না, আমি তোর মুখেই জানতে চাই, চিল্লাইয়ে বললেন নদীর মা।
তুমি চুপ করো মা, তোমার লজ্জা করা উচিত, তোমার মন মানষিকতা খুবই খারাপ দেখছি, তোমার লজ্জা করলোনা তোমার মেয়ে সম্পর্কে এই কথা বলতে, নদীও ক্ষেপে গেল।
না আমার লজ্জা নেই, তুই এই মূহুর্তে হাসপাতালে গিয়ে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবি, এ আমার হুকুম।
নদীর মাথায় আগুন ধরে গেল, তাৎক্ষণিক ভেবে সে সিদ্ধান্তে উপনীত হলো বললো, তোমার হুকুমের নিকুচি করি, তোমার এতো বড় কথা, আমি আমার বাচ্চাকে খুন করতে বলছো, শুনো এ বাচ্চা আমার কোনো অবৈধ বাচ্চা না যে ওকে মেরে ফেলবো, ও আমার সন্তান, আমার রক্তে গড়া, ওকে আমি জম্ম দিবো, আমার নামেই সে মানুষ হবে, তুমি আর ভবিষ্যতে আমার বাচ্চা সম্পর্কে যদি উল্টাপাল্টা বলো তাহলে তুমি আমাকে জম্ম দিয়েছো তা আমি ভুলে যাবো, খবরদার বলছি, খবরদার, বলেই নদী ফোন কেটে দিয়ে ফুঁসতে লাগলো নদী।
জীবন দুই মগ কফি নিয়ে এসে একটা নদীর পাশে রেখে নিজে আরেকটা সোফায় বসে চুমুক দিতে লাগলো, নদীর রাগ দেখে সে চুপ করে রইল আর তা দেখে নদী নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে উঠে চলে গেল কিচেনে, কিচেনে এসে এক গ্লাস পানি খেলো ধীরেসুস্থে এরপর ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।
জীবন সরি, আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি, নাবিলা কি শুনেছে?
না না, ও খেয়ে উঠে উপরে চলে গেছে।
আসলে আমার মা যেন মা না, এমন সব কথা বলছেন যে মেজাজ ধরে রাখা যায় নাই, উনি বলছেন আমি যেন বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি, একজন মা হিসাবে কিভাবে এইসব কথা বলেন উনি?
নদী আপনি উত্তেজিত হবেন না প্লিজ, নিন কফি খান।
নদী কফি নিয়ে কয়েকটা চুমুক দিলো ঘন ঘন।
তাহলে কি ডিসিশন নিলেন, বেবি থাকবে শুনলাম?
ড্যাড কার বেবি, কোথায় বেবি, নাবিলা চ্যাঁচামেচি শুরু করে দিলো, ও যে কখন এসেছে ওরা কেউ খেয়াল করেনি।
নদী হেসে নাবিলাকে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে কোলে তুলে কপালে চুমু খেয়ে বললো, আমার বেবি।
কোথায়, কোথায় তোমার বেবি, অবাক হয়ে নাবিলা জিজ্ঞেস করলো।
আসবে আসবে কিন্তু কিছু মাস পরে।
কেন এতো দেরী, এখন নিয়ে আসোনা, আমি খেলবো, মনমরা হয়ে বললো নাবিলা, এখন কোথায় বেবি, বলোনা প্লিজ বলো।
নদী নাবিলার একটা হাত নিয়ে নিজের পেটে রেখে বললো, এইখানে।
এ্যাঃ তুমি বেবিকে খেয়ে ফেলেছো?
