বেশ কিছুদিন আগে আমাদের স্টাফগাড়ীটা নষ্ট থাকায় সিনিয়র এক কলিগের গাড়ী করে বাসায় ফিরছিলাম। তিনি আবার গান করেন। নিজের গানই বাজিয়ে শুনাচ্ছিলেন।
কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আযান শুরু হলো। হিন্দু ধর্মানুসারী হওয়া সত্বেও তিনি আযান হওয়া মাত্রই সিডি বন্ধ করে দিলেন। ২০ মিনিট পর আবার তা চালু করলেন। বুঝলাম, শুধু আযানই নয়, নামাজের ওয়াক্তের মর্যাদা বিবেচনায়ও তিনি তা বন্ধ রেখেছিলেন।
প্রতিটা ধর্মেরই কিছু নিয়ম কানুন আছে। আমাদেরও আছে, তাঁদেরও আছে কিন্তু সংখ্যাগুরু আমরা কতোটা অন্য ধর্মের নিয়ম কানুনকে সন্মান জানাই? পারলে কোন উছিলা পেলেই হামলে পড়ি, যদিও তাতে যতোটা না ধর্মীয় কারন, তারথেকে বেশি থাকে রাজনৈতিক কারন বিদ্যমান।
আজ এই ছবিটা ফেসবুকে দেখে সেদিনের কথাটি মনে পড়লো। রমজান মাস উপলক্ষে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রতিদিন রোজাদারদের ইফতার বিলি করে যাচ্ছেন। তিনি আর কেউ নন, একুশে পদকপ্রাপ্ত শুদ্ধানন্দ মহাথের আর ছবিটা কমলাপুর বুড্ডিষ্ট টেম্পল এর। গত কয়েক বৎসর আগে থেকেই এই ইফতার বিলির কায্যক্রম শুরু হয়েছে।
ইসলামও এই শিক্ষাই দেয়, পারস্পারিক সম্প্রীতির মাধ্যমে সকল ধর্মের লোকের সহাবস্থান।
কাজেই সম্প্রীতিরর বন্ধনে এভাবেই ঠিকে থাকুক সমাজ তথা রাষ্ট্র।
ধর্ম থাকুক যার যার, দেশ হোক আমাদের সবার। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
নহে হিন্দু, নহে মুসলমান;
নহে বৌদ্ধ, নহে খ্রীষ্টান।
সবাই মোরা বাঙালী
বাঙলা মোদের প্রাণ।
কে আস্তিক, কে নাস্তিক
কেনো এই প্রশ্ন বারবার?
সবাই মোরা বাঙালী
বাঙলা মোদের অহংকার।
ধর্মকে যারা বর্ম করে,
সামপ্রদায়িকতার বিষ ছুড়ে;
তারা কি জানে না?
ধর্ম যার যার,
দেশ আমাদের সবার।
২০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
আমরা যারা সাধারন মুসলমান তারা সব সময়ই শান্তির মাঝে বসবাস করতে চাই।
আমরা চিরায়ত বাঙ্গালী হিসেবেই বাঁচতে চাই- যেখানে সব ধর্মের মানুষ একটি পরিবারের মত।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে এখনো এমনি ভাবেই বেঁচে থাকি।
কোন ভেদাভেদ নেই আমাদের ক্ষুদ্র গন্ডিতে।
ইসলামের সাথে যখন জামাত এবং হেফাজত শব্দ দুটো যুক্ত হয়েছে
এরা পাল্টে দিয়েছে সহ অবস্থান এর মানসিকতাকে।
এরাই প্রকৃত ইসলামের শত্রু।
এমন পোষ্ট দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক বলেছেন। সহাবস্থানের মানসিকতাকে এরাই পালটে দিয়েছে, যা প্রকৃত ইসলামে নেই। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় তারা এই বিভেদ তৈরি করেছে।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
লীলাবতী
আমার ছোট বেলায় তো সবাই আমরা মিলে মিশে ছিলাম।কি যে হলো গত কয়েক বছরে।সব পাল্টে গেলো।
‘ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম
হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম
জারি গান, বাউল গান
আনন্দের তুফান
গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম ‘
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হুম, এগুলো এখন মনে হয় কেবলই ইতিহাস।
কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষাও যে নিষ্ঠুর। ধর্মব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক উত্থানে যারা সহযোগিতা করেছিলো আজ তাদের দিকে চেয়ে দেখো, ইতিহাসের নর্দমায় তারা আজ পতিত।
অনিকেত নন্দিনী
ধর্ম থাকুক যার যার, দেশ হোক আমাদের সবার।
