শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
মে মাসে দেশে গিয়েছি । ৪/৫ দিনের মাথায় ফেইসবুকের এক ছোট ভাই ফোন দিল। জিজ্ঞেস করল , আপু কোথাও বেড়াতে যাবে ? আমি বললাম ,তুমি আস আগে । ভাইটি এলো । খুব অমায়িক ভদ্র একটি ছোট ভাই। অনেকক্ষণ ভাবলাম কোথায় যাওয়া যায় । হটাত বন্ধুটি বলল রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে যাবে ? সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। রিকসায় চড়ে দুই বন্ধু রওয়ানা দিলাম। মধ্য বয়সের এক রিক্সাওয়ালাকে পেলাম। তাকে বললাম ,ভাই আমাদের সাথে আজ সারাদিন ঘুরবে ? রাজি হয়ে গেল সে ।
কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হোল । দুজন জমিয়ে গল্প করছি সব ফেইসবুক কে নিয়ে । হটাত আমি রিক্সাওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ,তুমি কি জান ফেইসবুক কি ? সে বলল না আফা। আমি বললাম , ফেইসবুক একটা বন্ধুর হাঁট । সাদা ,কালো , বাদামী , আওয়ামী ,বি এন পি ,কত রকমের সব চেনা ,অচেনা বন্ধু আছে সেখানে । তুমিও আজ আমাদের বন্ধু, বললাম তাকে। কি এক পবিত্র হাসি দিল সে।
এই যে আমার না দেখা ছোট ভাইটি আমাকে হয়ত বলতে পারত আপু, চল চাইনিজ খাই বা অন্য কিছু। আমাদের বন্ধুত্ব মানসিকতা খুব কম মিলে , তার সাথে মিলল ।
বৃষ্টির জন্য কিছুতেই নামতে পারছিলাম না। ভাইটি বলল ,আপু কিছু খাবে ? আমি বললাম ,খাব ,তবে অন্যরকম কিছু। সে বলল ,চল তোমাকে মুরি ভর্তা খাওয়াব । পাক্কা ২ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে কেরানীগঞ্জে গেলাম মুরি ভর্তা খেতে । অসাধারণ এক জিনিস খেলাম । তার সেই মুরি ভর্তা খুব বিখ্যাত । আসলেই ।
ফিরে এলাম । ততক্ষণে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে । নামলাম বধ্যভুমিতে । এক পা ,এক পা করে আগাচ্ছি। সমস্ত রক্ত হীম হয়ে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে আমার সামনে ৭১ দাঁড়িয়ে আছে । আমি ছুলেই আমার মাকে দেখতে পাবো । অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে । একটি খোলা জানালা , একটি উঁচু প্রাচীর , পানি , একটি কালো পাথর আছে এর মধ্যে । ভাবতে বসে গেলাম এগুলোতে কি আছে যা আমার মধ্যে আছে …
পানি তো আমার নদী নালার বাংলাদেশ ।
উঁচু প্রাচীর তো আমার আকাশ সমান শ্রদ্ধা শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ।
খোলা জানালা তোমাদের আলো শহীদ বুদ্ধিজীবীর।
একটি কালো পাথর তোমাদের শোক ।
এর সামনে দাঁড়ানো একজন শহীদের সন্তানের জন্য অনেক গর্বের বিষয় । আমি গর্বিত তোমাদের দেখতে পেয়েছি প্রিয় শহীদ বুদ্ধিজীবীরা সেখানে , বধ্যভুমিতে । তোমরা আছ আমাদের সবটুকু অস্তিত্বে ।
এমন মৃত্যু কি মৃত্যু ? না । ওরা আসবে …সব কটা জানালা খুলে দাও না ।
বন্ধুটি অনেক ছবি তুলল আমার । কৃতজ্ঞ বন্ধু । কৃতজ্ঞ ফেইসবুক এমন সুন্দর একজন বন্ধু দেবার জন্য ।
বাসার সামনে যখন এসেছি ,রিক্সাওয়ালাকে ১০০০ টাকা দিলাম। ৬ টি মেয়ে তার । বললাম ,ওদের কিছু কিনে দিও । আমার নাম্বার নিল ,তারটা দিয়ে বিদায় নিল । খুব করে বলল , আবার দেশে গেলে যেন তাকে ফোন দেই । রিক্সাওয়ালা ভাইকে কথা দিলাম ,করব ।
পরেরদিন সকালে সে আমাকে ফোন দিল।
হাসানঃ আমি রিক্সাওয়ালা হাসান , আসসালামুয়ালাইকুম ।
আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম । বলুন ।
হাসানঃ আফা, আমি খুব বিপদে আছি ,আপনি একটু আসবেন ?
