তৌহিদুল ইসলাম যখন ফল বিক্রেতা

তৌহিদুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ১২:২১:৪৮অপরাহ্ন রম্য ২৩ মন্তব্য

বাজারে গিয়ে তরমুজ আর বাঙ্গিওয়ালাদের দেখে দাঁড়ালাম। তরমুজওয়ালা সবাইরে তরমুজের গায়ে তবলা বাজিয়ে বলছে এইটা পাকা, টসটসে, মিষ্টি হবে লইয়া যান। সুবোধ বালকের মত সন্তুষ্টি নিয়ে লোকজন তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে।

বললাম- “ভাই, তবলা বাজায় বহুত ধোঁকা দিয়েছেন। তবলা বাজানো ছাড়াই একটা তরমুজ দেন।”

কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে অন্য একজনরে বলে- “ওই তহিদ্যা! স্যাররে কোণার মালডার একটা দে!”

নামটা শুনেই একটা ঝাঁকি খেলাম। তরমুজ বিক্রেতা নামও তৌহিদ! আর নাম ছিলোনা এই দুনিয়ায়? এখন মানেমানে কেটে পড়লেই বাঁচি।

তবে এই তরমুজ আলাদা রাখছে যখন এইটা নিশ্চিত মিষ্টি হবে। তবুও জিজ্ঞেস করলাম- “তহিদ্যা ভাই, তরমুজে তবলাতো বাজালেন না; মিষ্টি হবেতো?”

“স্যার নিয়া যান। একের মাল, ফুল গ্যারান্টি!”

দোকানি তরমুজ গছিয়ে দিয়ে- “স্যার বাঙ্গি নিবাইন? ভালা বাঙ্গি আছিল, লিয়া যান।”

পাশের দোকানদারকে চিল্লায় বলে- “ঐ ইসলাইম্যা স্যারেরে জোস একটা বাঙ্গি দে।”

এদিকে ঘটনা কি হচ্ছে ভেবে তাল পাচ্ছিনা। তরমুজ ওয়ালার নাম তৌহিদ, বাঙ্গিওয়ালার নাম ইসলাম। আর ক্রেতা আমি তৌহিদুল ইসলাম! ইয়া মাবুদ, আজ ইফতারের আগে আগে এইরকম ২০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ শক্ আর কতবার খাবো!

এরপরে বাঙ্গিওয়ালাকে বললাম- “পাঁকা দেখে বাঙ্গি দ্যাসতোরে ভাই। গায়ে তবলা বাজায় দে।”

হলুদাভ সবুজ একটা বাঙ্গি প্যাকেটে দিয়ে বলে- “স্যার, বাঙ্গি নরম আছে। গায়ে তবলা বাজাইলে ডাইব্যা (দেবে) যাইবে। নিয়া যান, মিষ্টি না হইলে ফেরত দিয়েন। আপনে আপনা মানুষ।”

বাসায় আসার পরের কাহিনী হলো- তরমুজ মোটেও মিষ্টি ছিলোনা। আর বাঙ্গিতে চিনি মিশিয়ে খেয়েছি! আমার সাথে ঠগবাজি করা! আমার নামে তোদের নাম, আর কাম বাটপারদের মত। পেটে যাওয়া বাঙ্গি ফেরত কেমনে দেবো?

ইউটিউবে তরমুজ এবং বাঙ্গি চাষের অনেক ভিডিও দেখলাম। পাকা তরমুজ, বাঙ্গি চেনার উপায় নিয়ে ভিডিও কেউই বানায় নাই। স্ক্রল করতে করতে পাকা কেশ কালো করার একটা ভিডিও পেয়েছি।

ক্যামেরাম্যানটা দেখতে এক্কেরে বাজারের সেই তরমুজওয়ালার ডুপ্লিকেট চেহারার আর হোস্ট ছেলেটা বাঙ্গিওয়ালাটার মত একইরকম, দেখতে লিকলিকে তালপাতার সেপাই। এদেরও নাম জানতে পারলে ভালো হতো। আমার নামে নাম কিনা কে জানে?

তবে চেয়ারে বসা নারী মডেলের চেহারা কিন্তু মাশাল্লাহ! টসটসে তরমুজ রঙা মিষ্টি সুন্দর। ভিডিওতে দেখা শুধুমাত্র এই একজনের কারনে তরমুজ, বাঙ্গিওয়ালা তোগোরে মাফ কইরা দিলাম যাহ!

আমি তৌহিদুল ইসলাম ফল বিক্রেতা হলে কাস্টমারকে যেভাবে তরমুজ এবং বাঙ্গি চেনাতাম (নেট ঘেটে আজই শিখেছি)-

পাকা মিষ্টি তরমুজ পেতে ছবির মত রঙ দেখে নিন 
ভালো বাঙ্গি পেতে ছাল একটু মোটা হলুদাভ দেখে কিনুন

বন্ধুগণ, তহিদ্যা+ ইসলাইম্যা (আমি নই কিন্তু) একজন ফল বিক্রেতা। আপনারা আবার এসব ফাঁস করে চিল্লায় মার্কেট গরম কইরেননা। এইরকম চিল্লানী দিয়া মার্কেট ফাওন যাইবো কন? ভালো নাম নিলেই কেউ গুনবান/বতী হয়না তা আবারো প্রমাণিত এটা মনে রাইখেন।

মোরাল অফ দ্যা স্টোরি –

গায়ে তবলা বাজালে যেমন সেই তরমুজ পাকা হয়না তেমনি হলুদ হলেই বাঙ্গি মিষ্টি হয়না। আর কোণাকামচিতে লুকোনো মাল দিচ্ছে দেখে আনন্দে টগবগাবগ হবেন না। কাস্টমারকে খুশি রাখতে তারা অনেকের সাথেই এটা করে।

দেখেশুনে নিজের মনের ইচ্ছেতে যেটা পছন্দ হয় সেটাই কিনুন। অন্য কেউ ধোঁকা দিলেও নিজেদের মন অধিকাংশ সময়েই আমাদের ধোঁকা দেয় না। অন্ততপক্ষে কেনার পরে ঠগলেও দোকানদার ঠগিয়েছে সেই আক্ষেপে ভুগতে হবেনা।

বেশি লাভের আশায় অসাধু ব্যক্তিরা ক্ষেত থেকে কচি ফল না উঠিয়ে একটু পুরোট হবার পরে উঠালে এই ভোগান্তি কারোরেই হতোনা। ব্যবসায় বিশ্বাস স্থাপন কাস্টমার ধরে রাখতে সর্বদাই সহায়ক।

বাঙ্গি খাইতে বালু বালু
তরমুজ খাইতে পানি,
মনেমনে ভালোবাস!
জানি।
— পল্লী রম্য

ধাঁধা- পল্লী রম্যে একটি ভিন্নতা আছে, বলুনতো কি?

[ছবি- নেট থেকে ]

৮৪৬জন ৬৮৮জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