আমরা ভুলে যাই বিদায় হজ্বে রাসুল (সা) কি বলে গিয়েছেন। তাঁর সেই কথাগুলো মনে রাখলে এই দুরবস্থা হতোনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক তাই। কিচ্ছু দরকার নেই, শুধু ‘বিদায় হজ্জ বানি’ গুলো মনে রাখলেই এমন হতো না।
আমাদের নবীজী জানতেন তার উম্মতেরা এক সময় এমন বিবাদে লিপ্ত হবে, তাই তিনি বিদায় হজ্জে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন।
খেয়ালী মেয়ে
অন্য ধর্মের চেনা জানা মানুষগুলোর সাথে কখনোই ধর্ম নিয়ে আমাদের মাঝে কোন ছেদ পড়েনি–তাদেরকে দেখেছি আমাদের ধর্মকে সম্মান দিতে, আবার আমরাও তাদের সম্মান করতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করিনি………ঠিক বলেছো আপু বর্তমানে যতোটা না ধর্মীয় কারণে একে অপরের উপর হামলা চালায়, তার চেয়েও বেশি হচ্ছে রাজনৈতিক চাল…………
ধর্ম থাকুক যার যার, দেশ হোক আমাদের সবার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমার খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি মানুষ হয়ে মানুষকে মেরে ফেলে ধর্মকে উছিলা করে।
বিধাতা খুশি হন তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসলে, সে জায়গায় মেরে ফেলা কতোখানি ঈশ্বরপ্রেম! ঠিক জানি না।
ছাইরাছ হেলাল
‘ধর্ম যার যার,
দেশ আমাদের সবার।’
আমরা জানি কিন্তু মানি না, যা আমদের সমস্যা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হুম, ধর্মতে জবরদস্তি চলে না, কিন্তু আমরা বুঝলেও তা মানি না।
নীলাঞ্জনা নীলা
কি ছিলো দেশ আমাদের। আর কি হয়েছে। মাঝে-মধ্যে মনে হয় ওই সবুজ-সুফলা-শস্য-শ্যামলা দেশটি কি আমার?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আরো যে কোথায় যাবে কে জানে! প্রজন্মের প্রতিক্রিয়া যা দেখছি।
এতো নিরাশার মাঝেও ঈশানকোণে মাঝেমাঝে আলোর রেখা দেখতে পেলে মনে ভরসা জেগে উঠে। বিশ্বাস করি, অপশক্তি একদিন মুখ থুবরে পড়বেই।
ব্লগার সজীব
মুসলিমদের মাঝে উগ্রতা চলে এসেছে খুব।আর সম্প্রীতি পূর্বের মত সম্ভব কিনা জানিনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এতোদিন হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বিদ্যমান ছিলো আর এখন মুসলমান মুসলমান বিভেদ!!
কোথায় যাচ্ছি আমরা? কথায় কথায় একজন আরেকজনকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে দিচ্ছি, যেনো ধর্মের ঠিকাদারি হতে নিয়েছি একেকজন।
মেহেরী তাজ
ছোট বেলায় সব ঠিক ঠাক দেখেছি। বড় হয়ার সাথে সাথে ধর্মের বিভেদ টা খুব চোখে পরা শুরু করেছে।
জানিনা এটা আমার মনের ভুল কি না।
লেখাটা ভালো লেগেছে আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মনের ভুল নয় আপু, বাস্তব চিত্র।
শুন্য শুন্যালয়
আপু আমাদের সম্প্রীতির প্রচার কম। দু একটা মন্দির ভাঙ্গলে যেরকম প্রচার পায়, পূজোতে হাজার হাজার মুসলমান পরিবার বাচ্চাদের নিয়ে দেবী মূর্তি দেখতে যান, তাদের আনন্দে শরীক হোন তার প্রচার কোথায় আপু? আপনার লেখাটি পড়ে মনের মধ্যে আনন্দ জেগে উঠলো। এমনই তো হওয়া উচিৎ। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমার বাবা ধর্মপ্রাণ ছিলেন খুব, কিন্তু তবুও মনে আছে যখন পুঁজো শুরু হতো, এক গার্ড ছিলো আব্বার অফিসে। রবিবারে তার ডিউটিই ছিলো আমাদের ঘুরে ঘুরে পুঁজোমন্ডপগুলোতে নিয়ে যাওয়া। আমার এখনো মনে সে লোকটার নাম ছিলো সালাউদ্দিন। আমরা সালাউদ্দিনচাচা ডাকতাম। তখন রবিবার ছিলো সাপ্তাহিক ছুটির দিন।
ইমন
অসাধারণ। (y)
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।