গত কয়েকদিন ধরে, কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে, আর কাঁদার শক্তি নেই, কিন্তু বুকের ভেতর কষ্টটা একটুও কমে নাই৷
দাদু তুমি কই গেলা, এতোদিন যখন পারলা আর কয়েকটা দিন বেশী অপেক্ষা করতা আমার জন্য, এই কষ্ট কি কোনদিন ভুলতে পারব? তোমাকে শেষবারের মতো দেখতে না পাওয়ার কষ্ট, আজীবন কাঁদাবে আমাকে৷
জানো দাদু, মাত্র কয়েকটা দিন আগেই আম্মাকে বলছিলাম, দাদুর জন্য একটা হালকা গোলাপি শাড়ী কিনে নিও, আমি আসলে দাদুর হাতে দিব৷
গোলাপী রংয়ের শাড়ী তুমি বেশি পছন্দ করতে আমি জানি, তাই তো প্রতি ঈদে আমার দেয়া শাড়ীটা ওই রংয়েরই থাকতো৷
গত, পাঁচ মাস ধরে তুমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে, তোমার এতো প্রিয় ইলিশ মাছ, পোলাও কিছুই নাকি খেতে পারতেনা, সিদ্ধ-জাউ ভাত ছাড়া৷ শেষের দু-মাস তো ঘরের মানুষগুলো ছাড়া আর কাউকেই চিনতে পারতে না৷
দেশে থাকাকালীন যতবার, আমার শ্বশুর-বাড়ীতে চলে আসার সময় হতো, আমার হাতটা ধরে বলতা- “ও নাতিন আর কয়দিন থাকস না.. তোরা চলে গেলি ঘর খালি-খালি লাগেরে”৷
সেদিন, কাঁদতে কাঁদতে নিশা আমাকে বলে, হসপিটাল যাওয়ার আগের রাতে তুমি নাকি ওর ওড়না ধরে খালি চুমো দিচ্ছিলা বারবার, আমি ওকে বলি দাদী অনেক দোয়া করে গেছেন তোদেরকে, উনার শেষ সময়ে তুই- আম্মা মিলে যেভাবে সামাল দিয়েছিস সবকিছু, খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানো, সবকিছুই তো করেছিস তোরা৷
দাদু হয়তো মুখে বলে যেতে পারেন নাই, কিন্তু অন্তর থেকে দোয়া করে গেছেন তোদের জন্য৷
সেই জন্যই তো, দাদু শেষ কথাও বলেছিলেন তোদের সাথে, দাদুর শেষ দেখার মানুষগুলিও ছিলি তোরা, এরপর হসপিটালে যে চোখ বন্ধ করে দাদু গিয়েছিলো, সেই অবস্থায় আল্লাহ-পাক নিয়ে গিয়েছেন৷
আব্বা যখন বলে, মসজিদের একেবারে পাশে লেবু গাছের নিচে কবরে তুমি শুয়ে আছো, শুনে বুকের ভেতর কষ্ট চিন-চিন করে ওঠে দাদু৷ যে তুমি বারবার বলতা,”ও নাতিন মইরা গেলে কিভাবে কবরে থাকমু, কিভাবে একলা থাকমু ওই আন্ধার ঘরে”, সে তুমি এখন কেমনে ঘুমাই আছো দাদু…?
এতো বয়স হওয়ার পরও তুমি রোজা রাখতা সবসময়, এবার আর পারবানা তাই রমজানের চার দিন আগে আল্লাহ-পাক তোমাকে নিয়ে গেছেন৷
সেদিন, গ্রামের বাড়ীতে তোমার জন্য ফাতেহা-মেজবান হলো, সবাই আসলো আবার চলেও গেলো, কিন্তু তোমার স্মৃতি কাঁদাবে তাদেরকে যারা তোমার প্রতিটা মূহুর্তের সাক্ষী ছিলো, তাদের মন বলবে, ওইতো রক্ত-মাংসের একজন মানুষ ওই খাটে থাকতো এতগুলো বছর ধরে, তার কাপড়গুলো এখনো আছে, শুধু মানুষটা নেই৷
তাই তো, সেদিন আব্বা বলছিলো -“ওমা বাসায় কিভাবে ফিরব, তোর দাদীর খাট দেখলেই তো খারাপ লাগবে”!
