বাজারে গিয়ে তরমুজ আর বাঙ্গিওয়ালাদের দেখে দাঁড়ালাম। তরমুজওয়ালা সবাইরে তরমুজের গায়ে তবলা বাজিয়ে বলছে এইটা পাকা, টসটসে, মিষ্টি হবে লইয়া যান। সুবোধ বালকের মত সন্তুষ্টি নিয়ে লোকজন তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে।
বললাম- “ভাই, তবলা বাজায় বহুত ধোঁকা দিয়েছেন। তবলা বাজানো ছাড়াই একটা তরমুজ দেন।”
কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে অন্য একজনরে বলে- “ওই তহিদ্যা! স্যাররে কোণার মালডার একটা দে!”
নামটা শুনেই একটা ঝাঁকি খেলাম। তরমুজ বিক্রেতা নামও তৌহিদ! আর নাম ছিলোনা এই দুনিয়ায়? এখন মানেমানে কেটে পড়লেই বাঁচি।
তবে এই তরমুজ আলাদা রাখছে যখন এইটা নিশ্চিত মিষ্টি হবে। তবুও জিজ্ঞেস করলাম- “তহিদ্যা ভাই, তরমুজে তবলাতো বাজালেন না; মিষ্টি হবেতো?”
“স্যার নিয়া যান। একের মাল, ফুল গ্যারান্টি!”
দোকানি তরমুজ গছিয়ে দিয়ে- “স্যার বাঙ্গি নিবাইন? ভালা বাঙ্গি আছিল, লিয়া যান।”
পাশের দোকানদারকে চিল্লায় বলে- “ঐ ইসলাইম্যা স্যারেরে জোস একটা বাঙ্গি দে।”
এদিকে ঘটনা কি হচ্ছে ভেবে তাল পাচ্ছিনা। তরমুজ ওয়ালার নাম তৌহিদ, বাঙ্গিওয়ালার নাম ইসলাম। আর ক্রেতা আমি তৌহিদুল ইসলাম! ইয়া মাবুদ, আজ ইফতারের আগে আগে এইরকম ২০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ শক্ আর কতবার খাবো!
এরপরে বাঙ্গিওয়ালাকে বললাম- “পাঁকা দেখে বাঙ্গি দ্যাসতোরে ভাই। গায়ে তবলা বাজায় দে।”
হলুদাভ সবুজ একটা বাঙ্গি প্যাকেটে দিয়ে বলে- “স্যার, বাঙ্গি নরম আছে। গায়ে তবলা বাজাইলে ডাইব্যা (দেবে) যাইবে। নিয়া যান, মিষ্টি না হইলে ফেরত দিয়েন। আপনে আপনা মানুষ।”
বাসায় আসার পরের কাহিনী হলো- তরমুজ মোটেও মিষ্টি ছিলোনা। আর বাঙ্গিতে চিনি মিশিয়ে খেয়েছি! আমার সাথে ঠগবাজি করা! আমার নামে তোদের নাম, আর কাম বাটপারদের মত। পেটে যাওয়া বাঙ্গি ফেরত কেমনে দেবো?
ইউটিউবে তরমুজ এবং বাঙ্গি চাষের অনেক ভিডিও দেখলাম। পাকা তরমুজ, বাঙ্গি চেনার উপায় নিয়ে ভিডিও কেউই বানায় নাই। স্ক্রল করতে করতে পাকা কেশ কালো করার একটা ভিডিও পেয়েছি।
ক্যামেরাম্যানটা দেখতে এক্কেরে বাজারের সেই তরমুজওয়ালার ডুপ্লিকেট চেহারার আর হোস্ট ছেলেটা বাঙ্গিওয়ালাটার মত একইরকম, দেখতে লিকলিকে তালপাতার সেপাই। এদেরও নাম জানতে পারলে ভালো হতো। আমার নামে নাম কিনা কে জানে?
তবে চেয়ারে বসা নারী মডেলের চেহারা কিন্তু মাশাল্লাহ! টসটসে তরমুজ রঙা মিষ্টি সুন্দর। ভিডিওতে দেখা শুধুমাত্র এই একজনের কারনে তরমুজ, বাঙ্গিওয়ালা তোগোরে মাফ কইরা দিলাম যাহ!