আমিঃ কি হয়েছে ?
হাসানঃ কালকে আপনে আমারে যে ১০০০ টাকা দিয়াছেন মহাজন তার অর্ধেক নিয়ে গেছে । ( জমা সম্ভবত ২০০) টাকা । হেয় কয় সব আমার রিক্সা চালানো টাকা । আপনি একটু লোক জন নিয়ে তারে একটা মাইর দেন ।
আমি সাহস পেলাম না কিছু করার । ৭১ এর পরবর্তী প্রজন্ম আমরা , গা বাঁচিয়ে চলাই তো আমাদের কাজ। বললাম , ভাই যা চায় তা দিয়ে দাও। ঝামেলা কর না। আমি আবার আসলে আমার সাথে দেখা কর। খুব করে বলল , যেন তাকে না ভুলি ।
হে বধ্যভুমি ,
দাঁড়িয়ে আছ আমাদের সবচেয়ে সেরা সম্পদ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে । ওদের কানে কানে বল ,আমরা ভাল নেই । আমাদের আকাশে আজ অনেক মেঘ । আমাদের সম্পদ হারানোর সেই দিন আজ ১৪ই ডিসেম্বর । শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
এ কেমন জীবন বলিদান
শুধু অশ্রুজল
বল রাজাকাররা বল বল বল ।
দেশ মেধাশুন্য করেছিস ,আমরা তার প্রতিশোধ নিবই ।
কাদের গেছে
সাকা আসছে …
ছবিটি আমার নিজের তোলা
৭টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
” হে বধ্যভুমি ,
দাঁড়িয়ে আছ আমাদের সবচেয়ে সেরা সম্পদ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে । ওদের কানে কানে বল ,আমরা ভাল নেই । আমাদের আকাশে আজ অনেক মেঘ । আমাদের সম্পদ হারানোর সেই দিন আজ ১৪ই ডিসেম্বর । শ্রদ্ধাঞ্জলি । ”
শ্রদ্ধা জানাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি -{@
ভালো লিখেছেন ।
ছন্নছাড়া
বাংলাদেশ ভ্রমনের একটি চমৎকার সৃতি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ …………
আমি প্রথম ঢাকায় আশি ১৯৯৯ সালে তক্ষণ ১৪ই ডিসেম্বর আমি আমার বাবার হাত ধরে প্রথম রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী সৃতিসৌধ গিয়েছিলাম দেকতে ………।।
১৯৯৯ সালের বধ্যভূমি আর ২০১৩ আর বধ্যভূমি অনেক পার্থক্য
শুন্য শুন্যালয়
কাদের গেছে সাকা আসছে …:(
কাদেরের উত্তরসূরিদের রুখে দাড়ানোর সময় এসেছে ..
আপনার লেখার ফ্যান হয়ে গেলাম আপু. খুব ভালো লাগলো প্রতিটা লেখা.
স্বপ্ন
স্রদ্ধা জানাই সবাইকে । ভালো লিখেছেন ।
নীলকন্ঠ জয়
কাদের গেছে, সাকাও যাবে, যাবে সবগুলোই শুধু আমাদের সচেতন থাকতে হবে । রাজাকারদের হাতে দেশটাকে তুলে দেওয়া যাবে না।
সকল বীর শহীদদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। সুন্দর পোষ্টের জন্য শুভেচ্ছা।
তন্দ্রা
এই ইটের গাদায় আছে আমার দেশের
সকল আশার আলো, এখানেই আছে
সকল সৃজনশীল মানুষের দল,
যেথায় পাব সব সমস্যার সমাধান।
তাঁরা আছে নিভৃতে সব মানুষের অন্তরে।
ধন্যবাদ লেখার জন্য।
মা মাটি দেশ
হটাত আমি রিক্সাওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ,তুমি কি জান ফেইসবুক কি ? সে বলল না আফা। আমি বললাম , ফেইসবুক একটা বন্ধুর হাঁট । সাদা ,কালো , বাদামী , আওয়ামী ,বি এন পি ,কত রকমের সব চেনা ,অচেনা বন্ধু আছে সেখানে । তুমিও আজ আমাদের বন্ধু, বললাম তাকে। কি এক পবিত্র হাসি দিল সে। (y)