জীবন হাসতে হাসতে বললো, না সুইট হার্ট, আল্লাহ্ বেবিকে তোমার আন্টির পেটে দিয়েছে একটু বড় হওয়ার জন্য, একটু বড় হলেই তারপর ও আসবে।
ওয়াও রিয়েলি, আই এম সো হ্যাপি বলে নাবিলা নাচতে শুরু করলো।
জীবন মেয়ের খুশি দেখে হাসতে লাগলো আর নদীর দিকে তাকিয়ে বললো, ইট’স সেলেব্রেশন টাইম, মিষ্টি না হলে কি চলে, ঘরে আপনার প্রিয় পুডিং আছে, সেইটা দিয়েই না হয় খুশিটি উদযাপন করি, বলেই জীবন উঠে কিচেনে চলে গেল আর একটু পরেই সেইন্ট মাইকেলসের কোম্পানির বানানো পুডিং নিয়ে এলো সবার জন্য, প্রথমে মেয়েকে দিয়ে তারপর নদীকে দিলো, নিজেরটা খুলে নদীর হাত থেকে চামচ নিয়ে নিজের পুডিং থেকে নিয়ে নদীকে খাইয়ে দিয়ে বললো, অভিনন্দন নদী।
নদী হেসে দিলো।
জীবন নাবিলার খাওয়া শেষ হলে বললো, বেবি তুমি যাও, ব্রাশ করে শুয়ে পড়বে।
ওকে ড্যাড।
নাবিলা চলে গেলে জীবন নদীকে বললো, নদী আপনাকে অনেকে অনেক কথা বলবে কিন্তু সব সময় মনে রাখবেন, এইটা ইংল্যান্ড।
কেন এই কথা বলছেন, নদী জিজ্ঞেস করলো।
আমি জানি, অনেক এই বিষয়ে আমার নাম জড়াবে কিন্তু আপনি জানেন সব কিছু।
ডোন্ট ওরি আর আপনি খুব ভালো মানুষ।
জীবন হাসলো।
যান, অনেক রাত হচ্ছে, কাল আপনার প্রথম ডিউটি, ঘুমাতে হবেনা?
হাঁ যাচ্ছি, আপনি?
হুম আমি একটু পর উঠবো।
ওকে গুড নাইট।
গুড নাইট।
নদী উপরে নিজ রুমে এসে দেখে নাবিলা বসে আছে নদীর বিছানায়, নদী বললো, তুমি শুয়ে যাও, আমি ব্রাশ করে আসছি।
ওকে তুমি যাও, আমি বসবো।
ওকে বলে নদী বাথরুমে গেল, দশ মিনিট পর নদী বের হয়ে দেখে নাবিলা এখনো ওর বিছানার ওপর বসে আছে।
কি মামনি তুমি কিছু বলবে, নদী জিজ্ঞেস করলো।
নাবিলা আদুরে গলায় বললো, আমি এখন তোমার সাথে শুবো।
রিয়েলি?
ইয়াপ, বলেই নাবিলা ফিক করে হেসে দিলো।
নদী সাইড ল্যাম্পের বাতি অন করে রুমের মেইন লাইটটা অফ করে বিছানায় উঠে পড়লো, সাথে নাবিলাকে বুকে টেনে নিলো আর জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি ভয় লাগছে?
নো, ছোট জবাবটা দিয়ে নদীর বুকে মুখ লুকালো।
তাহলে?
আই ওয়ান্ট টু স্লীপ উইত ইউ এন্ড বেবি বলেই ফিক করে হেসে দিলো নাবিলা।
ওলে আমার মালে, কি আদর সোনা আমার, বেবি তো এখনো আমার পেটে।
তাই তো তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো, তুমি, বেবি আর আমি বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো নাবিলা।
নদীও নাবিলার হাসির সাথে নিজের হাসি মিলালো, হাত বাড়িয়ে টেবেল ল্যাম্প বন্ধ করে বললো, ওকে আসো আমরা ঘুমাই।
পরদিন সকাল সকাল উঠে নদী রেডি হয়ে নিলো আর নাবিলাকে স্কুলের জন্য রেডি করে নিচে নেমে আসলো, জীবন এখনো নামে নাই দেখে নিজেই ব্রেকফাস্ট রেডি করতে শুরু করলো, তিনজনের জন্যই অমলেট উইত চিজ, ব্রেড, বাটার, জ্যাম টেবিলে দিয়ে মেয়েকে দুধ দিলো গ্লাসে, এরপর অপেক্ষা করতে লাগলো জীবনের জন্য।
পনেরো বিশ মিনিট হয়ে গেলেও জীবন আসছেনা দেখে নদী অবাক হলো, নিজে উঠে সিঁড়ির কাছে গেল উপরে জীবনের খোজ নেওয়ার জন্য, তখনি জীবন বেড়িয়ে এলো রাতের কাপড় পরে, তা দেখে নদী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন সমস্যা?