আমি তৌহিদুল ইসলাম ফল বিক্রেতা হলে কাস্টমারকে যেভাবে তরমুজ এবং বাঙ্গি চেনাতাম (নেট ঘেটে আজই শিখেছি)-
বন্ধুগণ, তহিদ্যা+ ইসলাইম্যা (আমি নই কিন্তু) একজন ফল বিক্রেতা। আপনারা আবার এসব ফাঁস করে চিল্লায় মার্কেট গরম কইরেননা। এইরকম চিল্লানী দিয়া মার্কেট ফাওন যাইবো কন? ভালো নাম নিলেই কেউ গুনবান/বতী হয়না তা আবারো প্রমাণিত এটা মনে রাইখেন।
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি –
গায়ে তবলা বাজালে যেমন সেই তরমুজ পাকা হয়না তেমনি হলুদ হলেই বাঙ্গি মিষ্টি হয়না। আর কোণাকামচিতে লুকোনো মাল দিচ্ছে দেখে আনন্দে টগবগাবগ হবেন না। কাস্টমারকে খুশি রাখতে তারা অনেকের সাথেই এটা করে।
দেখেশুনে নিজের মনের ইচ্ছেতে যেটা পছন্দ হয় সেটাই কিনুন। অন্য কেউ ধোঁকা দিলেও নিজেদের মন অধিকাংশ সময়েই আমাদের ধোঁকা দেয় না। অন্ততপক্ষে কেনার পরে ঠগলেও দোকানদার ঠগিয়েছে সেই আক্ষেপে ভুগতে হবেনা।
বেশি লাভের আশায় অসাধু ব্যক্তিরা ক্ষেত থেকে কচি ফল না উঠিয়ে একটু পুরোট হবার পরে উঠালে এই ভোগান্তি কারোরেই হতোনা। ব্যবসায় বিশ্বাস স্থাপন কাস্টমার ধরে রাখতে সর্বদাই সহায়ক।
বাঙ্গি খাইতে বালু বালু
তরমুজ খাইতে পানি,
মনেমনে ভালোবাস!
জানি।
— পল্লী রম্য
ধাঁধা- পল্লী রম্যে একটি ভিন্নতা আছে, বলুনতো কি?
[ছবি- নেট থেকে ]
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
তরমুজ কেনা সে এক বিশাল হ্যাপা, আজকেও আমাকে বেছে অনেক কষ্ট করে অন্য কাস্টমার দাঁড় করিয়ে রেখে
আমাকে দিয়েছে, ফলাফল পানি পানি!!
ইউ টিউবের ঐ সব দেখে একদিকে হলুদ দেখে কিনেছি, পানি পানি। এবার এমনি এমিন কিনেছি, চিনি-মিষ্টি পেয়েছি,
তবে খুব কম দিন।
এই তো জীবন। চলছে যেমন।
তৌহিদুল ইসলাম
তরমুজ এবং বাঙ্গির বিষয়ে নিজের উপর আস্থা রাখাটাই বেষ্ট ভাইয়া। কাউরে বিশ্বাস নাই, এসব কিনে ঠকেনি এরকম একজনও নেই।
এভাবেই চলছে, চলতেও হবে। ধন্যবাদ ভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাই কতোবার যে ঠকলাম তার ঠিক নেই। তবে গা তেলতেলেটার ভেতরে পানি পানি হয়। কাল যেটা কিনেছি সেটা ভালো ছিল। বহুত হ্যাপা।
আপনার সাথে নামের মিলে খুব মজা পাইলাম। রম্য দারুন। ভাবছি রম্যে আমাকে ছুটি দেন বস।
শুভ কামনা।
তৌহিদুল ইসলাম
আমিও এখন বুঝে গেছি, তরমুজ লম্বা নয় ঢ্যাপা দেখে কিনতে হবে। এরপরে যখন কিনবো সেই ফলাফল জানাবো।
শুভকামনা সবসময়।
নাজমুল আহসান
ভালো তরমুজ চেনা কোনো বিষয়ই না। প্রথমে দুইটা তরমুজে থাপ্পড় দিবেন, এরপর তিন নম্বর তরমুজটা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। 🤗🤗
তরমুজ বিক্রেতা তো সারাজীবন এভাবেই ক্রেতাকে ভালো তরমুজ খুঁজে দেয়। 😜😜
তৌহিদুল ইসলাম
অনেকগুলা হা হা দিলাম ভাই। মজা পেয়েছি। আপনার এই মন্তব্যের পরে তরমুজ কিনে যদি ঠকিও আর আফসোস থাকবেনা।
শুভকামনা ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভাই মিষ্টি মিষ্টি লইয়া যান নিয়া যান।
টাহা দেওয়া লাগতো না ভাই।
মিষ্টি না হইলে টাকা ফেরত।
.