ও দাদু…দাদু গো…দেশে গেলে এবার বাসায় তো আমার দুই চোখ শুধু তোমারে খুজবে, হালকা গোলাপী শাড়ী পড়ে, কোমরে চাবির গোছা ঝুলিয়ে, কে এসে জড়ায় ধরে বলবে- “ও নাতিন, আইছস নি”৷
সব মায়া ছেড়ে কিভাবে চলে গেলে একেবারে..?
অনেক ভালো থেকো দাদু তুমি অন্যভূবনে৷
~ রিফাত নওরিন
১৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
দাদু ভাল থাক তাঁর স্থান হয় জেন জান্নাতে। পড়তে পড়তে চোখে পানি এসে গেলো দাদু ভাল থেক।
রিফাত নওরিন
এই প্রার্থনাই করি এখন মহান আল্লাহ যেনো দাদুকে জান্নাতবাসী করেন৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে৷
মায়াবতী
আমি যে বছর হই তার আগের বছর আমার দাদি মারা জান, আমার আব্বা আমাকে বলতো আমি নাকি দাদির মত হইছি, আব্বার জানের টূক রা ছিলাম আমি, আব্বা প্রতিদিন একবার হইলেও দাদির গল্প করতেন, দাদি কত সুন্দর ছিলেন, কেমন করে কথা বলতেন, কি খেতে পসন্দ করতেন ইত্যাদি। আমি আব্বা কে খুশি করার জন্য দাদির জিনিস গুলি ঢং করে করতাম, আমার প্রান প্রিয় আব্বা খুশি আমাকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলতো…. আল্লাহ পাক আপনার দাদি কে জান্নাতুল ফেরদোস নাসিব করুন, আমিন।
রিফাত নওরিন
আমার দাদু বেশী আদর করতো আমাকে, তিন বছর আগে চলে আসার সময় বারবার বলতো আমাকে হয়তো আর দেখবেন না৷ খুব কষ্ট লাগছে উনার কথাগুলো সত্যি হয়ে গেলো৷
নীহারিকা
দাদির কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো। একসময় সকলকেই চলে যেতে হবে। আমি আমার দাদিকে দেখিনি। তাই দাদির এমন আদর মাখা ডাকের স্মৃতি আমার নেই। আপনি অনেক ভাগবতী যে দাদিকে পেয়েছিলেন। আপনার দাদির জন্য অনেক দোয়া। উনি যেন জান্নাতবাসী হন। আমীন।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু৷ আমীন৷
ইঞ্জা
দাদুর জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করছি যেন উনি দাদুকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
আপনার লেখাটা আমাকে অনেক কথায় মনে করিয়ে দিলো।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া, আমীন..মহান আল্লাহ যেনো দাদুকে জান্নাতবাসী করেন৷
ইঞ্জা
আমীন
নীরা সাদীয়া
প্রিয় মানুষরা এভাবেই চলে যায়। খুব দুঃখ পেলাম দাদু ও তাঁর শাড়ির কথা ভেবে।
রিফাত নওরিন
সত্যিই, প্রিয় মানুষগুলো চলে যায়, আমাদের জন্য রেখে যায় ভীষন রকম শূন্যতা৷ দোয়া করবেন৷
জিসান শা ইকরাম
দাদু চলে যাওয়ায় অব্যক্ত আবেগকে বেশ ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
আল্লাহ আপনার দাদুকে বেহেশত নসীব করুক…… আমীন।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া, আমীন..!! আমার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মনে হয় দেশে গেলেই দাদুকে দেখতে পাবো৷
নীলাঞ্জনা নীলা
ঈশ্বর আপনার দাদুর আত্মার মঙ্গল করুন।
এখনও আমি আমার ঠাকুমা(দাদী) আর বরিশালের মাকে(নানী) মিস করি।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু!!
শুন্য শুন্যালয়
দাদুকে শেষ দেখা না দেখবার কষ্ট টা যে আমাদেরও স্পর্শ করলো আপু। দাদী অনেক ভালো থাকুন ওপাড়ে। আমরা সবাই মিলে দোয়া করছি আপু।