হাঁ, কাল রাত থেকেই খুব জ্বর, সারা শরীর ব্যাথা, জীবন আসতে আসতে জবাব দিলো।
জীবন নিচে নেমে এলে নদী জীবনের কপাল ধরে দেখে আৎকে উঠলো আর বললো, আপনার তো গা পুড়ে যাচ্ছে, আপনি চলুন আপনার রুমে, আমি ব্রেকফাস্ট রুমেই নিয়ে আসছি।
না না, নিচেই নেমে এসেছি যখন হাল্কা কিছু খাবো এরপর মেডিসিন খাবো।
ঠিক আছে আসুন বলেই জীবনের হাত ধরে টেবিলে আসতে সহায়তা করলো, চেয়ার টেনে বসিয়ে ব্রেডে বাটার লাগিয়ে দিতে লাগলো, লাগানো শেষ হলে জীবনকে দিলো অমলেট দিয়ে খেতে সাথে মেয়ের জন্য গরম করা দুধ দিলো এক গ্লাস।
দুধটা খাবেন, ভালো লাগবে, নদী বললো।
জীবন কয়েক কামড় ব্রেড খেল অমলেট সহ, এরপর ঠেলে রেখে দিলো দেখে নদী বললো, কি হলো, খেলেন না?
খেতে ইচ্ছে করছেনা, জবাবে জীবন বললো।
আচ্ছা দুধ খেয়ে নিন, এরপর আপনার মাথা ধুয়ে দেবো।
না না আপনার দেরি হয়ে যাবে।
না হবেনা, আরো এক ঘন্টা আছে, নাবিলার স্কুল বাস এতক্ষণে চলে আসবে, মেয়েকে বাসে তুলে দিয়ে তারপর আপনার মাথা ধুয়ে দেবো।
……….. চলবে।
ছবিঃ Google.
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
জীবন এবার কিছু সেবা পাবে মনে হচ্ছে।
ইঞ্জা
এতো স্বাভাবিক ভাইজান কিন্তু একটা কথা বলে রাখি ভাইজান, এ গল্প নারীদের, প্রেমের নয়। :p
নীহারিকা
জীবনযুদ্ধ চলছেই।
ইঞ্জা
হাঁ দাদী, এ যে নদীদের জীবন যুদ্ধ।
নীলাঞ্জনা নীলা
পরিচ্ছন্ন সুন্দর একটি সম্পর্ক নদী আর জীবনের মধ্যে, ভালো লাগছে।
চলুক এগিয়ে সামনে।
ইঞ্জা
আপু আমি গল্পটিকে পরিচ্ছন্নই রাখতে চাইছি কারণ এই গল্প শুধু নদীদের, যে নদীরা চাইলে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারে।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া তাইতো ভালো লাগে আপনার লেখা গল্প।
ইঞ্জা
আপ্লুত ও অনুপ্রেরিত হলাম প্রিয় আপু।
মিষ্টি জিন
কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচছে নদী..
দেখি কি হয় সামনে..
ইঞ্জা
আসলেই পার্টনার, নদী আবার বিপদে পড়লো, এখন ওর সাপোর্টের দরকার।
হিলিয়াম এইচ ই
আগের পর্বগুলো পড়তে হবে দেখছি!!! ;? ;? ;?
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, অনুপ্রেরিত হলাম। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন যুধ্ব এভাবেই চলুক সব নোংরা জঞ্জাল ঝেড়ে ফেলে।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ মুজিবর ভাই, খুশি হলাম মন্তব্য পেয়ে, আজকাল আপনার লেখা কম দেখছি, কি ব্যাপার?
মোঃ মজিবর রহমান
অফিস কাজে খুব এলমেল চলছে তাই পড়ে যাচ্ছি অনেক সময় পড়েও মন্তব্য দেওয়া হয়ে উঠেনা। কারন মন্তব্য অগছাল হলে সবার মন খারাপ হবে তাই বিরত থাকি।
ভাল থাকুন। -{@
ইঞ্জা
শুভকামনা ভাই।
মৌনতা রিতু
আমার জীবন চরিত্রটা খুব ভাল লাগছে।
নাবিলা ঠিক কাজ করেছে। এমন মা আছে, এটা অনেক দেখেছি। বাস্তব এতো সুন্দর করে, লেখেন কীভাবে?
সালাম ভাইজু।
ইঞ্জা
লজ্জা পেলাম আপু, ভালো লিখি এইটা ঠিক না, এই কথাটি ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে এসেছে, আমি চেষ্টা করি আমার গল্প যেন বাস্তবতার বাইরে যেন না যায় আর তা আপনারা যদি গ্রহণ করেন তখন হয় আমার সার্থকতা, ধন্যবাদ আপু।