এই বিশ্বাসে ক্রেতাগণ কিনেন তারপর বাড়ি গিয়ে ধোকা খান। তাই এসব কেনার জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
.
আর দু নামে একনাম তৌহিদ ভাই বইল্লা আপনার মন ভরিয়ে ফেলছে, দাদা।
বাঙ্গি খাইতে বালু বালু
তরমুজ খাইতে পানি,
মনেমনে ভালোবাস!
জানি।
— পল্লী রম্য
দারুণ লাগলো, দাদা।
তৌহিদুল ইসলাম
মানুষ ঠকে গিয়ে শেখে। আমিও শিখেছি দাদা। এরপরে আর ভুল হবেনা। তারপরেও বলা যায়না। বিশ্বাস করে তরমুজ নিয়ে এসে কেউ যখন দেখে পানিপানি কেমন লাগে বলেন? এক্কেরে বালুবালু ভালোবাসার মতন।
শুভকামনা ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহাহা, লেখা পড়ে আর নাজমুলের কমেন্ট পড়ে হাসি থামাতে পারছি না। সেরা তরমুজ বাংগি চেনার দারুণ সব উপায় বলে দিয়েছেন।
সেদিন দেখলাম চার লোক মিলে একটা তরমুজ নিলেন, তরমুজ ওয়ালা তরমুজের মাঝখান থেকে এক পিস বের করে দেখালো, চারজনই সেটা হাতে নিয়ে গম্ভীরভাবে পরখ করলো। তারপর জানালো তরমুজের ভেতর টা বেশি লাল না, এটা মিষ্টি হবার সম্ভাবনা কম।
দোকানদারও কম যায় না, সে বললো আপনাদের মধ্যে যিনি রোজা রাখেন নাই, তিনি খেয়ে দেখুন। মিষ্টি না হইলে এটার সাথে আরেকটা ফ্রী! বুঝতেই পারছেন এরপরে কি হয়েছিলো। ফ্রী তরমুজ আর তাদের নেওয়া হয়নি 😀😀
এখন আবার জিজ্ঞেস কইরেন্না আমি লকডাউনের ভেতরে তরমুজের দোকানে কি করতে গিয়েছিলাম।
❝বাংগি খাইতে বালি বালি
তরমুজ খাইতে পানি,
তুমি বন্ধু এত নিঠুর
আগে কি আর জানি❞
বিক্রমপুরবাসীর মুখে মুখে এই পদ্য প্রায়ই শুনি 🙂
চমৎকার রম্য দিলেন তৌহিদ ভাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদুল ইসলাম
নাজমুল ভাইয়ের মন্তব্য পড়ে আমিও হাসতে হাসতে শেষ! মানুষ কত্ত ধোঁকাবাজ চিন্তা করেন আপু। রোজাদারকে বলে খেয়ে দ্যাখেন!!
সব পানিপানি ভালোবাসার লাহান। হা হা হা ☺
শুভকামনা আপু।
তৌহিদুল ইসলাম
আপনার মন্তব্যের এই রম্যটা বেস্ট।
আরজু মুক্তা
সেদিন আমিও নাবার বাবারে বুঝাইছি, সুবজ কিন্তু দাগ দাগ দেখে কিনবা। যাই হোক ঠকেননি।
রম্য ভালো হইছে। যে তরমুজ পানি ঐটারে শরবত বানায় খাইবেন।
কম্ম সাবাড়।
তৌহিদুল ইসলাম
বুঝছি, ভাইয়ার অভিজ্ঞতা আছে প্রচুর। আমি বহুবার ঠকেছি কিন্তু। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা আপু।
পপি তালুকদার
বেশ কিছু তরমুজ খেলাম, ভাগ্য ভালো সবটাই মিষ্টি হয়েছে। কেনাকাটা করি না তাই এখন পর্যন্ত রক্ষা তরমুজ কেনার পরীক্ষায় পরিনি।
ধাঁধা টার উত্তর দিতে পারলামনা।
উত্তর টা বলবেন?
তৌহিদুল ইসলাম
আপনি খুবই ভাগ্যবতী বলতে হচ্ছে আপু। তরমুজ মিষ্টি পাওয়া যা তা কথা নয়। দোকানদারটা ভালো ছিলো নিশ্চিত।
রম্যে ৪ ৩ ২ ১ শব্দের ক্রমে প্রতিটি লাইন সাজানো। এটাই ধাঁধা।
শুভকামনা আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আরে তহিদ্যা পড়ে তো পেট ফেটে গেল হাসিতে হাসিতে তার উপর নাজমুল ভাইয়ের মন্তব্য সোনায় সোহাগা। তরমুজ আর বাঙ্গীর এমন দশা দেখে তারা নিজেরাই মনে হয় বেকুব বনে গেছে 🥰🥰। এতো সম্মান মনে হয় তারা আগে পায়নি যেভাবে তাদের নিয়ে রম্য রচনা করলেন অসাধারণ। ধাঁধা বুঝলাম সাবিনা আপুর মন্তব্যে। ধাঁধার উত্তর বলে দিয়েন সঠিক না বেঠিক। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
তৌহিদুল ইসলাম
তারা খেটে খাওয়া মানুষ। তারা না থাকলে বাজারে কিছুই পেতাম না আমরা। তাদের নিয়ে লিখে একটু সম্মান জানানো আর কি। তরমুজ মিষ্টি কি মিষ্টি নয় এটা আসলে তারাও জানেনা। কিন্তু বিক্রির পদ্ধতিটা ভুল।
রম্যের ধাঁধার জবাব উপরে পপি আপুর মন্তব্যে দিয়েছি কিন্তু।
ভালো থাকুন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমি বলেছি বাঙ্গী আর তরমুজের সম্মানের কথা 🤣🤣🤣। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
তৌহিদুল ইসলাম
হা হা হা 😎😎
হালিমা আক্তার
তরমুজ 🍉 আর বাঙ্গির সরস মন্তব্য পড়ে বুঝলাম আর ঠকতে হবেনা। শুভকামনা।
তৌহিদুল ইসলাম
ইনশাআল্লাহ ঠকবেন না। তারপরেও ভাগ্যে কি আছে কে জানে।
শুভকামনা আপু।
জিসান শা ইকরাম
তরমুজ এ তবলা বাজিয়ে দেয়া একটা ভুয়া বিষয়, অথচ ক্রেতারা এটাই চান যে তরমুজ বিক্রেতা যেন তবলা বাজিয়ে তরমুজ দেন তাঁকে। ক্রেতারা চান বলেই বিক্রেতা এমন করেন 🙂
তরমুজ বা বাঙ্গি মিষ্টি হবার ব্যাপারটা ভাগ্যের।
যাই হোক, তরমুজ আর বাঙ্গি তে যে আপনার নামও এসে গিয়েছে এটিই মজার খুব।
ভালো তরমুজ চেনার ছবি দেখলাম এবং বুঝলাম,
তবে বাঙ্গি না কেটে এর ছোলা পুরু না পাতলা তা বুঝবো কিভাবে?
তৌহিদুল ইসলাম
আসলে তরমুজ বা বাঙ্গি মিষ্টি হবে কি হবেনা তা দোকানদার নিজেও জানেনা। কিন্তু তার বিক্রি করার পদ্ধতিটা ভুল। এটা ভাগ্যের বিষয়। তবে তরমুজ লম্বাটে না নিয়ে একটু ঢ্যাপা ধরনের নিলে মিষ্টি হয় জেনেছি। আর বোটা শুকনা এবং নীচে হলদেটে দাগ থাকবে।
বাঙ্গি না কেটে কেনার আগে ছালের গায়ে নখ দিয়ে খোঁচা দেবেন। শক্ত ছাল বা চামড়ায় একটু ধীরে আর নরম ছালে পুচুত করে নখ দেবে যাবে। এটি আমার আবিষ্কৃত পদ্ধতি যেটা চালকুমড়া, শসা, লাঊ কেনার সময় প্রয়োগ করি।
ধন্যবাদ ভাই।